কথাশিল্প
শতবর্ষে রাধিকামোহনের জীবনখাতায় চোখ বোলানো
পাপিয়া মিত্র: বেশি শাসনের নিগড়ে বাঁধতে গেলেই পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা। তখন কতই বা বয়স। গরমের ছুটিতে কারশিয়াং-এর বাড়িতে এসেছে তেরো-চোদ্দো বছরের কিশোর। সেখানে গিয়ে বাবা বাঁধালেন এক মহা ঝঞ্ঝাট। কয়েক দিনের মধ্যে বাড়িতে পড়ানোর জন্য রাজশাহি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নিয়ে এলেন। স্টেশন থেকে আনার দায়িত্ব পড়ল সেই কিশোরের। শর্টকাট পথ দিয়ে আনার নাম করে খান […]
পাপিয়া মিত্র:
বেশি শাসনের নিগড়ে বাঁধতে গেলেই পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা। তখন কতই বা বয়স। গরমের ছুটিতে কারশিয়াং-এর বাড়িতে এসেছে তেরো-চোদ্দো বছরের কিশোর। সেখানে গিয়ে বাবা বাঁধালেন এক মহা ঝঞ্ঝাট। কয়েক দিনের মধ্যে বাড়িতে পড়ানোর জন্য রাজশাহি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নিয়ে এলেন। স্টেশন থেকে আনার দায়িত্ব পড়ল সেই কিশোরের। শর্টকাট পথ দিয়ে আনার নাম করে খান চারেক পাকদণ্ডি দিয়ে বাড়ি আনলেন যখন, তখন প্রধান শিক্ষকের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। পরের দিন হাঁসফাঁস করতে করতে শিলিগুড়ি ফিরে গেলেন। সেখান থেকে ট্রেন। এ হেন ছাত্র পরবর্তী কালের বিখ্যাত সরোদবাদক রাধিকামোহন মৈত্র।
আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি, জন্মদিনের শতবর্ষে তাঁর জীবনখাতার পাতা পড়ার চেষ্টা করছি।
রাধিকামোহন মৈত্র এক সাংগীতিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ঠাকুরদা ললিতমোহন মৈত্র ছিলেন তবলাবাদক, পিতা ব্রজেন্দ্রমোহন মৈত্র ছিলেন সরোদবাদক, মা বীণাপাণিদেবী খুব ভালো সেতার বাজাতেন। তিনি সেতার শিখেছিলেন ওস্তাদ এনায়েত খানের কাছে। ঠাকুরদার পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ছিলেন মহম্মদ আমির খান, যিনি রাধুবাবুর প্রধান গুরু ও শিক্ষক ছিলেন। শাহাজানপুর ঘরানায় অভিষিক্ত বাজনার বাইরে রাধুবাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন-এ এমএ ও এলএলবি পাশ করেন। সরোদের পাশাপাশি শৈশবে সেতারবাদক উস্তাদ এনায়েত খানের বাজনা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। রাধুবাবুর বাদ্যঘরানা সেই সময়ের হিন্দুস্থানী সঙ্গীতসমাজকে ভীষণ ভাবে আলোড়িত করেছিল।
রাজশাহি লোকনাথ হাইস্কুলের ছাত্রের গুণময় জীবনে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। এমন বিচিত্র জীবন নিয়ে কিছু কিছু ভাগ্যবান জন্মগ্রহণ করেন। রাধিকামোহনের বাড়িতে দীর্ঘদিন ছিলেন শাহজানপুরের মহম্মদ আমির খান। জন্মের পরে রাধুবাবু সেই ওস্তাদজির কোলে কোলে ঘুরতেন। আমির খানসাহেব তাঁকে উজাড় করে বিদ্যাদান করেছিলেন। সরোদের বাজ যথাসম্ভব সম্পূর্ণভাবে তাঁকে দিয়ে আয়ত্ত করিয়েছিলেন। কুড়ি-একুশের পূর্ণ যুবক শিক্ষালাভ শেষ করে বসে থাকতে পারলেন না। অনেকেই পরামর্শ দিলেন বাবা আলাউদ্দিনের কাছে যেতে। কিন্তু সন্তান ও শিষ্যদের ওপরে বাবার ভয়ংকর সংশোধনক্রিয়ার জন্য রাধুর শেখা হয়ে ওঠেনি। শেষে গাণ্ডা (নাড়া) বাঁধেন আলাউদ্দিনের গুরু উজির খানসাহেবের বড় নাতি দবির খানের কাছে।
সরোদিয়া পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নিজের গুরুলাভের কথা শোনাচ্ছিলেন -‑ দিনাজপুরে প্রথম সাক্ষাৎ গুরুদেব রাধিকামোহন মৈত্রর সঙ্গে। পুরুষ মানুষ যে অত সুন্দর হয় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। “তখন গুরুদেবের পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর হবে। যথেষ্ট বিখ্যাত হয়েছেন। ঝকঝকে তরোয়ালের মত একটি যন্ত্র নিয়ে নীল রঙের বাইক চড়ে তিনি আমাদের বাড়ি এলেন। এবং বাজালেন। সরোদ যন্ত্রটি প্রথমবার দেখলাম ও শুনলাম। শুনেই বায়না ধরলাম, ওটা শিখব। তখন আমার বয়স দশ-এগারো।” রাধুবাবু ছিলেন সেই ধরনের গুরু যিনি শিষ্য তৈরি করার জন্য বাজি ধরতেন। তার জ্বলন্ত উদাহরণ পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। গুরুদেবের কাছে ৫ হাজার টাকা বাজি ধরেছিলেন বাবা প্রফুল্ল দাশগুপ্ত।
রাধিকামোহনের জমিদারি ছিল রাজশাহি জেলার তালন্দে। তখনকার দিনে বছরে তিন লাখ টাকা আয়। বিয়ের সময় গানবাজনা হয়েছিল। বাইরে থেকে এসেছিলেন সানাইয়ে বিসমিল্লা খান ও তাঁর ভাই। শ্বশুরবাড়ি হল ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে সুষঙ্গে। হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন। ছন্দে বাঁধা যাঁর জীবন তিনি যেতে যেতে উপলব্ধি করেছিলেন হাতির চলন থেকে যে ধামার তালটির সৃষ্টি হয়েছিল, তার উপরে চড়লে তবে বোঝা যায়। দেশভাগের বছরেই রাজশাহি ছেড়ে মামাবাড়ি চক্রবেড়িয়ায় চলে আসেন।
রাধুবাবুর জীবনে অনিল রায়চৌধুরী ছিলেন অপরিহার্য। কে এই অনিল? রাধিকামোহনের প্রবীনতম শিষ্য। তিনি ছিলেন রাধুবাবুর সর্বময় একজন অভিভাবক। কে ‘প্রয়াগ’-এর পরীক্ষায় বসবে, কে ‘তানসেন প্রতিযোগিতা’য় বসবে, কে ‘মুরারি সংগীত সম্মেলন’-এ বাজাবে -‑ এই সব ব্যাপারে ছিল তাঁর সর্বক্ষণ চিন্তা ও দৌড়োদৌড়ি। তা ছাড়া রাধুবাবুর সংসারে নানা ফাইমরমাশ, টেস্ট ম্যাচের টিকিট, পোস্তা থেকে নানা মশলা আনা, নতুন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খোঁজ এবং সমস্ত সাংগীতিক ক্রিয়াকর্মের তিনি ছিলেন ম্যানেজার। কোথাও বাজাতে গেলে তিনি ছিলেন রাধুবাবুর ছায়াসঙ্গী।
পণ্ডিত রবিশঙ্করের লেখায়, তিনি একজন উচ্চস্তরের ধ্রুপদী শিল্পী ছিলেন। নিয়মিত রেডিও, টিভি ও দেশ-বিদেশের নানা সংগীত সম্মেলনে যোগ দিতেন। রাজশাহিতে থাকাকালীন ১৯৩৫ সালে কলকাতার সেনেট হাউসের সম্মেলনে রাধুবাবু ‘নটকেদারা’ বাজিয়েছিলেন। বাবা আলাউদ্দিনের কাছে না শিখলেও বাজনার প্রভাব সরোদিয়া রাধুবাবুর পরিবেশনায় ছিল। ‘ঝংকার’ নামে এক সংগীতচক্র খুলেছিলেন। সেখানে বার কয়েক বাজাতে গিয়ে ওঁর সঙ্গে আলাপের পর্ব শুরু। জ্ঞানের পরিধি ও সংগীতচিন্তা ছিল গভীর ও বিস্তৃত। ওঁর বাজনার অনেকখানি পাওয়া যায় ওঁর শিষ্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মধ্যে।
তাঁর সৃষ্টি ‘ঝংকার’-এর মাসিক অধিবেশন লেগেই থাকত। এমনই এক অধিবেশনে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে সংগত করার জন্য জ্ঞানবাবু এবং রাধুবাবু ঠিক করলেন তবলিয়া কানাই দত্ত বাজাবেন। পন্ডিতজির আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা সিদ্ধান্তে অটুট রইলেন, এবং বললেন, রবুভাই কানাইকে নিয়ে বসতে হবে। সেই আসরের বাজনা থেকে কানাই দত্ত বিখ্যাত হয়ে গেল। এই ছিল ‘ঝংকার’-এর গুণমান।
তবে ‘ঝংকার’ খোলার অনেক আগে রাজশাহিতে ‘আষাঢ়ে ক্লাব’ নামে একটি সংস্থা গড়ে উঠেছিল রাধিকামোহনের ব্যবস্থাপনায়। পরে ঝগড়াঝাঁটি হওয়ায় বন্ধুরা আলাদা হয়ে গেলে তাঁর ক্লাবের নাম হল ‘স্বতন্ত্রা’। কলকাতার ২৫ নম্বর ডিক্সন লেনের সদর দরজা ছিল সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের জন্য অবারিত। এই বাড়িতে থাকতেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। এই বাড়ি বহু মজার ঘটনার সাক্ষী। এমণ এক দিনের ঘটনা -‑ জ্ঞানবাবুর বাড়ি এসেছেন রাধুবাবু। রাধুবাবুর ডাকে দূর থেকে সাড়া এল ‘ওই যে আমি’। অমন সম্বোধনের মানে কী? মানে খুব সহজ। তিন তলা থেকে ওই ভাবে বলা। তিনি যদি এক তলায় থাকতেন তা হলে বলতেন ‘এই যে আমি’। রাধুবাবুর উত্তর, সত্যি আপনার জ্ঞানপ্রকাশ নাম সার্থক। বলেই গেয়ে উঠলেন ‘জ্ঞান সাবানে না কাচিলে ঘিলুর ময়লা ওঠে না হায়’। বিন্দুমাত্র দেরি না করে তেতলার ঘর থেকে উত্তর এল, ‘রাধুর পাটে আছাড় খেলে ঘিলু একদম ঘেঁটে যায়।’
বাবা আলাউদ্দিন খানসাহেবের কাছে রাধিকামোহন যে স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছেন তা আর কারওর কাছে পাননি। এক অনুষ্ঠানে এক সঙ্গে বাজিয়ে ওঠার পরে নিজের একটি ‘জাওয়া’ (তিনকোণা স্ট্রাইকার যা দিয়ে তারে আঘাত করা হয়) উপহার দিয়েছিলেন। রাধুবাবু তা রুপোর কৌটোয় রেখে দিয়েছিলেন। এমন কৌটোয় না জানি আরও কত কী আছে!
ঋণ স্বীকার:
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত: বামনের চন্দ্রস্পর্শাভিলাষ
প্রবন্ধ
বিজেপিকে ভোট নয়, এটাই একুশের ডাক – কেন?
শ্রেণিবিভক্ত ভারতে শাসকশ্রেণির বহু দল। বিভিন্ন শাসকদল তাদের রাজত্বকালে সাধারণ মানুষের উপর নানাবিধ আক্রমণ শানিয়েছে। কিন্তু আরএসএস-বিজেপি বাদে এদের কারোরই ফ্যাসিবাদী কর্মসূচি নেই।

কুশল দেবনাথ
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে – ‘নো ভোট টু বিজেপি’, বিজেপিকে একটিও ভোট নয়। এ রাজ্যে শ্রমিক আন্দোলন, নারী আন্দোলন, মানবাধিকার আন্দোলন-সহ বিভিন্ন গণ আন্দোলনে যাঁরা জড়িত, তাঁরা এই কর্মসূচি নিয়েছেন। গত ৪ জানুয়ারি ভারতসভা হলে একটি কনভেনশনের মাধ্যমে ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা’ নামে একটি মঞ্চ গঠন করা হয়। ওই মঞ্চ থেকে একটি বক্তব্য উঠে আসে – বিজেপিকে হারাও পথে, বিজেপিকে হারাও ভোটে।
শ্রেণিবিভক্ত ভারতে শাসকশ্রেণির বহু দল। বিভিন্ন শাসকদল তাদের রাজত্বকালে সাধারণ মানুষের উপর নানাবিধ আক্রমণ শানিয়েছে। কিন্তু আরএসএস-বিজেপি বাদে এদের কারোরই ফ্যাসিবাদী কর্মসূচি নেই। আরএসএস-বিজেপির ফ্যাসিবাদী কর্মসূচি আছে। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য তারা গোটা দেশে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন চালাচ্ছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক – সব ক্ষেত্রেই এই আগ্রাসন চলছে। বিজেপির সঙ্গে আরএসএসের নাম জোড়া হয়েছে এই কারণেই যে আরএসএস হল মুখ, আর বিজেপি তার মুখোশ।
এ ছাড়াও ফ্যাসিবাদের একটি নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন থাকে। বহু বৈচিত্র্যের দেশ ভারতে একটি একনায়কতন্ত্রী হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এরা সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এক দিকে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, অন্য দিকে বিদ্বেষ বিভাজনের রাজনীতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া – উগ্র জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে জনগণকে বিভক্ত করাই এদের উদ্দেশ্য। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের উপর ভয়ানক আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। আদিবাসী, দলিত, ছাত্র এবং নারীরাও এদের আক্রমণের লক্ষ্য। বিভিন্ন রাজ্যেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, কিন্তু ধর্ষকদের নিয়ে মিছিল একমাত্র এই দলটিই করে।
২০১৯-এ দ্বিতীয় বার লোকসভা নির্বাচনে জিতে বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ পাশ করে, যার মধ্য দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়াকে আইনি করা হয়। এনপিআর, এনআরসি-র মাধ্যমে বহু মানুষকে না-মানুষ করার চক্রান্ত করেছে। ৪৪টি শ্রম আইনকে চারটি শ্রম কোডে রূপান্তরিত করে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে। তিনটি কৃষি আইন এনে কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেট পুঁজির একাধিপত্যকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে গোটা কাশ্মীরকে কার্যত কারাগারে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে করেছে কুক্ষিগত।

এক কথায় ফ্যাসিবাদী কর্মসূচি রূপায়ণ করার জন্য গোটা দেশের জনগণের উপর ভয়ংকর আক্রমণ চালানো হয়েছে। রেল-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেচে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যয়বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। মানুষ প্রতিবাদ করলেই তার উপর নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে আসছে। কার্যত দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে। এই প্রেক্ষাপটেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে দেখতে হবে।
‘নো ভোট টু বিজেপি’ – এই স্লোগান ওঠার পরই বিস্মিত হয়ে দেখছি, সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে – আমরা নাকি তৃণমূলের বি টিম, চালচোরদের কাছ থেকে কমিশন পেয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সব লোকে নিচ্ছে না। কারণ তৃণমূল আমলে আমাদের অনেকেই জেলে গেছে। তাদের উপর ইউএপিএ লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করতে গিয়ে পুলিশ ও তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে।। এখন কেউ কেউ বলছেন বামেদের কেন সমর্থন করছি না আমরা? এ প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন আসে – এ রাজ্যে বাম প্রার্থী কই? ওটা তো বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। যদি ধরেই নিই আজকের বিশ্বে বাম হওয়ার ন্যূনতম ভিত্তি হল নয়া উদারবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের অবস্থান গ্রহণ করা, সেখানে সিপিএমের কার্যক্রম কি এই অবস্থানে পড়ে? সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম তো নয়া উদারবাদ নীতির বাস্তব প্রয়োগ। সিঙ্গুর আন্দোলনের প্রভাবে দেশের জমি অধিগ্রহণ আইন পালটে গেল। তবু সিপিএমের ঘুম ভাঙল না। এখন সিঙ্গুর নিয়ে কাঁদছেন মুকুল রায়। সংঘপরিবারের থাপ্পড় খেয়ে রোজ বলছেন সিঙ্গুরে আন্দোলন করে ভুল করেছি।
এ বার কংগ্রেসের কথায় আসি। আজ অধীর চৌধুরীর যদি মমতা ব্যানার্জির মতো লোকবল থাকত, তিনি কি তৃণমূলের চেয়ে কম অত্যাচার করতেন? যেখানে বাম জমানাতেই অধীর চৌধুরী মুর্শিদাবাদে বাম কর্মীদের পিটিয়ে দল বাড়িয়েছেন।
আর আব্বাস সিদ্দিকি! ফ্রান্সে মৌলবাদীরা একজনের গলা কেটেছে। বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড়। আব্বাস তখন ওই গলাকাটাকে উচ্চ স্বরে সমর্থন করছেন। কিংবা নারীদের সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করছেন চিৎকার করে। ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখে জোট করছেন, করুন। কিন্তু দয়া করে ধর্মনিরপেক্ষতার শংসাপত্র দেবেন না।

কিন্তু এতৎসত্ত্বেও সংঘপরিবার-বিজেপির ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের কাছে তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস, কেউ ধারে কাছে আসে না। সঙ্ঘপরিবার ২০২১ সালে এ রাজ্যে ক্ষমতায় বসার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। জানে এখানে জিতলে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন বাড়াতে পারবে। আর হারলে জোর ধাক্কা পাবে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপি তিনটি আসন পেয়েছিল। ভোট পেয়েছিল ১০%। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তাদের সমর্থন বহু গুণ বেড়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে তারা ১৮টি আসন দখল করে। আমাদের রাজ্যে গত দশ বছরের তৃণমূল শাসনে দলবাজি, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া ইত্যাদি জনবিরোধী কাজের জন্য বহু মানুষের ন্যায্য ক্ষোভ রয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের উপর পরিকল্পিত হামলা বর্তমান শাসকদলের দম্ভ ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতার চরম নিদর্শন। ৩৫% মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এর সুযোগ নিয়ে বিজেপি তার সমর্থন বাড়িয়ে তুলেছে। বামেদের ৩৪ বছরের শাসনকালেও নানা স্বৈরাচারী পদক্ষেপ আমরা দেখেছি। এই সব কাজে লাগিয়ে বিজেপি–আরএসএস ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টই বলতে চাই, তৃণমূল কিংবা বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের চেয়ে সব অর্থেই এরা অনেক ভয়ংকর শক্তি। গোটা দেশে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন চালালেও আরএসএস-বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতা এখন পর্যন্ত পায়নি। তাই এরা ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া। অপর দিকে ফ্যাসিবিরোধী যে সমস্ত মানুষ আজ বিভিন্ন রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছেন, তাঁরাও চাইছেন এরা যেন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় না আসতে পারে।
আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। গত বছর গুজরাতে পেপসি কোম্পানির বিরুদ্ধে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ জমি লুঠ বন্ধ করার লড়াই সফল হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি-এনপিআর-সিএএ বিরোধী লড়াইয়ের ফলে ওরা জল মাপছে, বেশি এগোতে সাহস পাচ্ছে না। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে পাঞ্জাব-হরিয়ানা-উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের নেতৃত্বে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে কৃষক বিদ্রোহ। দিল্লিকে ঘিরে ফেলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছেন কৃষকরা। কৃষকদের আম্বানি-আদানি-জিও বয়কটের ডাকে সাড়া দিচ্ছে দেশের কোটি কোটি মানুষ। কোম্পানিগুলোর গায়ে জোর ধাক্কা লেগেছে। পাঞ্জাবে বিজেপিকে সামাজিক বয়কট করা হচ্ছে, বিজেপি নেতাদের ঘেরাও করা হচ্ছে। এতে প্রমাণ হচ্ছে যে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দিয়েই প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমাদের রাজ্যকেও সেই পথেই এগোতে হবে আজ।
এই লড়াইয়ের অংশ হিসাবে, নির্বাচনেও যাতে ওরা জিততে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের রাজ্যের বিধানসভা ভোটে তাই আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে স্পষ্ট ডাক দিচ্ছি। আমরা এক দিকে যেমন রাস্তায় নেমে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট শক্তিকে আটকাব, অন্য দিকে তেমনই ভোটেও হারানোর জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা চালাব। বাংলার সাধারণ মানুষের মঞ্চ গড়ে আমরা তাই আওয়াজ তুলেছি ‘নো ভোট টু বিজেপি। বিজেপি-কে একটি ভোটও নয়’।

দিল্লির আন্দোলনরত কৃষকরা যখন বলেন “বাংলায় বিজেপি হারলে আমাদের শক্তি বাড়বে”, যখন বলেন, “বিজেপিকে বাংলায় জিততে দেবেন না’, তখন বুঝি আমাদের দেশে নজিরবিহীন কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে বাংলার ভোট সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। তাই আরও জোরের সঙ্গে বলি বিজেপিকে হারাও পথে, বিজেপিকে হারাও ভোটে। নো ভোট টু বিজেপি।
সিপিএমের কর্মী, সমর্থকরা ভাবুন বিজেপির ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনকে লঘু করে দিয়ে জনগণকে তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুল্লিতে ফেলছেন না তো? না ভাবলেও ভাবার অভ্যাসটা অন্তত করুন।
আমরা মনে করি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বিজেপি জিতলে এই রাজ্য সহ সারা দেশে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন বাড়বে। এই আগ্রাসন শুধু অর্থনৈতিক রাজনৈতিক পরিসরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, গোটা বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষা ও সম্প্রীতির নানা ঐতিহ্যকেও ধ্বংস করবে। পরাস্ত হলে সেই আগ্রাসন অন্ত কিছু সময়ের জন্য ধাক্কা খাবে।
ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শেষ অবধি লড়াই জারি থাকবে। ভোটের আগে, ভোটের পরেও লড়াই চলবে। আশার কথা বাংলায় এ রকম সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বাংলা শুধু নয়, আগামী দিনে গোটা দেশ জুড়ে এই রকম মঞ্চ গড়ে তোলার চেষ্টা হবে। আমরা জানি এর জন্য বহু মূল্য আমাদের দিতে হবে। আমরা প্রস্তুত। যে ভাবে কৃষকরা ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে সেই ভাবে আরও লড়াই হবে। আমরাও তাদের সঙ্গে থাকব। ফ্যাসিস্ট শক্তি হারবেই হারবে।
সবশেষে বলি, অনেকে বলছেন ‘নো ভোট টু বিজেপি’ একটি নেতিবাচক শ্লোগান। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, স্পেনে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর বিরুদ্ধে বামপন্থী নেত্রী ডোলোরেস ইবারুরির বিখ্যাত স্লোগান ছিল ‘নো প্যাসারন’ অর্থাৎ পিছোব না, যা আজও প্রতিবাদী মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে আছে। তাই না মানে নেতিবাচক নয়, ইতিবাচকও বটে।
লেখক ‘নো ভোট টু বিজেপি’ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত (মতামত ব্যক্তিগত )
ইতিহাস
চল্লিশের দশকে বাংলার এক গণ্ডগ্রামে নারী শিক্ষার আলো দেখিয়েছিলেন তিনি, নারী দিবসে স্মরণ করি সেই বীরাঙ্গনাকে
বর্ধমান-বাঁকুড়ার সীমানায় আকুই গ্রাম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষে ছিল কৃষিজীবী প্রধান এবং শিক্ষায় অনগ্রসর। গ্রামীণ সমাজও ছিল রক্ষণশীল। এই পরিবেশেই জন্ম হয় ননীবালার, ১২৯৩ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে।

শ্রয়ণ সেন
—- “আমি ভিক্ষে চাইতে এসেছি, দেবে?”
—- “ভিক্ষে! এবং আপনি! কেন?”
—- “না, যেটা ভাবছ সেটা নয়। টাকাপয়সা ভিক্ষে আমি করছি না। ছাত্রীভিক্ষে। আমার বাড়িতে গড়ে ওঠা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ছাত্রী চাই। আমার স্বপ্ন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করে তোলা।”
নিশ্চিত করে জানা যায় না, কিন্তু ননীবালা গুহ এবং এই প্রতিবেদকের প্রপিতামহী এমিলাসুন্দরী সেনের মধ্যে হয়তো এই ধরনের কথোপকথনই হয়েছিল।
১৯৩৯ সাল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন তখন মধ্য গগনে। ঠিক তখনই ৫২ বছরের এক প্রৌঢ়া আকুই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার দোরে দোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিক্ষার আলোয় মেয়েদের আলোকিত করে তুলবেন বলে।

বর্ধমান-বাঁকুড়ার সীমানায় আকুই গ্রাম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষে ছিল কৃষিজীবী প্রধান এবং শিক্ষায় অনগ্রসর। গ্রামীণ সমাজও ছিল রক্ষণশীল। এই পরিবেশেই জন্ম হয় ননীবালার, ১২৯৩ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে।
শত প্রতিকূলতায় ভরা তাঁর জীবন। মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিধবা হন তিনি, লেখাপড়াও জানতেন না। জানা যায়, অনেক বছর পর নিজের নাম স্বাক্ষর করতে শিখেছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ আমল, বাল্যবিধবা, নিরক্ষর এবং রক্ষণশীল গ্রামীণ সমাজ — এই চার প্রতিকূলতাও দমিয়ে রাখতে পারেনি ননীবালাকে, যিনি এখনও ‘ননী পিসিমা’ নামে পরিচিত গ্রামের প্রবীণদের কাছে।
আকুইয়ের প্রবীণরা — এই প্রতিবেদকের জেঠু রমাপ্রসাদ সেন, আকুইয়ের বিশিষ্ট মানুষ দিলীপ কুমার দাঁ-রা কেন ননীবালাকে ‘ননী পিসিমা’ বলতেন?
কারণ এঁদের বাবা-কাকারা তিরিশ-চল্লিশের দশকে ননীবালার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
সালটা ১৯৩০। ননীবালা তখন সদ্য চল্লিশ পেরিয়েছেন। এই বছরই জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পান তিনি। আইন অমান্য আন্দোলনের আহ্বান শুনে দেশসেবার কাজে ব্রতী হন। আকুইয়েরই দত্ত পরিবারের ছেলে জগদ্বন্ধুর নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ননীবালাও স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ননীবালার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে নিজের রক্ষণশীল সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন মতিবালা দত্ত, সুশীলা দে, রাধারানি ঘোষ, করুণাময়ী দলুই প্রমুখ। এঁরা সবাই বাল্যবিধবা।
ব্রিটিশ ভারতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ‘বন্দেমাতরম’ গাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল। কিন্তু ননীবালা ছিলেন সাহসিনী। ১৯৩০ সালেই জাতীয় পতাকা উত্তোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন।
এর পরের বছর আকুইয়ের পাশের গ্রাম বামুনিয়ায় ‘চৌকিদারি কর বন্ধ আন্দোলন’ প্রবল আকার ধারণ করে। সার্কেল ক্রোক অফিসার গাড়ি নিয়ে আসার চেষ্টা করলে নারী সত্যাগ্রহীদের প্রবল বাধার মুখে পড়েন। ননীবালার নেতৃত্বে নারী সত্যাগ্রহীরা মাটিয়ে শুয়ে পড়ে তাঁর পথ আটকান।
শোনা যায়, তিন দিন ধরে মাটিতে শুয়ে এ ভাবেই পথ আটকে রেখেছিলেন তাঁরা। এর পর বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক ও পদস্থ পুলিশ অফিসারদের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপরে ব্যাপক লাঠি চালায় পুলিশ। ননীবালা-সহ অনেকেই আহত হন। তাঁকে এবং অন্যান্য সত্যাগ্রহীকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৩১ সালে ফের একবার গ্রেফতার হন ননীবালা। তিন মাস কারাদণ্ড ভোগের পর মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে তিনি মুক্তি পান ১৯৩২ সালের ১১ মার্চ।
শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী নন, গঠনকর্মীও ছিলেন ননীবালা। আকুই গ্রামে চরকা কেন্দ্র স্থাপন, সুতোকাটা, খদ্দর ব্যবহারের জন্য গ্রামের নারীপুরুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাঁর।
এর পাশাপাশি ননীবালা ছিলেন বাঁকুড়া জেলার নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। নিজে নিরক্ষর হয়েও মহিলাদের পড়াশোনার গুরুত্ব তিনি বুঝেছিলেন এবং গ্রামের মানুষদের বুঝিয়েছিলেন।
ননীবালার জন্মস্থান আকুই গ্রামের পুবপাড়ায়। ১৯৩৯ সালে নিজের বাড়িতেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন তিনি। এই কর্মসূচিতে তাঁকে সাহায্য করেন জগদ্বন্ধু দত্ত এবং আকুই ইউনিয়ন বোর্ডের তৎকালীন সম্পাদক কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত। তাঁর লক্ষ্য ছিল, মেয়েদের তিনি পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করবেনই এবং সেই কারণেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ‘ছাত্রীভিক্ষা’ করতেন।
কিন্তু সেখানেও ছিল বাধা। পুবপাড়াটি ছিল সে অর্থে অনগ্রসর। সামাজিক রক্ষণশীলতা অনেক বেশি ছিল এই পাড়ায়। ছোটো বয়সে ‘বিধবা’ ননীবালাকে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে এখানে। বিভিন্ন বাড়িতে তাঁর প্রবেশের ওপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই পাড়ার বাসিন্দারা যে তাঁদের মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরোতে দেবেন না, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হয়ে যান।
অন্য দিকে, তৎকালীন পশ্চিমপাড়া ছিল সে অর্থে তুলনামূলক ভাবে উদার। তাই পশ্চিমপাড়াতেই যান তিনি। প্রথমেই আসেন এই প্রতিবেদকের প্রপিতামহীর কাছে। ননীবালাদেবীর কথায় রাজি হয়ে যান এমিলাসুন্দরী সেন এবং এক কথায় তাঁর ছোটো মেয়ে মমতাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়ে দেন। পশ্চিমপাড়ার আরও চারটি বাড়ি তাঁদের মেয়েদের পাঠায় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

অর্থাৎ, গ্রামের যে পাঁচ মহিলা প্রথম বার বাড়ির ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে পড়াশোনার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই প্রতিবেদকেরই পিসি-ঠাকুমা।
১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগ দিয়ে ফের একবার গ্রেফতার হন ননীবালা। মেদিনীপুর জেলে বন্দি থাকেন তিনি। কারাবাসের মধ্যেও ননীবালার মন পড়ে থাকত তাঁর তৈরি প্রাথমিক বিদ্যালয়তেই। জেলে বসেই কৃষ্ণচন্দ্র দত্তকে চিঠি পাঠান ননীবালা। বয়ান ছিল, “আমি যে বিদ্যালয়টি তৈরি করেছি, সেখানে পশ্চিমপাড়া থেকে মেয়েরা আসছে তো?”
বিনা বিচারে আট মাস বন্দি থাকার পর অবশেষে ছাড়া পান এবং আকুই ফিরে আসেন ননীবালা।
দেশ স্বাধীন হতেই গ্রামবাসীদের কাছে ‘মাতঙ্গিনী হাজরা’ হয়ে ওঠেন ননীবালা। গ্রামের বাসিন্দারা তাঁকে এই নামেই ডাকতেন। যদিও এই ডাক শুনেই অসম্ভব লজ্জায় পড়তেন। প্রতিবাদ করতেন। বলতেন, “ধুর, কার সঙ্গে কার তুলনা করছিস তোরা!”
পশ্চিমপাড়ার প্রমোদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে গ্রামের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আড্ডা বসত। সেই আড্ডায় প্রতি দিন সন্ধ্যায় যোগ দিতেন ননীবালাও। দেশ তখন পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত।
স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ননীবালার এক কালের সহকর্মীরাই এ বার ঠিক করলেন তাঁর নামে হাইস্কুল তৈরি করবেন।
প্রস্তাব দেওয়া হল ননীবালাকে। তাতেও প্রতিবাদ এই বীরাঙ্গনার। হাইস্কুলে তৈরিতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু নিজের নামে কিছুতেই সেই স্কুলের নামকরণ করতে দেবেন না। কিন্তু সেই আপত্তি আর টিকল না।
স্কুল তো হবে, কিন্তু তার জমি দেবে কে? সেই দায়িত্ব নিলেন প্রমোদবাবুই। একটি জমি চিহ্নিত হল। জমিটি পশ্চিমপাড়ারই বাসিন্দা দেব এবং রায়দের।
প্রমোদবাবু ছিলেন দেব এবং রায়দের দীক্ষাগুরু। মেয়েদের জন্য হাইস্কুল হবে, তাই জমি দরকার—এই আবেদন নিয়ে সটান দেব এবং রায়দের কাছে আবেদন করে বসেন তিনি। তাঁরাও এক কথায় রাজি হয়ে যান। মেয়েদের স্কুল তৈরির জন্য জমি দিয়ে দেন তাঁরা।

বলতে কিঞ্চিৎ গর্ব হয়, এই প্রতিবেদকের ঠাকুমা শিবানী সেন পশ্চিমপাড়ার এই দেব পরিবারেরই মেয়ে।
জেলবন্দি থাকাকালীন অনেক প্রভাবশালী স্বাধীনতা সংগ্রামীর সংস্পর্শে আসেন ননীবালাদেবীরা। পরবর্তীকালে এঁরাই সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেন, কেউ কেউ মন্ত্রীও হন। কিন্তু ননীবালাদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ।
ননীবালাদেবীর আবেদনেই আকুই গ্রামে আসেন এমনই কয়েক জন মানুষ। তাঁদের হাত ধরেই ‘আকুই ননীবালা গার্লস হাইস্কুল’-এর প্রাথমিক ভিত তৈরি হয়। মাটির ঘরে তৈরি হওয়া এই হাইস্কুল ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকে।
এখন এই গার্লস হাইস্কুলটি শুধুমাত্র আকুই নয়, বাঁকুড়া জেলায় অন্যতম জনপ্রিয় স্কুল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে এখানকার ছাত্রীরা দুরন্ত ফলাফল করে তাক লাগিয়ে দেয়।
১০৪ বছর বেঁচে ছিলেন ননীবালা। পরমায়ুর দিক দিয়ে এ রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে তাঁর স্থান দ্বিতীয়। শেষ বয়স পর্যন্তও নারীশিক্ষা নিয়ে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। মেয়েদের পড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরব হয়েছেন তিনি।
দেশের গ্রামাঞ্চলে যখনও সে ভাবে নারীশিক্ষার আলো ফোটেনি, তখনই এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন ননীবালা। কিছু বাধাবিপত্তি থাকলেও আকুই গ্রামকে পাশে পেয়েছিলেন তিনি। আকুই গ্রাম তাই আজও ননীবালাময়। গ্রামের স্কুল মোড়ে তৈরি হয়েছে তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তিও।

বছরের ৩৬৫টা দিনই নারীদের দিন হওয়া উচিত। কিন্তু একটা বিশেষ দিন যখন রয়েছেই, সেই দিনে এমন এক বীরাঙ্গনার পায়ে শতকোটি প্রণাম জানাই।

অরুণাভ ঘোষ
আড়াই হাত লম্বা সাদা দাড়ি নিয়ে গেরুয়া বসনে সন্ন্যাসী মোদীজি উচ্চাসনে বসে আছেন। নীচে পদতলে বসে আছ ভক্তগণ, মোদীজির দিনের বাণী শোনার জন্য। তাদের মধ্যে থেকে মুহুর্মুহু উঠে আসছে, “জয় শ্রীরাম” স্লোগান।
দিনের বাণী শুরু করতে গিয়ে ভক্তগণের উদ্দেশে মোদীজি বললেন…
“হে ভক্তগণ,
আপনাদের মধ্যে একটি অশুভ গুঞ্জন প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়। তা হল, যুক্তির পথে নেতাদের, বিশেষ করে আমার, কার্যকলাপ বুঝতে গিয়ে আপনারা না কি আজকাল খেই হারিয়ে ফেলছেন। তাই আপনাদের সামনে আজ রাজনীতির এবং ধর্মনীতির গোড়ার কথা একটু খুলে বলব যাতে আপনাদের যুক্তিবাদী মন আমাদের মুখ থেকে মাঝে মাঝে বিপরীত কথা শুনে বিভ্রান্ত না হয়ে পড়ে।
আপনাদের মধ্যে থেকে প্রায়শই অভিযোগ শোনা যায় যে আমি না কি কথায় যা বলি, বাস্তবে ঠিক তার বিপরীত কাজটাই করে থাকি। যেমন চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোলাকুলি করার কিছু দিন পরেই ওদের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত নিয়ে ঝামেলা বেঁধে গেল। পাকিস্তান আমাদের শত্রু দেশ বলে চিহ্নিত। অথচ আমি ওদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ের বিয়েতে বিনা আমন্ত্রণে চলে গিয়েছিলাম এবং জনসমক্ষে ঘনিষ্ঠ কোলাকুলি সেরে ফেলি। বেশ কিছু দিন আগে আমি ঘোষণা করেছিলাম যে রেল ছোটোবেলা থেকে আমার জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত, তাই রেলওয়ে বিলগ্নিকরণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এখন আমার সরকার ভারতীয় রেলের এক বৃহৎ অংশকে ব্যক্তিগত মালিকানার কাছে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক দিকে যখন চিনাদের হাতে আমাদের কুড়ি জন ভারতীয় সেনা নৃশংস ভাবে মারা গেল আমাদেরই জমিতে, তখন আমি বলেছি যে, চিনারা আমাদের ভূখণ্ডে পা রাখেনি। মহাত্মা গান্ধীকে এক দিকে আমি যখন বলছি জাতির জনক, তখন একই সঙ্গে আমাদের দলের লোকেরা নাথুরাম গডসের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে আমি বলেছিলেন, জিএসটি আমাদের দেশের সর্বনাশ ডেকে আনবে, এখন বলছি, ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করানোর জন্য শেষ কথা জিএসটি-ই। ক্ষমতায় আসার আগে মনমোহন সিং সরকারের ৫১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানিয়ে আমি বলেছিলাম যে এতে দেশের সর্বনাশ হবে। এখন বলছি, দেশের উন্নতিসাধনে একশো শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ দরকার, যা আমার সরকার অনুমোদন করেছে।
আমার নামে অভিযোগ রয়েছে যে আমার না কি দু’টি জন্মতারিখ। প্রথমটা, ২৯ আগস্ট, ১৯৪৯, যা আমার গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে, বিরোধীরা যাকে জাল বলে অভিহিত করে। দ্বিতীয় তারিখটি হল ১৭ সেপ্টেম্বর, যা আমার নির্বাচনী হলফনামায় দাখিল করেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ হল, আমি যখন ৬ বছর বয়সে ভাঁড়ে চা বিক্রি করতাম ট্রেনের কামরার বাইরে ভবনগরে রেল স্টেশনে, যেখানে ওই নামে কোনো স্টেশনই ছিল না। ভারতীয় রেলের রেকর্ড অনুযায়ী, ভবনগর স্টেশনটি উদ্বোধন হয় ১৯৭০ সালে। যখন আমার বয়স ছিল ২১ কি ২২।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল অবধি আমি দেশে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেফতারি এড়াতে আত্মগোপন করেছিলাম। ১৯৭৮ সালে আমি স্নাতক হই। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলে, দুই বছর আত্মগোপন করার পর, কোনো ক্লাস না করে আমি কী করে পরীক্ষায় বসলাম? এবং পাশ-ও করে গেলাম। এটা কী করে হয়। ১৯৮৩ সালে আমি গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে entire political science-এ স্নাতক ডিগ্রি পাই, যা পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না।
অভিযোগ, এমন কোনো মানুষকে আমি দেখাতে পারি না, যাঁরা এসে বলবেন যে তাঁরা আমায় পড়িয়েছেন অথবা আমার সঙ্গে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ক্লাসে পড়াশোনা করেছেন। এটা ঠিক যে আমি একটি টেলিভশন সাক্ষাৎকারে বলেছি যে আমি ক্লাস টেনের গণ্ডি পেরোইনি, ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর। তাই অনেকে আমাকে নন-মেট্রিক গ্র্যাজুয়েট বলে থাকে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যখন প্রশ্ন উঠল আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে, তখন মন্ত্রী অরুণ জেটলি আমার স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষার দু’টি মার্কশিট প্রকাশ করেন, যা মাইক্রোসফট কম্পিউটারে তৈরি, যে কম্পিউটার ১৯৯০ সালে ভারতে আসে। প্রশ্ন ওঠে, ১৯৭৮ ও ১৯৮৩ সালের পরীক্ষার সার্টিফিকেট কী করে ছাপা হয় সেই সময়ে, ১৯৯০ সালের বিদেশি মাইক্রোসফট কম্পিউটারের মাধ্যমে?
এ বার আমি বলি?
আমার এই কথার আর কাজের ফারাকের ব্যাপারটা হল গিয়ে টাকার এ-পিঠ আর ও-পিঠের মতন। এ-পিঠে এক রকম ছাপ আবার ও-পিঠে আরেক রকম ছাপ। কিন্তু ছাপ আলাদা বলে তো টাকাটা আলাদা নয়। এ-পিঠেও টাকা, ও-পিঠেও সেই টাকা। আপনারা যে মুহূর্তে যুক্তির ছুরি শানিয়ে চুলচেরা বিচারে বসবেন, তখনই বস্তুর খণ্ড রূপটি চোখের সামনে বড়ো হয়ে দেখা দেবে। অমনি ভ্রান্তি আসবে। মায়ের বাঁ বুকের দুধে পুষ্টি বেশি, না ডান দিকে – খিদের সময় শিশু যদি তার মায়ের বুক ফালাফালা করে বিচার করতে যায়, তা হলে কি তার খিদে মিটবে। তার আবার অত চুলেচেরা হিসাবে যাওয়া কেন?
বিচার নয়, বিশ্বাস চাই। বিচারের পথ বড়ো শক্ত। ও বড়ো কঠিন পথ। ও পথে চলতে গেলে বিদ্যে চাই, বুদ্ধি চাই, নিজের উপর আস্থা চাই। ওটা হল কাকের পথ। কাক ডিমে তা দেবে, তার কত আয়োজন। খড় আনো, কুটো আনো, শক্ত জায়গায় ভালো করে বাসা বাঁধো। তবে ডিম পেড়ে তা দিতে বসো। কিন্তু কোকিলের অতশত বালাই নেই। সে কাকের বাসায় ডিম পেড়ে রেখে এসেই খালাস। তার অটল বিশ্বাস, এ ডিম ফুটে বাচ্চা হবেই, যেই তা দিক। এটা হল সহজ পথ। বর্তমানে আমাদেরও এই রকম সহজ পথ- ‘বিশ্বাসের পথ’।
পূজারি বামুন নারায়ণ শিলাকে কখনও চাদরের খুঁটে বেঁধে, কখনও বা ফুলের সাজিতে বসিয়ে নিয়ে যায়। তার পর বাড়িতে গিয়ে সেই শালগ্রামটিকে টাটে বসিয়ে দেয়। আমি হচ্ছি সেই শালগ্রাম। আমাকে টাটে বসানোই আপনাদের কাজ। তা আপনারা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলে বসান বা অন্য কোনো পথে বসান, তাতে শালগ্রামের কিছু এসে যায় না। তিনি গদিতে বসতে পেলেই খুশি। এর মধ্যে বিভ্রান্তি ঘটার অবকাশ কোথায়? বরের লক্ষ্য ছাঁদনাতলা। তা আপনারা বরকে মোটরে করে নিয়ে যান, নৌকা করেই নিয়ে যান আর পালকি করেই পোঁছে দিন, বর গিয়ে ছাঁদনাতলায় দাঁড়াতে পারলেই হল। এর মধ্যে বিভ্রান্তিটা আসছে কোথায়?
পোয়াতির ব্যথা উঠেছে। একেবারে এখন তখন। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। তখন কি অ্যাম্বুলেন্স আসছে না বলে তাকে ঘরে ফেলে রাখবে? আমার গদিতে বসার ব্যাপারটাও ওই পোয়াতির গর্ভযন্ত্রণার মতোই আর্জেন্ট। কবে জনগণ চাইবে, তার জন্য অপেক্ষা করা মূর্খতা। আদর্শের ভিত্তিতে ক্ষমতা দখল হলে ভালো, যদি তা না হয় তা হলে বিপরীত আদর্শের কোলে চেপেই ক্ষমতায় আমাকে বসিয়ে দিতে হবে।
আশা করি এই রূপ সদুপদেশে পেয়ে আপনাদের ভ্রান্তি দূর হয়েছে। এ বার হৃষ্টচিত্তে যে যার এলাকায় গিয়ে মনোযোগ সরকারে কাজে নেমে পড়ুন। জয় শ্রীরাম।
(শ্রী গৌরকিশোর ঘোষের ‘গুরু শিষ্য সংবাদ’-এর ছায়া অবলম্বনে)
*লেখক বিশিষ্ট আইনজীবী এবং কংগ্রেস নেতা
আরও পড়তে পারেন: ভরা ব্রিগেডের জনসভা কি প্রত্যাশা পূরণের কোনো ইঙ্গিত দিতে পারল?
-
রাজ্য3 days ago
কেন তড়িঘড়ি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ তৃণমূলের, সরব পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য
-
রাজ্য3 days ago
লড়াই মুখোমুখি! নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী
-
রাজ্য3 days ago
অস্বস্তি বাড়াচ্ছে রাজ্যের করোনা সংক্রমণ, কলকাতাতেও বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা
-
দেশ3 days ago
স্বামী থাকতেও প্রেমিক খুঁজছেন ভারতের বিবাহিত মহিলারা! এটা কি খারাপ খবর?