কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শিল্পখাতকে বদলে দিচ্ছে, এবং এর প্রভাব থেকে ভারতও বাদ যাচ্ছে না। যদিও এআই কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, খরচ কমানো এবং স্বয়ংক্রিয়করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তবুও চাকরির বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের উদ্যোক্তা ও Atomberg-এর প্রতিষ্ঠাতা অরিন্দম পাল এক লিঙ্কডইন পোস্টে ভারতের হোয়াইট-কলার চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এআই-এর কারণে লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হুমকির মুখে?
অরিন্দম পালের মতে, এআই-চালিত অটোমেশন আইটি পরিষেবা ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (BPO) খাতে ব্যাপক চাকরি সংকট তৈরি করতে পারে। এই দুটি খাত ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ, যেখানে লক্ষ লক্ষ দক্ষ কর্মী কাজ করেন।
তিনি লিখেছেন, “আমি মনে করি না আমাদের নেতারাও বুঝতে পারছেন, এআই আমাদের অর্থনীতির জন্য কত বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।”
পাল মনে করেন, যদিও ইনফোসিস (Infosys), টিসিএস (TCS)-এর মতো আইটি সংস্থাগুলি চালু থাকবে, তবে এআই ব্যবহারের ফলে তাদের কর্মীসংখ্যা কমিয়ে আনার প্রবণতা দেখা দেবে। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, “বর্তমানে যে সমস্ত হোয়াইট-কলার চাকরি রয়েছে, তার প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ ভবিষ্যতে হারিয়ে যেতে পারে,” যা দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও সামগ্রিক ভোগব্যয়ে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে।
উৎপাদন খাত কি চাকরির সংকট সামলাতে পারবে?
ভারত সরকার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন শিল্পে প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করছে। তবে পাল মনে করেন, উৎপাদন খাতের বৃদ্ধি চাকরি সংকট মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নয়। বর্তমানে অধিকাংশ উৎপাদন কর্মীর বেতন বার্ষিক ৩-৬ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা উচ্চ বেতনের আইটি ও বিপিও চাকরিগুলোর বিকল্প হতে পারবে না।
“যদি উৎপাদন শিল্পের বৃদ্ধি আরও দ্রুত না হয়, তাহলে দেশে বেকারত্ব বাড়বে এবং ভোগব্যয় কমে যাবে, যা সরাসরি অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিতে পারে,” বলে জানান অরিন্দম পাল।
কর্পোরেট সংস্থাগুলির স্বল্পমেয়াদি লাভের চিন্তা!
পালের মতে, বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা কেবল খরচ কমাতে ও মুনাফা বাড়াতে এআই নির্ভরতা বাড়াচ্ছে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে ভাবছে না।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “আজ কর্পোরেট সংস্থাগুলি খুশি, কারণ এআই তাদের কর্মীসংখ্যা কমিয়ে দেবে, দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং মুনাফা বাড়াবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, যদি মানুষের হাতে টাকা না থাকে, তাহলে বাজারেও চাহিদা থাকবে না।”
পালের বক্তব্য ঘিরে তর্ক-বিতর্ক!
অরিন্দম পালের এই পোস্টের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এআই-এর প্রভাব নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
একজন লিঙ্কডইন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আপনি একদম ঠিক বলেছেন। যদি হোয়াইট-কলার চাকরি এভাবে হারিয়ে যায়, তাহলে ভারত বড় সংকটের দিকে এগোচ্ছে।”
অন্য একজন মন্তব্য করেন, “প্রযুক্তিগত বিপ্লব সবসময় কিছু পুরনো চাকরি ধ্বংস করে এবং নতুন চাকরি তৈরি করে। মূল বিষয় হলো, মানুষ নতুন দক্ষতা শিখতে পারছে কি না!”
কিছু ব্যবহারকারী আশাবাদী যে এআই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এক ব্যক্তি লিখেছেন, “শিল্প বিপ্লবের সময়ও এমনটাই হয়েছিল। নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে নতুন চাকরির সুযোগ আসবে।”
তবে, অন্যদের মতে, এআই যদি খুব দ্রুত কর্মীদের প্রতিস্থাপন করে, তাহলে তা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
একজন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, “যদি মানুষের হাতে টাকা না থাকে, তাহলে তারা খরচ কমাবে। ফলে চাহিদা কমবে এবং অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে।”