যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়— নামটি বহু বার এসেছে বিতর্কে, কখনও র্যাগিং কাণ্ডে, কখনও বা শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুরে। তা সত্ত্বেও রাজ্যের এই প্রথম সারির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার মেধা, মান এবং জৌলুসে একচুলও পিছিয়ে যায়নি। বরং সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক ছাত্র উপায়ন দে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার বার্ষিক প্যাকেজে চাকরি পেয়ে যেন ফের প্রমাণ করলেন যাদবপুরের গৌরবময় ঐতিহ্য।
উপায়নকে এই বিরল সুযোগ দিয়েছে বেঙ্গালুরুর বেসরকারি সংস্থা ‘রুব্রিক ইন্ডিয়া’। ওই সংস্থায় ইন্টার্নশিপে যোগ দিয়েছিলেন তিনি, যেখানে বাকি ইন্টার্নরা অধিকাংশই ছিলেন আইআইটি থেকে। কিন্তু যাদবপুর থেকে উপায়নই ছিলেন একমাত্র প্রতিনিধি। নিজ দক্ষতায় সেই জায়গায়ও নজর কাড়েন তিনি। তার পরেই এই বিপুল প্যাকেজের চাকরি।
উপায়নের এই কৃতিত্বে গর্বিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। প্লেসমেন্ট সেলের কো-অর্ডিনেটার শমিতা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “গত বছর ৯৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী চাকরি পেয়েছিলেন। এ বছর তা ৯৫ শতাংশেরও বেশি। উপায়নের সাফল্য প্রমাণ করে, আমাদের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা নিরলস চেষ্টা করে চলেছেন বিশ্বমানের শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তুলতে।”
চলতি বছরের প্লেসমেন্টেও স্নাতক স্তরের ৮৮৫ জনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৮৩২ জন চাকরি পেয়েছেন। প্যাকেজের পরিমাণ গড়ে ১১-১২ লক্ষ টাকা বার্ষিক। স্নাতকোত্তরে একাধিক পড়ুয়া পেয়েছেন ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মাসিক চাকরির প্রস্তাব। ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্রীও পেয়েছেন ৮ লক্ষ টাকার বার্ষিক চাকরি— যা তুলনামূলকভাবে একটি ব্যতিক্রমী নজির।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, উপায়ন আইসিএসসি এবং সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষায় চমকপ্রদ ফল করার পরেও, রাজ্য জয়েন্টে ৯৮তম স্থান অধিকার করেন। পছন্দসই আইআইটি না পাওয়ায় তিনি যাদবপুরকেই বেছে নেন। উপায়নের বক্তব্য, “অর্থনৈতিকভাবে অনেক পড়ুয়ার পক্ষে নামী বেসরকারি বা কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা সম্ভব নয়। যাদবপুরে কম খরচে একই মানের শিক্ষা এবং গবেষণা পাওয়া যায়।”
এই সাফল্য নতুন করে মনে করিয়ে দেয়— বিতর্কে নয়, যাদবপুরের আসল পরিচয় তার মেধা, পরিশ্রম আর সম্ভাবনায়।