খবর অনলাইন: সরকারি সংস্থার ঘোষণাই কি বেদবাক্য ? তারা যত দিন না ঘোষণা করছে বর্ষা এসেছে, তত দিন কি বর্ষা আসেনি বলে ধরে নিতে হবে, আমাদের অভিজ্ঞতা যদি অন্য কথা বলে তা-ও ? গত কয়েক দিন ধরে কেরল, উপকূল ও দক্ষিণ কর্ণাটকে যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মনে হতেই পারে বর্ষা এসে গিয়েছে। পুরোপুরি বর্ষার মেজাজ। শুধুমাত্র ভারতের মৌসম ভবন ঘোষণা করছে না বলে কেরলে বর্ষা এসেছে বলা যাচ্ছে না।
সরকারি আবহাওয়া দফতরের দাবি ছিল, কেরলে বর্ষা আসবে জুনের ৭ তারিখ নাগাদ। কিন্তু দেশের একমাত্র বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা স্কাইমেট শুরু থেকে জানিয়ে আসছে কেরলে বর্ষা পৌঁছবে ২৮ মে থেকে ৩০ মে’র মধ্যে। বুধবার স্কাইমেটের সিইও যতীন সিংহ একটি বিবৃতিতে জানিয়ে দিলেন, কেরলে বর্ষা এসে গেছে, শুধুমাত্র সরকারি ভাবে কিছু ঘোষণা করা হচ্ছে না বলে, স্কাইমেটও কিছু করতে পারছে না।
যতীনবাবু বলেছেন, “গত কয়েক দিন ধরেই কেরল-সহ পশ্চিম উপকূলে অবিশ্রান্ত বর্ষণ আছড়ে পড়ছে। আমি বুঝতে পারছি, বর্ষা ভালো ভাবেই এসে গিয়েছে। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা। একটি করে মুহূর্ত পেরোচ্ছে আর বৃষ্টি পড়ার শব্দ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। স্কাইমেট বলেছিল কেরল উপকূলে বর্ষা আসবে ৩০ মে। আমার মনে হচ্ছে, কেরলে বর্ষা প্রবেশ করে গিয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষ এখনও ঘোষণা করছে না। এর ফলে শিল্পমহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আমি বলতে চাই, বর্ষার যেটা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি, সেই বৃষ্টি বিভিন্ন জায়গায় যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বলা যায়, বৃষ্টিপাতের শর্তটি শুধু পূরণই হয়নি, বেশি করে পূরণ হয়ে গিয়েছে।”
শুধু কথায় নয়, নিজের দাবির সমর্থনে যতীনবাবু তথ্যও পেশ করেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, বর্ষা ঘোষণা করার প্রাথমিক শর্ত হল, কেরল ও উপকূল কর্ণাটকে যে ১৪টি আবহাওয়া স্টেশন আছে, তার মধ্যে অন্তত ৬০% স্টেশনে পর পর দু’দিন আড়াই মিমি বা তার বেশি বৃষ্টি হতে হবে। গত ২৬ মে থেকেই কেরলের বিভিন্ন প্রান্তে আড়াই মিমি’র অনেক বেশিই বৃষ্টি হচ্ছে। যেমন কোল্লম। এখানে ২৮ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথাক্রমে ৮ মিমি, ৬ মিমি, ১৫ মিমি, ২ মিমি, ৫ মিমি, ২ মিমি এবং ২.৪ মিমি। এমনকি গত রাতে রাজ্যের উত্তর প্রান্তে কোড়িকোড়, কান্নুরে ১০০ মিমি’র বেশি বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। স্কাইমেটের বৃষ্টির তথ্য নীচের ছবিতে দেওয়া হল। এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বর্ষা ঘোষণার জন্য বৃষ্টিপাতের যে শর্ত রয়েছে, তা কী ভাবে পূরণ হচ্ছে।
বর্ষা ঘোষণার আরেকটি শর্ত হল পশ্চিমি হাওয়ার গভীরতা। ওই শর্ত অনুযায়ী নিরক্ষরেখা থেকে ১০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ আর ৫৫ ডিগ্রি থেকে ৮০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে পশ্চিমি হাওয়ার গভীরতা থাকতে হবে ৬০০ এইচপিএ তথা ১২০০০ ফুট। এ ব্যাপারে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এই শর্তও পূরণ হয়েছে।
বর্ষা এলে নিরক্ষরেখা থেকে ১০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ আর ৫৫ ডিগ্রি থেকে ৮০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে হাওয়ার গতিবেগ ১৫ থেকে ২০ নটের মধ্যে থাকার কথা। নীচের ছবিতে ২৪ মে থেকে ওই অঞ্চলে হাওয়ার গতিবেগের তথ্য দেওয়া হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে মাত্র তিন দিন বাদে সব দিনই হাওয়ার গতিবেগ ১৫ নটের ওপরে।
বর্ষার তৃতীয় শর্ত হল ৫ ডিগ্রি উত্তর থেকে ১০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭০ ডিগ্রি পূর্ব থেকে ৭৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অঞ্চলের মধ্যে আউটগোয়িং লংওয়েভ রেডিয়েশন (ওএলআর) ২০০ Wm-2- এর নীচে থাকতে হবে। ২৪ মে থেকে ১লা জুন পর্যন্ত ওএলআরের মান ২০০ আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেছে।
উপরের শর্তগুলোর মধ্যে ওএলআরের মানের পরিবর্তন হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এই মাপকাঠিটিই সব চেয়ে পরিবর্তনীয়। কারণ বর্ষা আসার সময়ে কোনও অবস্থাতেই ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ দীর্ঘদিন ধরে থাকে না। বর্ষা ঘোষণার সময়ে অতীতেও এই মানের পরিবর্তন হয়েছে। এ বারে বরং এই মাপকাঠিটি সীমার আশেপাশে রয়েছে।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।