ভারতীয় শেয়ারবাজারে টানা অস্থিরতা বজায় রয়েছে। সপ্তাহের শেষ দিনে বাজার কিছুটা ইতিবাচকভাবে শুরু হলেও দ্রুত নিম্নমুখী হয়ে পড়ে এবং নিফটি টানা দ্বিতীয় দিন ২৩,০০০ পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের (FII) টানা শেয়ার বিক্রি, দুর্বল ত্রৈমাসিক আয় এবং শিল্প উৎপাদনের শ্লথগতি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি সেনসেক্স ১৯৯.৭৬ পয়েন্ট বা ০.২৬ শতাংশ কমে ৭৫,৯৩৯.২১ পয়েন্টে বন্ধ হয়। অন্য দিকে নিফটি ১০২.১৫ পয়েন্ট বা ০.৪৪ শতাংশ কমে ২২,৯২৯.২৫ পয়েন্টে নামে।
পতনের কারণ
১. ডলার-রুপির বিনিময় হারে অস্থিরতা
মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের ফলে ভারতীয় বাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্রমাগত পুঁজি তুলে নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলারের স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত বাজারের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) রুপির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্বল রুপি আমদানির খরচ বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. দুর্বল তৃতীয় ত্রৈমাসিক আয় (Q3 Performance)
বাজারে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের দুর্বল আয়। যদিও আয় বৃদ্ধি কম থাকার এই প্রবণতা আরও কিছু সময় ধরে চলতে পারে, বিনিয়োগকারীরা চতুর্থ ত্রৈমাসিকের (Q4) আয় রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছেন। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন পরিসংখ্যান ও শিল্প উৎপাদন সূচক (IIP) ইতিবাচক হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে পারে।
৩. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত শেয়ার বিক্রি
ফরেন ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা (FII) ভারতীয় বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি একদিনেই ৪,৪৮৬.৪ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে, যার ফলে মাসের মোট বিক্রির পরিমাণ ১৭,১২৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৯.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছেন, যা বাজারে আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। জানুয়ারি মাসেই ৮৭,০০০ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হয়েছিল, যা শেয়ারবাজারের অন্যতম বৃহৎ মাসিক বিনিয়োগ প্রত্যাহারের রেকর্ড।
৪. উচ্চ মূল্যায়ন নিয়ে উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় শেয়ারবাজারের বর্তমান মূল্যায়ন অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, বিশেষ করে অন্যান্য উন্নয়নশীল বাজারের তুলনায়। অনেক বিনিয়োগকারী এবং বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোম্পানির পারফরম্যান্স, লাভের অনুপাত (P/E রেশিও), এবং বৃদ্ধির সম্ভাবনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বাজারের সামগ্রিক মূল্যায়নের পরিবর্তে, বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট স্টকের ওপর মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আরও সতর্কতার সাথে বাজার পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।