ওয়াশিংটন ও বেইজিং: অবশেষে কার্যকর হল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত বিস্ফোরক শুল্ক যুদ্ধ। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পরপরই চিনের আমদানিকৃত পণ্যের উপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করল মার্কিন প্রশাসন। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর থেকেই ব্যাপকভাবে পড়েছে বিশ্ববাজার, আর তার জেরে সঙ্কটে পড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাঠামো।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রথমবার এই শুল্কের ঘোষণা দেন এবং এর ফলেই টানা চতুর্থ দিনের মতো পড়ল এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক। মঙ্গলবার মার্কিন এই সূচক ৫,০০০-র নিচে নেমে আসে, যা প্রায় এক বছর পর দেখা গেল। বাজারে ভয়াবহ পতনের জেরে মাত্র চার দিনেই প্রায় ৫.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্য হারিয়েছে বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার।
চীনের উপর কড়া আঘাত, আলোচনায় ‘বন্ধুরা’
ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির কেন্দ্রবিন্দু চিন হলেও, প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে— চীনের সঙ্গে তড়িঘড়ি করে কোনও আলোচনা নয়। বরং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি সহ ৭০টির বেশি দেশের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা শুরু করেছে হোয়াইট হাউস। প্রেসিডেন্ট বলেন,“এইগুলো সব বিশেষভাবে তৈরি চুক্তি… অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু একসঙ্গে এতগুলো দেশকে সময় দেওয়া সম্ভব নয়।”
হোয়াইট হাউসের আর্থিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট জানিয়েছেন, আপাতত অগ্রাধিকার পাচ্ছে মিত্র দেশগুলো। চীনের বিরুদ্ধে নেওয়া এই কড়া পদক্ষেপ ট্রাম্পের ‘চাপের কৌশল’ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল, তবে বেইজিং একে ‘হুমকি’ হিসেবে দেখছে এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
জবাব দিচ্ছে বিশ্ব
এই মুহূর্তে কেবল চিন নয়, কানাডাও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে কিছু মার্কিন যানবাহনের উপর, যা কার্যকর হয়েছে একইসঙ্গে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানিয়েছেন, “এই বাণিজ্য সংকটের জন্য ট্রাম্পই দায়ী— এবং কানাডা সজাগ এবং শক্তভাবে জবাব দিচ্ছে।”
দামবৃদ্ধির আশঙ্কা মার্কিন নাগরিকদের
এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে— প্রতি চারজন আমেরিকানের মধ্যে তিনজনই মনে করছেন, এই শুল্ক কার্যকর হলে পণ্যের দাম বাড়বে। ইতিমধ্যেই একাধিক চিপ নির্মাতা সংস্থা তাদের গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা শুল্কজনিত অতিরিক্ত খরচ বসাবে। অনেক পোশাক নির্মাতা অর্ডার বাতিল এবং নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছে।
উদাহরণ স্বরূপ, এখন যেসব ভিয়েতনামে তৈরি রানিং শু ১৫৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, সেগুলির দাম বাড়িয়ে ২২০ ডলার হবে বলে জানিয়েছে একটি শিল্প গোষ্ঠী।
একজন নিউ জার্সির বাসিন্দা বলেন,“আমি এখন সবকিছুর ডাবল কিনছি— ডাল, ময়দা, টিনজাত খাবার… সবকিছু। সামনে কী হয় বলা যায় না।”
ইউরোপের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত
ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা ব্যবস্থা নিতে তৈরি এবং কিছু মার্কিন পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করেছে— এর মধ্যে রয়েছে সয়াবিন, বাদাম, সসেজ ইত্যাদি। তবে বোরবন এবং হুইস্কির মতো কিছু পণ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে— ট্রাম্পের শুল্ক নীতির জেরে এই শিল্প ইউরোপ ছেড়ে আমেরিকামুখী হতে বাধ্য হবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজার ঘিরে ট্রাম্পের এই ‘বিশেষভাবে তৈরি’ শুল্কনীতি এখন গোটা বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে— এই লক্ষ্যভিত্তিক আঘাত আদৌ সফল হবে কি? না কি গোটা বিশ্বেই মূল্যবৃদ্ধি এবং মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলবে?
পড়ুন: আবারও মার্কিন-চিন শুল্ক যুদ্ধ, ধস শেয়ার বাজারে! আশার আলো ওয়ারেন বাফেটের দর্শনে