খবর অনলাইন ডেস্ক: সে চিঠির শুরু হয়েছিল ‘শ্রীচরণকমলেষু’ দিয়ে, আর শেষে লেখা ছিল ‘তোমাদের চরণতলাশ্রয়ছিন্ন’। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, সেই তাঁর প্রথম কোনও মেয়েদের হয়ে লেখা। সেটা ১৯১৪ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর বছর। তারপর বাংলা সাহিত্যে মেয়েদের তুমুল উপস্থিতি দেখা গিয়েছে শরৎচন্দ্রের লেখনীতে। পরবর্তীতে বাঙালি পেয়েছে প্রথম প্রতিশ্রুতির সত্যবতী, আরও সাম্প্রতিকে আছেন তসলিমা নাসরিন। তবু বাংলা সাহিত্য থেকে নারীবাদীরা আজ যখন নিজেদের ভাষা খুঁজে ফেরেন, স্ত্রীর পত্রের কাছে তাদের হাত পাততেই হয়। তবে শুধু নারীবাদীর সংকীর্ণতায় রবীন্দ্রনাথের এই অসামান্য সৃষ্টিকে বেঁধে রাখলে ক্ষতি বাংলা সাহিত্যেরই। ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর মৃণালের আত্মোপলব্ধি; ‘মেজো বউ’ থেকে মৃণালে তার নবজন্ম; বড় বউ, মেজো বউ আর বিন্দুর জীবন চরিতের নির্মম বিবরণ, স্ত্রী পত্র-কে বাংলা সাহিত্যের সম্পদে পরিণত করে রেখেছে শুরু থেকেই।
১৯৭৩ সালে ‘স্ত্রী পত্র’-কে প্রথম সেলুলয়েডের পর্দায় আনেন পূর্ণেন্দু পত্রী। ১৯৭২ সালে শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিল ছবিটা। কিন্তু তা ছিল নেহাৎই ছোট গল্পের চিত্ররূপ। আপাতত দিল্লি প্রবাসী তরণ পরিচালক অনীক চৌধুরী কিন্তু সেই পথে হাঁটছেন না। তার ছবিতে স্ত্রী পত্র নেহাৎই একটি প্রপ। তার কথায়, ‘ কনসেপ্ট-টা আমার চিত্রনাট্যে রবীন্দ্রনাথের জগৎ ঘিরে হলেও, এখানে স্ত্রীর পত্রটি কেবল একটি প্রপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে হ্যালুসিনেশন নিয়ে ডিল করা হয়েছে, যখন একজন হ্যালুসিনেট করে রবীন্দ্রনাথের আমলে চলে যাচ্ছে।‘ …..সবটা কি বোঝা গেল? না বুঝলেও ক্ষতি নেই, আগামী সেপ্টেম্বরেই মুক্তি পেতে চলেছে ছবিটি।
মাত্র ২৪ বছর বয়সী পরিচালক অনীকের ছোটবেলার কয়েকটা বছর কেটেছে কলকাতায়। ২০০০ সাল থেকেই বাবার চাকরি সূত্রে কলকাতার বাইরে। ২০০৪ থেকে থাকেন দিল্লিতে। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও শেষ করা হয়নি। তারপর পড়াশোনা ইংরাজি সাহিত্য ও ফিল্ম নিয়ে। সিনেমার ভূত ইতিমধ্যেই তাকে দিয়ে করিয়ে ছেড়েছে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ও বেশ কয়েকটি ডকু-ফিচার। সেগুলি বিদেশের বেশ কয়েকটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিতও হয়েছে। পুরোদস্তুর ফিচার ফিল্ম এই প্রথম। তার কাছে এই ছবি স্ত্রী পত্রের উত্তর, ঘরে ফেরার তীব্র আকুতি, নিজেকে পাল্টে ফেলার মরিয়া প্রয়াস। মূলত তিনটি চরিত্র ঘিরে ছবিটি আবর্তিত। অভিনয় করেছেন কৌশিক রায়, সঞ্চারী দত্ত ও দিগন্ত। পরিচালক নিজে ছবিটির অন্যতম প্রযোজক। সহ প্রযোজক হিসেবে রয়েছে কার্টুন প্রোডাকশন।
বাঙালির প্রাণের রবীন্দ্রনাথ, আজকের নবীন প্রবাসী বাঙালির চোখে কোন আলোয় ধরা দিল, তা জানতে আগ্রহ রইল আমাদের।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।