দেবারতি গুপ্ত
জন্মই হয়েছে দৌড়নোর জন্য অথচ গত দশ বছর ধরে দৌড়নোর ওপর রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা! এর নাম ভারতবর্ষ নাকি দারিদ্র ?! কিংবা এর নাম হয়তো আসলে বিস্ময় বালক বুধিয়া সিং। জগন্নাথ ধাম পুরীর রাস্তায় গল্প শুরু। যেখান থেকে বুধিয়া জীবনের সবচেয়ে বড়ো ম্যারাথন দৌড় শুরু করবে। পুরী থেকে ভুবনেশ্বর প্রায় ৭০ কিলোমিটার। দিনের বেলা তাপমাত্রা পৌঁছচ্ছে প্রায় ৫০ ডিগ্রি। আর বুধিয়ার বয়স মাত্র ৫। তাহলে কি বুধিয়ার দৌড়নো সমর্থন যোগ্য? নাকি হিউম্যান রাইটস যা বলছে তাই ঠিক? বুধিয়ার পালক পিতা জুডো কোচ বিরঞ্চি দাসের অমানবিক একরোখামি! বুধিয়ার ওপর বিরঞ্চির অলীক স্বপ্ন চাপিয়ে একটা ৫ বছরের বাচ্চার শৈশব কেড়ে নেওয়া। কিন্তু বিরঞ্চি দাসের স্বপ্ন যে অলীক নয় তা তো বুধিয়াই বারবার প্রমাণ করে দিয়েছে। যেমন আরও একবার করবে। পুরী থেকে এক দৌড়ে মাত্র ৭ ঘন্টায় ভুবনেশ্বর পৌঁছে বুধিয়া বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করবে। কিন্তু তারপরেও বুধিয়ার দৌড়নো বন্ধ করে দিল রাষ্ট্র। বিরঞ্চিকে খুন হতে হল গুপ্ত আততায়ীর হাতে। কেন আর কীভাবে সে গল্প অসম্ভব মায়ার সঙ্গে নিপুণভাবে বলা হয়েছে এই ছবিতে। আহা কত বিস্ময় লুকিয়ে আছে এই পোড়া দেশের আনাচে কানাচে! আমরা শুধু তাজমহলেই চমকে উঠি।
ওড়িশার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন্দ্র পাধিকে কুর্নিশ। প্রথম ছবিতেই উনি চিত্রনাট্য, দৃশ্যায়ন তথা ডিটেলিং এর যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। প্রথম দিকে যদিও মনে হচ্ছিল একটু বেশিই যেন অস্থিরতা রয়েছে। বড্ডো কাটা কাটা ভাবে ঘটনা এগোচ্ছে, আরেকটু ধীর লয়ে চললে দৃশ্যগুলি হয়তো তুলনায় বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারতো। কিন্তু খানিক পরেই বুঝলাম তা কেন হবে! গল্পটা যাকে নিয়ে সে তো এক ছটফটে দৌড়বীর। তার গল্প ধীর গতির কেন হতে যাবে! তাছাড়া দর্শকের মন তার চেয়েও অস্থির। চলচ্চিত্রায়নে গভীরতা তৈরি করতে গিয়ে আজকের যুগে দর্শকের মনযোগ হারানো কোন কাজের কথা নয়। আজকের দর্শক সে সিনে আঁতেল হোক কি আমাদের মত ছাপোষা কেউই খুব একটা বেলা তারিয় মন্থর গতি পছন্দ করে না। (যদিও মাঝে সাঝে কানে আসে আন্তর্জাতিক সিনেমা আবার ধীর লয়ে ফিরে যাচ্ছে!) বুধিয়া সিং-এর এই রুদ্ধশ্বাসে দৌড়নোর ফাঁকেও কিন্তু কিছু কিছু দৃশ্যায়ন একান্ত মনোহারি। যেমন বুধিয়ার রেসের জুতোর খসে যাওয়া শুকতলার ফাঁক দিয়ে বিরঞ্চিকে দেখা। আর তাই দেখে বিরঞ্চির বুধিয়ার পানে চেয়ে স্নেহের হাসি। ছবি দেখতে দেখতে কখন যেন বুধিয়ার জুতোর ওই টুকু ফুটো ওদের বস্তির ঘরের ফাটা চালের থেকেও বড়ো মনে হতে থাকে। কেন কে জানে? হয়তো কনিষ্ঠতম ম্যারাথন দৌড়বীর হওয়া সত্ত্বেও আজও যে কারণে বুধিয়ার দৌড়নোর ওপর নিষেধাজ্ঞা ওঠেনি! এই বছরের অলিম্পিকে যার দৌড়নোর কথা ছিল সে এখন কী করছে – এই প্রশ্ন উঠুক দর্শকের মনে। কারণ বুধিয়া সিং, বর্ন টু রান।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।