বর্তমান ভারতে উন্নত জীবনের স্বপ্ন এখন অনেক বেশি হাতের নাগালে—কিন্তু তার পরিণাম হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশ সেই স্বপ্নপূরণের জন্য নির্ভর করছে ঋণের ওপর, যা এক সময় হয়ে উঠছে বোঝা।
মার্সেলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ মুখার্জি সম্প্রতি এক পডকাস্টে জানিয়েছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৫ থেকে ১০ শতাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার ইতিমধ্যেই ‘ডেট ট্র্যাপে’ পড়ে গেছে, অর্থাৎ তারা ধার শোধ করতে ধার নিচ্ছে।
কেন এমন পরিস্থিতি?
মুখার্জির ব্যাখ্যা, কোভিড পরবর্তী সময়ে মানুষ ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিলাসবহুল জীবনের ছবিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে রয়েছে বিদেশ ভ্রমণ, দামি মোবাইল, ঝাঁ-চকচকে বাড়ি—সবকিছুই যেন ‘নতুন স্বাভাবিকতা’। তার ওপর ‘বাই নাউ, পে লেটার’ সংস্কৃতি সহজেই হাতের মুঠোয় এনে দিচ্ছে ঋণ।
“আপনাকে প্রতিনিয়ত বোঝানো হচ্ছে আপনি আইপিএল তারকার মতো জীবনযাপন করতে পারেন, কঠোর পরিশ্রম ছাড়াই, শুধু EMI দিয়েই,” বলছেন মুখার্জি।
ভারতের ‘ইন্ডিয়া স্ট্যাক’ (জনধন, আধার, মোবাইল) সহজ করে দিয়েছে ঋণপ্রাপ্তির রাস্তা। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এটা আশীর্বাদ হলেও মধ্যবিত্তের জন্য হয়ে উঠেছে বিপদ। মানুষ প্রায় না ভেবেই অনেক বেশি ঋণ নিয়ে ফেলছে।
চিন্তার কারণ কী?
- মাইক্রোফাইন্যান্স ঋণের খেলাপি শুরু হয়েছে
- এরপর আসছে আনসিকিওর্ড পার্সোনাল লোন
- এখন ক্রেডিট কার্ড ঋণে এনপিএ (NPA) বাড়ছে
- টু-হুইলার ফাইন্যান্সিংয়েও সমস্যা
“বিমানবন্দরে যখন দেখি ক্রেডিট কার্ড বিলি করা হচ্ছে, তখন আমি আতঙ্কে থাকি,” বলেন মুখার্জি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ভারতের গৃহস্থালির নিট আর্থিক সঞ্চয় ৫০ বছরে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। অধিকাংশ পরিবার আজ ইএমআই শোধ করছে অথবা স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করছে, ফলে ব্যাংকে জমা কমেছে ও ঝুঁকি বেড়েছে।
সমাধানের উপায় কী?
সৌরভ মুখার্জির মতে,
- RBI-এর ২% হারে সুদ কমানো
- মার্কেটে তরলতা (liquidity) বাড়ানো
- টাকার মূল্যে ১০–১৫% অবমূল্যায়ন
এই ত্রিস্তরীয় নীতি দ্রুত কার্যকর করা হলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
এখনও পর্যন্ত হোম লোন বা গাড়ি ঋণে সমস্যা দেখা না গেলেও মুখার্জির মতে, বর্তমান ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তাতেও ধস নামা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ইন্ডিয়া ইনভেস্ট করে, ইএমআই দেয়—কিন্তু সঞ্চয় রাখে না। এই প্রবণতাই ভারতের মধ্যবিত্তকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।