আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সাম্প্রতিক ঘটনাটি দেশ জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু, এই ঘটনাটির পরও কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কোনও মন্তব্য করেননি, তা নিয়ে জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।
কয়েক মাস আগে পর্যন্ত দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের খুঁটিনাটি বিষয়ে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভিন্ন ইস্যুতেই সমালোচনা করেছেন রাজ্যের তৃণমূল সরকারের। কিন্তু দুমাস হতে চললেও আরজি কর নিয়ে তাঁরা টুঁ শব্দটিও করেননি। অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি বিচারাধীন থাকার কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নীরবতা বজায় রেখেছেন। কিন্তু শুধু এই কারণেই কি এত বড় ঘটনা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে না? বিশেষ করে যখন এটি একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নীরবতা আরও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
মণিপুরের ঘটনাতেও ব্যাপক সমালোচিত হতে হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলকে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিড়ম্বনা না বাড়ানোর ভাবনা….
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীরবতার পেছনে কৌশলগত কারণ থাকতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সঙ্গে চলমান সংঘাত এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের মন্তব্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া, যেহেতু রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিতে সরাসরি মন্তব্য করতে গেলে তা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই হয়তো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাবধানতা অবলম্বন করে এগোচ্ছেন। আরেকটি মহলের মতে, এমনিতে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে বিরোধীদের কাছে কোণঠাসা গেরুয়া শিবির। বিশেষ করে মণিপুরের ঘটনাতেও ব্যাপক সমালোচিত হতে হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলকে। সেক্ষেত্রেও তাঁদের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিড়ম্বনা না বাড়ানোর ভাবনাও থাকতে পারে মোদী-শাহের।
তবে, অনেকেই মনে করছেন যে, এত বড় একটি ঘটনা—যা দেশের নারী নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলছে, সেখানে কেন্দ্র অথবা কেন্দ্রের শাসকদলের নেতাদের নীরবতায় কিছুটা হলেও সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। এই নীরবতা থেকে, কেন্দ্র কি কোনও বিশেষ বার্তা দিতে চাইছে? না কি, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট কৌশল তৈরি হচ্ছে, সেটাও স্পষ্ট নয়।
এরই মধ্য়ে গত ২৫ আগস্ট মহারাষ্ট্রের জলগাঁওতে ‘লাখপতি দিদি সম্মেলনে’ প্রধানমন্ত্রীর মোদী মহিলাদের নিরাপত্তার গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি রাজ্য সরকারগুলির উদ্দেশে বলেন, “মহিলাদের উপর অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না,” এবং অপরাধীদের শাস্তির জন্য আইন কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দেন। যদিও তিনি নির্দিষ্ট কোনও ঘটনার উল্লেখ করেননি, তাঁর মন্তব্য আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়। ব্যস, ওইটুকুই। তার পর থেকে আর কলকাতার এই ঘটনা নিয়ে কোনো শব্দ খরচ করতে শোনা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে।
আন্দোলনের রাশ বামেদের দখলে চলে গিয়েছে। যেখানে কার্যত ‘হাতখালি’ অবস্থা গেরুয়া শিবিরের।…
প্রসঙ্গত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র আন্দোলন এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। মেডিক্যাল পড়ুয়া এবং ডাক্তারদের একটা অংশের অভিযোগ, কর্মক্ষেত্রে তাঁদের নিরাপত্তা এবং মহিলাদের উপর অত্যাচারের বিষয়গুলো যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না। সাধারণ মানুষও ডাক্তারদের আন্দোলন প্রতিবাদে সঙ্গী হচ্ছেন। আবার কারও কারও দাবি, আন্দোলনের রাশ বামেদের দখলে চলে গিয়েছে। যেখানে কার্যত ‘হাতখালি’ অবস্থা গেরুয়া শিবিরের। অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় থেকে অগ্নিমিত্রা পালের মতো বিজেপি নেতানেত্রীদের আন্দোলন মঞ্চ থেকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনতে হয়েছে। যদিও বঙ্গ-বিজেপির একাংশের দাবি, এই আন্দোলন মানুষের, সেখানে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছে। তাছাড়া রাজ্য বিজেপি এই ঘটনা নিয়ে যে সমস্ত কর্মসূচি নিচ্ছে, তাতে আস্থা রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নীরবতা কি শুধুই বিচারাধীন বিষয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন? না কি এর পেছনে আরও গভীর কোনও রাজনৈতিক কৌশল অথবা দিশাহীনতা রয়েছে?