আজ বাদে কাল দেবীপক্ষের সূচনা। মা দুর্গাকে আবাহন করার সমস্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত। দোরগোড়ায় হাজির বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজো। প্রতিবছর নিত্যনতুন থিমে চমক লাগায় আলিপুর সর্বজনীন। এ বছরও থিমের অভিনবত্বে নজর কাড়তে প্রস্তুত তারা।
আলিপুর সর্বজনীনের এবারের নিবেদন ‘সঙ-কল্প’। বাঙালি সমাজের মূলস্রোতের নিরিখে প্রান্তিক, সঙ-শিল্পীদের জীবনগাঁথাই এবার আলিপুর সর্বজনীনের মণ্ডপে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছেন থিম শিল্পী অনির্বাণ দাস।
সংস্কৃত শ্লোক অনুসারে, ‘ওঁ ভূতানি দুর্গা ভুবনানি দুর্গা স্ত্রীয় পশুশ্চ নরশ্চ দুর্গা।/ যদ্ যদ্ধি দৃশ্যং খলু তদ্ধি দুর্গা দুর্গা স্বরূপাৎ নৈবাস্তি কিঞ্চিৎ।।’ অর্থাৎ দুর্গা সর্বত্র বিরাজমান। নরদেহেও দুর্গার বাস। মানবদেহ ব্রহ্মস্বরূপ।
থিমের রূপায়ণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অনির্বাণ জানান, বাংলার লোকশিল্পী সঙ-শিল্পীরা যুগে যুগে নিজেদের সাজিয়ে তুলছেন শিব-দুর্গা-কার্তিক-গণেশ-কালী রূপে। এই সাজে তৈরি করছেন পালা। সারারাত গোটা গ্রাম উপচে পড়ে শুনেছে সঙ-শিল্পীদের তৈরি সেই সব পালাগান। এই লোকসংস্কৃতিকে রাঢ়বাংলায় বলা হয় ‘সঙ’, উত্তরবঙ্গে ডাকা হয় ভিন্ন নামে। তা কোথাও বহুরূপী, কোথাও পালাকার, কোথাও গায়েন। এই শিল্প কোথাও মনসা-দুর্গার গীত, কোথাও বা দুর্গার নাচ। কিন্তু সঙ-শিল্পীরা সমাজের মূলস্রোতের প্রেক্ষিতে প্রান্তিক। কিন্তু তাঁরা যখন দেবসাজে গান গেয়ে ওঠেন, তখন মানবদেহই হয়ে ওঠে দেবতাদের অধিষ্ঠান।
অনির্বাণের কথায়, “আলিপুর সর্বজনীনের এবারের থিম ‘সঙ-কল্প’-এর মাধ্যমে সঙ-শিল্পীদের মতো বাংলার লোকসংস্কৃতির বাহকদের শ্রদ্ধা জানানো হবে। বাংলার এই শিল্পের মূল সুর, মূল ভাব যেন ছড়িয়ে পড়ে আমাদের চৈতন্যে।”
তাই কাব্যিক ঢঙে আলিপুর সর্বজনীনের কর্মকর্তাদের বার্তা – “একই অঙ্গ, একে পূর্ণ, নাহি ভেদ অন্তর/ বহিরাঙ্গে মানবজমিন, বসতে ঈশ্বর।”
কোথায় এই মণ্ডপ
দক্ষিণ কলকাতায় রাসবিহারী মোড় থেকে সোজা রাসবিহারী অ্যাভেনিউ ধরে চেতলার দিকে এগিয়ে যান। আদিগঙ্গা পেরিয়ে সোজা চলুন চেতলা সেন্ট্রাল রোড ধরে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর আলিপুর রোডের মোড়ের আগে বাঁদিকে আলিপুর সরজনীনের মণ্ডপ।