ভারতের ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ বাজারে প্রবেশ করে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ তৈরি করেছে রিলায়েন্স রিটেল ও চিনা ফ্যাশন ব্র্যান্ড শিন (Shein)-এর যৌথ উদ্যোগ। টাটা গ্রুপ-এর জুডিও-র বিপুল সাফল্যের পর, মুকেশ আম্বানির সংস্থা এবার সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামল শিন-এর ফ্যাশনওয়্যার লাইন নিয়ে। প্রায় পাঁচ বছর আগে ভারতে নিষিদ্ধ হওয়া শিন ব্র্যান্ড এবার নতুন রূপে ফিরল রিলায়েন্সের হাত ধরে।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পাওয়া শিন-এর জন্য রিলায়েন্স রিটেল চালু করেছে একটি নতুন অ্যাপ। রিলায়েন্স ও শিন-এর মধ্যকার বিশেষ লাইসেন্সিং চুক্তির আওতায় ভারতীয় বাজারে ফিরে এসেছে চিনা ফ্যাশন জায়ান্ট। শনিবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই অ্যাপটি চালু হয়, যা প্রথমে Ajio-তে পরীক্ষামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
জুডিও বনাম শিন: কে এগিয়ে?
ভারতের ফাস্ট ফ্যাশন বাজার ২০৩১ অর্থবর্ষের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে Redseer Strategy Consultants। বর্তমানে জুডিও ও ফ্লিপকার্ট-এর Myntra এই সেক্টরে শীর্ষস্থানে রয়েছে। জুডিও চার বছরে ৮০টি স্টোর থেকে ৫৬০টি স্টোরে পৌঁছেছে, যা ভারতের ১৬৪টি শহরে বিস্তৃত। তরুণ প্রজন্মের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাক সরবরাহ করায় এই ব্র্যান্ড দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে।
অন্যদিকে, রিলায়েন্সও পিছিয়ে নেই। ২০২৩ সালে Yousta লঞ্চ করলেও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। এবার শিন-এর মাধ্যমে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, রিলায়েন্সের মালিকানাধীন এই অ্যাপ সরাসরি Myntra ও অন্যান্য ফ্যাশন প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় নামবে।
শিন-এর বিশ্বব্যাপী আধিপত্য
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত শিন বর্তমানে ১৫০টিরও বেশি দেশে পরিষেবা প্রদান করে এবং ২০২৩ সালে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লাভ করেছে। Nike, H&M, Zara-কে পিছনে ফেলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এটি বিশ্বের সর্বাধিক পরিদর্শিত ফ্যাশন ওয়েবসাইট হয়ে উঠেছে।
শিন-এর সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর মডেল (Direct-to-Consumer) এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে বিপণনের কৌশল দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। এর মুনাফার মূল চাবিকাঠি হল ৫,৪০০টি তৃতীয় পক্ষের কারখানা থেকে উৎপাদন ও দ্রুত বাজারে পণ্য সরবরাহ।
শিন-এর বিতর্ক ও রিলায়েন্সের রক্ষাকবচ
শিন অতীতে শ্রমনীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছে। BBC-র এক তদন্তে জানা যায়, চীনে শিন-এর কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে ৭৫ ঘণ্টা কাজ করেন, যা শ্রম আইনের লঙ্ঘন। এছাড়াও মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও-সহ বিভিন্ন রাজনীতিকরা শিন-এর বিরুদ্ধে জিনজিয়াং অঞ্চলের তুলা ব্যবহার ও জোরপূর্বক শ্রমের অভিযোগ তুলেছেন।
তবে, রিলায়েন্সের ইশা আম্বানি নিশ্চিত করেছেন যে, ভারতের বাজারে শিন-এর কার্যক্রম সমস্ত নিয়ম মেনে চলবে। চুক্তি অনুযায়ী—
🔹 শিন শুধুমাত্র প্রযুক্তি প্রদানকারী থাকবে, রিলায়েন্সের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
🔹 সকল গ্রাহকের তথ্য ভারতে সংরক্ষণ করা হবে, শিন-এর কোনও অ্যাক্সেস থাকবে না।
🔹 ভারতের স্থানীয় কারখানাগুলিকে শিন-এর পণ্য উৎপাদনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা টেক্সটাইল শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াবে।
ভারতে শিন-এর ভবিষ্যৎ
বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানিয়েছেন, শিন ব্র্যান্ডের পণ্য ভারতে নিষিদ্ধ হয়নি, শুধুমাত্র অ্যাপটি নিষিদ্ধ হয়েছিল। নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতীয় বাজারে শিন নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। তবে টাটা-র জুডিও ও ফ্লিপকার্ট-এর Myntra-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় শিন কতটা এগোতে পারে, তা সময়ই বলবে।