কৃষ্ণা মীরা রায়
সম্প্রতি গোয়া সরকার কয়লা পরিবহণ করার জন্য রাজ্যের মর্মুগাঁও বন্দর থেকে উত্তর কর্নাটকের ইস্পাত কারখানার মধ্যে রেল ও নদীপথে কয়লা করিডোর তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। গোয়ার ১৮৩টি গ্রামের ৫৪টি গ্রামসমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের এলাকার মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহন করা যাবে না। গোয়ার অধিবাসীরা মনে করছেন যে এই প্রকল্পের ফলে দূষণের মাত্রা এত বেশি হবে যে তা তাদের জীবন ও জীবিকার উপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে প্রতি বছর ১২০ লক্ষ টন কয়লা এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। গোয়ার এই এলাকার মধ্য দিয়ে কয়লা আমদানির কুফল ইতিমধ্যেই ভোগ করছেন মর্মুগাঁও বন্দর লাগোয়া ভাসকো শহরের বাসিন্দারা।
মর্মুগাঁও বন্দরে কয়লা আমদানির বিষয় জেএসডব্লু (JSW) ও আদানি পোর্টস (Adani Ports) তদারকি করে। সম্প্রতি বেদান্ত রিসোর্সেস (Vedanta Resources) এখানে একটি কয়লা টার্মিনাল তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছে। সাউথ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আসে এবং সেই কয়লা রেল ওয়াগন, ট্রাক, বার্জ ইত্যাদিতে চাপিয়ে শুধু ত্রিপল ঢাকা দিয়ে কর্নাটকে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার কয়লার আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে ৫১০ লক্ষ টন করতে চায়।
আর এই আমদানি করা কয়লা পরিবহণের জন্য সরকার যে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে তা হল –
(১) পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মধ্য দিয়ে জোড়া রেললাইন (Double-tracking) পাতা;
(২) বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন বসানো;
(৩) চার লেনের জাতীয় সড়ক তৈরি করা;
(৪) ছ’টি নদীপথকে ড্রেজিং করে জাতীয় জলপথ তৈরি করা;
(৫) নদীর ধারে জেটি তৈরি করা ও নদীর তীর বাঁধানো; এবং
(৬) ভাসকো ডা গামা উপসাগর, বন্দরের সমস্ত ক্যানেল ড্রেজিং করে গভীর করা।

‘কয়লার বিরুদ্ধে গোয়া'(‘গোয়া এগেন্সট কোল’, Goa Against Coal) প্রচার আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য প্রভু দেশাইয়ের কথায়, “দৈত্যের মতো এই ভয়াবহ প্রকল্পগুলি সম্পর্কে গোয়াবাসীরা অন্ধকারে রয়েছেন। কারণ এই প্রকল্পগুলি এক সঙ্গে জানানো হচ্ছে না। এক বার পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলে বলা হবে, এত টাকা লগ্নি করা হয়ে গেছে, আর কিছু করার নেই। গোয়াবাসীদের এটা মেনে নিতে হবে।”
সরকারের এই উদ্যোগের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি প্রচারমঞ্চ গড়ে উঠেছে গোয়ায় – যেমন, ‘গোয়া এগেন্সট কোল’, ‘আওয়ার রিভার্স আওয়ার রাইটস’ (আমাদের নদী আমাদের অধিকার, Our Rivers Our Rights)। এই দু’টি মঞ্চের পক্ষ থেকে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে কয়লা আমদানি ও পরিবহন বন্ধ করার জন্য স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
গোয়াবাসীরা রুখে দাঁড়াচ্ছেন
২০১৬ সালে যখন কেন্দ্রীয় সরকার সাগরমালা রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে মর্মুগাঁও-সহ দেশের সব বন্দর উন্নত করার জন্য মাস্টারপ্ল্যানের রূপরেখা রাখা হয়েছিল, তখন সবার আগে ‘ফেডারেশন অফ রেনবো ওয়ারিওর্স’ (Fedaration of Rainbow Warriors) এবং ন্যাশানাল ফিসওয়ার্কার্স ফোরাম (National Fishworkers Forum) এই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে জানতে পারে। তারা বুঝতে পারে সরকার ইতিমধ্যেই টুকরো টুকরো করে মর্মুগাঁও বন্দর উন্নত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে।
বন্দরের নিচু এলাকায় বসবাসকারী মৎস্যজীবীদের বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে বন্দর ড্রেজিং প্রকল্প বন্ধ করার জন্য ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসেই উক্ত ফোরাম দু’টি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালে (National Green Tribunal) আবেদন জানায়। কিন্তু এক মাস পরেই পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাছ থেকে এই বন্দর সম্প্রসারণের প্রকল্প পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পেয়ে যায় এবং গণশুনানি থেকে অব্যাহতিও পায়।

আলকাতরায় মাখামাখি গোখরো সাপ। মাড়গাঁও বন দফতরের কর্মীরা এটিকে উদ্ধার করে। এর একটি চোখ, নাক এবং চোয়ালের কিছুটা পরিষ্কার করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছিল। ছবি ‘গোয়া এগেন্সট কোল’-এর ফেসবুকে পেজ থেকে নেওয়া।
ন্যাশনাল ফিসওয়ার্কার্স ফোরাম এই ছাড়পত্রকে গ্রিন ট্রাইবুনালে চ্যালেঞ্জ করে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাইবুনাল ফোরামের পক্ষে রায় দেয় এবং প্রস্তাবিত সব প্রকল্পের বিষয়ে গণশুনানির নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টও ট্রাইবুনালের এই নির্দেশ বহাল রাখে।
ভাসকো শহরে ২০১৭-এর মে মাসে আট দিন ধরে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। সম্ভবত এ দেশে গণশুনানির ইতিহাসে এটি সব চেয়ে দীর্ঘ শুনানি। এখানে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সবাই সাক্ষ্য দিয়েছেন – সক্রিয় পরিবেশকর্মী, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, মৎস্যজীবী ( নৌকা বা ট্রলার), ছাত্রছাত্রী, তরুণতরুণী, ঠাকুমা-দিদিমা, রোমান ক্যাথলিক যাজক, কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, স্থানীয় ছোটো ছোটো পার্টির প্রতিনিধিরা, এমনকি গোয়া রাজ্যের শাসক ভারতীয় জনতা পার্টির একজন বিধায়কও।
গণশুনানিতে একজনও প্রকল্পগুলির পক্ষে বলেননি। গণশুনানির প্রথম দিন সাক্ষ্য দিতে ১৫০০-রও বেশি মানুষ এসেছিলেন। শুনানি সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হয়ে রাত একটায় শেষ হয়।
শুনানিতে একের পর এক বক্তা বন্দর কর্তৃপক্ষ-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক ও দফতরের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সামনে প্রকল্পের ত্রুটিগুলি উদাহরণ দিয়ে তুলে ধরেন। যেমন, একজন সাক্ষী বলেন ‘বিপর্যয় মোকাবিলা পর্যবেক্ষণ’ (Disaster Management Studies) নিজেই ‘মূর্তিমান বিপর্যয়’, কারণ পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে কয়লার স্তূপে মাঝে মাঝে আগুন ধরে যায়। অথচ পর্যবেক্ষণে এটা বলা হয়নি যে এই কয়লার স্তূপের ২০০ মিটারের মধ্যে সহজদাহ্য অ্যামোনিয়া ট্যাঙ্ক মজুত করা হয়েছে।
সামুদ্রিক বিজ্ঞানী পূজা মিত্র বলেন, এই বন্দরের আরও সম্প্রসারণ হলে হাম্পব্যাক ডলফিন (humpback dolphin) ও প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি হবে।
রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক কার্লোস আলমেইডা গণশুনানিতে দাঁড়িয়ে কয়লা সংক্রান্ত সমস্ত কাজ বন্ধ রাখার দাবি করেন। তিনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে প্রশ্ন করেন, “যদি বায়ুদূষণ এত বেশি মাত্রায় দেখা যায়, তা হলে এই কাজের জন্য দেওয়া লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে না কেন? আর দূষণের মাত্রা যদি ইতিমধ্যেই এত বেশি হয়ে থাকে তা হলে আরও কয়লা কেন আনা হচ্ছে?”
স্থানীয় সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিল এক জন স্কুলপড়ুয়ার সাক্ষ্য, সে আন্তঃপ্রজন্ম সমতার (intergenerational equity) দাবি করেছিল।
ভাসকো শহরের সেন্ট অ্যান্ড্রিউ’স চার্চের যাজক শেরউইন কোরিয়া তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, গির্জা কয়লার গুঁড়োয় ঢেকে যাচ্ছে। সে জন্য গির্জার ভবন ও চত্বর নিয়মিত জল দিয়ে ধুতে হচ্ছে।
রেল করিডোর তৈরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
কর্নাটকের হসপেট পর্যন্ত কয়লা পরিবহণের উদ্দেশ্যে ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দক্ষিণ-পশ্চিম রেল করিডোর তৈরির জন্য দু’ জোড়া রেললাইন পাতার নকশা রাখা হয় ২০১৬ সালের সাগরমালা রিপোর্টে। ওই বছরেরই ডিসেম্বরে রেললাইন পাতার প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার সময় থেকেই গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ শুরু করেন।

চান্দোর এলাকায় জোড়া রেললাইন পাতার কাজ শুরু হওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল ২০২০ সালের ২ নভেম্বর। ১ নভেম্বরের মধ্যরাত থেকে হাজার হাজার গ্রামবাসী চান্দোর এলাকায় জড়ো হয়ে রেললাইন পাতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। ২ নভেম্বর ভোর ৫টা পর্যন্ত তাঁরা এলাকা পাহারা দে্ন। বিক্ষোভকারীরা সারা রাত ধরে মোমবাতি হাতে নিয়ে, ড্রাম বাজাতে বাজাতে মিছিল করেন, স্লোগানে স্লোগানে নিস্তব্ধ রাত্রি মুখর হয়ে ওঠে্ন। বিক্ষুব্ধ জনতা ওই সময় রেললাইন অবরোধ করে রাখেন এবং গভীর রাত্রে যে সব কয়লাবাহী ট্রেন ওই পথে যাতায়াত করে সেগুলো তাঁরা আটকে দেন।
জোড়া রেললাইন পাতার বিরোধিতা করার জন্য গড়ে ওঠা মঞ্চ ‘গোয়েনচো একভট’-এর ( Goencho Ekvott) আহ্বায়ক ক্রেসন এন্টাও বলেন, “এই রেললাইন পাতার কাজ বন্ধ করার জন্য আমরা ডেপুটি কালেক্ট্ররকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি।”
তিনি দাবি করেন, এই রেল প্রকল্প সম্পূর্ণ বেআইনি কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। ভগবান মহাবীর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (Bhagwan Mahavir Wildlife Sanctuary) এবং মোলেম জাতীয় উদ্যানের (Mollem National Park) জঙ্গল ও জীববৈচিত্র্যের উপর এই প্রকল্পের অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ক্রেসন এন্টাও আরও বলেন, জোড়া রেললাইন বসানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এখানে ৪০০ কেভির ট্রান্সমিশন লাইন বসানো হবে। এ ছাড়া চার লেনের জাতীয় সড়ক তৈরি হবে। কয়লার গুঁড়ো গোয়ার পর্যটনশিল্পকে শেষ করে দেবে। মৎস্যশিল্প ও কৃষির প্রভূত ক্ষতি করবে।
মোদ্দা কথা, বিশ্বের ৩৬টি উৎকৃষ্ট জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চলের অন্যতম যে পশ্চিমঘাট, সেই পশ্চিমঘাটের অপূরণীয় ক্ষতি করবে প্রস্তাবিত রেল, জাতীয় সড়ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন।
ছ’টি নদীকে জাতীয় জলপথ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা
কয়লা পরিবহনের জন্য কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক গোয়ার ছ’টি নদী মান্ডবী, জুয়ারি, মাপুসা, চাপোরা, সাল ও কুম্ভরজুয়া এবং একটি ক্যানেলকে জাতীয় জলপথে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গোয়াবাসীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। গোয়া বিধানসভায় গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টির পক্ষ থেকে এই প্রকল্প সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিধানসভার নির্দল বিধায়ক বিজয় সরদেশাই বলেন, এই প্রকল্পের ফলে জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক সম্পদের প্রভূত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং অচিরেই গোয়া ‘মৎস্যহীন’ হয়ে পড়বে।

গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রভাকর টিম্বলে সমস্ত রাজনৈতিক পার্টির কাছে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।‘ গোয়া এগেন্সট কোল’ আন্দোলনের কর্মী প্রভু দেশাই বলেন, “এই সব নদী গোয়ার সাধারণ মানুষের সম্পদ ও ঐতিহ্যের ধারক। সরকার সেই নদী বিক্রি করে দিচ্ছে আদানি, জিন্দালদের কয়লা পরিবহনের জন্য। যে গোয়াকে আজ আমরা চিনি এই প্রকল্প সেই গোয়াকে চিরদিনের মতো শেষ করে দেবে।”
গণশুনানির পর কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক মর্মুগাঁও বন্দর উন্নত করার প্রকল্প পিছিয়ে দেয়। কারণ মন্ত্রক মনে করে, পরিবেশ দূষণের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। প্রবল প্রতিরোধের মুখে গোয়া সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার এই তিনটি প্রকল্প নিয়েই ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করেছে।
তিন দশকের আন্দোলন
গোয়া রাজ্যে আজকের বিক্ষোভ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই রাজ্যে প্রায় তিন দশক ধরে পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন চলছে।
১৯৯৫ সালে গোয়ার পন্ডা তালুকে থাপার ডুপন্ট নাইনল প্ল্যান্ট ৬.৬ তৈরির সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা কারখানায় পৌঁছোনোর সব রাস্তা বন্ধ করে দেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালায়। একজন মারা যান।

২০০০ সালে মিরামার বিচকে ব্যাক্তি মালিকানার অধীনে আনার পরিকল্পনা করা হয়। ‘নিও’ (দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশিয়ানোগ্রাফি, The National Institute of Oceanography) এবং ‘টেরি’র (দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট, The Energy and Resources Institute) বৈজ্ঞানিকদের সহায়তায় স্থানীয় মানুষ এই প্রকল্প বাতিল করতে বাধ্য করে্ন।
২০০৬ সালে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সক্রিয়তার ফলে ৩৫,০০০ কোটি টাকার আকরিক লোহার খনি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে এবং খনিতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৬ সালেই গোয়ার ভূখণ্ড-চিত্র রক্ষা করার জন্য ‘গোয়া বাঁচাও অভিযান’ এক বিশাল সমাবেশ করে। তার ফলে অনেক সরকারি প্রকল্প স্থগিত হয়ে আছে।
পরিবেশকর্মীদের সক্রিয়তায় নাজেহাল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ সিং রানে এক সময় বলেছিলেন, “পরিবেশকর্মীদের গোয়া থেকে বার করে দেওয়া উচিত। এদের কোনো কাজ নেই, এরা যে কোনো অজুহাতে কোর্টে চলে যায়, আর প্রকল্পগুলোর উপর স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে।”
গোয়ার ভূখণ্ড-চিত্র বাঁচাতে পরিবেশ-সচেতন নাগরিকদের কাছে কোর্টের স্থগিতাদেশ চাওয়া ও বিক্ষোভ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া গোয়াকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর আর কোনো পথ খোলা নেই। ফলে পরিবেশকর্মীরা তাঁদের সক্রিয়তার জন্য কায়েমীস্বার্থের চক্র এবং সরকারের কোপের মুখে পড়ছেন। এমনকি সক্রিয় পরিবেশকর্মীদের চোরাগোপ্তা পথে খুন করার অভিযোগও উঠছে। এ রকমই একটি অভিযোগের উল্লেখ এখানে করা যেতে পারে।

২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর সক্রিয় পরিবেশকর্মী ফাদার বিসমার্ক ডায়াসের দেহ মান্ডবী নদীতে ভেসে ওঠে। পুলিশ প্রথমে এই ঘটনাকে একটি দুর্ঘটনা হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ফাদারের পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেন। জমি-মাফিয়ারা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে ফাদার ডায়াস থানায় এফআইআর করেছিলেন। তিনি একটি ভিডিও রেকর্ডও করে যান যেখানে যারা তাঁকে খুনের হুমকি দিচ্ছে এমন কিছু ব্যাক্তির নাম উল্লেখ করা আছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে এই মৃত্যুকে হত্যার ঘটনা হিসাবে তদন্ত করার জন্য হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ অবশেষে এটিকে খুনের ঘটনা হিসাবে ধরে তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তিন বছর পর ফাদার ডায়াসকে সমাধিস্থ করা হয়।
পরিবেশকর্মীদের সক্রিয়তা ও সচেতন নাগরিক সমাজের সারাক্ষণের সতর্ক নজরদারি উন্নয়ন-মাফিয়াদের হাত থেকে আজকের গোয়াকে বাঁচানোর একমাত্র ভরসা।
তথ্যসূত্র: Scroll.in, thecitizen.in, downtoearth.org.in, The Hindustan Times, The Indian Express এবং Wikipedia
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।