সামাজিক ও ধর্মীয় বিভেদের বিরুদ্ধে এক গভীর বার্তা দিলেন সৃজনী। এবারের আইএসসি পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েও তিনি আলোচনায় শুধুমাত্র রেজাল্টের কারণে নন, বরং নিজের পদবী ত্যাগের সিদ্ধান্তের জন্য। তাঁর বিশ্বাস— পরিচয় নয়, মানবতাই মানুষের আসল ধর্ম।
কলকাতার The Future Foundation School-এর এই মেধাবী ছাত্রী জানিয়েছেন, ‘‘আমি সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে— সামাজিক, অর্থনৈতিক অথবা ধর্মীয়। আমি চাই এমন এক সমাজ, যেখানে কোনও ‘অভয়া’ থাকবে না, থাকবে না ধর্মীয় যুদ্ধ কিংবা শ্রেণীবৈষম্য।’’
সৃজনী বোর্ড পরীক্ষার আগে নিজের নামের পাশে পদবী না রাখার জন্য বিশেষ অনুমতির আবেদন জানায়। স্কুলের প্রিন্সিপাল রঞ্জন মিত্র এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘আইনের কোনও বাধা না থাকলে এ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। নিজেকে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকার প্রত্যেকেরই থাকা উচিত।’’
সৃজনীর এই আদর্শে গভীর প্রভাব ফেলেছে তার পরিবার। মা গোপা মুখার্জি গুরদাস কলেজের সহ-অধ্যাপিকা ও বাবা দেবাশিস গোস্বামী, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিশিষ্ট গণিতবিদ এবং শান্তি স্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কারপ্রাপ্ত। গোপা বলেন, ‘‘আমার বিয়ের পরও পদবী বদলাইনি। সন্তানদেরও চাপ দিইনি। পরিচয় হোক মানবতা দিয়ে।’’
তাঁরা সন্তানদের জন্ম শংসাপত্রেও পদবী ব্যবহার করেননি। গোপার মতে, ‘‘পাসপোর্টেও পদবী বাধ্যতামূলক নয়। সমস্যাটা আইন নয়, মানসিকতা।’’
২০২৪ সালের ১৪ অগস্ট সৃজনী এবং তাঁর পরিবার অংশ নিয়েছিলেন ‘Reclaim the Night’ মিছিলে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ একসাথে পথে নেমেছিলেন আরজি কর হাসপাতালের পিজিটি চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে এবং নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে।
টালিগঞ্জের বিধায়ক ও রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সৃজনীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সম্মান জানান ও তাঁর মতাদর্শের প্রশংসা করেন।
ভবিষ্যতে সৃজনী চান আইআইএসসি বেঙ্গালুরুতে পড়তে, বিষয় — পদার্থবিদ্যা অথবা গণিত।