পাঁচ জন দলিত যুবক ও একটি মৃত্যুকূপ

0

খবর অনলাইন: চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। কিন্তু নিদানা গ্রামের গোটা দলিত বস্তিটা এখনও শোকাচ্ছন্ন। মায়েরা, স্ত্রীরা, বোনেরা এখনও বুক চাপড়ে কেঁদে চলেছেন। আর বৃদ্ধরা একটা জায়গায় মাথা নিচু করে গোল হয়ে বসে আছেন। নিঃশব্দে। যেন একে ওপরের সান্নিধ্যে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন।

এখনও যেন বিশ্বাস হয় না। তাঁদের চোখের সামনেই তো ঘটে গেল ব্যাপারটা। মাত্র ২৫ ফুট গভীর পরিত্যক্ত কুয়োটা বস্তির তরতাজা পাঁচটা পুরুষকে একে একে ছিনিয়ে নিল। এক জনকে বাঁচাতে আরও এক জন নামলেন। এই ভাবে পর পর পাঁচ জন। কুয়োয় নেমে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। পাঁচ জন পুরুষ, পাঁচটি বন্ধু, হরিহরআত্মা, বস্তির পাঁচ জন তুখোড় কবাডি প্লেয়ার। ষষ্ঠ জন করমপাল। ২০ বছরের করমপালও নেমেছিলেন কুয়োতে। আত্মরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে। তাই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি।

উত্তর হরিয়ানার জিন্দ জেলার এই গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে সোমবার। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরেও যেন ঘোর কাটেনি করমপালের। এখনও যেন তিনি নিস্তেজ, বিহ্বল। পাঁচ জন যখন কুয়োয় নেমে গিয়েছেন তখন ঘটনাস্থলে আসেন করমপাল। কুয়োর ভেতরে তাকিয়ে দেখেন সব চেয়ে বয়সে বড়ো যে মহীপাল সিং তিনি তখনও বেঁচে। করমপাল একটা রুমালে মুখ ঢেকে, কোমরে দড়ি বেঁধে কুয়োয় নামেন। কোনও রকমে তুলে আনেন মহীপালকে। কিন্তু ততক্ষণে বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় প্রাণান্ত মহীপালের। চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না তাঁকে। “নীচের বাতাস সহ্য করা যাচ্ছিল না। বাস আ রহি থি। আমার মাথা ঘুরতে শুরু করল। আমার শ্বাস আটকে আসছিল” – বলছিলেন করমপাল। “নীচে আর ১০ সেকেন্ড থাকলেই বোধহয় করমপালকেও চলে যেতে হত” – ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সোনুর মন্তব্য।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিত্যক্ত কুয়োয় মিথেন, কার্বন মনো-অক্সাইড, অ্যামোনিয়ার মতো বিষাক্ত গ্যাস জমা হয়েছিল। সেই গ্যাস থেকেই এই মৃত্যু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেন, যাঁরা কুয়োয় নেমেছিলেন তাঁরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। একমাত্র তিন নম্বরে যিনি নেমেছিলেন সেই সুখচইন চিৎকার করে বলেছিলেন, “এখানে বিষাক্ত গ্যাস আছে। আমাদের টেনে বার করো।”

হঠাৎ এই মৃত্যু কেন, সে সম্পর্কে ডাক্তাররা তাঁদের চূড়ান্ত মত জানাননি। রোহতকের ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে ভিসেরা পাঠানো হয়েছে। তার রিপোর্ট এলে জানা যাবে কেন এই মৃত্যু, জানালেন জিন্দের সিভিল সার্জন ডাঃ সঞ্জয় দহিয়া। তবে সেই রিপোর্ট আসতে মাস খানেক সময় লেগে যাবে।

কিন্তু কেন এই কুয়োয় নামা ? গ্রামের দলিত মহিলা সরপঞ্চ পিঙ্কি জানালেন, এর মূলে রয়েছে দলিত বস্তিতে জল সংকট। এই গ্রাম জাট সম্প্রদায় অধ্যুষিত। তাঁরা পয়সাওয়ালা, টাকা দিয়ে জল কিনতে পারেন। কিন্তু গ্রামের এই দলিত বস্তির মানুষজন খেটেখাওয়া সাধারণ মজুর। এঁদের পরিবারের মেয়েদের খাওয়ার জল আনতে হয় রোজ এক কিলোমিটার হেঁটে। কাছে একটা পুকুর রয়েছে। কিন্তু তার জল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওই পুকুরে স্নান করে নানা রকম চর্মরোগ হচ্ছে। এ দিকে দলিত বস্তির কবাডি টিম আছে। খেলার পর স্নান করার দরকার হয়। পুকুর থেকে ২০ গজ দূরেই এই কুয়ো। ঠিক হয়েছিল এই কুয়ো সংস্কার করে এর জল ব্যবহার করা হবে। কুয়োটা পড়ে ছিল। এর জল যে এ ভাবে দূষিত হয়ে গিয়েছে তা জানা ছিল না। সেই দূষিত কুয়োই প্রাণ নিয়ে গেল পাঁচ জন যুবকের।

ছবি: সৌজন্যে টাইমস অফ ইন্ডিয়া

dailyhunt

খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

বিজ্ঞাপন