প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী
কারণ সেন্সর, সেন্সর বোর্ড, শিল্পের ও শিল্পীর স্বাধীনতা, ভারতবাসীর সাবালকত্ব নিয়ে সাম্প্রতিক কালে জমজমাট বিতর্ক চলছে দেশজুড়ে। এমন সময় এসে পড়ল ভারতের প্রথম স্বঘোষিত পর্নো কমেডি ‘ক্যায়া কুল হ্যায় হাম থ্রি’। এই ফ্র্যানচাইসের প্রথম দু’টি ছবি ছিল ‘ক্যায়া কুল হ্যায় হাম’ (২০০৫) এবং ‘ক্যায়া সুপার কুল হ্যায় হাম’ (২০১২)। ফিল্মটির পুরুষ অভিনেতারা ভারতীয় সেক্স কমেডির দুই পরিচিত মুখ তুষার কাপুর ও আফতাব শিবদাসানি। ক্যামিও রোলে রীতেশ দেশমুখও রয়েছেন। এমন একটা সিনেমা যে ভারতের রুপালি পর্দায় এল, তাতে এটা প্রায় পাটিগণিতের নিয়মে প্রমাণ করে দেওয়া চলে যে বলিউড আরও সাবালক হয়েছে, দর্শকদের ধারণ ও গ্রহণ ক্ষমতা বেড়েছে এবং অবশ্যই সেন্সর বোর্ড এই অসহিষ্ণুতার বাজারেও রক্ষণশীলতার ধুলো গা থেকে ঝাড়তে উদ্গ্রীব।
কিন্তু বিষয়টা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলে না। একটি পর্নো কমেডি আম জনতা এক গাদা টাকা খরচ করে মাল্টিপ্লেক্সে দেখতে যাবেন কেন ? যাঁরা সফট পর্নো দেখার লোভে যাবেন, তাঁরা সম্পূর্ণ হতাশ হবেন। কারণ গোটা ছবিতে যৌন উত্তেজক কোনও দৃশ্য নেই। আর যাঁরা সব মিলিয়ে একটা কমিক বিনোদন দেখার আশায় থাকবেন, তাঁরা প্রচুর বিরক্ত হবেন। কারণ সিনেমার আশি ভাগ তথাকথিত কমিক দৃশ্যই চূড়ান্ত বোকা বোকা এবং তামাদি হয়ে যাওয়া চুটকিতে ঠাসা। বাকি কুড়ি ভাগ কিছুটা মজার ও চমকপ্রদ যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ডায়লগ এবং দৃশ্য, যেগুলো না থাকলে আর পর্নো কমেডি দেখা কেন! এ ছাড়া যা আছে, তা হল নায়িকা মন্দনা করিমি এবং অন্য দুই অভিনেত্রীর হিলহিলে শরীর। তারা প্রায় সর্বক্ষণই বিকিনিতে কিংবা তার কাছাকাছি পোশাকে।
এ সবের বাইরে যে জরুরি কথাটা পড়ে থাকে, তা হল ভারতে বসে পর্নো কমেডি বানাতে গিয়ে পরিচালক মূল্যবোধের মশলা দিয়ে সিনেমাটাকে জটিল করে তুলেছেন। পর্নো ছবির প্রযোজককে দিয়ে বলিয়েছেন, যে তিনি সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত শিশুদের আর্থিক সাহায্য করেন। যেন ভারতে পর্নো কমেডি তৈরি হতে পারছে বলে এ দেশে ভুখা শিশু উধাও হয়ে গিয়েছে। ক্ল্যাইম্যাক্সে পৌঁছে পর্নো ইন্ডাস্ট্রির বাইরের চরিত্রগুলি এবং উপায় না থাকায় পর্নো-নায়ক হয়ে যাওয়া তুষার ও আফতাবকে চোরাবালিতে ফেলেছেন এবং ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে থাকা চরিত্রদের দিয়ে তাঁদের উদ্ধার করিয়েছেন। মনে হচ্ছিল পরিচালক উমেশ ঘাটগে হয়তো জয় গোস্বামীর সেই কবিতাটা পড়েছেন, ’প্রতিটি লোক যৌনভাবে সৎ/প্রতিটি লোক সততা ধুয়ে খায়…’। কিন্তু কিছুই শেষ অবধি হয়নি, কারণ চিত্রনাট্য খুব দুর্বল। নানা রকম অর্থহীন দৃশ্য জুড়ে সিনেমাটাকে অন্য মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও, মজাটা তৈরি হয়নি, ভাঁড়ামি হয়ে গিয়েছে। পর্নো ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ভারতীয় দর্শকের মনোভাবকে যুক্তিনিষ্ঠ করে তোলার চেষ্টা হয়তো পরিচালক করেছেন, কিন্তু সে ক্ষেত্রে পর্নো ছবির নায়িকা চরিত্র দু’টিকে আরেকটু শক্তিশালী করা দরকার ছিল।
তবু যা হোক শুরু তো হল। আগামী দিনের ভারতীয় পর্নো কমেডি নিশ্চয় মননশীল দর্শকেরও মনোরঞ্জন করতে পারবে। আর ‘ও বয় ও বয়/ইউ আর মাই সফ্ট টয়…’ টাইপের গান ছাড়াও আরও কিছু থাকবে, যা নিছক নারীবাদী সিনেমার ভান নয়।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।