নয়াদিল্লি: ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে সরকার বরাবর কঠোর অবস্থান নিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের ডিজিটাল মুদ্রা সংক্রান্ত নিয়মকানুনও বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। যাঁরা এই কঠোর নিয়মের মধ্যে থেকেও বিনিয়োগ করেন, তাঁদের উপর ব্যাপক করের বোঝা চাপানো হয়। তবে এবার সেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারত সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন ও বিনিয়োগের বিষয়ে তাদের বর্তমান নীতি পুনর্বিবেচনা করছে। এই পরিবর্তনের অন্যতম কারণ বিশ্ব জুড়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণযোগ্যতার পরিবর্তন, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে একাধিক ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে তিনি নিজের মিম কয়েন চালু করেন, যার ফলে বিটকয়েনের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ ১,০০,০০০ ডলারে পৌঁছে যায়।
ভারতের অর্থনৈতিক বিষয়ক সচিব অজয় শেঠ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “একাধিক দেশ ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার, গ্রহণযোগ্যতা এবং গুরুত্ব নিয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। সেই কারণে আমরা আমাদের আলোচনার নথি পুনরায় পর্যালোচনা করছি।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টো নিয়ে নতুন পদক্ষেপ
ট্রাম্প সম্প্রতি একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই গ্রুপের কাজ হবে ডিজিটাল সম্পদ সংক্রান্ত নতুন নিয়ম প্রস্তাব করা এবং একটি জাতীয় ক্রিপ্টোকারেন্সি রিজার্ভ গঠনে সহায়তা করা।
ভারতে কঠোর নিয়ম ও জরিমানা
ভারতে ক্রিপ্টো সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি বরাবরই কঠোর। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (FIU) বিনান্স ও কুকয়েন-সহ ৯টি অফশোর ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে। অভিযোগ ছিল, তারা স্থানীয় নিয়ম মানেনি। এছাড়া,ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রককে এই প্ল্যাটফর্মগুলির ইউআরএল ব্লক করার সুপারিশ করে এফআইইউ।
২০২৪ সালের জুনে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বিনান্স ভারতে ১৮.৮২ কোটি টাকা জরিমানার মুখে পড়ে। এর মাত্র এক মাস আগে তারা এফআইইউ-তে নথিভুক্ত হয়েছিল। এফআইইউ জানিয়েছে, এই জরিমানা অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন (PMLA), ২০০২ লঙ্ঘনের জন্য করা হয়েছে।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কড়া অবস্থান
২০২৩ সালে ভারতের প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেন। তিনি বলেন, “ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করা উচিত, কারণ এর কোনও প্রকৃত মূল্য নেই। এটি শুধুই জুয়া, ১০০ শতাংশ জল্পনা ছাড়া কিছুই নয়।”
নতুন নিয়মে আশার আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরা
ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বহুপাক্ষিক নিয়ন্ত্রক কাঠামোর দাবি উঠছে। সরকার যদি সত্যিই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে এটি ভারতীয় ক্রিপ্টো ব্যবসায়ীদের জন্য বড় স্বস্তির খবর হতে পারে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আলোচনার নথি প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল, যা এখনও স্থগিত রয়েছে। তবে নতুন পরিবর্তনের আভাস পাওয়ায় অনেকেই আশাবাদী যে এই বিলম্ব হয়তো ভারতীয় ক্রিপ্টো ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক কিছু আনতে চলেছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে আন্তর্জাতিক চাপ ও দেশীয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।