প্রবন্ধ
বিজেপির বাজপেয়ীযুগ শেষ, মমতার কাছে অটলের দূত ছিলেন অরুণ


অটলবিহারী বাজপেয়ীজির ঘরানার রাজনীতিবিদ হলেও রাজনাথ সিং রাজধানী দিল্লির দিলওয়ালা নন। দিল্লির তখত্ তাউস আর মসনদের মানচিত্র তাঁর হাতের তালুতে আঁকা নয়, যা ছিল জেটলি ও সুষমার। বাজপেয়ীজি শয্যাগত হওয়ার পর আরেক জন মহীরুহ ছায়া দিতে পারতেন উচ্চাভিলাষী দলকে। কিন্তু মার্গদর্শক মণ্ডল যে বিজেপির আখরি গ্যারেজ তা বোঝানো হল। লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো চাণক্য তাঁর জীবদ্দশাতেই দেখলেন, বিজেপিতে তিনি মূল্যহীন। শিষ্যকুলে যাঁকে শীর্ষে রেখে প্রখর প্রচ্ছায়ায় ঘিরে ফেলা হল আডবাণীর অবয়ব, তিনি ২০১৪-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী। এবং একে একে একদা লৌহপুরুষের হাতে গড়া যে ক’ জন জুনিয়রকে নিয়ে সাজানো হল নয়া জমানার দরবারি চালচিত্র তাঁদের মধ্যে থাকলেন বেঙ্কাইয়া নাইডু, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, অনন্তকুমার, রবিশঙ্কর প্রসাদ।
আরও পড়ুন সে দিনের স্মৃতি: ফিল গুডে হাজারিকার হাহাকারের গান, হাসিমুখে সহনশীল সুষমার প্রস্থান
বেঙ্কাইয়াকে দেওয়া হল সাংবিধানিক দায়িত্ব। দৈনন্দিন পলিটিকিংয়ের বাইরে পড়ল বেঙ্কাইয়ার লক্ষ্মণরেখা। অনন্তকুমারের মৃত্যু মারাত্মক ক্ষতির সূচনা করল বিজেপির দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতাদের সারিতে। প্রমোদ মহাজনের অকাল মৃত্যু যে গোষ্ঠীকে কার্যত অকেজো ও সম্পূর্ণ আডবাণীনির্ভর করে তোলে তাদের মধ্যে একমাত্র সুষমা স্বরাজ ছাড়া প্রত্যেকই চশমার কাচের রং বদলে নেন। এবং অরুণ জেটলি আগাগোড়া সঙ্গী থেকেও শেষরক্ষা করতে পারেননি। শরীর প্রচণ্ড খারাপ, তৎসত্ত্বেও সরকারের সিদ্ধান্ত ও বিতর্কিত অবস্থানের স্বপক্ষে ব্লগ লিখেছেন। এই শেষের ক’টা দিন শুধু ব্লগে তাঁর উত্তর মেলেনি।
সুষমা ও অরুণ অনেক দিক থেকেই সতীর্থ ছিলেন বলে খুব ভালো সমীকরণ ছিল দু’জনের। কিন্তু একটি প্রশ্নে দু’ জনের মত কখনও মেলেনি। সেই প্রশ্নটি আডবাণী। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কাল থেকেই আডবাণীর সঙ্গে সঙ্গত অরুণের। সংঘের নীলনয়ন বালক বরাবরই। আডবাণীর সংস্পর্শে জীবন আরও উজ্জ্বল। শেষ পর্যন্ত হাওয়ালা মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট থেকে আডবাণীকে বেকসুর করে আনা তাঁর কৌঁসুলি জীবন ও সক্রিয় রাজনৈতিক কার্যকলাপের সন্ধিস্থলে একটা মাইলফলক।
তার পর প্রায় এক দশক আডবাণীর শিবিরে নিজেকে চোস্ত করেছেন রাজনীতি ও কূটনীতিতে। বিচারধারা আগেই তীব্র ছিল। তাতে শাণ দিয়েছেন দক্ষ গুরুর সান্নিধ্যে। যে কারণে, বাহ্যত নরমপন্থী বলে মনে হলেও তিনি হিন্দুত্বের বিচারধারার মূল্যে কখনও সমঝোতা করেননি। এবং মিষ্টভাষী হয়েও কখনও কঠোর কথা বলতে পিছপা হননি। আডবাণীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যই তাঁকে দলের স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে তৈরি ও সফল করে। সংগঠনে বড়ো দায়িত্ব দেয়। তবে শারীরিক সমস্যা অনেক দিন ধরেই জেটলির রাজনৈতিক কেরিয়ারের কাঁটা হয়েছে। ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও শেষে কিডনির গোলযোগ তাঁর অকালে চলে যাওয়ার কারণ। ওকালতিতে বিরাট সাফল্য তাঁকে বিপুল বিত্তবান করে তুলেছিল। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিচালনার খুঁটিনাটি।
বাজপেয়ীজির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ১৯৯৮ নাগাদ। ধীরে ধীরে ধীরে বাজপেয়ীজির মন্ত্রমুগ্ধকর ব্যাক্তিত্ব, প্রমোদ মহাজন, যশবন্ত সিংয়ের সান্নিধ্য তাঁকে অটলবিহারীর আরও বেশি কাছাকাছি নিয়ে যায়। ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকে আডবাণীর সঙ্গে। রাজনীতির রংও বদলাতে থাকে। এনডিএ গড়া ও সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক্স জোটানো ও জোগানোর অন্যতম মূল দায়িত্ব ছিল জেটলির। ষ্ট্র্যাটেজি কাম পাবলিক রিলেশনস – এই দ্বিমুখী কুশলতায় কুশলী জেটলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে তোলা ও তাকে বড়ো করার ক্ষেত্রে বিরাট অণুঘটক ছিলেন। তৃণমূলের জন্মের কার্যকারণে বাজপেয়ী, আডবাণী-সহ বিজেপির নেতৃত্ব ও এনডিএ-র আহ্বায়ক জর্জ ফার্নান্ডেজ সম্পূর্ণ ভাবে জড়িত ছিলেন বলেই তাঁদের নির্দেশে মমতার সঙ্গে লিয়াজঁ করতেন অরুণ। নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন চলাকালীন চার্টার্ড বিমানে চেপে আসতেন অরুণ যাবতীয় লজিস্টিক্স জোগাতে। তখন সদ্য বঙ্গ কংগ্রেসের বিভাজনের বীজ থেকে জন্মানো তৃণমূলের অত বড়ো সংসদীয় নির্বাচনে লড়ার সঙ্গতি ছিল না। সে কথা মনে রেখেই অটলজি পাঠাতেন অরুণকে। মমতার দলের নাম্বার টু হিসেবে মুকুল রায়ের সঙ্গে স্বভাবতই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন নেত্রী। সেই পরিচয় ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছেছিল। পরে আবার যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গেলেন মুকুল তখনও তিনি প্রথম অরুণ জেটলিরই দ্বারস্থ হন দিল্লিতে নর্থ ব্লকের অর্থ মন্ত্রকে।

তৃণমূল গড়ে ওঠার সময় বিজেপির দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতারা প্রত্যেকেই মমতার ঘনিষ্ঠ হন। বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরাও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। ছিলেন মোদীও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাঁদের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো ফাটল ধরেনি তাঁরা হলেন সুষমা ও জেটলি। এ ছাড়া রাজনাথ, বেঙ্কাইয়া, উমা প্রমুখের সঙ্গে আজও সুসম্পর্ক ও সৌজন্য অবিকৃত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। এটা অবশ্যই বাজপেয়ীজির ঘরানা, যাকে উজ্জ্বল করেছেন জেটলি ও সুষমার মতো নক্ষত্র।
কিন্তু বুদ্ধিজীবী ও তাত্ত্বিক নেতাদের যা হয়, জেটলির বরাতেও তা-ই জুটেছিল। দল ও সরকার পরিচালনায় যথযোগ্য অবদান রেখেও কখনও জননেতা হতে পারেননি জেটলি। চিরকাল গুজরাত, মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। লোকসভায় জেতার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। ২০১৪-র তথাকথিত মোদীলহরও অমৃতসর থেকে জেটলিকে জেতাতে পারেনি। পাটিয়ালার মহারাজা, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের কাছে হেরেছেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে মোদী অমৃতসরে প্রচারে গিয়ে প্রাণপণে চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেননি। মোদীলহর বলে সারা দেশে যে কোনো হাওয়াবাতাস ছিল না, জেটলির হারই তার প্রমাণ।
ইতিহাস মিথ্যে বলে না। বরং সত্যের খেই ধরিয়ে দেয়। নরমপন্থী বলে পরিচিত জেটলি দলের কর্মসূচি ও বিচারধারায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন বলেই, ব্যক্তিতন্ত্রের পূজারি কদাচ ছিলেন না। সে জন্যই সমস্ত নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচন থেকে রাজ্য পরিচালনা, সব ক্ষেত্রেই জেটলি পথপ্রদর্শক। গুজরাত গড়ে মোদীর প্রতিষ্ঠা, ২০০২-এর গণহত্যা-উত্তর আইনি কাঠগড়া থেকে বিজেপি নেতাদের রেহাই, মধ্যপ্রদেশে উমা ভারতী, ছত্তীসগঢ়ে রমন সিংয়ের অভিষেক ও প্রতিষ্ঠা, সবেতেই ছিলেন অরুণ।
দ্বিতীয় প্রজন্মের স্টলওয়ার্ট এবং দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দের নাটবল্টু চেনা আইনজীবী অরুণকে হেরে যাওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রিসভায় নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বের দু’টি পদ দিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু সার্বিক ভাবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতায় এগিয়ে থাকা অরুণ কোনো কারণে কি অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিলেন? যদিও জনমোহিনী ভাবমূর্তিতে মোদী এগিয়ে ছিলেন বরবরই। নানা ইস্যুতে বিতর্ক অনিবার্য হলেও তা বাধেনি। কারণ অরুণ বলতেন, সরকার চালানোর ব্যাপারে শেষ কথা বলার অধিকার প্রধানমন্ত্রীরই থাকবে। তবুও শহুরে সম্ভ্রম, আভিজাত্য ও ঝকঝকে ব্যক্তিত্বের সুষমা, অরুণকে বিরোধীদের কাছেও প্রিয় করে তুলেছিল। এই সর্বজনীন গ্রহহণযোগ্যতাই তাঁকে দলে ও সরকারে ঈর্ষণীয় করেছিল।
সমঝোতা পন্থী ও আগাগোড়া সংঘাত এড়িয়ে চলা অরুণকেও শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় সরে যেতে হল কি শুধুই স্বাস্থ্যের কারণে? এ প্রশ্নটা পরিশীলিত ও সহনশীল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে জড়িত হয়েই থাকে সব সময়। বিশেষ করে সংযত ও মিতভাষণ এবং অনাটকীয়তা যাঁদের বৈশিষ্ট্য। স্বাভিমান তবুও জাগ্রত হয়। সেটা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। সুষমা যেমন আগাম বলে দেন আর ভোটে নেই তিনি, তেমনি আরেকটু অন্য ভাবে অরুণ মোদীকে লেখেন, নরেন্দ্র ভাই, আমাকে এ বার বাদ দিন। মোদী ছুটে যান, যদিও তাঁর লিস্টে দেখা যায় নির্মলার নাম। রাজনাথ সুস্থ ও সক্ষম। বিগত সরকারের স্বরাষ্ট্রে কোনো পদস্খলনও নেই। কাশ্মীর? পুলওয়ামা? সে তো পিএমও-এর, এনএসএ-র চারণভূমি। কিন্তু অমিত এলেন। ইদানীং সংকেত পাচ্ছিলেন অনেকেই, যে তাঁদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। মন্ত্রণাও এখন মন কি বাত। ঠিক এই সময়ে কিছুটা কাকতলীয় ভাবেই সুষমার পরে অরুণের শান্ত ধীর পায়ে প্রস্থান রঙ্গমঞ্চ থেকে। অনেক কথা যাও যে বলি কোনও কথা না বলি…।
ওঁরা শুধু প্রস্থানটাই ভেবেছিলেন। মহাপ্রস্থান নয়।
প্রবন্ধ
পয়লা বৈশাখ এমন এক আনন্দ-উৎসব যার কোনো সংজ্ঞা নেই
এক প্রাণের উৎসব এই পয়লা বৈশাখ যেখানে চৈত্র সেল আছে, মায়ের ঘর ঝাড়ার স্মৃতি আছে, সোনার দোকানের সামনে হালখাতার লম্বা লাইন আছে, নন্দনে রবীন্দ্রসংগীত আছে আবার সেই দূর আদিবাসী গ্রামে কিছু মানুষের উৎসব আছে।


শক্তি চৌধুরী
এক জন লেখক যখন কোনো একটি বিশেষ দিন বা উৎসবকে কেন্দ্র করে কিছু লিখবে স্থির করে তখন তার প্রথম লক্ষ্য থাকে ওই বিশেষ দিন বা উৎসবের আঙ্গিকটা আগে বর্ণনা করা। আর ঠিক এই জায়গায় আমি মহা ফ্যাসাদে পড়েছি। ইন্টারনেট ও বেশ কিছু বই নিয়ে ইতিহাস খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে দেখি, কী সর্বনাশ! ওই পৈতেধারী হিন্দু ব্রাহ্মণদের দোকানে দোকানে দাপাদাপির মূলে তো এক মুসলিম সম্রাট।
আমি জানি আপনি মনে মনে কী বলছেন — “আঃ, এর মধ্যে আবার ধর্ম নিয়ে টানাটানি কেন, মশাই?” ঠিক তা-ই, আমিও এটাই বলতে চাইছি। ইতিহাস বলছে, এই দিনটির সঙ্গে ধর্মের কোনো রকম যোগাযোগ নেই। ধর্ম নাক গলিয়েছে তার নিজের স্বার্থে। যাক হেঁয়ালি রেখে বরং ইতিহাসটাই একটু ছোটো করে বলে নিই। ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার হোক আগে।

মূল হিন্দু সংস্কৃতির যে দিনপঞ্জি নির্ধারিত হত সূর্যের অবস্থানের উপর নির্ভর করে, সে হিসাবে বহু শতক আগেই ১২ মাস আলাদা আলাদা করে নিয়ে বছর ভাগ করা হত। হিন্দু সৌরবছরের প্রথম দিন অসম, বঙ্গ, কেরল, মণিপুর, নেপাল, ওড়িশা, পঞ্জাব, তামিলনাডু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ। আর ঠিক এইখানেই তৈরি হল সমস্যা। সমস্যা অর্থাৎ প্রশাসনিক সমস্যা।
ভারতে তখন মোগল শাসনব্যবস্থা চালু। আর মুসলিম দিনপঞ্জি ঠিক হত হিজরি পদ্ধতি মেনে। এই পদ্ধতি মূলত চাঁদের অবস্থানভিত্তিক, যার সঙ্গে আমাদের গ্রেগরি বা হিন্দু পদ্ধতির অনেকটাই ফারাক। দেখা গেল কৃষকদের খাজনা দেওয়ার সময় তাদের ঘরে ফসল নেই। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। তাই সম্রাট আকবর সিদ্ধান্ত নেন, একটা সম্পূর্ণ নতুন দিনপঞ্জি তৈরি করার যা প্রজাদের এই নিত্য সমস্যা থেকে কিছুটা রেহাই দেবে। সম্রাটের আদেশমতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতুল্লাহ শিরাজি সৌর-সন এবং আরবি-হিজরি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
অতএব আধুনিক ১ বৈশাখ পুরোপুরি একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত যা সত্যি সত্যি জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যেই গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই দিনটি পালনের ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায় খাজনা জমা করার পরের দিন ভূস্বামীরা স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করতেন। ক্রমে ক্রমে এটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। পরে ব্যবসায়ীরাও এই বিশেষ দিনটিতে তাদের ধারের খাতা বন্ধ করে নতুন করে খাতা শুরু করেন এবং সব পুরোনো দেনা-পাওনা মিটিয়ে নেন। তাই এটি প্রায় বাংলা আর্থিক বছরের সমাপ্তি সূচিত করে। তবে এখন অবধি যা যা নিয়ে আলোচনা করলাম সবই মূলত সমাজে আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত মানুষদের কথা।

১ বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস কিন্তু শুধুই শহুরে শিক্ষিত বা আর্থিক ভাবে শক্তিশালী মানুষের মধ্যেই সীমিত নয়। ঐতিহাসিক ভাবে এটি সর্বজনীন। বাংলা নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে পুব বাংলার (অধুনা বাংলাদেশ) তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি) উপজাতীয়দের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয়-সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’ আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত হয়। বৈসাবি হল পাহাড়িদের সব চেয়ে বড়ো উৎসব। এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসুক বলে আখ্যা দিলেও গোটা পার্বত্য এলাকায় তা ‘বৈসাবি’ নামেই পরিচিত। বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিজু এই নামগুলির আদ্যক্ষর নিয়ে বৈসাবি শব্দের উৎপত্তি। বছরের শেষ দু’ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন, এই তিন দিন মিলেই মূলত বর্ষবরণ উৎসব ‘বিজু’ পালিত হয়। পুরোনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করা উপলক্ষ্যে পাহাড়িরা তিন দিনব্যাপী এই বর্ষবরণ উৎসব সেই আদিকাল থেকে পালন করে আসছেন। এ উৎসব উপলক্ষ্যে পাহাড়িদের বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আদিবাসী মেলার আয়োজন করা হয়।
পাঠক এ বার বুঝুন কেন আমি এই লেখার একেবারে প্রথমেই বলেছিলাম এই উৎসবকে কোনো একটা নির্দিষ্ট প্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে যাওয়া খুব বিভ্রান্তিকর। বাংলার এক প্রাণের উৎসব এই পয়লা বৈশাখ যেখানে চৈত্র সেল আছে, মায়ের ঘর ঝাড়ার স্মৃতি আছে, সোনার দোকানের সামনে হালখাতার লম্বা লাইন আছে, নন্দনে রবীন্দ্রসংগীত আছে আবার সেই দূর আদিবাসী গ্রামে কিছু মানুষের উৎসব আছে। তাই এ আমাদের এক আনন্দ উৎসব। যার কোনো নির্দিষ্ট বিভাগ নেই, সংজ্ঞাও নেই।
আরও পড়ুন: স্বাগত ১৪২৮, জীর্ণ, পুরাতন সব ভেসে যাক, শুভ হোক নববর্ষ
প্রবন্ধ
First Man In Space: ইউরি গাগারিনের মহাকাশ বিজয়ের ৬০ বছর আজ, জেনে নিন কিছু আকর্ষণীয় তথ্য
আজ থেকে ঠিক ৬০ বছর আগে ১৯৬১-এর ১২ এপ্রিল মহাকাশে হিয়েছিলেন গাগারিন।


খবরঅনলাইন ডেস্ক: ‘মানুষ চূর্ণিল আজ নিজ মর্ত্যসীমা’ – ১৩ এপ্রিল, ১৯৬১। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় আট কলম জুড়ে ব্যানার হেডিং। মানুষ বিস্মিত, হতচকিত – মহাকাশে পৌঁছে গিয়েছে মানুষ?
তখনকার দিনে ঘরে ঘরে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার সব চেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল সংবাদপত্র। রেডিও ছিল, তবে তা ঘরে ঘরে ছিল না। আর টিভি তো ক’টা দেশে ছিল, তা হাতে গোনা যায়। তাই সংবাদপত্রই মূলত পৌঁছে দিল সেই খবর।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার প্রত্যেকটি কাগজে সে দিন প্রথম পাতার খবর – মানুষের মহাকাশ জয়। মানব-ইতিহাসে সব চেয়ে স্মরণীয় ঘটনা।
দিনটা ছিল ১২ এপ্রিল, ১৯৬১। সোভিয়েত নভশ্চর ইউরি গাগারিন মহাকাশযান ভস্তক ১-এ চেপে মর্ত্যের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পৌঁছে গেলেন মহাকাশে। মহাকাশজয়ী প্রথম মানব হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকলেন গাগারিন।
যুদ্ধবিমানের বিমানের পাইলট গাগারিন মহাকাশে ছিলেন ১ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট। তাঁর মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল অধুনা কাজাখস্তানের বৈকনুর কসমোড্রোম থেকে। পশ্চিম রাশিয়ার সিটি অফ এঞ্জেলস-এর কাছে গাগারিনের মহাকাশযান পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করে। মহাকাশযান থেকে প্যারাশ্যুটে লাফিয়ে পড়েন গাগারিন, নিরাপদে পৌঁছে যান ভূপৃষ্ঠে।
৬০ বছর আগে গাগারিনের সেই মহাকাশ-অভিযান মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে মানুষের গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দিল। এর পর থেকে মানুষ মহাকাশ নিয়ে কী করল, সে সব আজ আর কোনো অজানা তথ্য নয়।
ভস্তক ১ মিশন নিয়ে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য
(১) বৈকানুর কসমোড্রোম থেকে যে মুহূর্তে ভস্তক ১ যাত্রা শুরু করেছিল, সেই মুহূর্তে গাগারিনের মুখ থেকে একটা শব্দ বেরিয়ে এসেছিল – “পোয়েখালি!” (যাওয়া যাক)।
(২) যে ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, ঠিক সেই ভাবে চালিত হয়নি মিশন। যে উচ্চতায় কক্ষপথে ভস্তক ১-এর প্রবেশ করার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবেশ করেছিল। এর অর্থ মহাকাশযানটির ব্রেক ফেল করতে পারত। তা হলে আরও বেশি ক্ষণ গাগারিনকে মহাকাশে থাকতে হত। তবে তা হয়নি। ব্রেক ভালো ভাবেই কাজ করেছে এবং ফেরার সময় গাগারিন পরিকল্পনামাফিকই পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করেছেন।
(৩) জানা যায়, ভূপৃষ্ঠ ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাগারিনকে প্রথম দেখেছিলেন এক কৃষক ও তাঁর কন্যা। সেই সময়টা ছিল ঠান্ডা যুদ্ধের। গাগারিনকে তাঁরা মার্কিন গুপ্তচর মনে করেছিলেন। তাঁদের বোঝাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল গাগারিনকে।
(৪) গোটা মিশনটা নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন চরম গোপনীয়তা অবলম্বন করেছিল। গাগারিন পৃথিবীতে নিরাপদে পৌঁছে যাওয়ার পরে ইউরি গাগারিনের এই অবিস্মরণীয় কৃতিত্বের খবর প্রকাশ করা হয়। সারা বিশ্ব যেন একটা ধাক্কা খায়, বিশ্বাস করে উঠতে পারে না ঘটনাটা – মনে মনে ভাবে, এমনও হয়!
(৫) গাগারিনের মহাকাশ-বিজয় উপলক্ষ্যে উৎসব-সমারোহের আয়োজন করা হয় সেন্ট পিটার্সবার্গে। হাজার হাজার লোক তাতে যোগ দেন। অসংখ্য মডেল রকেট আকাশে ছোড়া হয়। সেই সঙ্গে চলে আতসবাজির নানা খেলা।
প্রবন্ধ
Bengal Polls 2021: কোচবিহার জেলার ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রে লড়াইয়ে কে কোথায়
২০২১-এ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গোটা রাজ্যে মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপি। তার নিরিখে বুঝতে হবে কোচবিহারের ফলাফল।


তপন মল্লিক চৌধুরী
উত্তর বাংলার কোচবিহার জেলায় ন’টি বিধানসভা কেন্দ্র। ২০১৬-তে ন’টির মধ্যে ৮টি জিতেছিল তৃণমূল, একটিতে বামেরা। ২০১৯-এর লোকসভায় পাশা উলটে যায়। তৃণমূলকে টেক্কা দিয়ে বিজেপি লিড নিয়েছিল মাথাভাঙা, কোচবিহার উত্তর ও দক্ষিণ, দিনহাটা ও নাটাবাড়িতে। ২০২১-এ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গোটা রাজ্যে মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপি। তার নিরিখে বুঝতে হবে কোচবিহারের ফলাফল।
এ বার কোচবিহারে দিনহাটা ও নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্র দু’টি আলোচনায় সব থেকে এগিয়ে। এখানে আগে যাঁরা ছিলেন তৃণমূলে, একুশে তাঁরাই বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ছেন। তাঁদের মধ্যে একজন নিশীথ প্রামাণিক, অন্য জন মিহির গোস্বামী। নিশীথ দিনহাটায় তৃণমূলের উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে ভোটে লড়ছেন আর মিহির নাটাবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে। তার মানে এখানে জেলা তৃণমূলের দুই প্রাক্তন সভাপতির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে রবিবাবু ১৬ হাজারের বেশি ভোটে জয় পেলেও গত লোকসভায় সাড়ে ১৮ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। তার পর থেকে বিজেপি এখানে সাংগঠনিক শক্তি যথেষ্ট মজবুত করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে রবিবাবু দিনরাত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা মিহির গোস্বামীও কম যাচ্ছেন না।
দিনহাটার প্রার্থী উদয়ন বাবা কমল গুহের হাত ধরে রাজনীতি শুরু করে রাজ্যে পালাবদলের পর ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এই কেন্দ্রের বিধায়কও হন। বাম ও ডান, দু’ দলের বিধায়ক হওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর। উদয়নকে কোণঠাসা করতেই যে সাংসদ নিশীথকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা সেটা সকলেই বুঝছেন। দিনহাটায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মারাত্মক। দলের বিধায়ক-প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পথে নেমে আন্দোলন করেছে কর্মী-সমর্থকরা। অন্য দিকে সাংসদপদ ছেড়ে বিধায়কপদের জন্য প্রার্থী হওয়া নিশীথকেও খুব সহজে মেনে নিতে পারছে না দিনহাটাবাসী। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সংযুক্ত মোর্চার আব্দুর রাউফের (ফরওয়ার্ড ব্লক) সম্ভাবনা রয়েছে।
কোচবিহার দক্ষিণের লড়াইটা তৃণমূলের নবীন প্রার্থী অভিজিৎ দে ভৌমিক বনাম বিজেপির অভিজ্ঞ প্রার্থী নিখিল রঞ্জন দের। কারণ তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী এ বার দল বদলে নাটাবাড়িতে বিজেপি প্রার্থী। তাঁর জায়গায় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অভিজিত দে ভৌমিককে (হিপ্পি) লড়তে হচ্ছে বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে বামপন্থী প্রার্থী অক্ষর ঠাকুর এক সময় এই এলাকার বিধায়ক ছিলেন। সব মিলিয়ে এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা।
প্রসঙ্গত, উত্তর কোচবিহার কেন্দ্রে ২০১৬-তে তৃণমূলের পরিমল বর্মনকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নগেন্দ্রনাথ রায়। এ বারও তিনি বামেদের প্রার্থী। ২০১৯-এ এই কেন্দ্র থেকে ২৭ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নিশীথ প্রামাণিক। এ বার এখানে বিজেপি প্রার্থী দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রায়। উলটো দিকে তৃণমূল মাথাভাঙার বিধায়ক তথা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে প্রার্থী করেছে। সব মিলিয়ে জোরদার লড়াই।
মাথাভাঙা বিধানসভা কেন্দ্রেটি তফশিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত। ২০১৬ সালে তৃণমূল প্রার্থী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন ৩২ হাজারের বেশি ভোটে জয় পেলেও গত লোকসভা নির্বাচনে এখানে ২১ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। এ বার বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের পরিবর্তে হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক গিরীন্দ্রনাথ বর্মন হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। বিজেপি প্রার্থী করেছে পেশায় কৃষক সুশীল বর্মনকে। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী অশোক বর্মন (সিপিএম)। এখানে ভোটের হাওয়া ততটা গরম নয়।
লোকসভায় কোচবিহারে ভরাডুবি হলেও সিতাইয়ে তৃণমূল বিজেপির থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। কিন্তু জেতার পর এক মাসের বেশি বাড়িছাড়া ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বর্মাবসুনিয়া। এ বারও জগদীশবাবু দলের প্রার্থী। বিজেপি এখানে প্রার্থী করেছে দীপক রায়কে। তাঁকে ঘিরে বিজেপির মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সংযুক্ত মোর্চর প্রার্থী কেশব রায় (কংগ্রেস)। এখানে প্রচারে হাওয়া গরম হচ্ছে কান্তেশ্বর সেতু কার আমলে তৈরি তা-ই নিয়ে। তৃণমূল বিধায়ক জগদীশবাবুর দাবি সেতুর শিলান্যাস হয় তাঁর হাত দিয়ে। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কেশববাবু বলছেন, তৃণমূল মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।
তুফানগঞ্জে বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী। এ বার এখানে প্রার্থী জেলা সভাপতি মালতী রাভা। মালতী দেবী ২০০১ ও ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন। তিনি সম্প্রতি কোচবিহারে থাকলেও তাঁর আসল বাড়ি তুফানগঞ্জে। অন্য দিকে তৃণমূল এখানে প্রার্থী করেছে প্রণবকুমার দেকে। কিন্তু তিনি আলিপুরদুয়ারের লোক হওয়ায় দলের অন্দরে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কংগ্রেসের রবিন রায়কেও মানতে নারাজ কংগ্রেস, নিজেদের মধ্যেই চলছে লাগাতার অসন্তোষ।
মেখলিগঞ্জে এ বার ফরওয়ার্ড ব্লকের দুই প্রাক্তন পরেশ অধিকারী বনাম দধিরাম রায়ের লড়াই। মেয়ের চাকরি নিয়ে বড়োসড়ো বিতর্কে জড়ানো পরেশ অধিকারীকে লোকসভায় প্রার্থী করার খেসারত দিয়েছে তৃণমূল। তার পরেও তিনি বিধানসভায় প্রার্থী। উলটো দিকে বিজেপি প্রার্থী দলের মণ্ডল সভাপতি দধিরাম রায়। ২০১৬-র বিধানসভায় তৃণমূল ৬০০০ ভোটে জিতলেও লোকসভা ভোটে পিছিয়ে ছিল। এখানে প্রচারে সেতু কারা তৈরি করল তা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব বেঁধেছে। দু’ জনেই দাবি করেন এই সেতু তাঁদের তৈরি। যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী গোবিন্দ রায় অন্য জেলার বাসিন্দা হওয়ার দরুন প্রথম থেকে কিছুটা ব্যাকফুটে।
শীতলকুচি কেন্দ্রে মূল লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের। তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায় মানুষকে উন্নয়নের বার্তা দিতে চাইছেন। অন্য দিকে সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী সুধাংশু প্রামাণিক তাঁর বাবা প্রয়াত সুধীর প্রামাণিক ৩০ বছর বিধায়ক থেকে এলাকার উন্নয়নে কত কাজ করেছিলেন সেটাই প্রচারে সামনে রাখছেন। বিজেপি প্রার্থী বরেনচন্দ্র বর্মনও হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। এই আসনটিতে বিজেপি খুব একটা এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: Bengal Polls 2021: উত্তরবঙ্গের চা বাগানে অ্যাডভান্টেজ মমতা
-
রাজ্য2 days ago
স্বাগত ১৪২৮, জীর্ণ, পুরাতন সব ভেসে যাক, শুভ হোক নববর্ষ
-
কলকাতা2 days ago
মাস্ক থাকলেও কালীঘাট-দক্ষিণেশ্বরে শারীরিক দুরত্ব চুলোয়, গা ঘেষাঘেঁষি করে হল ভক্ত সমাগম
-
রাজ্য2 days ago
Bengal Polls 2021: ভয়াবহ কোভিড সংক্রমণের মধ্যে কী ভাবে ভোট, শুক্রবার জরুরি সর্বদল বৈঠক ডাকল কমিশন
-
কোচবিহার2 days ago
Bengal Polls 2021: শীতলকুচির গুলিচালনার ভিডিও প্রকাশ্যে, সত্য সামনে এল, দাবি তৃণমূলের