কলকাতা: “শনিবারের বিকেলবেলা। জওহরলাল নেহরু রোডে ওয়াইএমসিএ-র কাছ থেকে যাব গণেশচন্দ্র অ্যাভেনিউয়ে সুবর্ণবণিক সমাজ হলে, চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের কাছে। ভাবলাম হেঁটেই চলে যাই। মেট্রো ধরতে হলে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। তারপর পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে বেশ কিছু সিঁড়ি ভেঙে নীচে নেমে মেট্রো ধরা। মাত্র দুটো স্টেশন। তারপর চাঁদনিতে নামা। তার চেয়ে হেঁটেই চলে যাই নিউ মার্কেটের ভিতর দিয়ে। একটু সময় হয়তো বেশি লাগবে। তবু পুজোর বাজার কেমন জমেছে, সেটা বোঝা যাবে।
“হাঁটা লাগালাম লিন্ডসে স্ট্রিট হয়ে নিউ মার্কেটের পাশ দিয়ে এস এন ব্যানার্জি রোডের উদ্দেশে। হাঁটা কি যায়? জনারণ্য বলা যায়। মানুষ ঠেলতে ঠেলতে এগোতে হল। যে রাস্তা স্বচ্ছন্দে দশ মিনিটে চলে আসা যায়, সেই পথ আসতে লাগল মিনিট কুড়ি। লিন্ডসে হয়ে কর্পোরেশন বিল্ডিং-এর কাছে আসতেই কালঘাম ছুটে গেল। শুধুই কালো মাথার ভিড় কাটাতে গিয়ে ঘেমেনেয়ে একশা। বুঝলাম পুজোর বাজার জমে গেছে। আর জমবে নাই-বা কেন? পুজোর তো আর দিনকুড়িও বাকি নেই।”
জনারণ্য নিউ মার্কেটে। ছবি: রাজীব বসু।
শনিবারের এই অভিজ্ঞতার গল্প শোনাচ্ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী। অবশেষে পুজোর বাজার জমল তিলোত্তমার শহরে।
একদিকে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহে জোরদার আন্দোলন এবং অন্যদিকে খামখেয়ালি আবহাওয়া – দুয়ে মিলে পুজোর বাজারে রীতিমতো ভাটা চলছিল। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্ত হলেন। শনিবার থেকে পুজোর আগের চেনা শহরে ফিরে এল কলকাতা। কেনাকাটা জমে উঠেছে উত্তরের হাতিবাগান আর দক্ষিণের কলকাতাতেও। কিন্তু নিউ মার্কেট যেন সকলকেই টেক্কা দিয়েছে।
হাতিবাগানও পিছিয়ে নেই। ছবি: রাজীব বসু।
সকালের দিকে একটু ফাঁকা থাকে। দুপুর হতে না হতেই শুরু হয় ভিড় আর বিকেল হলে তো কথাই নেই। পা ফেলা দায় হয়ে যাচ্ছে নিউ মার্কেট অঞ্চলে। যাঁরা কেনাকাটা নয়, অন্য কাজে ওই অঞ্চলে যাচ্ছেন তাঁরা রীতিমতো গলদঘর্ম হচ্ছেন।
কপালে হাত উঠেছিল ফুটপাথের বিক্রেতাদের। তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যা অবস্থা চলছিল তাতে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। খুব সন্দেহ হচ্ছিল, এবার বাজার কেমন যাবে। শেষ পর্যন্ত ভিড় দেখে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি অনেকটাই ঠিক হয়েছে।”
গড়িয়াহাটে চলছে কেনাকাটা। ছবি: রাজীব বসু।
আর নিউ মার্কেটে যে কতটা ভিড় হচ্ছে তা অনুমান করা যাবে এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনে নামলেই। মেট্রো থেকে নেমে স্টেশনের বাইরে উঠে আসতেই প্রচণ্ড ভিড় ঠেলতে হচ্ছে। টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। ধাক্কাধাক্কি চরমে।
নিউ মার্কেটের মতো অতটা না হলেও ব্যাবসা জমে উঠেছে উত্তরের হাতিবাগান আর দক্ষিণের গড়িয়াহাটে। হাতিবাগানে সকালের দিকটা কিছুটা ফাঁকা থাকলেও বিকেলের পর থেকে ভিড় বাড়ছে বাজারে। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা ‘কম দাম, কম দাম’ বলে চিৎকার করছেন। ব্যবসায়ীরা জানালেন, শনিবার থেকেই বাজার জমে উঠেছে। সাহস করে ওঁরা এবার বেশি মাল আনতে শুরু করেছেন।
মা চলেছেন কুমোরটুলি থেকে নিজ গন্তব্যে। ছবি: রাজীব বসু।
একটা সময় দক্ষিণের গড়িয়াহাট ছিল মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ক্রেজ। তাঁরা চট করে নিউ মার্কেটের দিকে পা বাড়াতেন না। সেই গড়িয়াহাট এবার যেন কিছুটা ম্রিয়মাণ ছিল। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিক্রেতাদের মাথায় হাত পড়েছিল। সেই অবস্থা থেকে তাঁরা যে বেরিয়ে এসেছেন তা এখন গড়িয়াহাটে গেলেই বোঝা যাবে। ভালোই ভিড় হচ্ছে ক্রেতাদের। আর মানুষ আর গাড়ির ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। ফুটপাতেও পা ফেলার উপায় নেই। দরাদরি করার খুব পরিচিত জায়গা গড়িয়াহাট। বেশিক্ষণ ধরে দরাদরি করলে বিক্রেতারা পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, না কিনলে ছেড়ে দিন। অন্য খদ্দেররা অপেক্ষা করছেন।”
এদিকে কুমোরটুলি থেকে মা-ও যাত্রা শুরু করেছেন কোনো কোনো বনেদি বাড়ি বা মণ্ডপের উদ্দেশে। মায়ের সাজসজ্জা সম্পূর্ণ করতে করতেই পুজো এসে যাবে যে!