সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে দু’দিনের রবীন্দ্রসঙ্গীতের কর্মশালা শেষ হল। শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত বললে ভুল হবে, সঙ্গে ছিল শাস্ত্রীয়সঙ্গীত ও ইএনটি বিশেষজ্ঞের মূল্যবান পরামর্শ। প্রথম দিনে ছিলেন শাস্ত্রীয়সঙ্গীতে পণ্ডিত উর্মি দাশগুপ্ত। তোড়ি রাগে একটি গুরুবন্দনা, রাগ খাম্বাজ ও ভৈরবী রাগে একটি ভজন শিখিয়েছেন। রাগসঙ্গীত গাওয়ার খুঁটিনাটি বলার পাশাপাশি বন্দিশ লেখানোর ক্ষেত্রে তিনি আরও যত্নবান হলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হত।
পরে আসেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম পর্যায়ের শিক্ষার খামতি পূরণ হয় শিল্পীর সঙ্গীত শেখানোর জাদুকারিতে। কবিগুরুর ৭৭ বছর বয়সের লেখা প্রেম পর্যায়ের ‘দিনান্তবেলায় শেষের ফসল নিলেম তরী পরে’ গানটি শেখান। শেখানোর আগে গানের প্রেক্ষিত বুঝিয়ে দেন। কাহারবা তালে গানটি শেখাতে গিয়ে শিল্পী বারবার জানিয়েছেন, কবিগুরুর গানের মধ্যে একটা বোধের জায়গা আছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে গানের অর্থ নানা ভাবে ধরা দেয়। ফলে সুরের একটি ছবি তৈরি হয়। এ ছাড়া মাইক্রোফোনের ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কথা বারবার বলেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
দ্বিতীয় দিনে শিল্পী প্রমিতা মল্লিকের কাছে শিক্ষার্থীদের আশা কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে। একশো বছর আগের লেখা কবিগুরুর ‘ওরে আমার হৃদয় আমার’ গান দিয়ে শুরু করেন কর্মসূচি। দাদরা তালে গানটির লাইন ধরে অর্থ, গানের মূল বিষয়, গানটির পিছনের ঘটনা এবং ওই সময় কী কী গান কবি রচনা করেছিলেন সবটাই আলোচনায় তুলে আনেন। গান শুরুর আগে শোনান ১৯১৪ সালের কবির নৈরাশ্যের এক চিঠি। কাকে লেখা সেই চিঠি, নৈরাশ্য কেটে যাওয়ার পরে কী গান তিনি রচনা করেছিলেন সবই জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গ আনতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গেলে আগে নজর রাখা উচিত কোথায় গাইছি, কেমন শ্রোতা আর গান নির্বাচনের কথা। ১৮৯৬ সালের মাঘোৎসবে গাওয়া বিলম্বিত ত্রিতালে ভাঙাগান ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’ গানটিও শেখান শিল্পী।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কাছ থেকে প্রাপ্য আরও বেশি ছিল। কিন্তু চাওয়ার তো শেষ নেই। সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ। যখন তিনি ছাত্রী, শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ছাত্রী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শেখা একটি বর্ষার গান ‘ওগো আমার শ্রাবণ মেঘের খেয়া তরীর মাঝি’ শেখান। একটি লাইনকে বারবার গাইয়ে তার অর্থ মনের গভীরে পৌঁছে দেওয়া–এ এক পরম পাওয়া। নানা শিল্পীর কণ্ঠে একই গান শুনলেও তা যেন নিজস্ব চরিত্র, নিজস্ব রং পায়। এটাই রবীন্দ্রনাথের গানের বহুমাত্রিকতা, জানান তিনি। এ এক গুরু-শিষ্য পরম্পরাও বটে। সুরান্তর গান ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ ও ঠুংরিভাঙা ‘যাওয়া আসারই এই কি খেলা’ গান দু’টিও শেখান। শিল্পীর শেখানো তিনটি গানের ক্ষেত্রে উঠে এসেছে সেই এক কথা — রবীন্দ্রনাথের গান মানে বারবার পড়ার গান। শিক্ষার্থীরা গানগুলি আয়ত্ত করায় শিল্পীও খুশি। চাহিদা থেকেই গেল আবার শেখার।
এই কর্মশালা আয়োজন করে বৈ-চিত্র প্রকাশন ও ঋত প্রকাশন, উদ্যোগ সোনার তরী ট্রাস্ট- এর।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।