দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবার। সেই হিসাবে পঞ্চমী হওয়া উচিত সোমবার। কিন্তু বেশির ভাগ পুজো যে পঞ্জিকামতে হয়, সেই পঞ্জিকা অনুসারে পঞ্চমী মঙ্গলবার। সেই পঞ্জিকামতে রবিবার ও সোমবার দুদিন চতুর্থী।

সে যা-ই হোক, বাঙালির দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গিয়েছে মহালয়ার দিন থেকেই, যেদিন থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিমায় চক্ষুদান করছেন, যেদিন থেকে মুখ্যমন্ত্রী এই কলকাতা শহরের নামীদামি সর্বজনীন দুর্গাপূজার উদ্বোধন শুরু করে দিয়েছেন। রোজই পুজোর উদ্বোধন করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবারেও তিনি রেহাই পাননি। এদিন তিনি নিউ আলিপুরে সুরুচি সংঘের পুজোর উদ্বোধন করেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
ইতিমধ্যে কলকাতার বিভিন্ন বনেদি বাড়িতে তাদের প্রথা অনুযায়ী পুজোর বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ চলছে। কোনো বনেদি বাড়িতে হয়তো মায়ের চক্ষুদান হয়ে গিয়েছে, কোথাও বা মায়ের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার মাকে গয়নাগাটি পরানোর কাজ চলছে। কোনো কোনো বনেদি বাড়িতে মায়ের বোধনও হয়ে গিয়েছে। ভবানীপুরে একটি বনেদি বাড়িতে তৃতীয়ায় মায়ের হাতে অস্ত্র ও গয়না পরিয়ে দেন বাড়ির মহিলারা।
এদিকে আনন্দনগরীর পুজো দেখতে বাইরে থেকে অতিথিদের আসাও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিদেশ থেকে যেমন অতিথি আসছেন, তেমনই আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। শুক্রবার এসেছিলেন ইউএস কনসাল জেনারেল ও তাইল্যান্ডের কনসাল জেনারেল ও অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা। তাঁরা শহরের বিভিন্ন পুজো পরিদর্শন করেন।
এসেছিলেন এবারের প্যারিস অলিম্পিক্সে দুটি পদকজয়ী শুটার মনু ভাকের। ভিআইপি রোডে ‘শ্রীভূমি’র পূজামণ্ডপে শনিবার হাজির ছিলেন তিনি।
দুর্গাপূজার চূড়ান্ত প্রস্তুতির মাঝেই চলছে পুজোর বাজার। কলকাতার নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানে ক্রেতাদের ভিড় হচ্ছে। রবিবার ছিল পুজোর আগে শেষ রবিবার। বিভিন্ন দোকানে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
শিল্পীও ব্যস্ত রয়েছে তাঁর সৃষ্টির কাজে। কুমোরটুলির শিল্পীরা যেমন তাঁদের তৈরি প্রতিমায় শেষ তুলির টান দিতে ব্যস্ত, তেমনই অনেক শিল্পী বিভিন্ন ভাবে মাকে তৈরি করছেন। এমনই একজন হলেন হরিসাধন বিশ্বাস। তাঁর হাতে ফুটে উঠেছে ক্ষুদ্রতম দুর্গা। ২০২৪-এ ক্ষুদ্রতম দুর্গা তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়।
প্রতি বছরের মতোই ঢাকিরাও চলে এসেছেন এই মহানগরে। মফস্সল অঞ্চল থেকে কলকাতায় চলে এসেছেন, ভিড় জমিয়েছেন শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে। বায়নার অপেক্ষায় রয়েছেন। সরকারি ভাবে এখনও দিনদুয়েক বাকি পুজো। তাঁরা জানেন, তাঁরা হতাশ হয়ে ফিরবেন না।
এদিকে বৃষ্টিও ছাড় দিচ্ছে না মহানগরীকে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুজোর কটা দিনই বৃষ্টি হতে পারে। তবে তা তেমন ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না পুজোয়। তবে বৃষ্টি রোজই হচ্ছে। বিশেষ করে বিকেলের দিকে। এবং সেই বৃষ্টি কাজের অসুবিধাও সৃষ্টি করছে। রবিবার বৃষ্টির হাত রেহাই পায়নি শহর কলকাতা। তবে শহরের সব জায়গায় যে সমান বৃষ্টি হচ্ছে তা নয়। রবিবার তো উত্তর কলকাতার বেশি কিছু জায়গায় জল ভালোই জমেছিল।
তবে এবারে পুজোর মধ্যেই রয়েছে বিষাদের সুর। ধর্মতলায় মঞ্চ করে বসে আছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁরা দেখলেন, তাঁদের দাবির কোনো সুরাহা হল না। নিরাপত্তাহীনতা যথারীতি রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। হাতেনাতে তার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। তাই সেই দাবি সামনে রেখেই এবার আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।