সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) ভারতীয় শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধস। সেনসেক্স ৭০০ পয়েন্টের বেশি হারিয়েছে এবং নিফটি ফিফটি দিনের মধ্যবর্তী লেনদেনে ২৩,২৫০-এর নীচে নেমে আসে। বিশ্ববাজারে নেতিবাচক প্রবণতা এবং কেন্দ্রীয় বাজেটে মূলধনী ব্যয় (capex) বরাদ্দ কম হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়, যার ফলে মূলধনী ব্যয় সংক্রান্ত শেয়ারে ব্যাপক বিক্রির চাপ পড়ে।
তবে দিনের শেষ দিকে কিছুটা কেনাকাটার চাপ থাকায় সূচক গুরুত্বপূর্ণ স্তরের উপরে শেষ করতে পেরেছে। নিফটি ৫০ দিনের শেষে ০.৫২ শতাংশ পতন নিয়ে ২৩,৩৬১-এ বন্ধ হয়, অন্যদিকে সেনসেক্স ০.৪৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৭৭,১৮৬-এ দিন শেষ করে।
মাঝারি ও ক্ষুদ্র শেয়ারগুলির মধ্যে ধস আরও বেশি ছিল। নিফটি স্মলক্যাপ ১০০ ২.১৩ শতাংশ কমে ১৬,৬১৭-এ এবং নিফটি মিডক্যাপ ১০০ ০.৯৩ শতাংশ কমে ৫২,৯৮৮-এ বন্ধ হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে মূলধনী পণ্য (BSE Capital Goods) শেয়ারে, যা ৪.২৯ শতাংশ কমেছে। এছাড়া, BSE Power, Nifty PSE, Nifty Energy, এবং BSE Oil & Gas সূচক ২.৫ থেকে ৩.৩ শতাংশের মধ্যে পতন হয়েছে।
তবে কিছু সেক্টরে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। বাজেট-পরবর্তী কর ছাড়ের ফলে ভোক্তা টেকসই পণ্য (Consumer Durables) শেয়ারে চাহিদা বেড়েছে, যা ০.৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে, আইটি খাতও দিন শেষ করেছে লাভের মুখ দেখে, নিফটি আইটি সূচক ০.৬৮ শতাংশ বেড়েছে।
কেন পতন হল ভারতীয় শেয়ারবাজারে?
বিশেষজ্ঞরা বাজারে পতনের পাঁচটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন—
১. বিশ্ববাজারে নেতিবাচক পরিস্থিতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো ও চিনের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করার পর এশিয়ার বাজারেও ধস নামে। জাপানের Nikkei ও দক্ষিণ কোরিয়ার KOSPI সূচক সোমবার ৩ শতাংশ করে পড়ে যায়।
২. ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব
ট্রাম্প প্রশাসন কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ এবং চিনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। পাল্টা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. ডলারের শক্তিশালী হওয়া ও রুপির দরপতন
সোমবার ভারতীয় রুপি ডলারের বিপরীতে রেকর্ড নিম্ন স্তরে পৌঁছায়। প্রতি মার্কিন ডলারে ৮৭ টাকা অতিক্রম করে। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে ডলারের দাম আরও বেড়েছে, যা ভারতীয় মুদ্রাকে দুর্বল করেছে।
৪. রিজার্ভ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বৈঠকের আগে সতর্কতা
বাজেট ঘোষণার পর বাজারের নজর এখন রিজার্ভ ব্যাংকের (RBI) মুদ্রানীতি কমিটির (MPC) বৈঠকের দিকে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে রিজার্ভ ব্যাংক ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমাতে পারে, যা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে।
৫. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অব্যাহত বিক্রি
অক্টোবর ২০২৪ থেকে শুরু করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগত বিনিয়োগকারীরা (FIIs) ধারাবাহিকভাবে ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করে চলেছেন। অক্টোবর ১, ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫-এর মধ্যে এফআইআই প্রায় ২.৭ লক্ষ কোটি টাকার ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করেছে, যার ফলে বাজারে বড় ধস দেখা দিয়েছে।