অনিল কুণ্ডু, সাংবাদিক, গণশক্তি
“ক্ষতিগ্রস্ত আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পার্টির নেতা, কর্মীরা যেন সর্বশক্তি নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমি বলেছি। ওদেরকে বলো। এখনই খবর দাও।”
আমাকে ফোনে সেদিন এই নির্দেশ দিয়েছিলেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য, সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর নির্দেশমতো সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় নেতৃত্বকে ফোন করে সেই বার্তা জানিয়েছিলাম।
২০১১ সাল। বিধানসভা নির্বাচনের পর নিয়ম করে তখন প্রতিদিন সকালে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিআই (এম) রাজ্য দফতরে যেতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখন সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। জরুরি কাজে তিনি সেদিন দিল্লিতে ছিলেন। যত দূর মনে পড়ছে, দিনটা ছিল রবিবার। দুপুরে আচমকা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার গোসাবা, বাসন্তী ব্লকের বেশ কয়েকটি অঞ্চল। ঘরের ছাউনি ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। বেশ কিছু মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন।
বারুইপুরে দফতরে বসে তখন ওই অঞ্চলের পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছি। দফতরের টেলিফোন মুহুর্মুহু বাজছে। ছুটে গিয়ে ফোনটা ধরলাম। বুঝলাম সিপিআই(এম) রাজ্য দফতরের ফোন। অপর প্রান্ত থেকে আমার পরিচয় জানার পর তিনি বললেন, “একটু ধরুন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কথা বলবেন।”
বুদ্ধদা আমার কাছ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে গোসাবা, বাসন্তী ব্লকের ক্ষয়ক্ষতি, মানুষের অসহায় পরিস্থিতির খোঁজখবর জানতে চাইলেন। সব শোনার পর বললেন, “সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সুজনের সঙ্গে কথা হলে বোলো আমি খোঁজ করেছিলাম।” পাশাপাশি উল্লেখ করতে ভুললেন না উদ্ধারের সঙ্গে ত্রাণের দিকটির কথাও। পার্টির নেতা, কর্মীরা যাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারেও গুরুত্ব দেয়, সেই নির্দেশও দিলেন।
ঘন্টাখানেক বাদে দিল্লি থেকে সুজনদাও ফোন করেন। পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিলেন। বুদ্ধদার ফোনের কথাও তাঁকে জানিয়েছিলাম। এই ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, ‘গণশক্তি’তে আমার সাংবাদিকতা জীবনে তাঁকে বহুবারই কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন একটা সময় তিনি নিয়মিত বারুইপুরে পার্টির জেলা দফতরেও আসতেন।
সেদিন তাঁর সঙ্গে কথা বলে বুঝেছিলাম — ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পরিস্থিতি জানতে তিনি কতটা উদ্বিগ্ন ছিলেন। অসহায় গরিব মানুষের প্রতি তাঁর দরদ, মমত্ব এবং ভালোবাসা ফুটে উঠেছিল তাঁর কণ্ঠে। আর সে কারণেই তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন — মানুষের পাশে সর্বশক্তি নিয়ে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট, ২০২৪) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই প্রয়াত হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।