প্রবন্ধ
রথযাত্রায় কাঠামোপুজো, বনেদিবাড়ির পুজোর সূচনা

শুভদীপ রায় চৌধুরী
আজ আষাঢ় ১৪২৭, মঙ্গলবার। রথযাত্রার পুণ্যতিথিতে আজ বিভিন্ন বনেদিবাড়ির এ বছরের শারদীয়া দুর্গাপুজোর সূচনা হবে। এই রথযাত্রা থেকে উলটোরথ অবধি বঙ্গের বহু প্রাচীন বনেদিবাড়িতে কাঠামোপুজো অনুষ্ঠিত হবে নিষ্ঠার সঙ্গে, যা এত বছর ধরে হয়ে আসছে। দেবী কাত্যায়নীর আরাধনা এই সমস্ত পরিবারে বহু বছর ধরে হয়ে আসছে এবং বর্তমান সদস্যরা সেই ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছেন। তাই আমি আজ কয়েকটি পরিবারের কাঠামোপুজোর কথাই তুলে ধরলাম।
দর্জিপাড়া মিত্রবাড়ি

এই বাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয় রথের দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে। দর্জিপাড়া মিত্রবাড়ি বলতেই সবাই এক ডাকে চেনেন নীলমণি মিত্রের বাড়িকে। নীলমণি মিত্রের নাতি রাধাকৃষ্ণ মিত্র এই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। এই বাড়ির পুজো হয় বৃহৎনান্দীকেশ্বর পুরাণ মতে। ঠাকুরের চালচিত্র হয় মটচৌরির আদলে। ষষ্ঠীর দিন কুলদেবতা শ্রীশ্রীরাজরাজেশ্বরকে সাক্ষী রেখে পুজো শুরু হয়। বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই বাড়ির সন্ধিপূজায় ১০৮ পদ্মের পরিবর্তে ১০৮ অপরাজিতা নিবেদন করা হয়।
জোড়াসাঁকোর দাঁ পরিবার
এই বাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনাও হয় রথের দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে। এমন প্রবাদ রয়েছে, দেবী এই দাঁ বাড়িতেই আসেন গয়না পরতে। এই বাড়ির পুজোর প্রতিষ্ঠাতা গোকুলচন্দ্র দাঁ। ১৮৪০সালে পুজো শুরু হয়। পরিবারের বংশধর শিবকৃষ্ণ দাঁ জার্মানি আর প্যারিস থেকে হিরে, এমারেল্ড জুয়েলারি আর একচালার চালচিত্র সাজানোর জন্য তবক নিয়ে এসেছিলেন। দেবী আকারে প্রায় ১২ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া। দেবী এখানে পূজিত হন বৈষ্ণবমতে, তাই বলিপ্রথা নেই এই পরিবারে। এই পরিবারের বৈশিষ্ট্য অষ্টমীর দিন সন্ধিপূজার নৈবেদ্য সাজান বাড়ির ছেলেরা।

চোরবাগান শীল পরিবার
রামচাঁদ শীল ১৮৫৬ সালে এই পরিবারে দুর্গাপুজো শুরু করেন। শীল পরিবারেও রথের দিন কাঠামোপুজো অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টমীর দিন সকলে হয় ধুনো পোড়ানো আর দুপুরে হয় গাভীপুজো। নবমীতে কুমারীপুজোর সঙ্গে সঙ্গে সধবা পুজোও। এই পরিবারে সম্পূর্ণ বৈষ্ণবমতে দেবীর আরাধনা হয়, ভোগে থাকে লুচি, ভাজা, তরকারি, শিঙাড়া, কচুরি ইত্যাদি। এই পরিবারের বৈশিষ্ট্য হল দেবীর দুর্গার হাতে খাঁড়ার পরিবর্তে থাকে তলোয়ার।
খড়দহের গোস্বামী পরিবার
এই পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন নিত্যানন্দ মহাপ্রভু আনুমানিক ১৪৫২ শকাব্দে (১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ)। এই বাড়ির পুজো শুরু হয় উলটোরথের দিন একটি চার হাত সমান বাঁশ কিনে গোপীনাথের মন্দিরে কাত্যায়নীর পুজো করে। মেজোবাড়ির দুর্গাপুজো কৃষ্ণানবমী তিথিতেই শুরু হয়, অর্থাৎ ১৫ দিন ধরে চলে দেবীর আরাধনা। এই পরিবারে দুর্গার পাশে লক্ষ্মী-সরস্বতীর স্থানে জয়া-বিজয়া বিরাজমান। কারণ প্রভু নিত্যানন্দ বিশ্বাস করতেন কাত্যায়নী পুজো করলে গৌরকে পাওয়া যায়। এই বাড়ির পুজো হয় বৈষ্ণবমতে, তাই কোনো পশু বলিদান হয় না। তবে এখানে মন্ত্রের সাহায্যে মাসকলাই বলিদান করার প্রথা আছে।
জানবাজারের রাসমণির বাড়ি

জানবাজারের রানি রাসমণিদেবীর শ্বশুরবাড়িতে প্রীতিরাম দাস (শ্বশুরমশাই) এই বাড়ির পুজো শুরু করেন। পরবর্তীকালে রানীর পুজো বলেই বেশি পরিচিত এই পুজো। জানবাজারের এই বাড়ির পুজোও শুরু হয় রথের দিন কাঠামোপুজো করে। মায়ের গায়ের রঙ শিউলি ফুলের বোঁটার মতন অর্থাৎ তপ্ত কাঞ্চনবর্ণ। প্রায় ১৪ ফুট লম্বা এই প্রতিমার গায়ে সোনার নথ, টিপ, পায়ে রুপোর মল, মাথায় রুপোর মুকুট। এই বাড়ির পুজো বৃহৎনান্দীকেশ্বর পুরাণ মতে হয়। ২০০৩ সাল অবধি ছাগবলি হয়েছে কিন্তু তার পর থেকে চালকুমড়ো, মাসকলাই ইত্যাদি প্রতীকী বলিদান হয়। এই বাড়ির বৈশিষ্ট্য পঞ্চাঙ্গ স্বস্তয়ন অর্থাৎ চণ্ডীপাঠ, মধুসূদন মন্ত্র জপ, মাটির শিবলিঙ্গ পূজা, দুর্গানাম জপ – প্রতিপদ থেকে নবমী অবধি হয়ে থাকে।
কাশিমবাজার ছোটো রাজবাড়ি
বিখ্যাত রেশম ব্যবসায়ী দীনবন্ধু রায় রেশম ব্যবসার জন্য কাশিমবাজারে এসেছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের আনুকূল্যে ফুলে ফেঁপে ওঠে তাঁর ব্যবসা। ১৭৯৩ সালে তাঁকে জমিদারির স্বত্ব দেয় ব্রিটিশ সরকার। রথের দিন এই বাড়িতেও কাঠামোপুজো হয় দেবীর। পরিবারের সদস্যরা এই পুজোর ক’টা দিন রাজবাড়িতেই কাটান। ষষ্ঠীর দিন দেবীর অধিবাস, বোধন হয়। দশমীর দিন এই পরিবারে অপরাজিতা পুজোর প্রচলন রয়েছে। অতীতে পুজোয় বলিদান প্রথা থাকলেও এখন আর বলিদান হয় না। রাজবাড়িতে আগে বিসর্জনের সময় নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা ছিল কিন্তু সেই প্রথাও আজ বন্ধ।
হাটখোলা দত্ত পরিবার

১৭৯৪ সালে হাটখোলায় ভদ্রাসন পত্তন করেছিলেন জগৎরাম দত্ত। তাঁর হাত ধরেই পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু। উলটোরথের দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে শুরু হয় দত্তবাড়ির দেবী আরাধনা। এই পরিবারে দুর্গাপুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণবমতে, তাই পশু বলিদান সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। বলি দেওয়া হয় ক্ষীরের পুতুল। এই বলিদানও আড়ালে হয় কারণ পরিবারের কোনো সদস্যের বলি দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পরিবারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এই দত্ত পরিবারে দশমীর দিন নয় অষ্টমীর দিন সিঁদুরখেলা হয়। এ এক বহু প্রাচীন রীতি যা আজও অব্যাহত রয়েছে দত্ত পরিবারে।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি
এই পরিবারের দুর্গাপুজোও বহু দিনের। এই বাড়ির দেবী রাজরাজেশ্বরী নামেই পরিচিত, দেবীর সিংহ ঘোটকাকৃতি, দেবীর পরনে লাল শাড়ি, গায়ে বর্ম। রথের দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে এই বাড়ির পুজোর সূচনা হয়। মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো। সে দিন ভোরে জ্বালানো হয় হোমকুণ্ড, নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলে হোম নবমী অবধি। আগে রাজবাড়ি থেকে বিসর্জনের সময় নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হত। সেই প্রথা আজ বন্ধ। তবু ধারাবাহিকতা ও ঐতিহ্য আজও অব্যহত রাজবাড়ির অন্দরে।
প্রবন্ধ
ভরা ব্রিগেডের জনসভা কি প্রত্যাশা পূরণের কোনো ইঙ্গিত দিতে পারল?
ব্রিগেড ভরানো চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু দিশা মিলল কি?

সভ্যতার সংকট, মেহনতি মানুষের বাঁচার লড়াই নিয়ে কথা হয়নি, কোনো দিশাও মেলেনি। শুধুই ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ নিয়ে নিজেদের পিঠ চাপড়ানো। এ সব কথা না বলে শুধু জোট করে ভোটে দাঁড়িয়েছেন বলেই ভোট চাইলে ভোটারদের সহজলভ্য বলে ধরে নেওয়া হয় না কি? লিখছেন নীলাঞ্জন দত্ত
ব্রিগেড ভরানো সোজা কথা নয়। তাও আবার বামফ্রন্টের সভায়, যারা নাকি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ইদানিং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়েছিল। তারাই ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে প্রথম সভা করল — আর মাঠ ভরিয়ে দিল!
এই কৃতিত্ব অবশ্য তাদের একার নয়, কংগ্রেস আর নতুন পার্টি ‘ইন্ডিয়ান সেকিউলার ফ্রন্ট’ বা আইএসএফ ছিল সঙ্গে। তবুও, ফেব্রুয়ারির শেষ দুপুরে এই সভা হওয়ার আগের ক’দিন বিশেষ করে সিপিআই(এম) দলের যে প্রবল প্রচার পথেঘাটে দেখা গেছে, তাতে এই জমায়েতের পেছনে তাদেরই গরজ সবচেয়ে বেশি ছিল বলে মনে করাই স্বাভাবিক। এই প্রচারে বিশেষ করে চোথে পড়েছে একঝাঁক তরতাজা নতুন মুথ। এদের দেথে অনেকেই অবাক হয়েছেন, আবার অনেকের মনে একটু আশাও জেগেছিল, এ রাজ্যের মসনদে কোনো পরিবর্তন হবে কি না জানি না, কিন্তু বাংলার জং-ধরা বাম রাজনীতিতে হয়ত এ বার সত্যিই পরিবর্তন আসতে চলেছে। এ বিষয়ে আলোচনা ক্রমশ ফিসফিস থেকে গুনগুনে পরিণত হচ্ছিল, এবং তা কেবল বাম সমর্থকদের মধ্যে নয়। ভরা ব্রিগেডের জনসভা কি সেই প্রত্যাশা পূরণের কোনো ইঙ্গিত দিতে পেরেছে?
এ প্রশ্ন হয়ত এখন অনেকের কাছে অবান্তর ঠেকতে পারে। কারণ, বড়ো বড়ো রাজনীতিবিদ এবং কলমজীবীদের কমেন্টারি এবং বড়ো মিডিয়াগুলির সমস্বর প্রচার ইতিমধ্যেই ডিসকোর্স অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের বিশ্বাস করাতে শুরু করেছে, আসল ইসুটা হল ফুরফুরা শরিফের অন্যতম ‘পিরজাদা’ আব্বাস সিদ্দিকি পরিচালিত আইএসএফ-এর বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে যোগ দেওয়া এই নির্বাচনে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে কি না, এবং তাদের দাবি মতো আসন ছাড়া নিয়ে কংগ্রেসের টানাপোড়েন কোন দিকে মোড় নেবে।
মালদহ-মুর্শিদাবাদের যেসব অঞ্চলে কংগ্রেসের এখনও খানিকটা প্রভাব আছে, সেখানে আইএসএফ-এর দাবি মতো আসন ছাড়া নিয়ে তার রাজ্য নেতাদের অনীহার কারণ বোঝা যায়। কিন্তু দলের জাতীয় নেতাদের মধ্যে যারা আইএসএফ-এর সঙ্গে সমঝোতাকে তার ‘কোর আইডিয়লজি’ বা মূল মতাদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতাকে জলাঞ্জলি দেওয়া বলে মনে করেছেন, তাঁদের এই হঠাৎ মাথাব্যথা অবাক করে।
অসম নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গী অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট আইএসএফ-এর মতোই একটি মুসলমানপ্রধান দল। আর এই দু’টি দলের নামে অন্তত ধর্মীয় পরিচয় প্রকট না হলেও, কেরলে কংগ্রেস তো একেবারে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ান মুসলিম লিগ বা আইইউএমএল-এর সঙ্গেই গাঁটছড়া বেঁধে রয়েছে। আবার উল্টোদিকে, আইইউএমএল ভেঙে ১৯৮০-র দশকের গোড়ায় যখন অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ তৈরি হয়েছিল, তখন সিপিএম-এরও তাদের সঙ্গে জোট সরকার গড়তে দ্বিধা হয়নি। এরা পরে আবার আইইউএমএল-এই মিশে যায় — সেটা অন্য কথা। সুতরাং, এই ধরনের নির্বাচনী সমঝোতা একেবারেই নতুন কিছু নয়, যা নিয়ে ‘শুদ্ধতাবাদীদের’ মর্মাহত হতে হবে, এবং মিডিয়াকে এত শোরগোল করতে হবে।
যে কথাটা বরং বলা যেত, তা হল, ফুরফুরা শরিফ কোনো খলিফার আসন বা নিদেন পক্ষে জামা মসজিদও নয় এবং আব্বাস সিদ্দিকিও সাবেক কালের শাহী ইমাম নন, যে এরা যে দিকে বলবেন রাজ্যের সব মুসলমান সেদিকেই ভোট দেবে। তাছাড়া, সব মুসলমান রকম রাজনৈতিক চিন্তা করে এবং ভোটের সময় একই আচরণ করে, এ কথা কবে সত্যি ছিল জানি না, তবে বর্তমানে যে সত্যি নয় এইটুকু জানি। যারা এ কথা মানতে চান না, তাঁরা হয় বাস্তবের থেকে চোখ ফিরিয়ে থাকেন অথবা কোনো অভিসন্ধি নিয়ে তর্ক করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের অধিকাংশ যদি এ বার সত্যিই ‘পরিবর্তন’ চান এবং বিদ্যমান শাসক দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন — যেমন ২০১১ সালে বামফ্রন্টের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন — তবে তা হবে তাঁদের আশাভঙ্গের সম্মিলিত প্রকাশ, কোনো নতুন নেতা, দল বা জোটের প্রতি আস্থার সূচক ততটা নয়।
সেদিন ব্রিগেডে আব্বাস সিদ্দিকির কনফিডেন্স দেখে অবশ্য মনে হয়েছে যে তিনি এর উল্টোটাই বিশ্বাস করেন — রাজ্যের মুসলমানরা খুবই দুর্দশায় আছে, এই দুর্দশা থেকে উঠে আসার পথ দেখানোর জন্য তাঁর মতো এক পরিত্রাতার অপেক্ষাতেই তারা ছিল, এবং যখন তাঁকে পেয়েই গেছে, তখন ভোটের ময়দানে তাঁর পেছনে জড়ো হওয়া তাদের অবশ্যকর্তব্য। নাই বা থাকুক তাঁর বক্তৃতার মধ্যে সেই উত্থান কী ভাবে হতে পারে তার কোনো দিকনির্দেশ। আগে ভোট তো দিন, তার পর সব দেখা যাবে।
কিন্তু, এই তরুণ নেতার এমন সাবেকি মুরুব্বিদের মতো আচরণ নিয়ে রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা কিছু বলছেন বলে শুনিনি। তিনি অতীতে কবে কোথায় কতখানি ‘সাম্প্রদায়িক’ কথা বলেছেন আর তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বামদের চরিত্র কতটা নষ্ট হয়েছে, এই চর্চা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হচ্ছি কেবল। তেমনি এই প্রশ্নটাও উঠতে দেখলাম না, বাম নেতারা এর থেকে আলাদা কিছু বার্তা দিলেন কি?
এই যে একঝাঁক নতুন মুখ এবারের নির্বাচনকে উপলক্ষ করে অনেক দিন পরে বাম শিবিরে জড়ো হল, তাদের দু-এক জনকে কয়েক মুহূর্তের জন্য মঞ্চে তুলে উৎসাহ দেওয়ার একটা চেষ্টা দেখা গেল। এমন কিছু মুখ প্রার্থীদের মধ্যেও দেখা যাবে। পাওয়া গেল না তাদের জন্যে নতুন কোনও পথের সন্ধান। তাদের নিজস্ব একমাত্র যে বিষয়টা নিয়ে নেতাদের দুয়েকবার কথা বলতে শোনা গেল, তা হল বেকারত্ব। কাজ নেই, কাজ দাও। কেন কাজ নেই, পুঁজিবাদী অর্থনীতির পথে চলতে চলতে বিশ্বের বহু দেশের মতোই ভারতও কেমন গাড্ডায় পড়েছে, তা থেকে উঠে আসতে গেলে যে পুঁজিবাদকে উচ্ছেদ করা দরকার, এ সব কথা আজ পৃথিবী জুড়ে এমনকি অ-মাকর্সবাদীদের মুখেও শোনা যাচ্ছে যাক, এখানকার বামপন্থীদের তা বলর কোনো ইচ্ছে নেই। তোমরা আমাদের ভোট দাও, আমরা তোমাদের কাজ দেব।
বোধহয় এই প্রথম বার, ব্রিগেডের ময়দানে লাল ইত্যাদি পতাকার পাশাপাশি সমকামী আর রূপান্তরীদের রামধনুরঙা পতাকা সগর্বে উড়তে দেখা গেল। এক নেতা সোৎসাহে তাঁর বক্তৃতায় তা উল্লেখও করলেন। কিন্তু তাঁদের অধিকার নিয়ে একটি শব্দও শোনা গেল না। তাঁরা এসেছিলেন কি শুধু মাঠ ভরাতে? অবশ্য তাঁদের কাছে এর বেশি কিছু হয়ত আশাও করা যায় না, যারা এই বিশাল জনসভায় বয়স নির্বিশেষে নারীদের অগ্রগণ্য উপস্থিতি সত্ত্বেও কেবল “মা-বোনদের” সম্ভাষণ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকার, তাদের সংগ্রাম নিয়ে কোনো কথাই বলেননি।
যেমন এই কঠিন করোনাকালে সভ্যতার সংকট, মেহনতি মানুষের বাঁচার লড়াই নিয়ে কথা হয়নি, কোনো দিশাও মেলেনি। ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ চালানোর জন্য নিজেদের পিঠ চাপড়ানো হয়েছে কেবল। এ সব কথা না বলে শুধু জোট করে ভোটে দাঁড়িয়েছেন বলেই ভোট চাইলে ভোটারদের সহজলভ্য বলে ধরে নেওয়া হয় না কি? ইংরেজিতে যাকে ‘টেকন ফর গ্রান্টেড’ বলে?
আরও পড়তে পারেন: বামফ্রন্ট-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের ব্রিগেড
প্রবন্ধ
স্বামী নিত্যসত্যানন্দ মহারাজের সঙ্গে সেই কুড়িটা মিনিট কোনো দিনও ভুলব না
খুব বেশি হলে কুড়িটা মিনিট সময় কাটিয়েছিলাম স্বামীজির সঙ্গে। কিন্তু তাতেই কত আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। মনে হচ্ছিল কত দিনের পরিচিত।

শ্রয়ণ সেন
“এই ব্যাটা, অত প্রণামটনাম করতে হবে না! এমনিই আশীর্বাদ করলুম।”
আজও খুব স্পষ্ট ভাবে মনে পড়ছে কী সুন্দর আর মজার ছলে কথাটা আমায় বলেছিলেন স্বামী নিত্যসত্যানন্দ মহারাজ। এখনও পরিষ্কার ভাবে মনে পড়ছে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার সেই দিনটা।
২০২০-এর জানুয়ারি। দার্জিলিংয়ের রায় ভিলায় বেড়াতে গিয়েছি। এই বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন সিস্টার নিবেদিতা। সেটি বর্তমানে রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা নিবেদিতা শিক্ষা-সংস্কৃতি কেন্দ্র। আর তারই দায়িত্বে ছিলেন স্বামী নিত্যসত্যানন্দ মহারাজ।
‘ছিলেন’ কেন বললাম? কারণ, রবিবার সন্ধ্যায় মন খারাপ করা খবরটি পেলাম।
রামকৃষ্ণলোকের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন স্বামী নিত্যসত্যানন্দ মহারাজ। অত্যন্ত আকস্মিক ভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।
সংবাদটা বিশ্বাস করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। মাত্র এক বছর আগেই যে মানুষটা আমাদের সঙ্গে মজার ছলে কিছুটা সময় কাটালেন, ‘ভূতকোঠি’ থেকে নিবেদিতা-সাধনার কেন্দ্র গড়ে ওঠার গল্প শোনালেন, যে মানুষটার সঙ্গে গত জানুয়ারিতেও প্রায় সাক্ষাৎ হয়েই যাচ্ছিল, তিনি আকস্মিক ভাবে চলে গেলেন কেন? কী-ই বা তাড়া পড়েছিল তাঁর।
২০১৩ সালে যে বাড়িটায় ‘রামকৃষ্ণ মিশন নিবেদিতা এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার’ (Ramakrishna Mission Nibedita Educational and Cultural Centre) গড়ে ওঠে, সেই রায়ভিলা তার আগে পর্যন্ত স্থানীয়দের কাছে ভূতকোঠি নামে পরিচিত ছিল।
–“প্রথম যখন এসেছিলেন, আপনাদের ভয় করেনি?”
–“না। আসলে জানেন তো, যারা দুষ্টুমি করে, আমার মতে তারা ভীতু হয় বেশি। তাই এরা আমাদের কোনো বাধা দেয়নি।”
— “সাত বছর হল আপনারা এসেছেন, স্থানীয়দের মনোভাব কেমন বুঝছেন?”
স্বামীজি তখন বলেছিলেন, প্রথমে স্থানীয়দের সন্দেহ ছিল। ‘ভূতকোঠি’তে আবার কী শুরু হচ্ছে, এই নিয়ে ভয়ডরও ছিল। কিন্তু মিশনের কাজ শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সেই ভয় কেটে যায়।

ওই আড্ডার মধ্যেই পেছন থেকে এসে স্বামীজির গাল টিপে জড়িয়ে ধরল এক কিশোরী।
— “এঁরা বোধহয় নিজেদের বাড়িতে ভালোবাসা খুব একটা পায় না, না?”
— “ভালোবাসার অভাব তো ছিলই। সেটা আমরা পূরণ করার চেষ্টা করছি। মনে হচ্ছে সফলও হচ্ছি।”
এই কেন্দ্রের জন্যই এই আশেপাশের খুদেদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রায় ৭০ জনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন এখানকার মহারাজরা। স্কুল থেকে সোজা এখানে চলে আসে খুদেগুলো। বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানোর পাশাপাশি আদর্শ মানুষ কী ভাবে হবে, সেই পাঠও দেওয়া হয়। আর এই সবই হচ্ছিল স্বামী নিত্যসত্যানন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।
বাঙালি সমতল আর নেপালি দার্জিলিংয়ের মধ্যে তাঁরা একটা সেতুবন্ধনের কাজ করছে বলেও জানিয়েছিলেন স্বামী নিত্যসত্যানন্দ, আর সেই ব্যাপারে তাঁরা অনেকটাই সফল হয়েছেন।
এ ছাড়া নানা রকম ত্রাণকাজ তো রয়েছেই। দার্জিলিংয়ের সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। বৃষ্টি-ধস-ভূমিকম্প কত কী লেগে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে প্রথমেই ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিশন। এ ছাড়া চা-বাগানগুলিতে রোজই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।
খুব বেশি হলে কুড়িটা মিনিট সময় কাটিয়েছিলাম স্বামীজির সঙ্গে। কিন্তু তাতেই কত আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। মনে হচ্ছিল কত দিনের পরিচিত।
গত মাসে যখন দার্জিলিং গিয়েছিলাম, ইচ্ছে ছিল একবার স্বামীজির সঙ্গে দেখা করে আসি। কিন্তু সেটা হয়নি। কিন্তু তখন একবারও মনে হয়নি যে তাঁর সঙ্গে আর কোনো দিনও দেখা হবে না।
শুনলাম স্বামীজি নাকি ধ্যান করতে করতে দেহত্যাগ করেছেন। তাঁকে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। কে বলতে পারে, হয়তো আগে থেকেই বুঝে গিয়েছিলেন এমন সময় আসতে চলেছে তাঁর। এই কারণেই বোধহয় এঁরা মহাপুরুষ!
স্বামী নিত্যসত্যানন্দ মহারাজ হয়তো শরীরে থাকলেন না। কিন্তু দার্জিলিংয়ের রায় ভিলা জুড়ে তিনিই থাকবেন। তাঁর দেখানো পথেই যে নিবেদিতা-সাধনার কেন্দ্রটি চলবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
প্রবন্ধ
‘কয়েকটা টাকার বিনিময়ে নেতাজির স্মৃতি ধুলোয় মিশিয়ে দেব?’, বলেছিলেন পদমবাহাদুর
মুখে বড়ো বড়ো কথা বললেও, নেতাজির আদর্শে চলার ব্যাপারে আমরা লবডঙ্কা। কবে আমরা ওঁর আদর্শে চলব, ঠিক পদমবাহাদুরের মতো?

শ্রয়ণ সেন
আবার সেই পথে। এই তো ঠিক এক বছর আগে ২০২০-এর জানুয়ারিতে ঘুরে গিয়েছিলাম এখান থেকে। এই জানুয়ারিতে দার্জিলিঙের পথে গিদ্দা পাহাড়ের পাশ দিয়ে যেতে যেতে স্মৃতিতে ডুব দিলাম। মনের মধ্যে ভেসে উঠল পদমবাহাদুর ছেত্রীর মুখটা আর ওঁর কথাগুলো।
“তখন ওরা কত করে আমায় বলল বাড়ির ইটগুলো বিক্রি করে দিতে, এতে আমার টাকা হবে। কিন্তু আমি ওদের কথা শুনিনি। আমার তখন একটাই লক্ষ্য, যে করেই হোক, ওদের হাত থেকে বাড়িটা বাঁচাতেই হবে।”
বেশ গর্ব করেই কথাগুলো বলেছিলেন পদমবাহাদুর। নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ তথা নেতাজি মিউজিয়ামের দেখভালের পুরো দায়িত্ব তাঁর ওপরে। তিন বছরের দুরন্ত নাতিকে সঙ্গে নিয়ে পুরো বাড়িটা আমাদের ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বাড়িটার অবদান হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। কারণ এই বাড়িতে খুব বেশি কারও পা-ও পড়ে না।

“খুলা হ্যায়, খুলা হ্যায়।”
মূল ফটক দিয়ে বাড়ির দিকে এগোতেই আমাদের উদ্দেশ করে বলেছিল মিষ্টি অথচ দুরন্ত সেই শিশুটি। শীতের দিনের মিঠে রোদে পিঠ দিয়ে দাদুর কোলে বসেছিল নাতি। আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিল, মিউজিয়াম খোলা আছে, ভেতরে যেতে পারি।
বাইরে জুতো খুলে প্রবেশ করলাম। এটা তো ঠিকই, যে কোনো পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে গেলে জুতো খুলতেই হবে। নেতাজিকে ভালবাসেন, এমন যে কোনো মানুষের কাছে এই বাড়ি একটা সাধনাস্থল।
নেতাজির বহু বিরল ছবি, তাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র আর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লেখা চিঠি এখানে সযত্নে রাখা আছে।
১৯২২ সালে রলি ওয়ার্ড নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে কার্শিয়াংয়ের গিদ্দাপাহাড়ে অবস্থিত এই বাড়িটি কিনে নেন নেতাজির দাদা, তথা স্বাধীনতাসংগ্রামী শরৎচন্দ্র বসু।
১৯৩৩ থেকে ১৯৩৫, এই বাড়িতেই ব্রিটিশ সরকারের হাতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল শরৎ বসুকে। এর পরের বছরেই নেতাজির পালা। এই বাড়িতে তাঁকে সাত মাসের জন্য বন্দি করে রাখা হয়।
দ্বিতীয় বার যখন এই বাড়িতে নেতাজি আসেন, তখন তিনি বন্দি নন। সেটা ১৯৩৭ সালের অক্টোবর। হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণ এই বাড়িতে বসেই লিখেছিলেন নেতাজি। এখান থেকে গান্ধীজি ও জওহরলাল নেহরুকে চিঠিও লিখেছিলেন।

এই বাড়িতে থাকাকালীনই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি চিঠি পেয়েছিলেন নেতাজি। তাতে ‘বন্দেমাতরম’ গানের প্রসঙ্গও ছিল।
চিঠির একটি অংশে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, “…যে রাষ্ট্রসভা ভারতবর্ষের সকল ধর্ম-সম্প্রদায়ের মিলনক্ষেত্র, সেখানে এই গান সর্বজনীন ভাবে সঙ্গত হতেই পারে না।”
এই বাড়িতে বহু দুর্লভ ছবির পাশাপাশি নেতাজি-কেন্দ্রিক প্রচুর চিঠিরও সংগ্রহ রয়েছে। সব চিঠি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার মতো সময় ছিল না। ‘বন্দেমাতরম’ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের চিঠির ব্যাপারটি একটি সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছিলাম। ওই চিঠির উত্তরও রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিলেন নেতাজি। কিন্তু তাঁর সেই জবাবের হাতের লেখা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
কার্শিয়াংয়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে নেতাজি কত যে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন, তার প্রমাণও রয়েছে এখানে রক্ষিত বহু চিঠিতে।
নেতাজিকে নিয়ে এমন দুর্লভ ছবির সম্ভার ভারতে আর কোথাও আছে বলে মনে করতে পারি না।
নেতাজি এখানে থাকাকালীন প্রাতর্ভ্রমণে বেরোতেন। পাগলাঝোরায় প্রাতর্ভ্রমণরত নেতাজি, এমনই একটি ছবি রয়েছে। বসু পরিবারের সঙ্গে নেতাজির ছবি যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই পটেলের সঙ্গে তোলা ছবিও।
এ ছাড়া নেতাজির ব্যবহার করা খাট, চেয়ার-টেবিল সবই সযত্নে রাখা হয়েছে। কার্শিয়াংয়ের ‘পয়েন্টস’ ভ্রমণের মধ্যেই নেতাজির এই বাড়ি পড়ে। কিন্তু এখানে আসতে হবে আলাদা ভাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়ে দিয়ে ভালো করে দেখতে হবে। তবেই মনের শান্তি পাওয়া যাবে।
১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাড়িটি বসু পরিবারের অধীনে ছিল। এর পর বাড়িটি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার অধিগ্রহণ করে। সংস্কার করে তা কলকাতার ‘নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ’-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
নেতাজির দুর্লভ ছবি, চিঠিপত্র আর ব্যবহৃত আসবাবপত্র নিয়ে এই সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন হয় ২০০৫ সালে। ২০১৮ সালে সেই সংগ্রহশালার সংস্কারের কাজও হয়েছে।
নেতাজির এই বাড়িটার সঙ্গেই নিজেকে একাত্ম করে দিয়েছেন পদমবাহাদুর। তাঁর কথাবার্তা, আচার আচরণে বোঝা যায়, আশির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া এই বৃদ্ধ নেতাজিকে কখনও না দেখলেও তাঁকে রোজ অনুভব করেন।
শত চেষ্টা করেও পদমবাহাদুরকে ক্যামেরার সামনে আনা গেল না।

১৯৭৩ থেকে এই বাড়িটার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন পদমবাহাদুর। তখন দিনপ্রতি দু’ টাকা হাজিরায় বসুদের কাছ থেকে এই বাড়িটির দেখভালের দায়িত্ব পান।
-“তব মহিনে মে ষাট (৬০) রুপ্যায় মিলতা থা।” গলায় গর্ব ঝরে পড়েছিল।
এর পর বাড়িটা কত ঝড়ঝাপটার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, তবুও তিনি ছিলেন তাঁর লক্ষ্যে অবিচল।
কথা প্রসঙ্গেই উঠে এসেছিল ১৯৮৬ সালের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের কথা। সুবাস ঘিসিংয়ের নেতৃত্বে সেই আন্দোলন মারাত্মক ধ্বংসাত্মক চেহারা নেয়। গত ১৫ বছরে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছে, সুবাস ঘিসিংয়ের জঙ্গি আন্দোলনের কাছে সে সব নেহাতই শিশু।
তখনই পদমবাহাদুরের কাছে আন্দোলনকারীদের প্রস্তাব আসে এই বাড়ির এক একটা ইট বিক্রি করে দিয়ে বিনিময় টাকা নেওয়ার। আর প্রকারান্তরে সে টাকার কিছুটা অংশ আন্দোলনকারীদের দিয়ে দেওয়া।
পদম কিন্তু ছিলেন তাঁর লক্ষ্যে অবিচল। আন্দোলনকারীদের কথা কানেই তোলেননি তিনি। সোজা জানিয়ে দেন, নেতাজির স্মৃতিকে এ ভাবে ধুলোয় মিশে যেতে তিনি দেবেন না।
তাঁর কথায়, “মাত্র কয়েকটা টাকার জন্য নেতাজিতে বিকিয়ে দেব! আমি গরিব হতে পারি, লোভী নই।”
আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আপশোশ, কার্শিয়াংয়ের এক নেপালি বৃদ্ধ নেতাজির আদর্শে চলতে পারেন, কিন্তু আমরা পারি না। আজ ১২৫ বছরে পড়লেন নেতাজি। মুখে বড়ো বড়ো কথা বললেও, নেতাজির আদর্শে চলার ব্যাপারে আমরা লবডঙ্কা। কবে আমরা ওঁর আদর্শে চলব, ঠিক পদমবাহাদুরের মতো?
ছবি: লেখক
আরও পড়ুন: সুভাষের খোঁজে সুভাষগ্রাম ও অন্যত্র
-
রাজ্য1 day ago
পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল
-
গাড়ি ও বাইক2 days ago
আরটিও অফিসে আর যেতে হবে না! চালু হল আধার ভিত্তিক যোগাযোগহীন পরিষেবা
-
ভ্রমণের খবর3 days ago
ব্যাপক ক্ষতির মুখে পর্যটন, রাঢ়বঙ্গে ভোট পেছোনোর আর্জি নিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন
-
রাজ্য1 day ago
বিধান পরিষদ গঠন করে প্রবীণদের স্থান দেওয়া হবে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বললেন মমতা