নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা সাদা তুলোর মতো মেঘ আর মাঝেমধ্যে ঝেঁপে বৃষ্টি ভালোমতোই জানান দিচ্ছে শরতের আগমনবার্তা। আগমনীর আগমনবার্তায় প্রাণচঞ্চল আপামর বঙ্গবাসী। শারদোৎসবের জন্য দিন গুনছে বাঙালি। সাবেক সাজে চিত্তাকর্ষক মনবাহারি থিমে মন জয় করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন দক্ষিণ কলকাতার সিংহী পার্ক সর্বজনীন পুজো কমিটির কর্মকর্তারা।
৮৩তম বছরে সিংহী পার্ক সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির থিম হল ‘সাতমহলার অন্তঃপুরে’। সামগ্রিক ভাবনার সঙ্গে উপযুক্ত আবহ তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন পণ্ডিত সুভেন চট্টোপাধ্যায় আর সাবেকি প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী প্রদীপ রুদ্রপাল। সামগ্রিক সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী সুদীপ্ত মাইতি।
সিংহী পার্কে ব্যস্ত শিল্পী। ছবি: রাজীব বসু।
পুজো কমিটির কর্তা অভিজিৎ মজুমদার বলেন, “অতীতের বাংলা সাহিত্যে আমরা অবিভক্ত বাংলায় জমিদারদের দ্বারা দুর্গাপুজো উদযাপনের উল্লেখ পাই। তখনকার সমাজে সাধারণ মানুষ লক্ষ্মীপুজো, সরস্বতীপুজো করলেও দুর্গাপুজোর মতো রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন মূলত করতেন গ্রামবাংলার বর্ধিষ্ণু বনেদি পরিবারের মানুষজনই। কারণ, এই পুজো ও ভোগের আয়োজন করতে আর্থিক সঙ্গতি ও স্বচ্ছলতার প্রয়োজন হত। কালে কালে দুর্গাপুজো বনেদি বাড়ির ভেতরে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। আমাদের এ বছরের থিম হল ‘সাতমহলার অন্তঃপুরে’।
অভিজিৎবাবু জানালেন, এই থিমের মাধ্যমে জমিদারবাড়ির অন্দরমহলের কিছু মুহূর্তকে তুলে ধরা হবে। শিল্পী সুদীপ্ত মাইতি সাতমহলা জমিদারবাড়ির অন্দরমহলের চিত্র বাঁশ আর বেতের কারুকাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন। শিল্পীর কল্পনায় ধরা দেবে জমিদারবাড়ির নানান উত্থান পতনের কাহিনি। আবহের দায়িত্বে রয়েছেন পণ্ডিত সুভেন চট্টোপাধ্যায়। সাবেকি প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী প্রদীপ রুদ্রপাল।
জমিদারবাড়ির অন্দরমহল মানেই কি শুধু ব্যাভিচার আর কলঙ্ক? জমিদারবাড়ি বললেই বেশির ভাগ সময়েই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই ছবি – আরামকেদারায় বসে গড়গড়ায় তামাক সেবন করতে করতে জমিদারবাবু খাজনা না দিতে পারার জন্য নিঃস্ব গরিব কৃষকের পিঠের চামড়া চাবুকের আঘাতে তুলে নেওয়ার নিদান দিচ্ছেন। কিন্তু কতশত জমিদারমশাই ছিলেন যাঁরা আবার অনাথ কন্যাদের সুপাত্রে সম্প্রদান করেছেন।
সাতমহলা জমিদারবাড়ির অন্দরমহল সাজছে। ছবি: রাজীব বসু।
একদিকে জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে যেমন গুমরে চাপা রয়েছে কত গৃহকর্ত্রীর অপমানিত বিনিদ্র রজনীযাপনের অব্যক্ত কষ্টের কাহিনি, তেমনই কত গৃহকর্ত্রী এই জমিদারবাড়ির অন্তঃপুরেই নিজের গয়না পরিয়ে দিয়েছেন কোনো দাসীকে। জমিদারবাড়ির ঘোরানো সিঁড়ি যেমন কত ব্যর্থ প্রেমের সাক্ষী থেকেছে তেমনই চিকঘেরা বারান্দায় প্রাণ পেয়েছে কত নতুন প্রেমজ সম্পর্ক।
দর্শকরা কেমন ভাবে সাতমহলা জমিদার বাড়ির অন্দরমহলের কাহিনি দেখবেন তা তাঁদেরই দৃষ্টিভঙ্গির ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন সিংহী পার্কের কর্মকর্তারা।
কোথায় এই মণ্ডপ
গড়িয়াহাট মোড় থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে গেলে বাঁদিকে দ্বিতীয় রাস্তা ডোভার লেন। সেই ডোভার লেন ধরে খানিকটা এগোলেই সিংহী পার্কের পুজো। আর গড়িয়াহাট মোড় থেকে রাসবিহারী অ্যাভেনিউ ডানদিকের প্রথম রাস্তা রমণী চ্যাটার্জি রোড। ওই রাস্তায় সোজা গেলেই দেখতে পাবেন সিংহী পার্কের পুজো।
আরও পড়ুন
দুর্গোৎসব ২০২৪: জাঁকজমকপূর্ণ আড়ম্বর নয়, ভক্তিভরে মায়ের উপাসনাই লক্ষ্য কাঁকুড়গাছি মিতালীর
দুর্গোৎসব ২০২৪: সমাজে আজও ‘আমরা-ওরা’, ব্রাত্যজনের কাহিনিকেই তুলে ধরছে শিবমন্দির