বরাবর প্রথাগত থিমের বাইরে গিয়ে একেবারেই অন্য ধরনের থিম করে বাগুইআটির অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাব। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। গতবার ছিল মণিপুরের জাতিদাঙ্গা। এবারের থিমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারকে। এ হেন ‘হটকে’ থিমের সামগ্রিক সৃজন ও রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পী ভবতোষ সুতার।
সংবিধানে লেখা আছে, “আমরা ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে গড়িয়া তুলিতে…”। সাংবিধানিক অধিকার যাতে ভারতবর্ষের সর্বস্তরের প্রতিটি মানুষের জন্য একইভাবে প্রতিষ্ঠিত ও প্রয়োগ হয়, অভিনব থিমের মাধ্যমে এই সংকল্পের বার্তাই দিচ্ছেন বিশিষ্ট শিল্পী ভবতোষ সুতার।

এবারের পুজোর থিম ‘অন্যদেশ’। এই অভিনব থিম প্রসঙ্গে ভবতোষ সুতার বললেন, “সংবিধান আমাদের রক্ষাকবচ, অধিকারের চেতনা, গণতন্ত্রের পরিসর, সমতার বোধ, মুক্তির পথ দেখায়। কিন্তু স্বাধীনতার পর সাতটা দশক পার করেও আমরা কখনও সংখ্যা, কখনও তথ্য, কখনও ভোটব্যাঙ্ক, কখনও গৃহহীন, কখনও হরিজন, কখনও দারিদ্র্যসীমার তলানিতে, কখনও সংখ্যালঘু, কখনও বহিরাগত, কখনও অশিক্ষার অন্ধকূপে থেকে হিংস্র প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধক্লান্ত সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষ, কখনও পরিযায়ী শ্রমিক, কখনও রাজপথে রাত দখলের মেয়েদের ভেদাভেদ করি, দূরে ঠেলে দিই।”
ভবতোষবাবুর কথায়, “সংবিধানের সাদা পাতার কালো অক্ষরে আমাদের অধিকার লিপিবদ্ধ থাকলেও আজও আমরা কলুর জোয়াল কাঁধে টেনে ঘুরেই চলেছি ঘাম-রক্তের চেনা বৃত্তে। আমাদের অনেকের দীর্ঘশ্বাসেই তৈরি হয়েছে এক দেশের ভেতরে অন্য দেশ, অনেক দেশ। সমাজের বর্ণমালায় অকথ্যের দিনলিপি। তাই অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাবের পুজোয় আমি অসহায় মহিষের মনস্তত্ত্বে দেবতার সংহারের চিত্র তুলে ধরছি।”
অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাবের কর্মকর্তারা কাব্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বার্তা দিচ্ছেন—- “মস্ত বইটা মূর্তি হয়ে/ দেখছে, কিছুই বলছে না/ স্বদেশ মোছে গামছা দিয়ে/ অপমানের রক্ত ঘা/ সার্বভৌম গণতন্ত্র/ মাটির ঘরে দেয় না পা/ স্বদেশ মোছে গামছা দিয়ে/ অপমানের রক্ত ঘা…।”
কোথায় এই মণ্ডপ
উল্টোডাঙা থেকে নজরুল ইসলাম সরণি (ভিআইপি রোড) ধরে এগিয়ে চলুন। বাগুইহাটি বাস স্টপ ছাড়িয়ে আরও কিছুটা গিয়ে বাঁদিকে অর্জুনপুরের রাস্তা ধরুন। খানিকটা গেলে পৌঁছে যাবেন আমরা সবাই ক্লাবের মণ্ডপে। বাগুইহাটি বাস স্টপ থেকে দূরত্ব মোটামুটি আড়াই কিমি।