দুর্গা পার্বণ
দুর্গাপুজোয় দেবীর চক্ষুদানের সময় প্রতীকী বলিদান হয় চুঁচুড়ার মণ্ডল পরিবারে
এই পরিবারে দুর্গাপুজোর সময় চালকুমড়ো বলিদান হয়।

শুভদীপ রায় চৌধুরী
কলকাতার বাইরেও এই বঙ্গে এমন বহু বনেদি পরিবার রয়েছে যাদের বাড়িতে বহু বছর ধরে দেবীর আরাধনা হয়ে আসছে। তেমনই এক বনেদিবাড়ি হল চুঁচুড়ার মণ্ডল পরিবার। এই পরিবারের দুর্গাপুজো এ বছর ১৮০ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে।
মণ্ডল পরিবারের বর্তমান সদস্য কৌশিক দেবমণ্ডল জানালেন, এই বংশের পূর্বপুরুষদের আদি বাসস্থান ছিল বঙ্গের সাতগাছিয়া অঞ্চলে আনুমানিক ১৭৭০ সালে। তখন এই পরিবারের পদবি ছিল ‘দে’ এবং তাদের পূর্বপুরুষ তুলোর ব্যবসা করতেন। তখন থেকে এই ‘দে’ পদবিটি অপভ্রংশ হয়ে ‘দেব’-এ রূপান্তরিত হয়। তার পর এই পরিবারের সদস্যরা ওড়িশার বালেশ্বর বা বালাসোর অঞ্চলে চলে আসেন ও নুনের ব্যবসায় নিয়োজিত হন। এই বালেশ্বর অঞ্চলের জমিদারি তাঁরা পেয়েছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে এবং পেয়েছিলেন ‘মোড়ল’ উপাধি। সেই ‘মোড়ল’ই পরবর্তী কালে ‘মণ্ডল’-এ রূপান্তরিত হয়। ওড়িশার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জমিদারি ছিল দেবমণ্ডল পরিবারের।
আরও পড়ুন: আজও ভিয়েন বসিয়ে হরেক রকম মিষ্টি তৈরি হয় চুঁচড়ার আঢ্যবাড়ির দুর্গাপুজোয়
কৌশিকবাবু আরও জানালেন, বেশ কিছু বছর ওড়িশায় অতিবাহিত করার পর এই বংশের পূর্বপুরুষরা চলে আসেন চুঁচুড়ায় আনুমানিক ১৮৩০ সাল নাগাদ। তখন চুঁচুড়ায় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ছিল এবং চন্দননগরে ছিল ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেই সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ডাচ কোম্পানির এক বিবাদ চলায় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চুঁচুড়া অঞ্চল ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। চুঁচুড়ায় থাকাকালীন ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি ভিলা তৈরি করে, বর্তমানে যার সামান্য কিছু ধ্বংসাবশেষ লক্ষ করা যায়। সেই ভিলাটি ডাচ কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছিলেন মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা বসতি স্থাপনের জন্য। এই স্বর্ণবণিক্ সম্প্রদায়ভুক্ত মণ্ডল পরিবারের পারিবারিক নুনের ব্যবসা ছিল। ওড়িশায় থাকাকালীন তাঁরা ব্রিটশ কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্য করতেন এবং বঙ্গে এসেও সেই নুনের ব্যবসা অব্যাহত ছিল এই বণিক্ পরিবারের।
চুঁচুড়ায় বসতি নির্মাণের পর মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার আগে থেকে এই চুঁচুড়ায় আঢ্য পরিবার, শীল পরিবার পুজো করে আসছেন। এঁদের দেখেই উৎসাহিত হল মণ্ডল পরিবার। এই পরিবারের কুলদেবতা হলেন শ্রীশ্রীরঘুনাথ জীউ। তিনি এখনও ওড়িশাতেই পূজিত হন। তাই এই পরিবারের দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ বৈষ্ণবমতে হয়ে থাকে।

এই পরিবারের আরও এক সদস্য অরূপ মণ্ডল জানালেন, এই পরিবারে অন্নভোগ নিবেদন করা হয় না এবং পশু বলিদানেরও কোনো প্রথাও নেই। এই পরিবারে দুর্গাপুজোর সময় চালকুমড়ো বলিদান হয় এবং চালের নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। সঙ্গে থাকে নানান রকমের তরিতরকারি, তেল, নুন ইত্যাদি।
এই পরিবারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন দেবীর চক্ষুদানের সময় বলিদান এবং আরও একটি বলিদান মহাষ্টমীর পুজোতে। রাত্রে দেবীকে নুন ছাড়া লুচিভোগ, বিভিন্ন রকমের ভাজা, মিষ্টান্ন ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। অতীতে মহালয়ার দিন দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু কালক্রমে সেই বোধনের পুজো এখন ষষ্ঠীর দিন হয় অর্থাৎ ষষ্ঠ্যাদিকল্পারম্ভ। দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর সন্ধিপূজায় ১০৮ দীপদান ও ১০৮ পদ্ম নিবেদন করা হয় দেবীকে।
এই পরিবারে একটি প্রাচীন কাঠামো রয়েছে। সেই কাঠামোতেই ঠাকুর তৈরি হয় প্রতি বছর। পরিবারের সদস্যের কথানুযায়ী কাঠামোটি ১৮০বছরের প্রাচীন। এ ছাড়া মণ্ডলবাড়িতে একটি বিশেষ পট রয়েছে। সেই অনুযায়ী চালচিত্র আঁকা হয়। সেটি এই পরিবারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই পরিবারে মা মহাদেবকে সঙ্গে নিয়ে আসেন অর্থাৎ সপরিবার দেবী মহাদেবের পাশে অধিষ্ঠান করেন। মহানবমীর দিন নবগ্রহের হোমযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় এই পরিবারে।

বর্তমানে মণ্ডল পরিবারে পালা অনুযায়ী দুর্গাপুজো হয়। একটি হয় কামারপাড়ায় আর একটি হয় যেখানে ডাচ ভিলাটি যেখানে ছিল সেখানে একটি মন্দির তৈরি করে। অতীতে কাঁধে করেই দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হত। বর্তমানে সেই প্রথা আজ বন্ধ। দশমীর দিন দেবীর বরণের পর কনকাঞ্জলি প্রথা পালন করা হয় চুঁচুড়ার মণ্ডল পরিবারে। এই ভাবেই আজও প্রাচীন প্রথা মেনেই পুজো পেয়ে আসছেন মণ্ডলবাড়ির শিবদুর্গা।
দঃ ২৪ পরগনা
মা ও শিশুসন্তানদের জন্য কাপড় ও খাবার নিয়ে হাওড়ার বালিতে ‘সহমর্মী’
মৃন্ময়ী ‘মা’ যখন মণ্ডপে ২৫ লক্ষ টাকার গয়নায় সুসজ্জিত, তখন তাঁর সন্তানেরা দু’ মুঠো অন্নের আশায় ঝাড়খণ্ড থেকে এসে বালির ইটভাটায় লড়াই করে চলেছে।

সুব্রত গোস্বামী
রাস্তায় একটা ব্যানারে হঠাৎ চোখ পড়ল। তাতে লেখা – ‘প্রতিমাতেই শুধু মা দুর্গা নন, প্রতি-মাতেই মা দুর্গা’। এই অনুভবেই বিশ্বাসী গড়িয়া সহমর্মী সোসাইটি (Garia Sahamarmi Society)।
পুজো উপলক্ষ্যে মায়েদের হাতে নতুন কাপড় তুলে দেওয়ার জন্য সহমর্মী হাজির হয়ে গিয়েছিল বালির কিছু ইটভাটা-সহ কাছাকাছি কয়েকটি অঞ্চলে। মৃন্ময়ী ‘মা’ যখন মণ্ডপে ২৫ লক্ষ টাকার গয়নায় সুসজ্জিত, তখন তাঁর সন্তানেরা দু’ মুঠো অন্নের আশায় ঝাড়খণ্ড থেকে এসে বালির ইটভাটায় লড়াই করে চলেছে।

ইটভাটায় গিয়ে যা দেখা গেল, তা কোনো ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ৬ ফুট বাই ৮ ফুট একটা ছোট্ট ঘরে কোনো রকমে এঁরা বাস করছেন। করোনাকালে শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। শারীরিক দূরত্ববিধি মানা এঁদের কাছে বিলাসিতা।
সেই ছোট্ট ঘরে একটাও জানলা নেই। মেঝেতে পড়ে আছে ছোট্ট শিশুর দল। দেখলে মনে হয়, আফ্রিকার কোন দেশ থেকে এসেছে। এই আমাদের আধুনিক ভারত! চাঁদের মাটিতে আমরা যখন চন্দ্রযান পাঠাতে ব্যস্ত, তখন আমারই দেশের মানুষের এই চরম দুর্ভোগ।
বালির বিআইভিএ (BIVA), তার পর বিবিএ (BBA), বিএনএস (BNS) ও বিবিএ২ (BBA2) ইটভাটা এবং বিদ্যাসাগর কলোনিতে পৌঁছে গিয়েছিল ‘সহমর্মী’। ‘সহমর্মী’ পৌঁছে গিয়েছিল বেলানগরের ভগবানের ভাণ্ডারে।
বালির ওই সব জায়গায় ইটভাটায় ৫০ জন মহিলার হাতে শাড়ি ও খাবার এবং ১০০ জন শিশুর মুখে খাবার তুলে দেওয়া হল ‘সহমর্মী’র পক্ষ থেকে।

শুধুই বালির ইটভাটাই নয়, ‘সহমর্মী’-র আয়োজনে মহাষ্টমীর দিন গড়িয়া গড়াগাছায় ১৪০ জন শিশুর হাতে দুপুরের খাবার তুলে দেওয়া হল। এখানকার ছোট্ট দুগ্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশদের হাতে পুজোর নৈবেদ্য তুলে দিতে পেরে ‘সহমর্মী’ ধন্য ও ঋদ্ধ হল।
খবরঅনলাইনে আরও পড়ুন
পিতৃমাতৃহীন শিশুদের নিয়ে পুজোর দিনে ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-এর অভিনব উদ্যোগ
কলকাতা
পিতৃমাতৃহীন শিশুদের নিয়ে পুজোর দিনে ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-এর অভিনব উদ্যোগ

খবরঅনলাইন ডেস্ক: উৎসব মানেই আনন্দ, আর সেই আনন্দ আরও জোরদার হয়ে ওঠে যখন সঙ্গে থাকে প্রিয়জনেরা! সেই প্রিয়জনদের খোঁজার প্রচেষ্টাতেই ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ (Durga and Friends) একত্রিত করেছে ছোটো ছোটো কিছু পিতৃমাতৃহীন শিশুকে, যারা এক সঙ্গে বড়ো হয়ে উঠছে এই হাউসে।
আর এই ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-কে সঙ্গ দিয়েছেন কিছু বন্ধু যাঁরা এই ছোট্ট বন্ধুদের তাঁদের মা-বাবার অভাব কোনো দিন বুঝতে দেননি।

এই মহৎ প্রচেষ্টার সঙ্গে যিনি নিজেকে প্রথম যুক্ত করেছেন তিনি শ্যামসুন্দর জুয়েলার্স-এর পরিচালক মাননীয় রূপক সাহা। এবং তাঁর সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন সত্যেন্দ্রনাথ মিশ্রা, সুরজিৎ কালা সোহো প্রমুখ।
প্রতি বছর এই খুদে বন্ধুদের সঙ্গে দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট দিন সকলে উপভোগ করেন অঞ্জলি দিয়ে, প্যান্ডেল ঘুরে এবং এক সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন করে।
কিন্তু এই বছরটা একটু আলাদা! করোনার কবল থেকে বাঁচাতে এই বার এগিয়ে এল লোহারুকা গ্রিন ওয়েসিস-এর (Loharuka Green Oasis) আবাসিকবৃন্দ। এই বছর ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-এর ছোট্ট বন্ধুরা আমন্ত্রিত হলেন লোহারুকা গ্রিন ওয়েসিস-এর আবাসিকদের সঙ্গে একটি দিন উপভোগ করার জন্য!

আবাসিক প্রাঙ্গণের দুর্গাপূজায় যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়ে খুব খুশি ছোট্ট শিশুরা। তারা আবাসিক প্রাঙ্গণের অন্য শিশুদের সঙ্গে দিনটা কাটাল অঞ্জলি, খেলাধুলা ও খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে।
আবাসিকদের তরফ থেকে সভাপতি দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী জানালেন, পরবর্তী সময়েও লোহারুকা গ্রিন ওয়েসিস ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-এর পাশে থাকবে।
শারদোৎসব মানেই যে মেলবন্ধন, সেই সত্যি আরও প্রমাণ করে দিলেন লোহারুকা গ্রিন ওয়েসিস-এর আবাসিকরা এবং ‘দুর্গা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’।
খবরঅনলাইনে আরও পড়ুন
দুর্গাপুজোয় সচেতনতার পরীক্ষায় উতরে গেল কলকাতা
কলকাতা
দুর্গাপুজোয় সচেতনতার পরীক্ষায় উতরে গেল কলকাতা
পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই, ঘরবন্দি থেকে বা নিদেনপক্ষে পাড়াবন্দি থেকে, এ বার দুর্গাপূজা উদযাপন করল কলকাতা

বিশেষ প্রতিনিধি: ভালো ভাবেই পাশ করে গেল কলকাতা (Kolkata) । আশঙ্কা ছিল, বাঙালির সব চেয়ে প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজোর টানে কোভিড সংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ উড়িয়ে দিয়ে বেসামাল হয়ে যাবে মহানগর। ফলত আরও বাড়বে করোনা সংক্রমণ।
দুর্গাপুজোর এই পাঁচ-ছ’ দিনে করোনা সংক্রমণ বাড়ল কি না, তা বোঝা যাবে দিন কয়েক পর। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই, ঘরবন্দি থেকে বা নিদেনপক্ষে পাড়াবন্দি থেকে, এ বার দুর্গাপূজা (Durgapuja 2020) উদযাপন করল কলকাতা।

মহানবমীর বিকেলে আরও এক দফা নগর পরিক্রমায় বেরোনো হল। গন্তব্য ছিল উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল সেরে দক্ষিণের প্রান্তিক এলাকা।
কলকাতার অন্যতম প্রাচীন সর্বজনীন পুজো সিমলা ব্যায়াম সমিতি বিবেকানন্দ রোডে। এই পুজো ছাড়াও এই রাস্তায় রয়েছে বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব, চালতাবাগান সর্বজনীনের মতো বেশ প্রাচীন বিখ্যাত সর্বজনীন পুজো।

মহানবমীর বিকেলে বিবেকানন্দ রোড আর পাঁচটা সাধারণ দিনের থেকেও শুনশান। সব মণ্ডপেই ঝুলছে প্রবেশ নিষেধ বোর্ড। হাতে গোনা কয়েক জন দর্শনার্থী মণ্ডপের বাইরে থেকেই প্রতিমা দর্শন করে চলে যাচ্ছেন। কোনো কোনো প্রতিমার দর্শন হচ্ছে গাড়িতে বসেই। যে হেতু রাস্তায় তেমন ট্রাফিক নেই, তাই পুলিশের বাধাও নেই।
মানিকতলা মোড় পেরিয়ে বাঁ হাতি রাস্তা রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট। একটু যেতেই ডান দিকে পড়ল লালাবাগান সর্বজনীন। গাড়িতে বসেই এমন সুন্দর প্রতিমা দর্শন হবে ভাবাই যায়নি। ওই ব্যস্ত রাস্তায় স্বচ্ছন্দে গাড়ি দাঁড় করানো হল, প্রতিমা দর্শন হল, ছবি তোলা হল অবাধে। ভাবা যায়?

একটু এগিয়ে লালাবাগান নবাঙ্কুর-এর পুজো, একটু ভিতরে। গাড়ির জন্য রাস্তা বন্ধ। গুটি গুটি পায়ে চলেছেন নামমাত্র দু’-চার জন দর্শনার্থী।
রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে ডান দিকের পথ ধরা হল উলটোডাঙা মোড়ের উদ্দেশে। বাঁ দিকে পড়ে থাকল গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন। অরবিন্দ সেতু পেরিয়ে উলটোডাঙা মোড়গামী এই রাস্তা পুজোয় অগম্য হয়ে যায়। গাড়ি তো দূরের কথা, পায়ে হাঁটাও দায় হয়ে ওঠে।
এই রাস্তার আশেপাশের গলিতে বহু বিখ্যাত পুজো আয়োজিত হয় – কবিরাজ বাগান সর্বজনীন, করবাগান সর্বজনীন, উলটোডাঙা পল্লিশ্রী, তেলেঙ্গাবাগান, শুঁড়ির বাগান সর্বজনীন ইত্যাদি। এই পথ ধরে এই মহানবমীর বিকেলে একেবারে অবাধ যাত্রা। পথে নতুন পোশাক পরে কিছু মানুষ চলেছেন প্রতিমা দর্শনের উদ্দেশ্যে।

অন্যান্য বার এই বারোয়ারি পুজোগুলো দেখার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় উলটোডাঙা মোড়গামী মূল সড়ক থেকেই। এক একটা পুজো দেখা সাঙ্গ করতে সময় লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর এ বার মণ্ডপের পথে ক’ জন হেঁটে চলেছেন, তা বোধহয় গুনে ফেলা সম্ভব।
উত্তরের পুজো কেমন হচ্ছে তার একটা আন্দাজ পাওয়া গেল। শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ফেরার পথে মনে হল একবার রাসবিহারী কানেক্টরে বোসপুকুর শীতলামন্দিরের পুজো দেখে আসা যাক। উনিশ বছর আগে মাটির ভাঁড়ের পুজো করে বিখ্যাত হয়েছিল বোসপুকুর। সেই খ্যাতি তারা আজও ধরে রেখেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এই প্রতিমা দর্শন করতে হয়।

সেই বোসপুকুর শীতলামন্দির অবাক করল। রাসবিহারী কানেক্টরের একেবারে মণ্ডপের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিমাদর্শন হল, ছবিও তোলা হল, পুলিশের নজরদারিতেই।
মহাসপ্তমী ও মহানবমীতে মহানগর পরিক্রমা করে বোঝা গেল হাতে গোনা কয়েকটি বিখ্যাত পুজো ছাড়া সর্বজনীন পুজোগুলো এ বার মোটামুটি ফাঁকাই থেকেছে। কলকাতাবাসী এ বার মোটামুটি ভাবে নিজের পাড়ার পুজোটিই দেখেছেন। পাড়ার চৌকাঠ পেরিয়ে দূরে পাড়ি জমাননি। আর যতটুকু অফিস-কাছারি চলছে, পুজোয় তা-ও বন্ধ। তাই এই আনলক পিরিয়ডেও বাস যে ভিড় দেখা যায়, দুর্গাপুজোর এ ক’ দিন তা-ও দেখা গেল না। সারা দিনই বাস একেবারেই ফাঁকা, তাই বেশি রাত পর্যন্ত বাসও চলেনি।
আনলক পিরিয়ডে নানা রকম বাধানিষেধের মধ্যে চলা মেট্রো রেল যত যাত্রী পরিবহণ করেছে, পুজোর দিনগুলোতে তার অর্ধেকও করেনি। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের হিসেবে, সপ্তমীর দিন তাঁদের পরিষেবা ব্যবহার করেছেন ৩৪ হাজার যাত্রী। অথচ পঞ্চমীর দিন মেট্রোয় যাত্রীসংখ্যা ছিল ৮৪,৮০১ জন। মোটামুটি একই ছবি দেখা গিয়েছে, মহাষ্টমী ও মহানবমীতেও।

মেট্রো আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ট্রেনে বা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কোনো ভিড়ই ছিল না। তা ছাড়া অন্যান্য বারের মতো এ বারে বেশি রাত পর্যন্ত মেট্রো চালানোও হয়নি।
কলকাতার পুজো দর্শনার্থীদের একটা বড়ো অংশ আসেন কলকাতার আশেপাশের জেলা থেকে। এ বার লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁদেরও বেশির ভাগ মহানগরে আসেননি। পুজোর দিনগুলোতে শহর শুনশান থাকার এটা একটা বড়ো কারণ।
বনেদিবাড়ির পুজোও কলকাতার পুজোর একটা বড়ো আকর্ষণ। কিন্তু শহরের বেশির ভাগ বনেদিবাড়ির পুজোতেও এ বার সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বনেদিবাড়ির পুজো।
দশমীও ম্রিয়মাণ বেশির ভাগ মণ্ডপে। নেই সিঁদুরখেলা, নেই বিসর্জনের শোভাযাত্রাও। সোমবার সকাল থেকেই বিসর্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও তো মণ্ডপচত্বরেই প্রতিমাকে গলিয়ে ফেলা হচ্ছে পাইপের জলের তোড়ে। কোনো কোনো বারোয়ারি কমিটি তো মণ্ডপের সামনেই জলের ব্যবস্থা করে সেখানে প্রতিমা বিসর্জন করছে।
ছবি: শ্রয়ণ সেন
খবরঅনলাইনে আরও পড়ুন
নেই সিঁদুরখেলা, শোভাযাত্রা, কোভিডের আবহে রাজ্যে মনখারাপের দশমী
-
রাজ্য1 day ago
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে সিপিএমের লাইনেই খেলছেন শুভেন্দু অধিকারী
-
দেশ2 days ago
করোনার টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হলে দায় নেবে না কেন্দ্র
-
দেশ2 days ago
নবম দফার বৈঠকেও কাটল না জট, ফের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কেন্দ্র
-
প্রযুক্তি2 days ago
হোয়াটসঅ্যাপে এ ভাবে সেটিং করলে আপনার আলাপচারিতা কেউ দেখতে পাবে না এবং তথ্যও থাকবে নিরাপদে