পঞ্চাশের দশকের ভারতীয় আইন ব্যবস্থার মোড় সপাট বদলে দেওয়া নানাবতী কেস ঘিরে পরিচালক টিনু সুরেশ দেশাই বুনেছেন রুস্তম। ইতিমধ্যেই প্রায় পনের কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে আড়াই ঘন্টার এই ক্রাইম স্টোরি। নাম ভূমিকায় অক্ষয় কুমার থেকে শুরু করে নানা মাপের তারকাদের ( ইলিয়ানা ডি’ক্রুজ, এষা গুপ্তা, অর্জুন বাজবা, পবন মালহোত্রা প্রমুখ) আনাগোনা। কাহিনি এগোতে থাকে আপাতদৃষ্টিতে প্রেম-ঈর্ষা-প্রতিশোধ গোছের থিম সম্বল করে। যদিও খুন-কোর্টরুম ড্রামা-নিয়ম মেনে সমাধানের অত্যুৎসাহী দর্শকমাত্রেই অপেক্ষা করতে থাকে গল্পের ভেতর চলতে থাকা অন্য গল্পের। জনগণের ইমোশনের পাল মিডিয়ার বাতাসে উড়তে থাকে তরতরিয়ে। পরিবেশিত হয় দেশভক্তি, পরকীয়া, আদর্শ পত্নীপ্রেম, তৎকালীন বোম্বাইয়া ঝলক, কিছু কিছু আক্ষরিক অর্থেই বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপের মোটামুটি নির্মেদ ককটেল। মাঝে খানিক পার্সি কম্যুনিটির অভ্যন্তরীণ একতা গোছের সুর ঠিকঠাক দানা বাঁধার আগে ধামাচাপা পড়া গোছের আভাস টাভাসও হাজির।
ব্যবসায়িক সাফল্য, বেশ সম্পাদনা, গল্প এগোনোর কাজে ব্যবহার করা গান মাথা থেকে মুছে দিলে হাতে পড়ে থাকছে অজস্র একমাত্রিক চরিত্র। রুস্তমের প্রত্যেকটি চরিত্র তাদের নির্ধারিত রিপু-নিয়ন্ত্রিত, যাদের সহজেই শুধুমাত্র সাদা বা শুধুমাত্র কালোয় দাগিয়ে দেওয়া যায়। প্রথমবার বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে হাতে ধরিয়ে দেওয়া ডু’স আর ডোন্টস’এর গোদা মার্জিন। ফলে একে একে হাজির হয় টানটান শিরদাঁড়া, নিখুঁত গোঁফ, একচুল ভাঁজ না পড়া ইউনিফর্মের কেন্দ্রীয় চরিত্র। যে দেশকে ভালবেসে, বউকে ভালবেসে কাঁটায় কাঁটায় রোলমডেল থেকে জনতার চুমু, গোলাপ আর বিভিন্ন আবেগজনিত হ্যাঁ-বাচক কান্না পায়। থাকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে না চাইতেও সময়, সুযোগ, পরিবেশের মাহেন্দ্রক্ষণে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া, শুরু থেকে শেষ লজ্জারঙা প্রকট ব্লাশারশোভিতা মাথা নিচু ইলিয়ানা। এছাড়া, প্লেবয় ছাঁচে ঠিক যেমন হওয়া উচিত তেমনই অর্জুন, টোলের গুরুমশাইসম বিচারক (অনঙ্গ দেশাই), কড়া, সৎ চাহনির সুপারকপ (পবন মালহোত্রা); মানানসই ভ্যাম্প। সব মিলিয়ে রহস্য, মোচড় ইত্যাদি পার হয়ে গিয়ে হাঁসফাঁসই লাগে খানিক। ধূসর চরিত্রের অভাব আর নানা ভার্সনে উপচে ওঠা নীতিগন্ধী প্রেম, যা আসলে স্বর্গীয় অনুভূতি হিসেবে সুবাস ছড়াতেই পারত, পারফেকশনের প্রাবল্যে দমবন্ধ করে দেয়।
ওই একই নিখুঁত করার বাড়াবাড়ি মেনেই একটা সময় পর একঘেয়ে লাগতে থাকে বোম্বাই মেরি জানের শুধুমাত্র সময়টা ১৯৫৮/৫৯ হওয়ার অপরাধে প্রায় প্রত্যেক দৃশ্যে কান ধরে টোপলা চুল, ঝকঝকে গাউন আর যাবতীয় তৎকালীন মডেলের গাড়ি দেখতেই হবের অত্যাচার।
রুস্তমের ইউ.এস.পি তাই শেষমেশ গতি। তার টানটানময়তা। বিষয় হিসাবে মার্ডার-মিস্ট্রি নতুন কিছু নয়। কিন্তু খুঁতখুঁতেপনা শিকেয় তুলে ঝকঝকে মন নিয়ে হলে ঢুকলে পয়সাটা নেহাত জলে পড়ল বলে মনে হবে না।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।