আর বড়োজোর তিন-চার ঘণ্টা। হয়ে যাবে ভোর। ভোর থেকেই শুরু হয়ে যাবে তর্পণ। ‘তর্পণ’ অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের জলদান করা। পিতৃপক্ষে এ এক বিশেষ পর্ব। কলকাতার মতো যেসব জায়গা গঙ্গার ধারে অবস্থিত, সেখানকার বাসিন্দারা কিঞ্চিৎ ভাগ্যবান। তাঁরা গঙ্গায় তর্পণ করার সুযোগ পান।
গঙ্গায় তর্পণ করা বিশেষ শুভ বলে মনে করা হয়। তা বলে কি অন্য কোনো নদী বা জলাশয়ে তর্পণ করা যায় না? না, তাতে কোনো বাধা নেই। যে কোনো জলাশয়েই তর্পণ করা যায়। এমনকি বাড়িতেও করা যায়। তবে সন্দেহ নেই, গঙ্গার মাহাত্ম্য বেশি। মন চায় গঙ্গাতেই তর্পণ করতে।
তবে যেখানেই তর্পণ করা হোক না কেন, মনে রাখতে হবে ৫-৬ ইঞ্চি উঁচু থেকে জলদান করতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে জলদান করার সময় বৃষ্টির জল যেন না মেশে। তাই বৃষ্টি হলে ছাতা মাথায় দিয়ে তর্পণ করাই বিধেয়।
যাঁদের পিতা জীবিত, তাঁরা তর্পণ করতে পারেন না। কারণ তর্পণ করা মানে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের জলদান করা। তর্পণ যে কোনো সময়েই করা যায়, তবে পিতৃপক্ষে তর্পণ করাই বিশেষ প্রশস্ত বলে ধরা হয়। পুরাণমতে ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। তাই এই সময় তাঁদের উদ্দেশে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাদের কাছে পৌঁছে যায়। আর মহালয়া তথা পিতৃপক্ষের শেষ দিনটিকে সবচেয়ে পুণ্য দিন হিসাবে ধরা হয়। তাই সাধারণ মানুষ এই মহালয়াতেই তর্পণ করতে চান।
তর্পণের কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। তর্পণ করার আগে স্নান করে প্রথমে পূর্বমুখে গিয়ে নাভি পর্যন্ত জলে দাঁড়াতে হয়। জল বা মাটি দিয়ে তিলকধারণ করতে হয়। এবার তর্পণের শুরুতে আচমন করে বিষ্ণুমন্ত্র স্মরণ করতে হয়। করজোড়ে তিনবার বিষ্ণুকে স্মরণ করতে হয়। বেদ অনুসারে তিনবার করে মন্ত্র পড়তে হবে এবং তিনবার জল দান করতে হবে।
পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য জল নিবেদন করা হয়, এটাই হল তর্পণ। এই তর্পণের জন্য লাগে গঙ্গাজল, চন্দন, কালো তিল ও কুশ, তুলসীপাতা, হরীতকী, চাল, দূর্বাঘাস।