সুধীর চক্রবর্তী কথায়, ইন্দিরা দেবীর স্মৃতিতে ‘ইন্দিরা’র নিবেদন ‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’

0
'ইন্দিরা'র নিবেদন।

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিখ্যাত লোকসংস্কৃতি-গবেষক রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ সুধীর চক্রবর্তী লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথের গান রচনার পর্ব আর আজ, মাঝখানে অনেকগুলো বছর কেটে গেছে।…তবু, তাঁর গানই এখন আমাদের দৈনন্দিন আস্বাদ। রবীন্দ্রসংগীত সম্ভবত শিক্ষিত বাঙালির সর্বস্ব। উৎসবে, অনুষ্ঠানে, বিনোদনে, শোকে ও সান্ত্বনায়। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও মনে হয় যে যত দিন যাচ্ছে তাঁর গান ততই নতুন নতুন তাৎপর্যে ধরা পড়ছে আমাদের চেতনায়।”

রবীন্দ্রনাথের গান কী ভাবে নতুন নতুন তাৎপর্যে ধরা পড়ছে আমাদের চেতনায়, তা বোঝা গেল সে দিন ‘ইন্দিরা’র নিবেদনে। সুধীর চক্রবর্তী কথায়, ইন্দিরা দেবীর স্মৃতিতে ‘ইন্দিরা’ নিবেদন করল ‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’।

আইসিসিআর-এ রবীন্দ্রনাথ টেগোর সেন্টারের সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত ওই পরিবেশনার ছিল দু’টি পর্ব। প্রথম পর্বে ছিল ‘ঠাকুরবাড়ির গান’ শিক্ষাক্রমের ছাত্রীদের পরিবেশনা এবং ‘সুপূর্ণা স্মৃতি’ ছাত্রীদের পরিবেশনা। আর দ্বিতীয় পর্বে ছিল মূল অনুষ্ঠান – ‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’।

স্বাগত ভাষণ দিচ্ছেন শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায় স্বাগত ভাষণে জানালেন, ঠাকুর পরিবারের সন্তান ইন্দিরা দেবীর জন্ম যে হেতু ডিসেম্বর মাসে, তাই তাঁকে স্মরণ করে ‘ইন্দিরা’র বার্ষিক অনুষ্ঠান হয় এই ডিসেম্বরেই। ইন্দিরা সংগীত শিক্ষায়তনের প্রাণপুরুষ সুভাষ চৌধুরী তথা ‘ইন্দিরা’ পরিবারের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন বিখ্যাত লোকসংস্কৃতি-গবেষক রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ সুধীর চক্রবর্তী মহাশয়। এ দিনের অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁকে।

সুধীরবাবুরই কথায় ও বিন্যাসে ‘ইন্দিরা’ ১৯৮৫ সালে রবীন্দ্র সদনে পরিবেশন করেছিল ‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’। সারা বিশ্বে কোভিড অতিমারি চলাকালীন ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রয়াত হন সুধীরবাবু। এ দিনের অনুষ্ঠানে সেই ‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’ আবার পরিবেশন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাল ‘ইন্দিরা’।  

ঠাকুর বাড়ির গান’ পরিবেশন।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বটিও ছিল মন টানার মতো। প্রথমে পরিবেশিত হল ‘ঠাকুরবাড়ির গান’। স্বর্ণকুমারী দেবী, বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীর লেখা গান ‘লক্ষ ভাইয়ের দাঁড়ের টানে’, ‘অসীম রহস্য মাঝে কে তুমি মহিমাময়’, ‘পথপাশে মোর রচিনু দেউল’, ‘আয় বীণা কোলে আয় আমার’, ‘জীবন বহে যায় ধরিয়া রাখো তায়’ পরিবেশিত হল। একক ও সম্মেলক ভাবে এই গান পরিবেশন করলেন অমৃতা মুখার্জি, বিদিশা নন্দী, কবিতা মল্লিক দাস, পিয়ালী কর কবিরাজ, নমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাতী ভট্টাচার্য, অন্বেষা সেনগুপ্ত, বুলা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুন্ধতী চ্যাটার্জি, বসুধারা রায়, কাজরী রায় এবং শাশ্বতী বিশ্বাস।

এর পরে ‘সুপূর্ণা স্মৃতি’ শিক্ষাক্রমের ছাত্রীর রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন। শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়ের কথায় জানা গেল, ‘ইন্দিরা’র অন্যতম কর্ণধার সুপূর্ণা চৌধুরীর স্মৃতিতে এই শিক্ষাক্রম চালু করা হয় মফস্‌সলের ছেলেমেয়েদের রবীন্দ্রসংগীত শেখানোর জন্য। ওই শিক্ষাক্রমের ছাত্রী গার্গী দত্ত এ দিন শোনালেন ‘অগ্নিবীণা বাজাও তুমি কেমন করে’।

চলছে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান ‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’।

‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি ছিল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে। এই পর্বের প্রতিটি গান ছিল সু-গীত। সে একক হোক, বা সম্মেলক। আর কতগুলি গান তো মনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝড় তুলছিল। কখনও কখনও তো চোখের জলও আটকে রাখা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে ‘তোমায় কিছু দেব বলে’, ‘আমার যা আছে’, ‘অনেক দিয়েছ নাথ’, ‘যদি প্রেম দিলে না প্রাণে’, ‘আমি যখন তাঁর দুয়ারে’, ‘ওগো আমার চির অচেনা’, ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি’, ‘তুমি কিছু দিয়ে যাও’, ‘ওগো কাঙাল, আমারে কাঙাল করেছ’, ‘তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে’, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ ইত্যাদি গান কী যে আকুল করছিল শ্রোতাদের, তা বলে বোঝানো যাবে না। অন্য গানগুলিও মন ভরিয়ে দেয় শ্রোতাদের।

চলছে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান ‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’।

প্রবীণ ও নবীন শিল্পীদের দেওয়া-নেওয়ায় পরিবেশিত হল গানগুলি। সংগীত পরিবেশন করলেন শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষ, শ্রীনন্দা মল্লিক, প্রতিম চক্রবর্তী, মিতা দে, শ্রীমন্তী মুখার্জি, ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন রায়, অরিত্র পাণ্ডা, সৌরভ রায়, রমিল মজুমদার, রেবন্ত ঘোষ, প্রকৃতি মুখোপাধ্যায়, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, শাশ্বতী ব্যানার্জি, কেয়া বসু, নন্দিতা চক্রবর্তী, সর্বানী সোম, শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য, কুমকুম মুখোপাধ্যায়, মিত্রা দে, সোনালি ঘোষ, পাপিয়া মিত্র, অনিরুদ্ধ দে এবং অরুণজ্যোতি দাশগুপ্ত। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন শ্রীনন্দা মল্লিক ও প্রবীর ঘোষ। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন দেবাশীষ সাহা, নন্দন দাশগুপ্ত, অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গৌতম রায়।

কী আকুল অথচ তেজদৃপ্ত, কী আন্তরিক পরিবেশনা! যেমন সংগীত পরিবেশন, তেমনই ভাষ্যপাঠ। সুধীর চক্রবর্তীর লেখা ভাষ্যটি সুচারু ভাবে পাঠ করে এ দিনের অনুষ্ঠানকে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিলেন বাচিকশিল্পী সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

সুধীর চক্রবর্তী ও ইন্দিরা দেবীকে শ্রদ্ধা অর্পণ।

আর একটা কথা না বললেই নয়। তা হল ‘সময়’-কে মূল্য দেওয়া। একেবারে কাঁটায় কাঁটায় ছ’টায় শুরু হল অনুষ্ঠান। আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে এক মুহূর্তও বাজে খরচ হল না। কোনো বক্তৃতাবাজি নেই, কোনো বাগাড়ম্বর নেই, কোনো বাহুল্য নেই। ঠিক যতটুকু দরকার, ততটুকুই করা। অনুষ্ঠানের শেষে অতিথিশিল্পীদের হাতে উপহার তুলে দেন পবিত্র সরকার মহাশয়। পবিত্রবাবুর হাতে ছোট্ট উপহার তুলে দিলেন শ্রীনন্দা মল্লিক।

সে দিনের সংগীত-সন্ধ্যায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা আপ্লুত। ‘ইন্দিরা’র সৌজন্যে এক বিরল অভিজ্ঞতা লাভ করলেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

যিশুর ১২ জন শিষ্যের মৃত্যুর কারণ কী? জানলে চমকে উঠবেন

dailyhunt

খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

বিজ্ঞাপন