পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে, শুরু হয়ে গেছে দেবীপক্ষ। দুর্গাপুজোর মতো রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করা মুখের কথা নয়। প্রতি বছরই ‘হটকে’ থিমে পুজো অনুরাগীদের চমকে দেন বিশিষ্ট থিমশিল্পী ভবতোষ সুতার। এ বছর অভিনব থিমের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও দিচ্ছেন তিনি।
আগামী দিনে তীব্র জলসঙ্কটের কারণে পৃথিবীতে নেমে আসতে পারে এক ভয়াবহ বিপর্যয়। তাই বিন্দু বিন্দু জলও প্রাণের মতোই দামি। জল সংরক্ষণের বার্তা দিতে এ বছর সল্টলেকের একে ব্লকে শিল্পী ভবতোষ সুতারের থিম ‘বারিবিন্দু’। মূল্যবান জল একবিন্দু নষ্ট না করে মাটির গভীরে ফিরিয়ে দেওয়াই হোক এ বছরে শিল্পী ও সল্টলেক একে ব্লকের অধিবাসীদের শারদ সংকল্প।
থিম প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শিল্পী বলেন, পৃথিবীর তিনভাগ জল। একভাগ স্থল। এর মধ্যে মাত্র ৩% বিশুদ্ধ জল। বিশুদ্ধ জলের ৬৫% আবার হিমবাহ। মাত্র ১% জল নদী, খাল, বিল, পুকুরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। মাত্র ০.৩% জল মাটির তলায়। সেইটুকু জলই গোটা বিশ্বের ৮০২ কোটি মানুষের ভরসা। কিন্তু তা-ও বা আবার কত দিন? বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে প্রতিদিন বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর মাটি। মাটির ওপরে সাগর, মাটির নীচে শূন্যতা!
ভবতোষবাবুর কথায়, “শুধু ‘লবণ হ্রদ’-এই প্রতিদিন ছোটো, বড়ো, মাঝারি ২১৭টি নলকূপ থেকে ১৭৮৩২ কিউবিক মিটার জল উঠছে জীবনের প্রয়োজনে। এই উপনগরীর মাটির গভীরে প্রতিবছর গড়ে ৩৩০০৯ কিউবিক মিটার জলশূন্য হচ্ছে। সেই শূন্যতা দখল করছে বিদ্যাধরী, মাতলার নোনা জল। পানীয় জলের আকালে শুকিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর মাটি। মাটির তলায় নোনা জলের জোয়ার ভাটা, দ্রুত মাটি ঢেকে যাচ্ছে কংক্রিটের চাদরে। আমাদের একমাত্র ভরসা ‘বারিবিন্দু’। এ বছর তাই সংকল্প নিয়েছি জল সংরক্ষণের। আকাশের জলে মাটির অন্তরের তৃষ্ণা মেটানোই হোক অঞ্জলি। পরমা প্রকৃতির শূন্য কলসি ভরিয়ে ‘বারিবিন্দু’ অর্পণই হয়ে উঠুক আগামী দিনের পুজোর উপচার।”
কোথায় এই মণ্ডপ
সল্ট লেকের করুণাময়ী মোড় থেকে সেভেন্থ ক্রস রোড ধরে দেড় কিলোমিটার মতো গেলে একে ব্লক। সেখানেই এই পুজো।