ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার উচ্চ হলেও কাঠামোগত মন্দার শিকার হচ্ছে দেশ, এমনই সতর্কবার্তা দিলেন প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা (CEA) অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। তিনি জানিয়েছেন, এই মন্দা সাময়িক নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী এবং গভীর।
দ্য ওয়্যার-এ করণ থাপারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সুব্রহ্মণ্যন বলেন, “ভারতের অর্থনীতি কি ধীরগতিতে চলছে? এর উত্তর নির্দ্বিধায় হ্যাঁ। তবে এটি কি সাময়িক, না কি কাঠামোগত? সেটাই আসল প্রশ্ন। আমি মনে করি, এটি সাময়িক নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত মন্দা।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, ভারতের অর্থনীতির প্রকৃত দুর্বলতা অনেকদিন ধরেই রয়েছে, তবে মহামারির পর পুনরুদ্ধারের চিত্র এবং উচ্চ জিডিপি বৃদ্ধির হার তা আড়াল করেছে। তিনি বলেন, “আমরা ৭-৮% হারে বৃদ্ধির কথা শুনছি, অথচ ব্যক্তিগত ভোগব্যয় মাত্র ৩% হারে বেড়েছে, বিনিয়োগ দুর্বল, রপ্তানিও তেমন শক্তিশালী নয়। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, যদি জিডিপির সব উপাদান দুর্বল থাকে, তাহলে সামগ্রিক জিডিপি এত ভালো কেন?”
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল সমস্যা কী?
সুব্রহ্মণ্যনের মতে, ভারতের অর্থনীতির মূল সমস্যা কর হ্রাস বা স্বল্পমেয়াদী সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়। বরং প্রকৃত সমস্যা হলো নিম্ন আয়, দুর্বল কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের অভাব।
তিনি বলেন, “ভোগব্যয় কম হওয়ার কারণ হলো আয় কম, এর বিপরীতে নয়। তাই কর হ্রাসের মতো পদক্ষেপ ভোগব্যয় বাড়াবে না। বরং আমাদের দীর্ঘমেয়াদী নীতি দরকার যা কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াবে, তখনই ভোগব্যয় স্বাভাবিক হবে।”
সুব্রহ্মণ্যন আরও জানান যে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি। “দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে কোনো মুহূর্তে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন—এই আশঙ্কা তাদের বিনিয়োগে বাধা দিচ্ছে। তাই সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) হ্রাস পাচ্ছে এবং বেসরকারি বিনিয়োগও দুর্বল হয়ে পড়ছে,” তিনি বলেন।
নিম্ন চাহিদা নাকি বিনিয়োগ সংকট—কোনটি মূল বাধা?
ভারতের অর্থনৈতিক দুর্বলতার জন্য অনেকেই কম অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে দায়ী করেন, তবে সুব্রহ্মণ্যন ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “যদি অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়, তাহলে বিদেশি চাহিদার (রপ্তানি) মাধ্যমে তা পূরণ করা উচিত। তাহলে ভারত রপ্তানির ক্ষেত্রে কেন পিছিয়ে? এর মূল কারণ হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব এবং অনিশ্চিত নীতিগুলি।”
আইএমএফ-এর মতভেদ
সুব্রহ্মণ্যনের এই বিশ্লেষণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর সাম্প্রতিক মূল্যায়নের বিপরীতে। আইএমএফ-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর গীতা গোপীনাথ জানিয়েছেন, “আমরা এই মন্দাকে সাময়িক বলেই মনে করি। কিছু সরকারি অবকাঠামো প্রকল্পে দেরি হলেও, তা শীঘ্রই গতি পাবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিও পুনরুদ্ধার হবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৬.৫% থাকবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে।
ভারতের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কোন পথে?
অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ভারতের অর্থনীতির কাঠামোগত সমস্যাগুলি এড়ালে স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ কার্যকর হবে না। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বিনিয়োগ নীতিতে স্থিতিশীলতা এবং নীতিগত স্বচ্ছতা ছাড়া অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া কঠিন।
📌 আপনার মতে, ভারতের অর্থনীতির প্রকৃত সমস্যা কী? কর্মসংস্থান নাকি বিনিয়োগ সংকট? আপনার মতামত জানান।