প্রবন্ধ
সামনে ভোট, বরাদ্দ-ব্যবসা তো জমবেই!
কেন্দ্রীয় বরাদ্দের তালিকায় এক নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ! তা না হলে ভোটপ্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী রাজ্য সরকারের কাছে ‘হিসেব’ চাইবেন কী ভাবে?


গরিবের হয়ে গলা ফাটাচ্ছে সরকার! গরিবের ঘরে ঢুকে হাঁড়ির খবর নিচ্ছে সরকার! একের পর এক প্রকল্প-তহবিলের খবর দিচ্ছে সরকার! তা হলে কি ভোট এসে গেল?
করোনা-কোভিড করে চিৎকার চলুক, তারই মাঝে কড়া নেড়ে দিয়েছে ২০২১-এর বিধানসভা ভোট। সংবাদ মাধ্যমের ভাষায় ‘একুশের মহারণ’। মহারথীরা ময়দানে নেমে পড়েছেন। রঙ-বেরঙের পতাকা, সারি সারি মাথা আর সময়-সুযোগ পেলেই গরিবের জন্য দু’-চার কথা। এখন অবশ্য শুধু কথায় চিঁড়ে ভেজে না। ‘মাল’ খসাতে হয়। সেটা মোক্ষম বোঝেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিজেপি-বিরোধী রাজ্য সরকার সাড়ে চার বছর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আসবে, আর তার পর ভোটের মুখে কেন্দ্রের হাত উপুড়। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যান তো তেমনটাই বলছে।
১-এ পশ্চিমবঙ্গ!
করোনাভাইরাস মহামারি রুখতে ২০২০-র মার্চে দেশব্যাপী লকডাউন জারি করেছিল কেন্দ্র। ওই লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর থেকে গ্রামোন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। গ্রামীণ পরিকাঠামো এবং কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে এই মেয়াদে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে যে তহবিল বরাদ্দ করেছে, তা থেকে সব থেকে বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জন্য। ভালো কথা! কিন্তু করোনা প্রভাবিত রাজ্যগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ তো প্রথম স্থানে নেই! তা হলে বরাদ্দের তালিকায় কেন পশ্চিমবঙ্গ?
আবার এমনও নয়, দেশের অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তা হলে কেন?
প্রথমত, বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। এবং দ্বিতীয় ও শেষ কারণ, সারা দেশ জুড়ে অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটালেও এখনও রাজ্যটিতে ক্ষমতা কায়েম করতে পারেনি কেন্দ্রের শাসক দল। হিসেবটা কী করে এতটা সহজ হল?
কারণ, এই মেয়াদে রাজ্যগুলির জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার। যেখানে অক্টোবর-নভেম্বর (২০২০)-এর বিধানসভা ভোট হয়ে গেল। ১০ নভেম্বর এগিয়ে যাওয়া আর পিছিয়ে থাকার টানটান উত্তেজনা শেষে কুর্সি দখলে রেখেছে বিজেপি এবং মিত্রশক্তি।
কে কত পেল?
গ্রামোন্নয়নমন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, মার্চ-নভেম্বর (২০২০) মেয়াদে সব মিলিয়ে ছ’টি প্রকল্পে ৪৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্যে জুটেছে ৫ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। বিহারের জন্য বরাদ্দ ৫ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। এর পরে যথাক্রমে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৪ হাজার ৯৭৪ কোটি), উত্তরপ্রদেশ (৪ হাজার ৬৩৬ কোটি) এবং ওড়িশা (৪ হাজার ৫৩৫ কোটি)।
বিহার ভোটের পাট চুকেছে। মধ্যপ্রদেশেও বিজেপি সরকারের ভাগ্য নির্ধারণে ২৫টি আসনে উপ-নির্বাচনে বিজেপি সরকারের স্থায়িত্ব মজবুত হয়েছে। অন্য রাজ্যগুলির বরাদ্দ-বণ্টনে ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক কারণও হেলাফেলার নয়। তবে এই বরাদ্দের তালিকায় একেবারে শেষ জায়গায় রয়েছে গোয়া। তাদের জন্য এই মেয়াদে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ২.১ কোটি টাকা। এখানেও যেমন কাজ করেছে জনসংখ্যার অঙ্ক।
খাতের পরিচয়
মূলত ছ’টি খাতেই এই তহবিল বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যেগুলির মধ্যে রয়েছে মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাসিস্ট্যান্টস (এমএনআরইজিএ), প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা (পিএমজিএসওয়াই), শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি রুর্বন মিশন, ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম, ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন (এনআরএলএম) এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (পিএমএওয়াই)।
পশ্চিমবঙ্গের মতোই বছর ঘুরলেই ভোট অসমেও। পিএমজিএসওয়াই প্রকল্পে সেখানে বরাদ্দের পরিমাণ সব থেকে বেশি (১ হাজার ২৮৫ কোটি)। আবার পিএমএওয়াই প্রকল্পে সব থেকে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (৩ হাজার ৭৫১ কোটি)। ছিটেফোঁটা ব্যতিক্রম যে নেই, তাও নয়। ২০২১-এ বিধানসভা ভোট তামিলনাড়ুতেও। কিন্তু পিএমএওয়াই প্রকল্পে কোনো বরাদ্দ মেলেনি এই মেয়াদে। আবার গোয়া, গুজরাত, হরিয়ানা অথবা তেলঙ্গনাও এই প্রকল্পে কোনো তহবিল পায়নি।
অন্য দিকে ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম-এর অধীনে সব থেকে বেশি বরাদ্দ জুটেছে বিহারের ভাগ্যে। উত্তরপ্রদেশ পেয়েছে ১ হাজার ২১৮ কোটি, কিন্তু জনসংখ্যা অনেক কম হলেও বিহার পেয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। উত্তরপ্রদেশের পরে তৃতীয় স্থানেই পশ্চিমবঙ্গ (৬৫৩ কোটি)।
আরও যে ভাবে
ঘূর্ণিঝড়, বন্য, ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছয় রাজ্যের জন্য জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল থেকে মোট ৪ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় উম্পুনের ক্ষতিপূরণবাবদ পশ্চিমবঙ্গকে আরও ২ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ওই খাতে। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে সব মিলিয়ে হল ৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। কিন্তু এটা কি যথেষ্ট?
রাজ্যের শাসক দল বলছে, মোটেই নয়। গত ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রের তরফে এই ঘোষণার পর তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, উম্পুন বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার ধারেকাছে পৌঁছোয়নি এই বরাদ্দ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, উম্পুনের তাণ্ডবে রাজ্যে ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
বকেয়া এবং বঞ্চনা
লকডাউনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ৫৩ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন জানান, গত এক বছরে কেন্দ্রের সাহায্যে চলা প্রকল্পগুলিতে ৩৬ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। রাজ্যের রাজস্ব আদায় বাবদ প্রাপ্য, খাদ্য ভরতুকি এবং জিএসটি বাবদ বকেয়ার তালিকাও দীর্ঘ। যা নিয়েই বঞ্চনার অভিযোগ তুলছে রাজ্য সরকার।
এ দিকে ভোট এসে গেল!
বিহারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে যে ভাবে বিহারের মানুষ করোনাকে এড়িয়ে ভোট দিয়েছেন (বিজেপিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছেন), তাতে তাঁদের ধন্যবাদই প্রাপ্য। পশ্চিমবঙ্গেও ভোট আসছে। মনে হয় না করোনা এখনই ‘টাটা বাইবাই’ করবে। তারই মধ্যে ভোটপ্রচারে নেমে পড়েছে শাসক-বিরোধী সকলেই। বরাদ্দ-ব্যবসাও সমানে চলবে। তা না হলে বাংলায় ভোটপ্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী রাজ্য সরকারের কাছে ‘হিসেব’ চাইবেন কী ভাবে?
আরও পড়তে পারেন: শহর ছেড়ে তুমি কি চলে যেতে পারো তিন ভুবনের পারে
প্রবন্ধ
‘কয়েকটা টাকার বিনিময়ে নেতাজির স্মৃতি ধুলোয় মিশিয়ে দেব?’, বলেছিলেন পদমবাহাদুর
মুখে বড়ো বড়ো কথা বললেও, নেতাজির আদর্শে চলার ব্যাপারে আমরা লবডঙ্কা। কবে আমরা ওঁর আদর্শে চলব, ঠিক পদমবাহাদুরের মতো?

শ্রয়ণ সেন
আবার সেই পথে। এই তো ঠিক এক বছর আগে ২০২০-এর জানুয়ারিতে ঘুরে গিয়েছিলাম এখান থেকে। এই জানুয়ারিতে দার্জিলিঙের পথে গিদ্দা পাহাড়ের পাশ দিয়ে যেতে যেতে স্মৃতিতে ডুব দিলাম। মনের মধ্যে ভেসে উঠল পদমবাহাদুর ছেত্রীর মুখটা আর ওঁর কথাগুলো।
“তখন ওরা কত করে আমায় বলল বাড়ির ইটগুলো বিক্রি করে দিতে, এতে আমার টাকা হবে। কিন্তু আমি ওদের কথা শুনিনি। আমার তখন একটাই লক্ষ্য, যে করেই হোক, ওদের হাত থেকে বাড়িটা বাঁচাতেই হবে।”
বেশ গর্ব করেই কথাগুলো বলেছিলেন পদমবাহাদুর। নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ তথা নেতাজি মিউজিয়ামের দেখভালের পুরো দায়িত্ব তাঁর ওপরে। তিন বছরের দুরন্ত নাতিকে সঙ্গে নিয়ে পুরো বাড়িটা আমাদের ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বাড়িটার অবদান হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। কারণ এই বাড়িতে খুব বেশি কারও পা-ও পড়ে না।

“খুলা হ্যায়, খুলা হ্যায়।”
মূল ফটক দিয়ে বাড়ির দিকে এগোতেই আমাদের উদ্দেশ করে বলেছিল মিষ্টি অথচ দুরন্ত সেই শিশুটি। শীতের দিনের মিঠে রোদে পিঠ দিয়ে দাদুর কোলে বসেছিল নাতি। আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিল, মিউজিয়াম খোলা আছে, ভেতরে যেতে পারি।
বাইরে জুতো খুলে প্রবেশ করলাম। এটা তো ঠিকই, যে কোনো পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে গেলে জুতো খুলতেই হবে। নেতাজিকে ভালবাসেন, এমন যে কোনো মানুষের কাছে এই বাড়ি একটা সাধনাস্থল।
নেতাজির বহু বিরল ছবি, তাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র আর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লেখা চিঠি এখানে সযত্নে রাখা আছে।
১৯২২ সালে রলি ওয়ার্ড নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে কার্শিয়াংয়ের গিদ্দাপাহাড়ে অবস্থিত এই বাড়িটি কিনে নেন নেতাজির দাদা, তথা স্বাধীনতাসংগ্রামী শরৎচন্দ্র বসু।
১৯৩৩ থেকে ১৯৩৫, এই বাড়িতেই ব্রিটিশ সরকারের হাতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল শরৎ বসুকে। এর পরের বছরেই নেতাজির পালা। এই বাড়িতে তাঁকে সাত মাসের জন্য বন্দি করে রাখা হয়।
দ্বিতীয় বার যখন এই বাড়িতে নেতাজি আসেন, তখন তিনি বন্দি নন। সেটা ১৯৩৭ সালের অক্টোবর। হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণ এই বাড়িতে বসেই লিখেছিলেন নেতাজি। এখান থেকে গান্ধীজি ও জওহরলাল নেহরুকে চিঠিও লিখেছিলেন।

এই বাড়িতে থাকাকালীনই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি চিঠি পেয়েছিলেন নেতাজি। তাতে ‘বন্দেমাতরম’ গানের প্রসঙ্গও ছিল।
চিঠির একটি অংশে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, “…যে রাষ্ট্রসভা ভারতবর্ষের সকল ধর্ম-সম্প্রদায়ের মিলনক্ষেত্র, সেখানে এই গান সর্বজনীন ভাবে সঙ্গত হতেই পারে না।”
এই বাড়িতে বহু দুর্লভ ছবির পাশাপাশি নেতাজি-কেন্দ্রিক প্রচুর চিঠিরও সংগ্রহ রয়েছে। সব চিঠি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার মতো সময় ছিল না। ‘বন্দেমাতরম’ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের চিঠির ব্যাপারটি একটি সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছিলাম। ওই চিঠির উত্তরও রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিলেন নেতাজি। কিন্তু তাঁর সেই জবাবের হাতের লেখা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
কার্শিয়াংয়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে নেতাজি কত যে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন, তার প্রমাণও রয়েছে এখানে রক্ষিত বহু চিঠিতে।
নেতাজিকে নিয়ে এমন দুর্লভ ছবির সম্ভার ভারতে আর কোথাও আছে বলে মনে করতে পারি না।
নেতাজি এখানে থাকাকালীন প্রাতর্ভ্রমণে বেরোতেন। পাগলাঝোরায় প্রাতর্ভ্রমণরত নেতাজি, এমনই একটি ছবি রয়েছে। বসু পরিবারের সঙ্গে নেতাজির ছবি যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই পটেলের সঙ্গে তোলা ছবিও।
এ ছাড়া নেতাজির ব্যবহার করা খাট, চেয়ার-টেবিল সবই সযত্নে রাখা হয়েছে। কার্শিয়াংয়ের ‘পয়েন্টস’ ভ্রমণের মধ্যেই নেতাজির এই বাড়ি পড়ে। কিন্তু এখানে আসতে হবে আলাদা ভাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়ে দিয়ে ভালো করে দেখতে হবে। তবেই মনের শান্তি পাওয়া যাবে।
১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাড়িটি বসু পরিবারের অধীনে ছিল। এর পর বাড়িটি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার অধিগ্রহণ করে। সংস্কার করে তা কলকাতার ‘নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ’-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
নেতাজির দুর্লভ ছবি, চিঠিপত্র আর ব্যবহৃত আসবাবপত্র নিয়ে এই সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন হয় ২০০৫ সালে। ২০১৮ সালে সেই সংগ্রহশালার সংস্কারের কাজও হয়েছে।
নেতাজির এই বাড়িটার সঙ্গেই নিজেকে একাত্ম করে দিয়েছেন পদমবাহাদুর। তাঁর কথাবার্তা, আচার আচরণে বোঝা যায়, আশির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া এই বৃদ্ধ নেতাজিকে কখনও না দেখলেও তাঁকে রোজ অনুভব করেন।
শত চেষ্টা করেও পদমবাহাদুরকে ক্যামেরার সামনে আনা গেল না।

১৯৭৩ থেকে এই বাড়িটার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন পদমবাহাদুর। তখন দিনপ্রতি দু’ টাকা হাজিরায় বসুদের কাছ থেকে এই বাড়িটির দেখভালের দায়িত্ব পান।
-“তব মহিনে মে ষাট (৬০) রুপ্যায় মিলতা থা।” গলায় গর্ব ঝরে পড়েছিল।
এর পর বাড়িটা কত ঝড়ঝাপটার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, তবুও তিনি ছিলেন তাঁর লক্ষ্যে অবিচল।
কথা প্রসঙ্গেই উঠে এসেছিল ১৯৮৬ সালের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের কথা। সুবাস ঘিসিংয়ের নেতৃত্বে সেই আন্দোলন মারাত্মক ধ্বংসাত্মক চেহারা নেয়। গত ১৫ বছরে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছে, সুবাস ঘিসিংয়ের জঙ্গি আন্দোলনের কাছে সে সব নেহাতই শিশু।
তখনই পদমবাহাদুরের কাছে আন্দোলনকারীদের প্রস্তাব আসে এই বাড়ির এক একটা ইট বিক্রি করে দিয়ে বিনিময় টাকা নেওয়ার। আর প্রকারান্তরে সে টাকার কিছুটা অংশ আন্দোলনকারীদের দিয়ে দেওয়া।
পদম কিন্তু ছিলেন তাঁর লক্ষ্যে অবিচল। আন্দোলনকারীদের কথা কানেই তোলেননি তিনি। সোজা জানিয়ে দেন, নেতাজির স্মৃতিকে এ ভাবে ধুলোয় মিশে যেতে তিনি দেবেন না।
তাঁর কথায়, “মাত্র কয়েকটা টাকার জন্য নেতাজিতে বিকিয়ে দেব! আমি গরিব হতে পারি, লোভী নই।”
আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আপশোশ, কার্শিয়াংয়ের এক নেপালি বৃদ্ধ নেতাজির আদর্শে চলতে পারেন, কিন্তু আমরা পারি না। আজ ১২৫ বছরে পড়লেন নেতাজি। মুখে বড়ো বড়ো কথা বললেও, নেতাজির আদর্শে চলার ব্যাপারে আমরা লবডঙ্কা। কবে আমরা ওঁর আদর্শে চলব, ঠিক পদমবাহাদুরের মতো?
ছবি: লেখক
আরও পড়ুন: সুভাষের খোঁজে সুভাষগ্রাম ও অন্যত্র
প্রবন্ধ
শিল্পী – স্বপ্ন – শঙ্কা: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে যেমন দেখেছি, ৮৭তম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য
স্বপ্ন বদলে যায়, হারিয়েও যায় – শঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। আজ ওঁর জন্মদিন। আমরা প্রস্তুত তো? শিল্পীর স্বপ্ন সফল করতে?

ডা. পাঞ্চজন্য ঘটক
আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম না। আর পাঁচজন বাঙালির মতো ওঁর গুণমুগ্ধ ছিলাম। আজ ঠিক দু’ মাস চার দিন হল উনি চলে গেছেন। ওঁর মৃত্যু-পরবর্তী দিনগুলোয় অজস্র লেখা ও মূল্যায়ন দেখেছি। বিশেষ একটা ঘটনার কথা ভেবেছিলাম কেউ লিখবেন। এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তাই এই লেখা।
পর্দা আর মঞ্চ ছাড়া সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে আমি দু’ বার দেখেছি কাছ থেকে। ২০১০ সালে লন্ডনে এবিপির উদ্যোগে ‘আনন্দ-উৎসব’ হয়। আমাদের উত্তর ইংল্যান্ডের ‘পারাবার কালচারাল গ্রুপ’ একটি ছোটো নাটকের কিছু অংশ মঞ্চে পরিবেশন করার আমন্ত্রণ পায়। তারকাখচিত সমাবেশ – সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, সোহা আলি খান, কুমার শানু, অঞ্জন দত্ত. আইয়ুব বাচ্চু, অলকা ইয়াগনিক। এঁদের মতো তাবড় শিল্পীরা তিন দিন ধরে মঞ্চ আলো করে থাকবেন। দফায় দফায়। আর তার ভেতরে ফিলারের মতো থাকবে বিলেতের স্থানীয় সংগঠনের ছোটো ছোটো প্রোগ্রাম। আমাদের বলা হয়েছিল মিনিট পনেরোর ভেতর একটা নাটক করতে। বিলেতে এ রকম অনুষ্ঠান এর আগে কখনও হয়নি, পরেও নয়।
আমরা খুবই উত্তেজিত। আমাদের গ্রুপের তিন জনে মিলে একটা মজার নাটক করতাম – ‘রাজযোটক’। মিনিট চল্লিশের। সময় কম ছিল। তাই ওই নাটকের কিছু দৃশ্য কাটছাঁট করে মিনিট পনেরোর মতো একটা স্ক্রিপ্ট খাড়া করা হল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি ‘পারাবার’ গোষ্ঠীর সবাই মিলে চললাম আনন্দোৎসবে। তিন জন নাটক করব। বাকিরা উৎসাহ দেবেন আর জমাটি একটি অনুষ্ঠান দেখবেন।
অনুষ্ঠানের দিন পৌঁছে গেলাম উত্তর লন্ডনের সুবিশাল আলেকজান্ড্রা প্যালেসে। আমাদের আর্টিস্ট এন্ট্রি কার্ড থাকায় মঞ্চের পেছন দিকে যাওয়ার সুযোগ পেলাম। গ্রিনরুম দেখে আসার জন্য। মঞ্চের পেছনে অনেকটা এলাকা। কয়েকটা ঘর তারকাদের জন্য। আর বাকিদের ড্রেসআপ খোলা জায়গাতেই করতে হবে বুঝলাম। কয়েক জন উদ্যোক্তা গোছের লোক বড়ো বড়ো ব্যাজ পরে ব্যস্তভাব দেখিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। আমি বরাবর একটু উৎসুক গোছের। তারকাদের ঘরে কেউ আছে কিনা দেখতে গিয়ে দেখলাম একটির ভেতরে বসে আছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পর্দা খোলাই ছিল। একেবারে সামনাসামনি ওঁকে দেখে একটু হকচকিয়ে গেছিলাম। একটু সামলে উঠে বললাম, “ভেতরে আসব?” উনি বললেন, “এসো, এসো”।
সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রণাম করলাম পায়ে হাত দিয়ে। ধুতি-পাঞ্জাবি পরেছিলেন। গরম চাদর গায়ে। চামড়ার বাঁধা স্যান্ডেল আর মোজা পায়ে। মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “ভালো থেকো”। পরিচয় জানতে চাইলেন। বললাম, “ডাক্তারি করি আর শখের অভিনয় মাঝেসাঝে। এই মঞ্চে পরের দিন একটা ছোট্ট নাটক করব। তেমন কিছু নয়। ফিলার প্রোগ্রাম। আমাদের নাটক আর কে দেখতে আসছে এখানে”।
একটু ক্লান্ত লাগছিল ওঁকে। ধীরে ধীরে বললেন, “কোনো নাটক ছোটো নয়। নাটকের কোনো রোল ছোটো নয়। একটা লোকও যদি না থাকে হলে, তুমি তোমার শ্রেষ্ঠ অভিনয় করবে। স্টেজটাকে সম্মান জানিয়ে”।
আরেক বার প্রণাম করলাম ওঁকে। বললাম, “এই কথাগুলো চিরকাল মনে রাখবো”। মনে হচ্ছিল উনি একটু বিশ্রাম করতে চাইছেন। ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। কথাগুলো মনে রেখেছি। নাটক, শ্রুতি-নাটক, সিনেমা – যেটুকু সুযোগ পাই, নিজের পুরোটা দেওয়ার চেষ্টা করি।
একবার পেছনে তাকালাম। সোফায় মাথা এলিয়ে বিশ্রামের চেষ্টা করছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। স্কাইলাইট দিয়ে তেরছা সূর্যের আলো পড়েছে চোখের উপর। একবার ভাবলাম পর্দা টেনে দিই। মনে হল, না থাক। সূর্যের এই স্পটলাইট আরো অনেক দিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখের ওপর থাকুক। সরাসরি।
এর আগে এক বার

৬ ডিসেম্বর ১৯৯২। রবিবার। সন্ধ্যাবেলা খবর পাওয়া গেল বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। কলকাতায় দমচাপা পরিস্থিতি। সেই রাতে বিরাট দাঙ্গা কিছু হয়নি। মনে হয় দাঙ্গা শুরু হয় দিন কয়েক পর। পার্কসার্কাস অঞ্চলে ছিল আমাদের হোস্টেল। অশান্ত হয়ে ওঠে ওই অঞ্চল। কারফিউ, প্যারামিলিটারি, র্যাফ, মিলিটারি, আগুন, বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু – দিন কয়েকের ভেতর বদলে যায় আমাদের চেনা কলকাতা। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রশাসনের তৎপরতায় দিন সাতেকের ভেতর দাঙ্গা আয়ত্তে আসে।
ঠিক মনে নেই তারিখটা – মনে হয় ১৩ বা ২০ ডিসেম্বর। রবিবার। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটি শান্তিমিছিল আহ্বান করা হয়। একটু অন্য রকম এই মিছিল। বলা হয় কোনো দলীয় পতাকা, ফেস্টুন থাকবে না এই মিছিলে। থাকবে না কোনো দলীয় স্লোগান। এই শান্তিমিছিলের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা। মিছিলের রুট ঠিক মনে নেই, তবে শুনলাম দুপুর তিনটে নাগাদ আমাদের হোস্টেলের কাছ দিয়ে মিছিল যাবে। মল্লিকবাজার অঞ্চল দিয়ে সার্কুলার রোড ধরে দক্ষিণের দিকে। আমরা কয়েক জন ঠিক করলাম ওখানে মিছিলে যোগ দেব। একটু আগেভাগে নোনাপুকুর ট্রামডিপোর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। খানিক পর দেখলাম শীতের দুপুরের রোদ মেখে এগিয়ে আসছে এক মহামিছিল। কারো হাতে কোনো পতাকা নেই।
শুধু কয়েকটা স্লোগান শোনা যাচ্ছে –
‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, / দাঙ্গা নয় শান্তি চাই’।
‘দাঙ্গাবাজ লোক যত, / বাংলা থেকে দুর হটো’।
মিছিলের একদম সামনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। নীল জিন্স পরা। গায়ে নীল জিন্সের পুরো হাতা জ্যাকেট। হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। চোখে কোনো সানগ্লাস নেই। কাছাকাছি সানগ্লাস চোখে কোনো সেলিব্রিটি চোখে পড়ল না। আশেপাশে সাধারণ মানুষ। হিন্দু, মুসলিম পোশাকে খানিকটা আলাদা বোঝা গেলেও স্লোগান সবার গলায় এক। আর তার সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
আমরা মিছিলে প্রবেশ করলাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ঠিক পেছনে। বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল ওঁর দিকে। চোয়াল শক্ত – কখনও মনে হচ্ছিল ‘হীরক রাজার দেশ’-এর উদয়ন পণ্ডিত, কখনও বা ফুটে উঠছিল ‘অভিযান’-এর নরসিং ড্রাইভারের চাপা অসন্তোষ। আর মাঝে মাঝে একটা ফরসা মুঠো করা হাত উঠে যাচ্ছিল শীতের নীল আকাশের দিকে – ‘দাঙ্গা নয়, শান্তি চাই’। সে দিনও কি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যের তেরছা আলো পড়ছিল শিল্পীর মুখে? এত দিন পর ঠিক মনে করতে পারছি না।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে না চিনলেও ওঁর সঙ্গে মিছিলে হেঁটেছি। ওঁর গলায় গলা মিলিয়ে স্লোগান দিয়েছি। এটা আমার একটা বিরাট গর্ব। বাঙালি অকুণ্ঠ সম্মান জানিয়েছেন তাঁদের প্রিয় শিল্পীকে। মৃত্যুর পর অমর করে দিয়েছেন। এখন ওঁর স্লোগানকে সত্যি করার দায়িত্ব বাঙালির ওপর।
স্বপ্ন বদলে যায়, হারিয়েও যায় – শঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। আজ ওঁর জন্মদিন। আমরা প্রস্তুত তো? শিল্পীর স্বপ্ন সফল করতে?
(ছবিটি এঁকেছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সোমজিত ঘোষ)
আরও পড়ুন: রবিবারের পড়া: শহর ছেড়ে তুমি কি চলে যেতে পারো তিন ভুবনের পারে
প্রবন্ধ
একুশের মহারণ কি শুধুই তৃণমূল বনাম বিজেপি?
নির্বাচনী লড়াইটা শুধু মাত্র তৃণমূল-বিজেপির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তেমন উপসংহারে এখনই পৌঁছানো সম্ভব নয়!

খবর অনলাইন ডেস্ক: প্রচারের বহর দেখে মনে হতেই পারে, মাস কয়েক বাদের বিধানসভা ভোটে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল এবং বিজেপি। এই দুই দলের গুঁতোগুঁতিতে ভুগতে পারে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি। কিন্তু নির্বাচনী লড়াইটা শুধু মাত্র তৃণমূল-বিজেপির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তেমন উপসংহারে এখনই পৌঁছোনো সম্ভব নয় বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।
বাম ও কংগ্রেস যে নির্বাচনী জোট গড়ছে, সেটাও এক প্রকার নিশ্চিত। কিন্তু আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চলছে। ফলে দুই শক্তি যদি একত্রিত হয়, তা হলে একাধিক আসনে তৃণমূল-বিজেপির জয়ের পথে কাঁটা হতে পারে এই বিরোধী জোট। এ কথা ঠিক, অঙ্কের জটিল হিসেব অনেকাংশেই ভোটের বাক্সে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না। তবুও শেষ বছরে রাজ্যের সব থেকে বড়ো কয়েকটি নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ফলাফলে নজর বুলিয়ে নেওয়া যেতেই পারে।
বিধানসভা নির্বাচন ২০১১
তৃণমূল-৩৮.৯৩ শতাংশ, আসন-১৮৪
সিপিএম-৩০.০৮ শতাংশ, আসন-৪০
বিজেপি-৪ শতাংশ, আসন-০
কংগ্রেস-৯.০৯, আসন-৪২
লোকসভা নির্বাচন ২০১৪
তৃণমূল-৩৯.০৫ শতাংশ, আসন-৩৪
সিপিএম-২৯.৭১ শতাংশ, আসন-২
বিজেপি-১৭.০২ শতাংশ, আসন-২
কংগ্রেস-৯.৫৮, আসন-৪
বিধানসভা নির্বাচন ২০১৬
তৃণমূল-৪৪.৯১ শতাংশ, আসন-২১১
সিপিএম-১৯.৭৫ শতাংশ, আসন-২৬
কংগ্রেস-১২.২৫, আসন-৪৪
বিজেপি-১০.১৬ শতাংশ, আসন-৩
লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তৃণমূল-৪৩.৬৯ শতাংশ, আসন-২২
বিজেপি-৪০.৬৪ শতাংশ, আসন-১৮
বামফ্রন্ট-৬.৩৪ শতাংশ, আসন-০
কংগ্রেস-৫.৬৭, আসন-২
লোকসভা ভোটের সাফল্য ধরে রেখে প্রথম বারের জন্যে রাজ্যের ক্ষমতা দখলে নেমেছে বিজেপি। পরিস্থিতি এমনই যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বঙ্গ-সফরকে কার্যত রুটিনে পরিণত করে নিয়েছেন। শাসকদলের একাধিক হেভিওয়েট গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। মিটিংয়ে-মিছিলে গেরুয়া পতাকার ভিড় উপচে পড়ছে।
তবে ২০২১ বিধানসভায় যে শেষ লোকসভার থেকে বিজেপির ভোটের হার কমতে পারে, সে বিষয়েও একাধিক যুক্তি রয়েছে পরিসংখ্যানপ্রেমীদের ঝুলিতে। সঙ্গে রয়েছে ভিন রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটগুলির পরিসংখ্যানও। আসলে দেশে এমন কোনো রাজ্য নেই, যেখানে বিধানসভায় বিজেপির ভোট লোকসভার থেকে বেড়েছে। অর্থাৎ, ঘুরিয়ে বললে সর্বত্রই লোকসভার থেকে ভোট কমেছে বিধানসভায়।
কয়েকটি রাজ্যে শেষ লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট
বিহার: লোকসভা (২০১৯)-৫৩.২৫ শতাংশ, বিধানসভা (২০২১)-৩৭ শতাংশ (এনডিএ-গত ভাবে)
দিল্লি: লোকসভা (২০১৯)- ৫৬.৮৬ শতাংশ, বিধানসভা (২০১৯)-৩৮.৫১ শতাংশ
ঝাড়খণ্ড: লোকসভা (২০১৯)- ৫৫ শতাংশ, বিধানসভা (২০১৯)-৩৩ শতাংশ
হরিয়ানা: লোকসভা (২০১৯)- ৫৮ শতাংশ, বিধানসভা (২০১৯)-৩৬ শতাংশ
মহারাষ্ট্র: লোকসভা (২০১৯)- ৫১ শতাংশ, বিধানসভা (২০১৯)-৪২ শতাংশ
উপরের পরিসংখ্যান তুলে ধরার কারণ দ্বিমুখী। একটি দিক হল, বিজেপি যদি পশ্চিমবঙ্গের ২০১৯ সালের লোকসভা সাফল্য ধরে রাখে অথবা আরও এগোয়, তা হলে তৃণমূলের প্রত্যাবর্তনের পথ অবরুদ্ধ হতেই পারে। কিন্তু উলটো দিকে অন্যান্য রাজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২১-এ বিজেপির প্রাপ্ত ভোট যদি কমে যায়, তা কোথায় যাবে?
শেষ বছরে তৃণমূলের ভোটের হার কিন্তু ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। বিজেপির ঝুলি পূর্ণ করতে বাম-কংগ্রেসই নি:স্ব হয়েছিল। যে কারণে তৃণমূল অভিযোগ করছে, বাম-কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে খাটো করতে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আবার উলটো কথা শোনা যাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বের মুখেও। তাঁরাও বলছেন, বাম-কংগ্রেসকে অক্সিজেন জোগাচ্ছেন মমতা। অর্থাৎ, সে দিকে সরাসরি দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের অবকাশ থাকছে না। অঙ্কের হিসেব যা-ই বলুক, তৃতীয় বিকল্প হিসেবে কিন্তু ভেসে থাকছে বাম-কংগ্রেসই।
আরও পড়তে পারেন: রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোটে সিলমোহর সনিয়া গান্ধীর
-
শরীরস্বাস্থ্য3 days ago
থাইরয়েড ধরা পড়েছে? এই খাবারগুলি সম্পর্কে সচেতন হন
-
রাজ্য2 days ago
তৃণমূলে যোগ দিলেন অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়, প্রিয়া সেনগুপ্ত
-
ফুটবল1 day ago
বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু ব্রাজিলের ফুটবল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও চার ফুটবলারের
-
রাজ্য2 days ago
উন্নয়ন দেখাতে ‘ছানিশ্রী’ প্রকল্প করবে সরকার, বিজেপিকে কটাক্ষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের