শম্ভু সেন:
ডাক নাম ছিল মন্টো। ভালো নাম কল্পনা। বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হত ৫৫। তাঁর জন্ম ১৭ মার্চ, ১৯৬২। হরিয়ানার কার্নালে।
১৪ বছর আগে নাসার মহাকাশযান ‘কলম্বিয়া’ তার মহাকাশ অভিযান সেরে বাড়ি ফেরার সময় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকতে গিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। প্রাণ হারান কল্পনা-সহ সাত অভিযাত্রী। কল্পনা চাওলাই প্রথম ও একমাত্র ভারতীয় মহিলা মহাকাশযাত্রী। কল্পনার পরে মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতা উইলিয়ামস। তিনি ভারতীয়-স্লোভেনীয় বংশোদ্ভূত, ভারতীয় নন। মহিলা মহাকাশযাত্রীদের মধ্যে কল্পনা ছিলেন ৩৩তম। দু’টি মহাকাশ অভিযানে তিনি মোট ৩১ দিন মহাকাশে ছিলেন। দ্বিতীয় অভিযান শেষে ফেরার সময় তাঁর মৃত্যু ঘটে।
কল্পনা ছিলেন সবেতেই তুখোড়। পড়াশোনায় সব সময় প্রথম পাঁচ জনের একজন। ভালোবাসতেন কবিতা আর নাচ। সাইক্লিং আর দৌড়ে ছিলেন ওস্তাদ। প্রতিটি দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান ছিল তাঁর বাঁধা।
পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে তিনি ১৯৮২-তে আমেরিকা যান। ১৯৮৪-তে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে মাস্টার অফ সায়েন্স হন। ১৯৮৮-তে নাসায় যোগ দেন। উলম্ব/সংক্ষিপ্ত ওড়া ও নামার ক্ষেত্রে কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডিনামিক্সের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বিভিন্ন পদ অলংকৃত করেন। নাসা রিসার্চ সেন্টারে ওভারসেট মেথডস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। কল্পনা ছিলেন স্বীকৃত পাইলট। বাণিজ্যিক উড়ান চালানোর ক্ষমতা ছিল তাঁর। সি-প্লেন এবং বহু ইঞ্জিন-বিশিষ্ট প্লেন চালানোর লাইসেন্স ছিল তাঁর। তিনি স্বীকৃত ফ্লাইট ইনস্ট্রাকটর হয়েছিলেন এবং ১৯৮৩ সালে বিমানচালনা বিষয়ক মার্কিন লেখক জাঁ-পিয়ের হ্যারিসনকে বিয়ে করেন।
১৯৯১ সালে কল্পনা মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদন গৃহীত হওয়ার পর তিনি নাসার অ্যাস্ট্রোনট কোরের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং সদস্যপদ পান। এর ছ’ বছর পর কল্পনার প্রথম মহাকাশ অভিযান। মহাকাশযান কলম্বিয়া এসটিএস ৮৭-তে মিশন বিশেষজ্ঞ হিসাবে। সে বার তিনি ৩৭২ ঘণ্টা মহাকাশে ছিলেন এবং পৃথিবীর কক্ষপথে ২৫২ বার পরিক্রমায় ১০০ লক্ষ মাইলেরও বেশি পরিভ্রমণ করেন।
২০০০ সালে কলম্বিয়া এসটিএস ১০৭-এর মহাকাশ অভিযানে কল্পনা ফের মনোনীত হন। কিন্তু এই অভিযান নানা কারণে বার বার বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০০৩-এর ১৬ জানুয়ারি ফের মহাকাশযাত্রা কল্পনার। এবং ১ ফেব্রুয়ারি ফেরার পথে সেই দুর্ঘটনা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় টেক্সাসের উপরে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সাত জন অভিযাত্রীই মারা যান।
মৃত্যুর পরে অনেক সম্মান জুটেছে কল্পনার। তাঁর নামে একটি গ্রহাণু ও একটি উপগ্রহের নামকরণ করা হয়েছে। মঙ্গল গ্রহে কলম্বিয়া হিলস অঞ্চলে একটি পাহাড়ের নাম হয়েছে চাওলা হিল। এ ছাড়াও যে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়েছেন সেখানকার বহু ডর্মিটরি, প্রবেশপথের নামকরণ হয়েছে তাঁর নামে। তাঁর নামে চালু হয়েছে বৃত্তি, পদক। তাঁকে বহু মরণোত্তর সম্মান দেওয়া হয়েছে। যেমন মার্কিন কংগ্রেসের স্পেস মেডল অফ অনার, নাসা স্পেস ফ্লাইট মেডল, নাসা ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস মেডল ইত্যাদি।
কল্পনা বলেছিলেন, “তোমরা যখন তারা আর নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে চেয়ে থাকবে তখন তোমাদের মনে হবে তোমরা একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে আসনি, এসেছ এই সৌরজগৎ থেকে।” কল্পনাকে স্মরণ করি আর বার বার মনে পড়ে তাঁর এই কথা।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।