ওয়েবডেস্ক: সরল এক কাণ্ড। ঝিরঝিরে সবুজ পাতা। আর তাকে ঘিরে থাকা সোনালি ঘণ্টা, রঙচঙে সব বল, হাওয়ায় শরীর ভাসানো রঙিন রিবন, মৃদু আলোর মালা। সবার উপরে জেগে থাকা এক লাল বড়ো তারা। এই চেনা চেহারা নিয়েই খ্রিস্টমাস ট্রি প্রতি বছর বড়োদিনে আলো করে থাকে সুখী গৃহকোণ।
এ বছরটাতেও কি তেমনই হবে?
ভালো করে ভেবে নিন তো একবার! আসলে, বড়োদিন তো শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়। বরং অনেক বেশি করে তা বাৎসরিক আনন্দের ডাক। যে কারণে ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষও বড়োদিনে খ্রিস্টমাস ট্রি-কে করে তোলেন গৃহসজ্জার অঙ্গ। তা-ই যদি হয়, তবে এ বছরেও আপনার আনন্দের গায়ে উঠবে পুরোনো বছরের সাজ?
তা হতে দেওয়া যায় না! বরং, এ বছরটায় নতুন ভাবে খ্রিস্টমাস ট্রি সাজিয়ে তুলুন। চিরাচরিত সব কিছুই থাক, সঙ্গে থাক একটা নতুন কিছু! যা হয়ে উঠবে আপনার গর্ব আর পড়শির ঈর্ষার কারণ।
কিন্তু সেই নতুন জিনিসটা কী?
তার জন্য চোখ রাখুন নীচের তথ্যে। জেনে নিন, পৃথিবীর কোন দেশ বিশেষ কী জিনিস দিয়ে সাজিয়ে তোলে তাদের খ্রিস্টমাস ট্রি। তার পর সিদ্ধান্ত নিন নিজের মতো করে। হয় বেছে নিন যে কোনো এক দেশের সাজের সূত্র। অথবা, বেছে নিন বেশ কয়েকটি!
ফ্রান্স:
ফ্রান্সে খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানো হয় লাল আপেল দিয়ে। মনে করা হয়, এই খ্রিস্টমাস ট্রি আসলে নন্দন কাননের জ্ঞানবৃক্ষ! সেই জন্যেই ঈশ্বর যা খেতে বারণ করেছিলেন আদম-ইভকে, জ্ঞানবৃক্ষের ফল সেই লাল আপেল আলো করে থাকে খ্রিস্টমাস ট্রি। পুরোনো সময়ে আসল আপেল দিয়েই সাজানো হত গাছ। একবার খরার বছরে ফলন ভালো না হওয়ায় ব্যবহার করা হতে থাকে নকল আপেল। আপনিও সেই পথেই এগোন না!
জার্মানি:
জার্মানির খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানো আর আমাদের দেশের দীপাবলি- দুইয়ে খুব একটা প্রভেদ নেই। ঠিকই ধরেছেন, এখানে খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানো হয় জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়ে। নকল নয়, আসল! ইতিহাস বলে, ষোড়শ শতকে এই প্রথার সূচনা করেছিলেন মার্টিন লুথার। শীতের ঝকঝকে আকাশে যেমন মিটমিট করে তারা, ঠিক সেই চেহারা খ্রিস্টমাস ট্রি-তে নিয়ে আসতে। তার পর জনপ্রিয়তার জোয়ারে তা পরিণত হয় ঐতিহ্যে। তবে জ্বলন্ত মোম থেকে অগ্নিকাণ্ডের একটা ভয় থেকে যায়। জার্মানি যা খুশি করুক না, আপনি না হয় নকল জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়েই সাজালেন!
ইউক্রেন:
এ দেশের খ্রিস্টমাস ট্রি ঘিরে থাকে লম্বা লম্বা মাকড়সার জাল। সঙ্গে গাছের গায়ে ঝলমল করে নানা মাপের রঙিন নকল মাকড়সা। ভাবছেন, এ আবার কেমন বিদঘুটে সাজ! তা হলে বলি, আদতে এই মাকড়সা ইউক্রেনের লোকবিশ্বাস অনুযায়ী সৌভাগ্যের প্রতীক। গল্পে মেলে, একবার এক খুব গরিব পরিবারের ঘরের মাকড়সার জাল বড়োদিনের সকালে ঈশ্বরের কৃপায় পরিণত হয়েছিল সোনা-রুপোয়। বাকিটা এ বার আপনি ভেবে দেখুন!
আমেরিকা:
আমেরিকায় খ্রিস্টমাস ট্রি ঘিরে সাজিয়ে দেওয়া হয় পপকর্নের মালা। ১৯৫০ সাল থেকে এই প্রথা ও দেশে চলে আসছে। বলা হয়, পুরোনো সময়ে যখন বাড়ির বাইরে আসল গাছ সাজানো হত, তখন পাখিদের খেতে দেওয়ার জন্যই টাঙিয়ে দেওয়া হত পপকর্নের মালা। এখন ব্যাপারটা অন্দরে ঢুকে পড়লেও ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে পুরোদস্তুর। কী ভাবছেন, ব্যাপারটা পরখ করে দেখবেন না কি?
অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়ায় বড়োদিন কিন্তু শীতের সময় নিয়ে আসে না। এখানে বরং ঝলমল করে রোদ, সাগরবেলার নীল জল জেগে থাকে তার নীচে। সেই জন্য এখানে খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানো হয় সাগরতটের বাহার নিয়ে, ব্যবহার করা হয় বড়ো বড়ো ঝিনুক! আপনিও সেই প্রথা মেনে চমকে দিতেই পারেন সবাইকে!
ফিনল্যান্ড:
ফিনল্যান্ডে খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানো হয় খড়ের ত্রিভুজ দিয়ে। বড়োদিনে তা টাঙানো হয় গাছে। পরে সেই খড়ের ত্রিভুজ গরমকাল পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয় বাড়িতে। বিশ্বাস করা হয়, তা ভালো ফলন নিয়ে আসবে। আপনি বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, ডিজাইনের দিকটা ভেবে দেখতে পারেন! খড়ের ত্রিভুজগুলো কিন্তু দেখতে খুবই ভালো!
ডেনমার্ক:
লাল আর সাদা কাগজ ভাঁজ করে, একে অপরের সঙ্গে মুড়ে তা দিয়ে বানানো হয় ছোটো ছোটো হৃদয়। তার মধ্যে থাকে বাদাম বা কোনো মিষ্টি। এর পর তা এক এক করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় খ্রিস্টমাস ট্রি-র ডালে ডালে। এ ভাবেই ডেনমার্ক সাজিয়ে তোলে তাদের খ্রিস্টমাস ট্রি। জানা যায়, বিখ্যাত লেখক হান্স খ্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন না কি এ ভাবেই পত্তন করেছিলেন প্রথার। আপনিও এ ভাবে খ্রিস্টমাস ট্রি সাজাতেই পারেন। শুধু বাড়ির ছোটোদের আগেভাগেই বলে দেবেন না যেন যে কাগজের হৃদয়ের ভিতরে কী আছে! তা হলে আর একটাও আস্ত থাকবে না গাছে!
সুইডেন:
এখানে খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানোর পিছনে কোনো বিশেষ গল্প নেই। যা আছে, তা নিখাদ দেশপ্রেম। সুইডেনে তাই খ্রিস্টমাস ট্রি ঘিরে থাকে ও দেশের জাতীয় পতাকার মালা। এটা আপনি হেসে-খেলে নিজের বাড়িতেও অনুসরণ করতে পারেন। লোকে তারিফই করবে!
আইসল্যান্ড:
এ দেশের বড়োদিনে সান্তা ক্লজের উপস্থিতি বলে কিছু নেই। বরং সান্তার জায়গা নেয় শান্তশিষ্ট ১৩টি বামন। তাই তাদের মূর্তি দিয়েই সাজানো হয় খ্রিস্টমাস ট্রি। এটা অনুসরণ করা একটু কঠিন, তাই না? তা, বদলে মজার কোনো পুতুল ব্যবহার করা যায় না?
নরওয়ে:
নরওয়ের বড়োদিনের প্রথাতেও সান্তা ক্লজকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং দেখা মেলে ‘নিসে’ নামের ছোটো ছোটো এক কাল্পনিক মানুষের। এরা লম্বায় হয় বড়ো জোর এক আঙুল! পুরো শরীরটাই ঢেকে থাকে সাদা দাড়িতে। আর তাদের মাথায় থাকে লম্বা চোঙের মতো টুপি। মানছি, ‘নিসে’-কে আপনি খুঁজে পাবেন না এ দেশের বাজারে। বিকল্পে অন্য কোনো পুতুল দিয়েও কিন্তু খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানোই যায়!
নেদারল্যান্ডস:
এই দেশের খ্রিস্টমাস ট্রি আলো করে থাকে মাঝখানটা ফাঁকা, গোল গোল এক রকমের মিষ্টি বিস্কুট। তাকে বলা হয় ‘কার্স্টক্রানসেস’। ভেবে দেখতে পারেন কিন্তু ব্যাপারটা! ‘কার্স্টক্রানসেস’ না-ই বা হল, অন্য বিস্কুটে ক্ষতি কী?
জাপান:
জাপানে যে বড়োদিন পালনের এবং খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানোর বহুল প্রচলন আছে, তা নয়! ফলে, এখানে যাঁরা খ্রিস্টমাস ট্রি সাজান, অবলম্বন করেন সাবেকি ওরিগামি শিল্প। এটা কিন্তু আপনিও করতে পারেন বাড়িতে। কাগজ কেটে বানিয়ে ফেলুন না কিছু একটা, পাখি-পশু যা খুশি! তার পর তারা হেসে উঠুক আপনার খ্রিস্টমাস ট্রি-র সাজে!