কলকাতা
আজ কালীপুজো: কলকাতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে কালীক্ষেত্র কালীঘাট
এঁদের (সাবর্ণ রায় চৌধুরী) জমিদারির মধ্যেই কালীঘাট। বুড়িগঙ্গার তীরে এঁরাই প্রতিষ্ঠাতা কালীঘাটের কালী মন্দিরের। সামাজিক নিয়মে বাধে বলে নিজেরা পুজো করতে পারেন না। তাই দূর দেশ থেকে ডেকে আনা হলো হালদার গোষ্ঠীর ব্রাহ্মণ। সেই থেকে ঐ হালদারেরাই মন্দিরের সেবাইত।

শুভদীপ রায় চৌধুরী
পীঠমালা অনুসারে কালীঘাটে সতীর দক্ষিণ পদাঙ্গুলি পড়েছিল, তাই এটি পীঠস্থান হিসাবে চিহ্নিত। এখানকার দেবতা কালী ও পীঠরক্ষক ভৈরব নকুলেশ্বর। চূড়ামণিতন্ত্রে বলা হয়েছে:
“নকুলেশঃ কালীঘাটে দক্ষপাদাঙ্গুলিষু চ।/ সর্বসিদ্ধিকরী দেবী কালিকা তত্র দেবতা।।”
সতীর প্রতি স্নেহবশত শিব লিঙ্গরূপ ধারণ করে কালীঘাটে নকুলেশ্বর নামে বিরাজ করছেন এবং ব্রহ্মা এখানে একটি কালীমূর্তি স্থাপন করেন।
হিন্দুতীর্থের ৫১টি পীঠস্থানের অন্যতম হল মহাতীর্থ কালীঘাট। পীঠস্থানগুলি শক্তিপূজার প্রধান স্থান। কী কারণে পীঠস্থান হল তা পুরাণ ও তন্ত্রাদি শাস্ত্রে বর্ণনা করা আছে। পূর্বকালে প্রজাপতি দক্ষ হিমালয়ের পাদদেশে সিদ্ধমহর্ষি পরিসেবিত পবিত্র হরিদ্বারে বৃহস্পতিসব নামে যজ্ঞের আয়োজন করেন এবং সেখানে ব্রহ্মর্ষি, দেবর্ষি ও দেবগণকে আমন্ত্রণ করেন। কিন্তু তাঁর নিজের জামাই শিবকে বিদ্বেষবশত আমন্ত্রণ করেননি। দক্ষকন্যা সতী পিতৃযজ্ঞ মহোৎসবের কথা শুনে পিতৃগৃহে যাওয়ার জন্য তাঁর পতি শিবের অনুমতি প্রার্থনা করেন। শিব অনুমতি দেন।
সতী পিতৃগৃহে গিয়ে দেখলেন সেখানে রুদ্রের ভাগ নেই। দক্ষ তাঁর কন্যার সামনেই শিবনিন্দা করতে থাকেন। এতে সতী অপমানিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে সেখানেই দেহ পরিত্যাগ করেন। এই সংবাদে মহাদেব ক্রুদ্ধ হয়ে দক্ষের যজ্ঞ পণ্ড করেন এবং সতীর মৃতদেহ নিজের স্কন্ধে নিয়ে উন্মত্তের মতো নৃত্য করতে করতে সমস্ত পৃথিবী পরিভ্রমণ করতে লাগলেন। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অবস্থা। শিবকে থামাতেই হবে। আসরে নামলেন বিষ্ণু। সতীর মৃতদেহ সুদর্শনচক্র দিয়ে খণ্ড করে ফেললেন। যে যে স্থানে সতীর অঙ্গ পড়ল, সেই সেই জায়গায় মহাদেব সতীস্নেহবশত স্বয়ং লিঙ্গরূপে উদ্ভূত হলেন। ব্রহ্মা সেই সব স্থানে শক্তির এক এক মূর্তি স্থাপন করলেন। সতীর অঙ্গ ৫১টি খণ্ড হয়েছিল, সুতরাং ৫১টি পীঠস্থান হল। কালীক্ষেত্র কালীঘাটে পড়েছিল সতীর দক্ষিণ পদের চারটি আঙুল। তাই একান্নটি সতীপীঠ বা শক্তিপীঠের মধ্যে কালীতীর্থ কালীঘাট একচল্লিশতম সতীপীঠ।
কালীক্ষেত্রের কালীমূর্তি কী ভাবে এল? এ বিষয়ে নানা কাহিনি রয়েছে। বর্তমান কালীমন্দিরের অনতিদূরে এক পর্ণকুটীরে এক ব্রাহ্মণ বানপ্রস্থে থেকে তপস্যা করছিলেন। একদিন ভাগীরথীতে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যাবন্দনা করছেন, এমন সময় অনতিদূরে এক আলোকজ্যোতি দেখতে পেলেন। সেই আলোকজ্যোতি দেখে ব্রাহ্মণের কৌতূহল হল এবং সেই জ্যোতির পথ অনুসরণ করে গিয়ে দেখলেন এক জায়গা থেকে ওই দিব্য আলো বেরিয়েছে। পরে মা কালীর প্রত্যাদেশে জানতে পারলেন, সুদর্শনচক্রে ছিন্ন হয়ে তাঁর অঙ্গ ওই স্থানে পড়েছিল। তখন সেই ব্রাহ্মণ খোঁজ করতে করতে অদূরেই স্বয়ম্ভু নকুলেশ্বরের সন্ধান পান। এবং তিনি ওই জায়গায় পাথরের সতীঅঙ্গ যত্নের সঙ্গে রেখে কালীমূর্তি ও নকুলেশ্বরের পূজা করতে শুরু করেছিলেন।
ব্রহ্মানন্দের জন্মের আগে বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসাবিজয়’ ও সমসাময়িক কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গলে’ কলিকাতা এবং কালীঘাটের উল্লেখ পাওয়া যায়। এ-ও বলা হয়ে থাকে, বড়িশার সাবর্ণ চৌধুরী গোষ্ঠী বাংলার দক্ষিণ অংশের জমিদারি পেয়ে কালীঘাটের কালীমূর্তি আবিষ্কার করেন।
সাবর্ণ গোত্রীয় রায় চৌধুরীদের কুলমাতা মা ভুবনেশ্বরীর রূপ দেখে ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মানন্দগিরি এবং আত্মারাম ঠাকুর মহামূল্যবান কষ্টিপাথরে দক্ষিণাকালী মাতার রূপদান করেছিলেন। ওই শিলার মধ্যেই দেবী কালিকা আবদ্ধ আছেন। পুণ্য পীঠস্থান রূপে কালীঘাটের আত্মপ্রকাশের মূলে রয়েছেন দুই সাধক আত্মারাম ঠাকুর এবং ব্রহ্মানন্দগিরি। আর রয়েছেন সাবর্ণ গোত্রীয় জীয়া গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর পত্নী পদ্মাবতীদেবীর সাধনা ও স্বপ্নাদেশ।

কালীক্ষেত্র কালীঘাট বহু প্রাচীন তীর্থস্থান। ষোড়োশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে লিখিত বহু তীর্থবিষয়ক গ্রন্থে কালীঘাটের নামোল্লেখ করে দেবী কালিকার উদ্দেশে প্রণাম নিবেদন করা হয়েছে। কিছু কিছু তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় কালীঘাট বা কালীঘট্ট বা কালীক্ষেত্র বল্লাল সেনের সময়ের থেকেও প্রাচীন।
কালীঘাটে মন্দির নির্মাণ ও মূর্তি স্থাপনের ব্যাপারে বাংলার প্রাচীন জমিদার বংশীয় সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারই উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেছিলেন ১৫৬৯ সাল থেকে –
“লক্ষ্মীর আরাধ্য কালী, যাহে স্থিরামতি।/অদূরে বড়িশা তথা করিল বসতি।/ যথাকালে কালীঘাটে কালিকার স্থিতি।/লক্ষ্মীনাথে কুলভাঙ্গে সাবর্ণে মতি।।/ মানসিংহ গুরুপুত্র করে অন্বেষণ।/কালীঘাটে পায় নাম লক্ষ্মীনারায়ণ…।।”
আশ্বিন মাসের লক্ষ্মীপুজোর তিথি হিন্দুর পঞ্জিকায় অতি শুভ দিন। ৯৭৭ বঙ্গাব্দের (১৫৭০ খ্রিস্টাব্দ) লক্ষ্মীপূর্ণিমার দিন জন্ম হয় সাবর্ণ গোত্রীয় জীয়া গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্রসন্তানের। লক্ষ্মীপূর্ণিমার দিন জন্ম বলে তাঁর নাম হয় লক্ষ্মীনারায়ণ বা লক্ষ্মীকান্ত। আত্মীয়দের পরামর্শ মেনে পুত্রকামনায় জীয়া গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী পদ্মাবতী কালীঘাটে তাঁদের পারিবারিক দেবতা দেবী কালিকার কাছে তিন দিন তিন রাত্রি সাধনা করেন। তৃতীয় রাত্রে কালীমন্দিরের পুষ্করিণীর জলের ওপর এক আলোর ছটা দেখতে পান পদ্মাবতীদেবী। পর দিন ওই পুকুরে স্নান করতে গিয়ে তিনি জলের তলায় সতীর দেহাংশ দেখতে পান ও দৈববাণী শুনতে পান। সেই দৈববাণী শুনে দেবীর প্রধান পুরোহিত আত্মারাম ঠাকুর পুকুরের তলা থেকে সতীর সেই দেহাংশ উদ্ধার করেন।
৯৭৭ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে স্নানপূর্নিমা তিথিতে একটি লাল পট্টবস্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত হলেন দেবী কালিকা। শুরু হল সতীর নিত্য পূজাপাঠ। তার আগেই আত্মারাম ঠাকুরের কাছে তন্ত্রমতে দীক্ষা নেন জীয়া ও পদ্মাবতী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, লক্ষ্মীকান্তের জন্মের পর তার মা পদ্মাবতী মারা গেলেন। লক্ষ্মীকান্তকে কালীঘাটে রেখে জীয়া বেরিয়ে পড়লেন। শেষে তিনি কাশীতে ছিলেন এবং কামদেব ব্রক্ষ্মচারী রূপে ভারতবিখ্যাত সাধক হন। লক্ষ্মীকান্ত বড়ো হতে থাকেন আত্মারাম ঠাকুরের কাছে। পাঁচটি আঞ্চলিক ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। লক্ষ্মীকান্ত যশোর তালুকের নায়েব থাকাকালীন প্রশাসনিক ও সামরিক ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার পরিচয় পান মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ। মানসিংহ কালীঘাটে এসে লক্ষ্মীকান্তের সঙ্গে দেখা করেন এবং জানান যে লক্ষ্মীকান্তের পিতা কামদেবের শিষ্য তিনি। গুরুর নির্দেশে তিনি লক্ষ্মীকান্তকে গুরুদক্ষি্ণা প্রদান করতে চান। লক্ষ্মীকান্তের ব্যবহার, পাণ্ডিত্য, উপস্থিতবুদ্ধি দেখে মানসিংহ তাঁকে ‘মজুমদার’ (রাজস্ব কমিশনার) উপাধিতে ভূষিত করলেন।
শিবপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘প্রাচীন কলিকাতা’ বইয়ে লিখেছেন, পনেরোশো শতাব্দীর শেষ ভাগে বা ষোড়োশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে গোবিন্দপুরে (তখনকার কালীঘাট) মা কালীর পূজার্চনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে আরও একটি কথা উল্লেখ্য যে সাবর্ণ গোত্রীয় লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় (রায় চৌধুরী) মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের কাছ থেকে জায়গির পাওয়ার পর কালীঘাটে মন্দির নির্মাণ ও দেবীর সেবার ব্যবস্থা করে দেন। বলা বাহুল্য, লক্ষ্মীকান্ত রায় চৌধুরী ৫৯৫ বিঘা ৪ কাঠা ২ ছটাক জমি দান করেছিলেন।
শিবপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় আরও উল্লেখ করেছেন, গোবিন্দপুরের পুরোনো নাম কালীঘাট এবং বর্তমানে যেখানে জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস) আছে সেখানেই ছিল মা কালীর মন্দির। প্রমথনাথ মল্লিক তাঁর ‘কলিকাতার কথা’ বইয়ে (আদিকাণ্ড পৃষ্ঠা ১-২) লিখেছেন, কালীদেবী কবে কলকাতা থেকে কালীঘাটে যান তার সবিশেষ তথ্য পাওয়া দুরূহ। তবে এই পর্যন্ত শোনা যায় বর্তমান পানপোস্তার উত্তরে দেবীর মন্দির ও পাকা ঘাট ছিল। সেই পুরোনো পাথরে বাঁধানো ঘাট থেকেই বর্তমান পাথুরিয়াঘাটার নাম হয়েছে। যদিও এই মতের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন ধর্মানন্দ মহাভারতী।

‘লক্ষ্মীকান্ত’ গ্রন্থের রচয়িতা অতুলকৃষ্ণ রায়ের মতে, সতী-অঙ্গ বর্তমান চৌরঙ্গী অঞ্চলে পড়েছিল, তাই তার নাম চৌরঙ্গী। যদি এই মত সত্যি বলে ধরা হয় তা হলে দেবীর মূর্তি ও মন্দির কালীঘাটে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে চৌরঙ্গী অঞ্চলেই হত। তপন চট্টোপাধ্যায় ‘পলাশির যুদ্ধ’ গ্রন্থে লিখেছেন, কালীঘাটের ভদ্রকালী কালিকা কালীক্ষেত্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। নকুলেশ্বর মহাদেবের সঙ্গে তিনি সানন্দে বিরাজ করছেন।
কালীঘাটের বর্তমান মন্দির তৈরির সূচনা করেন বড়িশার সাবর্ণ গোত্রীয় সন্তোষ রায় চৌধুরী। নিজের জীবদ্দশার শেষ দিকে ওই কাজ শুরু করেন তিনি। সন্তোষ রায়ের মৃত্যুর ৫-৬ বছর পরে ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে ওই কাজ শেষ করেন রাজীবলোচন রায় চৌধুরী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, লক্ষ্মীকান্তের বংশধর কেশবচন্দ্র রায় চৌধুরী গঙ্গাতীরে বসে জপতপ করতেন। কালীঠাকুরানির প্রত্যাদেশমতো বর্তমান কালীর প্রস্তরখোদিত মুখমণ্ডল পেয়ে তিনি তা বর্তমান কুণ্ডুর পশ্চিম তীরে স্থাপন করেন এবং কালীর সেবার জন্য ওই স্থানের জমি নির্দিষ্ট করে দিয়ে মনোহর ঘোষাল নামে এক ব্যক্তিকে পরিচারক নিযুক্ত করেন। ১২০৯ বঙ্গাব্দ তথা ১৮০২-৩ খ্রিস্টাব্দের দাখিলি ভূমির তায়দাদ থেকে জানা যায়, ১১৫৭ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৭৫১ সালে ওই মনোহর ঘোষাল ও কালীঘাটের তদানীন্তন সেবায়েত গোকুলচন্দ্র হালদারকে সন্তোষ রায় চৌধুরী তাঁর জমিদারির নানা স্থানে বিস্তর ভূমি দান করেছিলেন। কালীঘাটের বন কেটে কেশবচন্দ্র কালীর ইমারত নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। যে স্থানটিকে এখন কালীঘাট বলা হয় তা আগে সাবর্ণদের জমিদারিভুক্ত চাঁদপুর গ্রাম বলে পরিচিত ছিল। পরবর্তী কালে কেশবচন্দ্রের ভাই কাশীশ্বর রায় চৌধুরী ওই জায়গায় একটি ছোটো মন্দির নির্মাণ করেন।
মা কালীর যে মুখমণ্ডল পাওয়া গিয়েছিল, শুধুমাত্র সেই মুখমণ্ডলটুকুই যে এখন কালীঘাটের মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত আছে এমন নয়, সেটি এখন সোনা-সহ বহু মূল্যের অলংকারে সুসজ্জিত। এই সমস্ত অলংকার ধনী মানুষদের দান। প্রথমে খিদিরপুর নিবাসী স্বর্গীয় দেওয়ান গোকুলচন্দ্র ঘোষাল কালীর চারটি রৌপ্যময় হাত তৈরি করে দেন। এখন যে চারটি সোনার হাত রয়েছে তা দান করেন কলকাতার প্রসিদ্ধ বাবু কালীচরণ মল্লিক। চার হাতে চারগাছি সোনার কঙ্কণ গড়িয়ে দেন চড়কডাঙা নিবাসী রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। মা কালীর স্বর্ণজিহ্বাটি দেন পাইকপাড়ার রাজা ইন্দ্র চন্দ্র সিংহ বাহাদুর। এ ভাবেই বহু ধনাঢ্য লোক কালীঘাটের মা কালীর বহু স্বর্ণালংকার গড়িয়ে দেন।
মা কালীর সেবায়েতগণের মধ্যে ভুবনেশ্বর চক্রবর্তী কুলব্রহ্মচারীর নাম প্রথম পাওয়া যায়। ভুবনেশ্বর যোগ সাধনায় রত থাকতেন এবং নির্জন কালীঘাটের গঙ্গাতীরে বাস করে কালীর সেবা করতেন। একদিন এক গরিব বিধবা ব্রাহ্মণী মন্দিরে দেবীদর্শনে আসেন। সঙ্গে অষ্টাদশী অবিবাহিত কন্যা। নাম যোগমায়া। ভুবনেশ্বরগিরি এই কন্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ভৈরবী রূপে গ্রহণ করেন। তন্ত্রে ভৈরবী রাখার নির্দেশ আছে। কিছু দিন পরে যোগমায়া এক কন্যার জন্ম দিলেন। নবজাতা শিশুকন্যার নাম রাখা হল উমা। উমার সঙ্গে খন্যাননিবাসী ভবানীদাস চক্রবর্তীর বিয়ে হয়। ভুবনেশ্বরগিরি ধ্যানমগ্ন অবস্থায় অদ্ভুত দৈববাণী পেলেন -“বৎস ভুবনেশ্বর, এ বার উমার বিয়ে দিয়ে আমার পূজা কর। সন্ন্যাসীদের রেহাই দিয়ে সংসারীর হাতে তুলে দে।”
ভুবনেশ্বরগিরির অনুরোধে ভবানীদাস কালীঘাটে থেকে গেলেন। দেবীর পূর্বের আদেশমতো ভুবনেশ্বরগিরি বৈষ্ণব ভবানীদাসের ওপর দক্ষিণাকালিকার পূজা-আরতির ভার দিলেন। তখন থেকেই শুরু হল গৃহীভক্তের হাতে কালীমাতার পূজার্চনা। সন্ন্যাসী ভুবনেশ্বরগিরিই কালীঘাটের শেষ মোহান্ত।
কালীর মন্দিরের পশ্চিম দিকে শ্যামরায়ের মন্দির ও দোলমঞ্চ। কালীর সেবায়েত হালদারদের পূর্বপুরুষ ভবানীদাস বৈষ্ণব ছিলেন। তিনি তাঁর শ্যামরায় বিগ্রহ নিয়ে কালীঘাটে আসেন। ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদের জনৈক কানুনগো কালীঘাটে এসে শ্যামরায়ের জন্য ছোটো ঘর প্রস্তুত করে দেন। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাওয়ালির জমিদার উদয়নারায়ণ মণ্ডল শ্যামরায়ের ছোটো ঘর ভেঙে বর্তমান মন্দির নির্মাণ করে দেন। শ্যামরায়ের প্রধান উৎসব দোলযাত্রা। আগে শ্যামরায়ের দোলমঞ্চ ছিল না, তাই মন্দিরেই দোল পালন করা হত। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে সাহানগর নিবাসী মদন কলে নামক এক ব্যক্তি শ্যামরায়ের দোলমঞ্চ নির্মাণ করে দেন।
পূর্ণেন্দু পত্রী তাঁর ‘ছড়ায় মোড়া কলকাতায়’ লিখেছেন, “এঁদের (সাবর্ণ রায় চৌধুরী) জমিদারির মধ্যেই কালীঘাট। বুড়িগঙ্গার তীরে এঁরাই প্রতিষ্ঠাতা কালীঘাটের কালী মন্দিরের। সামাজিক নিয়মে বাধে বলে নিজেরা পুজো করতে পারেন না। তাই দূর দেশ থেকে ডেকে আনা হলো হালদার গোষ্ঠীর ব্রাহ্মণ। সেই থেকে ঐ হালদারেরাই মন্দিরের সেবাইত।”
খবরঅনলাইনে আরও পড়ুন
কালীপুজো এলেই মনে পড়ে যায় রানি রাসমণি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের কথা
কলকাতা
Bengal Polls 2021: ভোটের পর তৃণমূলকে সমর্থন করা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য অধীররঞ্জন চৌধুরীর
“সংযুক্ত মোর্চা নবান্ন দখল করবে”, অধীর নিশ্চিত।

খবরঅনলাইন ডেস্ক: রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা এ বার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ত্রিশঙ্কু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফের সংযুক্ত মোর্চার ভূমিকা। ভোটের পর তৃণমূলকে সমর্থন করা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী।
বুধবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে বহরমপুরের সাংসদকে প্রশ্ন করা হয়, ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে কি কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করবে? এমন প্রশ্নের সরাসরি যেমন কোনো উত্তর দেননি অধীর, তেমনই আবার রাজনৈতিক সমঝোতার প্রশ্ন পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি তিনি।
অধীর এই প্রসঙ্গেই বলেন, ‘‘কাল্পনিক প্রশ্নের এটা সময় নয়। আমরা সংযুক্ত মোর্চা নবান্ন দখলের লক্ষ্যে এগোচ্ছি। সংযুক্ত মোর্চাকে কারা সমর্থন করবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে গেলে কোথায় যাবেন আমরা জানি না। এমনও হতে পারে সংযুক্ত মোর্চা যখন নবান্ন দখল করতে যাচ্ছে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বাঁচার জন্য সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গী হলেন। বা সংযুক্ত মোর্চার কাছে আবেদন জানালেন।’’
এর পরেই কংগ্রেস সভাপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘পলিটিক্স ইজ দি আর্ট অফ পসিবিলিটিজ (Politics is the art of possibility)।’’
সম্প্রতি রাজ্যের ভোট পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী-সহ দেশের সমস্ত বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলকে চিঠি লিখে একজোট হয়ে লড়াইয়ে আবেদন জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এমন আবেদনকে কংগ্রেসের নৈতিক জয় হিসেবেই দেখেছেন অধীর। তাঁর কথায়, ‘‘যে তৃণমূল নেত্রী কথায় কথায় বলতেন ‘কংগ্রেসকে তো আমি মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দিয়েছি। কখনও আমি কংগ্রেস করেছি ভাবতে লজ্জা হয়’, সেই দিদি এখন সনিয়া গান্ধীর কাছে চিঠি লিখছেন।’’
অধীরের মতে, ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনীতি সনিয়া ও কংগ্রেস-কে ঘিরেই আবর্তিত হয়। সেটা মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করছেন বলেই তাঁকে চিঠি লিখতে হচ্ছে। কংগ্রেস তো তাঁকে চিঠি লেখেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিতে হয়েছে।
খবরঅনলাইনে আরও পড়তে পারেন
শিশির অধিকারীকে রাজ্যপাল করার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার, কোন রাজ্যে
কলকাতা
Bengal Polls 2021: বাড়ছে করোনা, ভোট বন্ধের দাবিতে কমিশন অফিসের কাছে রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ
পিপিই কিট পরে রাস্তায় শুয়ে অবিলম্বে ভোট বন্ধের দাবিতে অভিনব প্রতিবাদ!

খবর অনলাইন ডেস্ক: সারা দেশে ফের হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। শেষ কয়েক দিন ধরে বাড়তে বাড়তে পশ্চিমবঙ্গেও দৈনিক কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দু’হাজারের গণ্ডি পার করেছে। মহামারি আবহেই রাজ্যে চলছে বিধানসভা ভোট। এমন পরিস্থিতিতে ভোট বন্ধের আর্জি জানিয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশনের অফিসের কাছে রাস্তায় শুয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানাল একটি অরাজনৈতিক দল।
কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পিপিই কিট পরে রাস্তায় শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানান প্রতিবাদী দলটি। আট-দশ জন এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। তাঁদের দেখে পথচলতি মানুষের ভিড় জমে যায়।
প্রতিবাদকারীরা বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী চার সপ্তাহ খুবই সংকটজনক। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আগামী ৪ সপ্তাহে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে পূর্বাভাসও দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে অবিলম্বে এ ভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ হোক। নির্বাচনী সভা, মিটিং-মিছিল বন্ধ হোক। বিকল্প পথের সন্ধান করা হোক। এই দাবিতেই পিপিই কিট পরে রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি কমিশনকে চিঠিও দিয়েছেন তাঁরা।
প্রতিবাদীদের হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা পোস্টার। যেমন একটিতে লেখা-চারিদিকে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। নেই সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, ভোটের জন্য বিশাল সমাবেশ, যেন ভোটটাই ভ্যাকসিন, ইত্যাদি।
পোস্টার থেকে বোঝা যায়, এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা ‘আমরা সাধারণ নন-পলিটিক্যাল, আমরা খেটে খাওয়া নাগরিক’ নামের একটি দল।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিন রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ পার হয়েছে দু’হাজারের গণ্ডি। ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ২,০৫৮ জন। এর ফলে রাজ্যে মোট কোভিডরোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬৩৪ জন।
আরও পড়তে পারেন: Coronavirus Second Wave: “আগামী চার সপ্তাহ অত্যন্ত উদ্বেগের”, সাফ কথা কেন্দ্রের

খবরঅনলাইন ডেস্ক: খবরঅনলাইন জানিয়েছিল রবিবার কলকাতায় বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতাবাসীকে স্বস্তি দিয়ে অবশেষে মরশুমের প্রথম কালবৈশাখী হানা দিল কলকাতায়। সঙ্গে নামল জোর বৃষ্টি। তীব্র গরমের পর অবশেষে শান্তি পেলেন কলকাতার সাধারণ মানুষ।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ বার কিছু বৃষ্টি পেয়েছিল কলকাতা। কিন্তু শেষ জোর বৃষ্টি পেয়েছিল নভেম্বরের শেষে। অর্থাৎ, চার মাস পর জোর বৃষ্টি নামল শহরে।
সাধারণত এপ্রিলের এই সময়ের মধ্যে কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গের ৩-৪টি কালবৈশাখী হওয়ার কথা। কিন্তু এ বার বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতি এতটাই অদ্ভুত ছিল যে বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরিই হয়নি। উলটে মধ্যে ভারত থেকে শুষ্ক বাতাস ঢুকে গিয়ে গরমের দাপট ক্রমশ বেড়ে গিয়েছিল শহরে। অন্য দিকে বৃষ্টির অভাবে শহরে মাটির তলার জলস্তরও কিছুটা হলেও কমে যাচ্ছিল।
এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য দরকার ছিল জোর বৃষ্টির। সেটা আজ রবিবারই সন্ধ্যায় এল। এ দিন দুপুরের থেকে মুর্শিদাবাদে বজ্রগর্ভ মেঘের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে সেটি বীরভূম, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণা হয়ে কলকাতার দিকে নেমে আসে। সন্ধ্যা ৭টার কিছু পরে কলকাতায় ঝড় শুরু হয়। তার পরেই নামে জোর বৃষ্টি। বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টিও হয় শহরে।
উত্তর কলকাতার থেকে দক্ষিণেই বৃষ্টির দাপট এ দিন বেশি ছিল। গড়ে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়। এর জেরে এক ধাক্কায় তাপমাত্রাও অনেকটাই কমে গিয়েছে। রাত ৮টা নাগাদ পারদ রেকর্ড করা হয়েছে ২০.৬ ডিগ্রি।
তবে স্বস্তি বেশিক্ষণের জন্য নয়। সোমবার ভোরে শীত শীত ভাব থাকবে। তবে তার পরেই বাড়তে থাকবে পারদ। ফের ফিরবে গরম।
-
রাজ্য2 days ago
Bengal Polls Live: সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়ল ৭৫ শতাংশের বেশি
-
দেশ2 days ago
Corona Update: রেকর্ড তৈরি করে দেড় লক্ষের দিকে এগিয়ে গেল দৈনিক সংক্রমণ, তবুও কম মৃত্যুহারে কিছুটা স্বস্তি
-
বিদেশ2 days ago
Coronavirus Infection: কোনো বস্তু থেকে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা ১০ হাজারে মাত্র ১, জানাল মার্কিন সিডিসি
-
রাজ্য2 days ago
Bengal Polls 2021: বাহিনীর গুলিতে হত ৪, শীতলকুচি যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়