নিজস্ব প্রতিনিধি: শুরু হয়ে গেল ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। সোমবার বিকেলে নজরুল মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচনা হল উৎসবের। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সদ্য-নির্বাচিত সাংসদ বলিউডের এককালের দুর্ধর্ষ অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা! বাংলাই যে তাঁর সিনেমার পাঠশালা সে কথা অকপটে স্বীকার করলেন শত্রুঘ্ন। বললেন, গৌতম ঘোষের ‘অন্তর্জলি যাত্রা’ ছিল তাঁর সিনেমার ক্লাসরুম। তিনি বলেন, “‘‘আমি আড়াইশোর বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছি। কিন্তু সব চেয়ে বেশি শিখেছি ‘অন্তর্জলি যাত্রা’য় কাজ করতে গিয়ে। গৌতম ঘোষ আমার গুরু।’’

‘‘আমি জানি এটা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ নয়”, এ কথা বলেও শত্রুঘ্ন সিনহা তাঁর বক্তৃতায় রাজনীতি এড়িয়ে যেতে পারলেন না। বক্তৃতার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ধন্যবাদ জানালেন আসানসোলে লোকসভা উপনির্বাচনে তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করার জন্য। তিনি বলেন, ‘‘আমায় সুযোগ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আসানসোলবাসীর জন্য কাজ চ্যালেঞ্জ নিলাম।’’
আসানসোল উপনির্বাচনের প্রচারে বিরোধীরা তাঁর গায়ে বহিরাগত তকমা সেঁটে দিয়েছিলেন। এ দিন তারও জবাব দিলেন শত্রুঘ্ন। তিনি দাবি করেন, ‘‘বাংলার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ।’’
সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকায় সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উদ্দেশে শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘আমি মানিকদার এক জন ভক্ত ছিলাম, আছি এবং আজীবন থাকব।’’ তবে সত্যজিতের ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ না পাওয়ায় তাঁর যে আপশোশ থেকে গেল, সে কথা জানিয়ে দিতে ভোলেননি পুণের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’-এর প্রাক্তনী শত্রুঘ্ন সিনহা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায় উঠে এল সদ্যপ্রয়াত সংগীতশিল্পীদের কথা। তিনি স্মৃতিচারণ করছিলেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হলেই যে তিনি মমতাকে একটা গান শোনাতে বলতেন, সে কথা স্মরণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাপ্পি লাহিড়ীও যে কত স্নেহ করতেন, সে কথাও উল্লেখ করেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় ছিল আত্মবিশ্বাসের সুর। তিনি বলেন, “সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা এক দিন বলিউডকেও ছাপিয়ে যাব।” বক্তৃতার শেষে উৎসবের ‘ফোকাল কান্ট্রি’ ফিনল্যান্ডের অতিথিদের ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিনের অনুষ্ঠান ছিল সত্যজিৎময়। শুরুতেই গুপি-বাঘার সাজে মঞ্চে হাজির হন সাহেব চট্টোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ বসু। চলচ্চিত্র উৎসবের শুরুর দিনগুলির কথা অল্প কথায় মনে করিয়ে দিয়ে গৌতম ঘোষ তাঁর প্রিয় ‘মানিকদা’র প্রসঙ্গে চলে আসেন। তিনি বলেন, সে দিন মানিকদা বলেছিলেন, ‘‘শহরের হাজারো সমস্যা আছে, খামতি আছে। কিন্তু উৎসাহে এতটুকু খামতি নেই!’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়ের গলায় ছিল কৃতজ্ঞতার সুর। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যে ভাবে আমার বাবাকে মাথায় করে রেখেছেন, তাতে আমি ও রায় পরিবার আপ্লুত।’’
এ দিনের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন শুভশ্রী, দিতিপ্রিয়া, কৌশানীরা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও জুন মালিয়া। থালি গার্ল ছিলেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ রায়, মলয় ঘটক প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় এ বারের উদ্বোধনী ছবি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র প্রদর্শন।
আরও পড়তে পারেন
হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের উদাহরণ তুলে ধরল মনোজ বাজপেয়ীর এই ভিডিও, দেখুন আপনারও হৃদয় ছুঁয়ে যাবে
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।