উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়
বারুইপুর: বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। দেবীর বোধন থেকে বিসর্জন, বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ভাবে এই পূজা সম্পন্ন করা হয়। দুর্গাপুজো নিয়ে নানা রকমের পৌরাণিক কাহিনি থাকলেও শরৎকালের রামচন্দ্রের সৃষ্ট এই পুজোকে আমরা ‘অকালবোধন’ বলে থাকি।
দুর্গাপুজো পালনের ক্ষেত্রে বারুইপুর দমদমার সরদারবাড়ির পুজো পুজোপ্রেমিকের নয়নের মণি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত সময় এগোচ্ছে এই পুজো তত তার রঙের প্রকাশ ঘটাচ্ছে। আভিজাত্যের অহংকারে, সাবেকিয়ানার গরিমায় এই বনেদি বাড়ির পুজো হয়ে উঠেছে প্রাচীন সভ্যতার একটি নিদর্শন। দুর্গার মহিমা স্মরণীয় করে রাখতে সরদার পরিবারের সদস্যরা এই পূজা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেবীর মহিমা প্রচারের জন্য বিসর্জনের আগে দুবার বন্দুক থেকে আকাশে গুলি ছোড়ার রেওয়াজ রয়েছে এই পরিবারে। সেই রীতি এখনও চলে আসছে। এই মুহূর্তে বন্দুক পরিষ্কার করার কাজ চলছে। দমদমার সরদার পরিবারের পাঁচ ভাই মিলে একটি মন্দির তৈরি করেন। সেখানেই দুর্গামূর্তি স্থাপনও করা হয়। তখন থেকেই ঘটা করে এই পুজো চলছে। বাংলার ১৩০৭ সালে এই পুজো শুরু করেন মনোহর সরদার। পরিবারের সদস্যদের চাঁদায় এই পুজো চলে। গ্রামের মানুষজন পুজোর কয়েক দিন আনন্দে মেতে ওঠেন।
মন্দির সংস্কার করে সাজিয়ে তোলার কাজ হয়েছে। প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর পর প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয় মন্দিরে। এই পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন দেশে-বিদেশে। তবে সবাই বাড়ি আসেন পুজোর সময়।
অলোক সরদার নামে পরিবারের এক সদস্য জানান, মাকে রুপোর গয়না পরানো হয়। বংশপরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করছে এক কুমোর পরিবার। পরিবারের আর-এক সদস্য রাজন্য সরদার বলেন, “বংশপরম্পরায় এই পুজো করে আসছি আমরা। দুর্গা খুব জাগ্রত। পরিবারের দেড়শো জন সদস্য সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ি পুজোর এই আয়োজনে। অষ্টমীর দিন অঞ্জলির পর এক কুইন্টাল বাতাসা হরির লুট দেওয়া হয়। মানত পূরণের জন্য মহিলারা ১০০ দণ্ডি কাটেন মন্দিরে। নিরামিষ আহার শেষে নবমীর দিন আমিষ খান পরিবারের সদস্যরা।”
আরও পড়ুন
দুর্গোৎসব ২০২৪: ‘জ্বলন্ত শহর’ ঝরিয়ার কাহিনি তুলে ধরছে ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব
দুর্গোৎসব ২০২৪: বারুইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় এবার তিলোত্তমার ছায়া