রাষ্ট্রদ্রোহ আইন: বাতিলের দাবিকে থিতিয়ে দিল স্থগিতের নির্দেশ

আলতাফ আহমেদ

রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্টে আরজি জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আরজির রেশ ধরেই আপাতত স্থগিত হয়ে গেল রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের প্রয়োগ। সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ নির্দেশে কেন্দ্র যেমন আরও কিছুটা সুযোগ পেয়ে গেল, তেমনই হয়তো আইনটি বাতিলের দাবিকেও সাময়িক ভাবে থিতিয়ে রাখা গেল।

প্রথমত, এটা ইংরেজ আমলের আইন। ১৬০ বছরেরও বেশি পুরনো। সেই সময় ইংরেজ সরকার দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে এই আইন লাগু করে বছরের পর বছর ধরে তাঁদের আটক করে রাখত। এখন স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন শাসক দল (কী রাজ্য, কী কেন্দ্র সরকার) নিজেদের সুবিধামতো এই আইনের ব্যবহার করেছে।

সরকারি কাজের সমালোচনা এবং বিরোধিতা করা সংবিধান সম্মত অধিকার। বিশেষ করে, ২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন সরকার মুড়ি-মুড়কির মতো ব্যবহার করে চলেছে এই আইনকে। আন্দোলন হোক বা সরকারি কাজের বিরোধিতা, এই আইনকে সামনে রেখে রাষ্ট্রদ্রোহিতার আখ্যা দিতে আইন বজায় রেখেছে তারা। সেই জায়গায় গণতান্ত্রিক পরিবেশের স্বার্থে আইনটি বাতিল হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তেমনই অনেক আবেদন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে।

আদতে যারা এই আইন প্রণয়ন করেছিল, সেই ব্রিটেনেও এই আইন নেই। বিশ্বের কোনো সভ্য দেশেও এ ধরনের আইনের অস্তিত্ব নেই। পরাধীন ভারতে ইংরেজরা এই আইন এনেছিল যাতে এ দেশের মানুষকে দমিয়ে রাখা যায়। তারা বিদায় নিয়েছে। কিন্তু এ দেশের একের পর এক সরকার নিজেদের স্বার্থে এই আইনকে ব্যবহার করেছে। এখনও প্রতিটা দিন দেশের কোথাও না কোথাও ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সমাজকর্মী অথবা সাধারণ মানুষকে গ্রেফতারের জন্য এই আইন লাগু করা হয়। আশার কথা, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে সুপ্রিম কোর্ট অন্তত পুনর্বিবেচনায় সায় দিয়েছে। কিন্তু এই আইনের বিলোপ হওয়া দরকার।

সুপ্রিম যেটুকু পদক্ষেপ নিয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের দাবি আইনটি বাতিল করা হোক। প্রশ্নটা হল, তা হলে এ দেশে থেকে যারা অন্য দেশের সমর্থন করে তাদের কী হবে? ভারতে থেকে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সমর্থন করা কি রাষ্ট্রদ্রোহিতা? না কি পারভেজ মুশারফের নাতির বিয়েতে কোনো ভারতীয়র পাকিস্তানে যাওয়াটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা? ভিন দেশের কোনো খেলোয়াড়কে সমর্থনের চেয়ে নিজের দেশের সম্পদ অন্য দেশে চালান করে দেওয়া বড়ো রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয় কি? রাষ্ট্রদ্রোহিতার সংজ্ঞাটা কী?

শুধু কি রাষ্ট্রদ্রোহ, রয়েছে ইউএপিএ এবং এনএসএ-র মতো কঠোর আইনেরও বিলুপ্তির দাবি, সে দিকেও নজর দেওয়া উচিত সুপ্রিম কোর্টের। তবে আদৌ বিলোপ করার সদিচ্ছা রয়েছে কি না, সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ পুনর্বিবেচনার আরজি এবং আপাতত স্থগিতের নির্দেশ আসলে আইন বাতিলের দাবিকে থিতিয়ে দেওয়ার কৌশল বলেই মনে হচ্ছে!

*লেখক এপিডিআর-এর সহ-সম্পাদক। মতামত লেখকের নিজস্ব

এই সংক্রান্ত আরও প্রতিবেদন পড়ুন এখানে: 

পুনর্বিবেচনা নয়, আইন বাতিলই একমাত্র সমাধান

পুনর্বিবেচনা চলাকালীন স্থগিত রাষ্ট্রদ্রোহ আইন, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের

dailyhunt

খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

বিজ্ঞাপন