প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী
আগ্রহ বাড়তে বাড়তে আর ধরে রাখা যাচ্ছিল না। তাই প্রায় সাত সকালে প্রথম শো-য়েই দেখে নিলাম উড়তা পঞ্জাব, এক ঝাঁক পঞ্জাবি যুবকের সঙ্গে। এবং বুঝে ফেললাম, এত দিন সংবাদ মাধ্যমে যে সব বিশ্লেষণ দেখছিলাম, পড়ছিলাম — কোনওটাই মোটের ওপর ভুল ছিল না। এই ছবির ওপর সেন্সর বোর্ডের কাঁচিহস্ত হওয়ার পেছনে কোনও জনস্বার্থ থাকার কথা ছিল না। যা স্বার্থ, সেটুকু রাজনীতির কারবারিদের।
পঞ্জাবের ‘গ্রিন রেভোলিউশন টু’ নিয়ে তৈরি এই ছবি কাউকে ছাড়েনি। ড্রাগের নেশায় পঞ্জাবের একটি প্রজন্ম শেষ হয়ে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক নেতা-মাফিয়া-পুলিশের দায় ও স্বার্থের ভয়ঙ্কর চেহারাটা দুর্দান্ত তুলে ধরেছেন পরিচালক অভিষেক চৌবে। কাহিনির ছাঁচ-টাও চমৎকার। এক সাংস্কৃতিক আইকন ও এক ভালো দিনের আশায় থাকা তরুণীর ব্যক্তিগত সংকট, এক নিচু তলার পুলিশ কর্মীর পারিবারিক সংকট-কে এক সুতোয় বুনতে চেয়েছেন পরিচালক। যে সংকটের নাম হিরোইনের নেশা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক ডাক্তারের লড়াই। রয়েছে সিস্টেমের ভেতর ও বাইরে থেকে লড়াই করার পুরনো বিতর্কের তীক্ষ্ণ ইঙ্গিত, বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং-এ ছড়ানো স্বপ্নের কথা, সংকটাপন্ন নিম্নবিত্তের ওপর দিকে তাকিয়ে আত্মপরিচয় খুঁজতে থাকা। যে আত্মপরিচয়ের খোঁজ সিনেমা শেষ হয়ে গেলেও শেষ হতে চায় না।
সিনেমার মূল চারটি চরিত্রের অভিনেতারা একেবারে যথাযথ। টমি সিং ওরফে গাবরুর চরিত্রে শহিদ কাপুর, ডাক্তারের চরিত্রে করিনা কাপুর খান, পুলিশের ভূমিকায় নবাগত দিলজিৎ দোশাঞ্জ কেউ কারও চেয়ে কম নন। তবে স্বতস্ফূর্ত অভিনয়ে সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন আলিয়া ভট্ট।
গোলমাল যদি কিছু থাকে, তা হল, ছবিটির মূল স্পিরিটের সঙ্গে ডাক্তার-পুলিশের প্রেম কাহিনি কিংবা টমির নিজস্ব সংকটকে ছাপিয়ে আলিয়াকে উদ্ধার করার ব্রতে ঝাঁপিয়ে পড়াটা ঠিক জমেনি বা বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। এই বিচ্ছিন্ন সুতোগুলোকে জুড়তে গিয়ে আড়াই ঘণ্টার ছবিটি খানিক খেই হারিয়ে বড় হয়ে গিয়েছে। আলিয়া ভট্টের চরিত্রটি ঠিকমতো নির্মিত নয়। তার সমস্যাটা এক দীর্ঘ ডায়লগের মাধ্যমে দর্শক জানতে পারেন বটে তবে দর্শক-মনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পায় না। পরিচালকের হয়তো কিছু করারও নেই। তিন জন স্টারকে নিয়ে কাজ করলে, তাদের জন্য জায়গা তো রাখতেই হবে। তার ওপর বিনোদন মূল্য তৈরি করার ব্যাপারও আছে। আসলে সিনেমাটির মূল সুরটি এত সিরিয়াস এবং ড্রাগ মাফিয়াদের ঠান্ডা মাথার হিংস্রতা এত চমৎকার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে তার সঙ্গে ওই খানিক জোর করে তৈরি করা প্রেম ঠিক যায় না।
তবু আদালতের হাত ধরে কিছু রূঢ় সত্য বলার সুযোগ তো পেল বলিউড। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের ওপর দেশবাসীর ভরসা বাড়ল কি ? সত্যি বলতে কী, তেমন গণতন্ত্রের থেকে দুর্ভাগা আর কে আছে, যাকে আদালতের সাহায্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।