
নরেন্দ্র মোদী সরকারের বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ২০১৯-এর নির্বাচনের আগে স্বভাবতই এই বাজেটকে জনমোহিনী করার লক্ষ্যে অরুণ জেটলি বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল, কৃষিপন্যের সহায়কমূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা, গৃহহীন মানুষদের জন্য বাসস্থান তৈরি করা, দরিদ্রদের জন্য বিনাব্যয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা। এমনকি বিনা ব্যয়ে এলপিজি সংযোগের লক্ষ্য মাত্রা পাঁচ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে আট কোটি করা।
বেশ কিছুদিন ধরে দেশের এক বিশাল অংশের কৃষক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। কারণ তাঁরা কৃষিপন্যের লাভজনক মূল্য পাচ্ছেন না। তাঁরা ঋণের দায়ের জর্জড়িত হয়ে পড়েছেন। এমনকি ঋণের দায়ে বেশ কিছু কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এই অবস্থায় কৃষিপন্যের সহায়কমূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা কৃষকদের ক্ষতে কিছুটা মলম দেওয়ার শামিল। অন্যদিকে ভোট বাক্স ঠিক রাখতে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ বা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ বা রান্নার গ্যাস সংযোগের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
গরিব মানুষদের মন জয়ের চেষ্টা করলেও ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের বাজেট কিন্তু মধ্যবিত্তের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। আয়করের ছাড়ের পরিমাণ বাড়েনি। উপরন্তু শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের সেস বাড়িয়ে মধ্যবিত্তের পকেট হালকা করার ব্যবস্থা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মিউচুয়াল ফান্ড বা ইকুইটিতে বিনিয়োগের ওপর ১০% কর বসিয়ে মধ্যবিত্তের সঞ্চয় স্পৃহাকে আঘাত করেছে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের ওপর প্রাপ্ত মূলধনের আয়ের ওপর কর বসিয়ে অর্থমন্ত্রী মধ্যবিত্তকেই আঘাত করেছেন।
এ কথা ঠিক প্রবীণ নাগরিকদের ব্যাঙ্কের গচ্ছিত অর্থের ওপর প্রাপ্ত সুদের ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এখানে লক্ষ করার বিষয় যে গত চার বছরে মোদী সরকার ধীরে ধীরে সঞ্চয়ের ওপর সুদের হার আড়াই থেকে তিন শতাংশ হ্রাস করেছে। ফলে প্রবীণ নাগরিকদের আয় কমেছে। তাঁদের ক্রয় ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। এই অবস্থায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড় দিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের খুব একটা সুবিধা হবে এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই।
বর্তমান বাজেটে মধ্যবিত্তরা যেমন বঞ্চনা শোষণের শিকার হয়েছেন ঠিক তেমনই উচ্চবিত্তরা আর্থিক সুবিধে পেয়েছে। আড়াইশ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেন যুক্ত সংস্থায় করের হার ৩০% থেকে কমিয়ে ২৫% করা হয়েছে। উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে কোনো রকম কর চাপেনি। সার্বিক বিচার করলে বর্তমান বাজেটকে উচ্চবিত্তের পৌষমাস মধ্যবিত্তের সর্বনাশ বলা যায়। সন্দেহ নেই ভোট বড়ো বালাই। কিন্তু শুধুমাত্র দরিদ্রদের জন্য ঘোষণা করে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টা আদৌ সফল হবে কি?