বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যেও কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলছে। ভারত ও আমেরিকার মতো বৃহৎ অর্থনীতিগুলিতে মুদ্রাস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে, যা সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। এতে বাজারে চাহিদা বাড়তে পারে, তারল্য উন্নত হতে পারে, এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে বলেই মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
ভারতে এপ্রিলে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছে। পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে গ্রাহক মূল্যসূচক (CPI) বেড়েছে বছরে ৩.১৬ শতাংশ, যা মার্চের ৩.৩৪ শতাংশ, ফেব্রুয়ারির ৩.৬১ শতাংশ এবং গত বছরের এপ্রিলের ৪.৮৩ শতাংশ থেকে অনেকটাই কম।
অন্যদিকে, আমেরিকায় এপ্রিল মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI) বেড়েছে মাত্র ০.২ শতাংশ, যা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বার্ষিক বৃদ্ধি। মার্চে এই বৃদ্ধির হার ছিল ০.১ শতাংশ কম। এপ্রিলের শেষে বার্ষিক ভিত্তিতে CPI বৃদ্ধি ছিল ২.৩ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন।
বাণিজ্য যুদ্ধের ছায়া থাকলেও স্বস্তির ইঙ্গিত
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে, তবে মার্কিন বাণিজ্যনীতির কারণে মাঝারি মেয়াদে কিছু ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। Tradejini-র COO ত্রিবেষ ডি জানান, “যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সাময়িক শুল্ক হ্রাস চুক্তি হলেও প্রাক-ট্রাম্প যুগের স্তরে ফিরবে না। ফলে মাঝারি মেয়াদে কিছুটা মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি থাকছেই।”
তবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই একাধিক বাণিজ্য চুক্তির পথে হাঁটছে, যার ফলে বাজারে অনিশ্চয়তা কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানিয়েছেন, ভারত শূন্য শুল্কে বাণিজ্যচুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রবণতা এবং ভারতের সুবিধা
HDFC Securities-এর প্রাইম রিসার্চ প্রধান দেবর্ষ বকিল জানান, “তেল-সহ একাধিক কাঁচামালের দাম কমার ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলের খরচ কমছে এবং এতে ভোক্তাপণ্যেও মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সুদ কমানোর ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।”
অন্যদিকে, Arihant Capital Markets-এর গবেষণা প্রধান অভিষেক জৈন বলেন, “এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, তবে মুদ্রাস্ফীতির ভয়াবহ দিকটা হয়তো পেরিয়ে এসেছি। বিশ্বব্যাপী যদি এই হ্রাস প্রবণতা বজায় থাকে, তবে বাজারে স্থিতি আসবে।”
বিনিয়োগকারীদের কাছে সুদহারের পূর্বাভাস গুরুত্বপূর্ণ
Trivesh D-এর মতে, “ভারতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে কিছুটা স্বাধীনতা এসেছে। যদিও এখনও সুদহ্রাস অবিলম্বে হবে না, তবে প্রবণতা স্পষ্টভাবে প্রবৃদ্ধি সহায়ক।”
তিনি আরও বলেন, “এতে শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা কমবে, বিশেষ করে সুদ-সংবেদনশীল খাতে যেমন ব্যাঙ্কিং, রিয়েল এস্টেট ও কনজিউমার ডিউরেবলস সেক্টরে বিনিয়োগ আকর্ষণ বাড়তে পারে।
সার্বিকভাবে ভারতের ও বিশ্বের অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সুদের হার কমার সম্ভাবনায় আশার আলো দেখছে বাজার ও বিনিয়োগকারীরা। তবে বাণিজ্য যুদ্ধ ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এখনও শেষ হয়ে যায়নি, তাই আগামী দিনে পরিস্থিতি গভীর নজরে রাখা প্রয়োজন।