মহালয়া এলেই মনে পড়ে যায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’, শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সেই ত্রয়ীকে

0

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটির অন্যতম উপাদান হল ‘মার্কণ্ডেয় পুরাণ’ এবং ‘শ্রীশ্রী চণ্ডী’ থেকে সংকলিত স্তোস্ত্রগীত এবং পাঠ। এই অনুষ্ঠানটি আপামর বাঙালির জীবনে ও সংস্কৃতিতে আজ এক ঐতিহাসিক অলংকার হয়ে গেছে। এর বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল স্তোত্রপাঠে কিংবদন্তি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের এক নতুন ছন্দিত আঙ্গিকের উচ্চারণের সঙ্গে কখনও ঋজুতায়, কখনও অশ্রুরুদ্ধতায় উদাত্ত কণ্ঠের দেবী মহামায়ার আগমনবার্তা ঘোষণা – “আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী…”।

এর পর সংগীতের উপস্থাপনা। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র প্রথম গান মালকোষ রাগে। মালকোষ রাগ হল রাত্রিশেষের রাগ। দ্বিতীয় গানটি ভৈরব রাগে। এই ভাবে চলতে থাকে দিনের প্রথম ভাগের রাগাশ্রিত সুর-তালে আবদ্ধিত সংগীতগুলি। সংগীত-আয়োজনে আরও এক কিংবদন্তি পঙ্কজ কুমার মল্লিক। সংগীতের সংগতে ছিলেন ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’-এর মানুষজন। যেমন মহাপুরুষ মিশ্র, রাধাকান্ত নন্দী, কেরামতুল্লা খান, অ্যান্টনি গোমস, সাগিরুদ্দিন খান, খুশি মহম্মদ, আলি বক্স, দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রকান্ত শীল প্রমুখ। গানে ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শিপ্রা বসু, সুপ্রীতি ঘোষ, শ্যামল মিত্র, সত্য চৌধুরী, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু, আরতি মুখোপাধ্যায়, বিমলভূষণ, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, তালাত মামুদ (প্রথম দিকে), উৎপলা সেন, রাইচাঁদ বড়াল, পঙ্কজ কুমার মল্লিক প্রমুখ।

‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আলেখ্যগাথাটির রচয়িতা ছিলেন আর এক কিংবদন্তি বাণীকুমার, আসল নাম বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য।

‘বসন্তেশ্বরী’ থেকে ‘শারদবন্দনা’, তার পর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’

১৯২৭-২৮ সালে একটি ঘরোয়া আড্ডায় সেই সময়ের রেডিওর কর্তা নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদারের আগ্রহে আর প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, বাণীকুমার, রাইচাঁদ বড়াল, নিমাইচাঁদ বড়াল, প্রমুখের আলাপচারিতায় এবং পরিকল্পনায় বসন্তকালে বাসন্তীপুজোর প্রাক্কালে একটি আলেখ্য অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়। সেই অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘বসন্তেশ্বরী’, যা বাসন্তী পুজোর ষষ্ঠীর ভোরে প্রচারিত হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয় একবারই।

তার পর ১৯৩২ সালে ( ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ) আশ্বিন মাসে ষষ্ঠীর ভোরে এই অনুষ্ঠানটি রেডিওয় ‘শারদবন্দনা’ নামে প্রচারিত হয়। তখন রেডিও স্টেশন ছিল ১ নং গার্স্টিন প্লেসে। এর পর ১৯৩৪ সালের ৮ অক্টোবর (১৩৪১ বঙ্গাব্দ) অনুষ্ঠানটি মহালয়ার দিন সকাল ছ’টা থেকে সাড়ে সাতটা অবধি প্রচারিত হয়। কিন্তু প্রচারের পর একাংশের তরফ থেকে উঠেছিল প্রতিবাদ। কিছু সংকীর্ণ মনের মানুষ হইচই ফেলে দিলেন – সে কি? এক কায়েতের ছেলে, অব্রাহ্মণ ব্যক্তি চণ্ডীপাঠ করবে? এ কি অনাচার? আর মহালয়ার দিন তো পিতৃতর্পণের দিন। তার আগেই দেবীর আবাহনে চণ্ডীপাঠ? – ইত্যাদি।

অনেক সময়ে ধর্মের ভাবাবেগ মানুষকে অন্ধ, উগ্র করে দেয়। তখন সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরা তার বিরুদ্ধে সুদৃঢ় মনোভাব নিয়ে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হল। অনুষ্ঠানের সপক্ষে এগিয়ে এলেন উদার মনের মানুষরা। পরবর্তী কালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র স্মৃতিচারণায় লিখেছেন – নৃপেনবাবু তা শুনে বলেছিলেন প্রোগ্রাম করবে, তার আবার বামুন কায়েত কি হে? আমরা কি হিন্দুর মন্দিরে গিয়ে পুজো করছি? তা হলে তো আমাদের এই প্রোগ্রামে যারা বাজাবে, গাইবে, তারা তো কেউ মুসলমান, কেউ খ্রিস্টান, কেউ হিন্দু, আবার কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ অব্রাহ্মণ। এই তো আলি আছে, মুনশি আছে, অ্যান্টনি আছে, আবার মুখুজ্যে-বাঁড়ুজ্যে-চাটুজ্যে-ঘোষ-বোস, সবাই আছে। তাতে কার কি এসে গেল? ওসব কে কি বলল, না বলল কিচ্ছু এসে যায় না। প্রোগ্রাম হবেই আর যারা আছে তারাই করবে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ আরও লিখেছেন, “বাণীকুমার রুখে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, চণ্ডীপাঠ আর গ্রন্থনা বীরেন্দ্রকৃষ্ণই করবেন, তার অন্যথা হবে না”।

অবশ্য পরের দু’ বছর ১৯৩৫ এবং ১৯৩৬ সালে অনুষ্ঠানটি মহাষষ্ঠীর ভোরে প্রচারিত হয়েছিল। অবশেষে বাণীকুমার, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ, পঙ্কজকুমাররা সিন্ধান্তে ১৯৩৭ সাল থেকে মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ রেডিওয় প্রচারিত হতে শুরু করে, যা আজ ৮৪ বছর ধরে চলে আসছে।

’৭৬-এর সেই ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’

১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। সারা দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালীন এক অদৃশ্য নির্দেশে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি প্রচার না করে আকাশবাণী নতুন প্রথিতযশা শিল্পীদের নিয়ে (পাঠে উত্তমকুমার, বসন্ত চৌধুরী প্রমুখ এবং গানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁশলে, মহম্মদ রফি,প্রমুখ) ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’ সম্প্রচারিত হয়েছিল। রচনা করেছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের তৎকালীন প্রধান ড. ধ্যানেশনারায়ন চক্রবর্তী। কিন্তু অনুষ্ঠান প্রচারের শেষে রেডিও স্টেশনের সামনে সাধারণ মানুষ জনরোষে, বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। এই অনুষ্ঠানটির বিষয়ে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ বীরেন ভদ্র, পঙ্কজ মল্লিক বা বাণীকুমারের সঙ্গে কোনো  আলোচনাই করেনি। যার জন্য খুব কষ্ট পেয়েছিলেন তাঁরা। তাই পরে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে ক্ষমা চান। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে এসেছিলেন স্বয়ং উত্তমকুমার। ভুল শোধরাতে বাধ্য হল আকাশবাণী। সেই বছরই মহাষষ্ঠীর ভোরে আকাশবাণী আবার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আলেখ্যটি প্রচার করে।

এখানে উল্লেখ্য, মহালয়ার ভোরে এই অনুষ্ঠান আগে রেডিও থেকে লাইভ অনুষ্ঠান হিসাবে অনুষ্ঠিত হত। স্টুডিওতে সকল শিল্পীরা আসতেন মাঝরাতে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র গঙ্গাস্নান করে গরদের পোশাক পরে আসতেন। তখন তিনি যেন এক মহা-ঋত্বিক, মহা-স্তোতৃপুরুষ।

থাকত মা দুর্গার এক চালচিত্রের প্রতিমা। সকল জাতি-ধর্মের শিল্পীদের নিয়ে সে এক অনির্বচনীয় পরিবেশ তৈরি হত আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্রে। পরে ১৯৬৬ সালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করা হয়। সেই রেকর্ডই তার পর থেকে মহালয়ার ভোরে রেডিওতে সম্প্রচারিত হয়ে আসছে।

mahalaya biren and bani 15.09 2
‘মহিষাসুরমর্দিনী’র অন্যতম দুই কারিগর – বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র এবং বাণীকুমার।

‘মহিষাসুরমর্দিনী’র জনপ্রিয়তা

ইন্ডিয়ান অডিয়েন্স রিসার্চ ব্যুরোর ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষার তথ্য বলছে, মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ প্রভাতী অনুষ্টানের শ্রোতা বাংলায় ৯৭ শতাংশ এবং সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাষায় প্রচারিত হওয়া এই অনুষ্ঠানটির শ্রোতা ৯৮.৪ শতাংশ। এই অনুষ্টানের আর একটি বিশেষত্ব হল, একটানা প্রায় নয় দশক ধরে একই ভাবে প্রচারিত হয়ে আসছে, যার কদর এতটুকুও কমেনি। সেই অনুষ্ঠান আজ শতবর্ষ পূর্ণ করার দুয়ার প্রান্তে।

বাঙালি যত দিন থাকবে, মহালয়ার ভোরে সেই ব্যারিটোন ভয়েসে ‘যা দেবী সর্বভুতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা/নমোস্তস্যই নমোস্তস্যই নমোস্তস্যই নমোনমোহঃ’ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’, ‘জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী’ ইত্যাদি গান নিয়ে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে দেবীর আবাহন গীতি-আলেখ্য চির অম্লান হয়ে থাকবে।

‘মহিষাসুরমর্দিনী’র স্রষ্টা ত্রয়ী

বাংলা সংস্কৃতির কালজয়ী এই অনুষ্ঠানের তিন কিংবদন্তি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজ কুমার মল্লিক এবং বাণীকুমার।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র

১৯০৫ সালের ৪ আগস্ট বীরেন্দ্রকৃষ্ণ কলকাতার আহিরীটোলায় মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তখন সারা বাংলায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন চলছে। পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ-সহ আপামর বাঙালি। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বাবা রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্রও রবীন্দ্রনাথের অনুগামী, অনুরক্ত ছিলেন। তিনি কবিগুরুর কাছে পুত্রের নামকরণের অনুরোধ জানালে কবিগুরু নাম দিয়েছিলেন ‘বীরেন্দ্র’। মা সরলা দেবী।  

পড়াশোনা এই কলকাতাতেই। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ অত্যন্ত রবীন্দ্র-অনুরাগী ছিলেন। ১৯৪১ সালে ২২শে শ্রাবণ কবিগুরুর মহাপ্রয়াণের দিন তাঁর অন্তিমযাত্রার বিবরণী আকাশবাণী থেকে প্রচারিত হয়েছিল। সেই মহাপ্রস্থানের ধারাবিবরণী করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং কবিতাপাঠে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সে দিন সারা বাংলা, সারা বিশ্ব কেঁদেছিল সেই প্রাণবন্ত, অশ্রুসিক্ত ধারাভাষ্য শুনে। একই ভাবে ১৯৬১ সালের ১ জুলাই ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের শেষ যাত্রার ধারাবিবরণীও আকাশবাণী থেকে প্রচারিত হয়েছিল। সেই ধারাবিবরনীও করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সে দিনও বাঙালি চোখের জলে ভেসেছিল সেই ধারাভাষ্য শুনে। তাঁর উপস্থাপনার এমনই বিশেষত্ব ছিল।

বীরেনবাবু ১৪টি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। আকাশবাণীর সঙ্গে আজীবন যুক্ত ছিলেন। তিনি একাধারে সাংবাদিক, লেখক ও নাট্যকার। অনেক পত্রিকাতেই তিনি লিখতেন। লিখতেন ‘শ্রীবিরুপাক্ষ’ ছদ্মনামে। তাঁর রম্যরচনাগুলি রেডিওয় প্রচারিত হত। তাঁর লেখা নাটক আকাশবাণীতে প্রচারিত হয়েছে। আর মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সংস্কৃত স্তোত্রপাঠ এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আজ বাঙালির কাছে সমার্থক। তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে ১৯৯১ সালের ৩ নভেম্বর।

পঙ্কজ কুমার মল্লিক

১৯০৫ সালের ১০ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মনমোহন মল্লিক এবং মা মনমোহিনী দেবী। পড়াশোনা কলকাতাতেই। পাশাপাশি তিনি খুব ভালো গান করতেন। গানের প্রতি টান ছিল আশৈশব। তিনি গানে সুর সংযোজনও করতেন। সেই সব গান শুনে শ্রোতারা মোহিত হয়ে যেতেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দিনেন্দ্রনাথ।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (দিনু ঠাকুর নামে যিনি বিখ্যাত) সঙ্গে পঙ্কজ কুমারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই সুত্রে তিনি রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আসেন। পরবর্তী কালে রবীন্দ্রনাথের ‘খেয়া’ কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা (দিনের শেষে ঘুমের দেশে) তিনি রাবীন্দ্রিক সুরের অনুসরণে সর দিয়ে কবিগুরুকে অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে শুনিয়েছিলেন দিনু ঠাকুরের জোরজবরদস্তিতে। কবিগুরু খুব প্রশংসা করেছিলেন সেই গান শুনে। তার পর রবীন্দ্রনাথের কাছে অতি স্নেহের পাত্র হয়ে ওঠেন পঙ্কজ কুমার।

পঙ্কজ কুমার পরে চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। অনেক চলচ্চিত্রে সুরকারও ছিলেন। আকাশবাণীর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সংগীত পরিচালক হিসাবে তিনি বাঙলা সংগীতজগতে অমর হয়ে আছেন। তৎকালীন সর্বভারতীয় সংগীত এবং চলচ্চিত্রজগতের সকল ব্যক্তিত্বের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন পঙ্কজ কুমার। ১৯৭৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রয়াণ ঘটে। মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আলেখ্যর গানগুলির মাধ্যমে তিনি চিরঅমর হয়ে রয়েছেন বাঙালির সংস্কৃতিতে।

mahalaya pankaj 23.09
আরেক স্রষ্টা পঙ্কজ কুমার মল্লিক। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া।

বাণীকুমার

আসল নাম বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য। ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর হাওড়া জেলার আমতা অঞ্চলের কানপুর গ্রামে জন্ম। আদি বাড়ি ছিল হুগলি জেলার আঁটপুরে। বাবা বিধুভূষণ ভট্টাচার্য আর মা অপর্ণা ভট্টাচার্য। বাবা ছিলেনন পণ্ডিত মানুষ এবং সে যুগের একজন ঐতিহাসিক।

বাণীকুমারের পড়াশোনা প্রথমে কানপুরে, পরে কলকাতায়। তিনি মনেপ্রাণে রবীন্দ্রনাথের একান্ত অনুরাগী ছিলেন। আর কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ হৃদ্যতা। বাণীকুমার  ছিলেন অত্যন্ত স্বল্পবাক চরিত্রের মানুষ। কিন্তু অন্তরে ছিল শিশুর মতো সরলতা।

তিনি আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর। ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’ এবং ‘মার্কণ্ডেয় পুরাণ’ অবলম্বনে তিনি রচনা করেছিলেন ‘বসন্তেশ্বরী’ গীতিআলেখ্য। পরে রচনা করেন ‘শারদ বন্দনা’, যা ১৯৩২ সালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নাম নিয়ে মহালয়ার ভোরে আকাশবাণী থেকে আজও প্রায় ৯০ বছর ধরে সম্প্রচারিত হয়ে আসছে। তিনি ছিলেন সুলেখক। তাঁর অনেক লেখাই বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৭৪ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর প্রয়াণ ঘটে।

আজকের ডিজিটালের যুগে, ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপের যুগে, টুইটার-ব্লগ-ইন্সটাগ্রাম-এর অভ্যস্ত জীবনেও বাঙালি তার সব কাজের ব্যস্ততাতেও এক অপেক্ষায় থাকে -‘মহালয়া কবে? পুজো কবে?’ বোধহয় এক বিজয়াদশমীতেই শুরু হয় পরের বছরের মহালয়া, বোধন, সন্ধিপুজোর খোঁজখবর।

আর এই শারদীয়া উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে মহালয়ার প্রত্যুষে রেডিওয় সেই উদাত্ত-উদার আবাহন – ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর। ধরণির বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা, আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন; তাই আনন্দিতা শ্যামলী মাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন’।

আরও পড়তে পারেন

পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করার জন্য কর্ণও স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিলেন মর্ত্যে

‘মহালয়া’ মানেই দুর্গাপুজো, ‘মহালয়া’ মানেই তর্পণ, জেনে নিন আরও কিছু তথ্য

দেখে নিন এ বছরের মহালয়ার দিনক্ষণ

‘শুভ মহালয়া’ কি বলা যায়? নানা মুনির নানা মত

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.