নিজস্ব প্রতিনিধি: ১৯৭২ সালে কবি অরুণ চক্রবর্তীর লেখা ‘তু লাল পাহাড়ির দেশে যা’ কবিতাটি প্রচলিত ঝুমুর গানের সুরে, বাঁকুড়ার সুভাষ চক্রবর্তীর কন্ঠে, ইনরেকো কোম্পানি থেকে ১৯৭৯-এ প্রথম বার রেকর্ড হয়ে বেরোয়। শ্রীরামপুর রেলস্টেশনের পাশে একাকী একটি মহুয়া গাছ দেখে কবির মনে হয় তার অবস্থানগত অসংগতির কথা, যা থেকে এই অমর সৃষ্টি।
বাংলার লোকগানের জগতে মাইলফলক এই গানটিকে ঘিরে স্বতঃস্ফূর্ত উন্মাদনা শুধুমাত্র বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ভারতের অন্যান্য ভাষা ও কয়েকটি বিদেশি ভাষাতেও কবিতাটি অনূদিত হয়েছে। অনেক আগেই এই গান শহর-গ্রামের বিভাজন মুছে দিয়ে সবার গান হয়ে গেছে। লোকাল ট্রেনের গায়ক থেকে বাংলার জনপ্রিয় ব্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত এই গানটির জনপ্রিয়তা।
এই মিথ হয়ে যাওয়া গানটির পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সহজিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে গত ৮ জুলাই শুক্রবার, রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘দশম সহজিয়া উৎসব’। উৎসব আলো করে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম লোকশিল্পী মনসুর ফকির, দেবদাস বাউল, কার্তিক দাস বাউল, শুভেন্দু মাইতি ও স্বপন বসু।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীকান্ত আচার্য, মনোময়, জয়তী, বাংলা ব্যান্ড ‘ভূমি’র সৌমিত্র, ‘চন্দ্রবিন্দু’র অনিন্দ্য–উপল, ‘ক্যাকটাস’-এর সিধু-পটা, ‘লক্ষ্মীছাড়া’র গাবু, রাজকুমার, রুদ্রনীল, শোভনসুন্দর, মৌনীতা, বাদশা মৈত্র ও শাওন সেন। এ ছাড়াও জি বাংলা সারেগামাপা-র চ্যাম্পিয়ন অর্কদীপ, সৌম্য, পৌষালী এবং সদ্যোজাত লোকগানের দল ‘বাউলা ও খেপীরা’ অনুষ্ঠানে অন্য রং নিয়ে আসে।
বর্ষীয়ান নাগরিক লোকশিল্পী শুভেন্দু মাইতি গানের শেষে যখন বলেন এটাই তাঁর শেষ মঞ্চানুষ্ঠান, তখন যেমন পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ আবেগে ভাসে, তেমনি আবার যখন অনিন্দ্য তাঁর নিজের সিনেমার গান ‘ইনি বিনি টাপা টিনি’ গেয়ে ওঠেন, তখন সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ নেচে ওঠে। সৌম্যর ‘আমি অপার হয়ে’, পৌষালীর ‘মুর্শিদ ধন হে’, জয়তী চক্রবর্তীর ‘খাঁচার ভিতর অচিন’, অর্কদীপের ‘বিহু’ এবং শ্রীকান্ত ও সৌমিত্রর যৌথ পরিবেশন ‘গ্রাম ছাড়া ওই’ দর্শকদের মুগ্ধ করে।

উৎসব অন্য মাত্রায় পৌঁছে যায় যখন সহজিয়া লোকগানের দল কবি অরুণ চক্রবর্তীর আরেকটি জনপ্রিয় গান ‘মন দে যৌবন দে’ পরিবেশন করে এবং স্বয়ং কবি মঞ্চে এসে দর্শকদের আন্দোলিত করে তোলেন।
জি বাংলা সারেগামাপা-র লোকসংগীতের গ্রুমার-মেন্টর এবং সহজিয়া ফাউন্ডেশনের কর্ণধার দেব চৌধুরী বলেন, “অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সহজিয়া আজ এই জায়গায় এসেছে। অতিমারির প্রকোপ কাটিয়ে এই উৎসবের জন্য বহু মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন, আজ কানায় কানায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহই সে কথা জানান দিচ্ছে। আমরা এই উৎসবের কোনো টিকিট বিক্রি করি না, স্পনসরশিপও থাকে না, তাই আমন্ত্রিত সব শিল্পী ও মিউজিশিয়ানরাই বিনা পারিশ্রমিকে অনুষ্ঠান করেন। সবার স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে এই উৎসব আক্ষরিক অর্থেই সহজ মিলনমেলা হয়ে ওঠে। ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তার জন্য আমরা বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।”
এ বছর ‘সহজিয়া সম্মান’ পেলেন কবি অরুণ চক্রবর্তী ও ঝুমুরিয়া সুভাষ চক্রবর্তী।
আরও পড়তে পারেন
ইজেডসিসি-র উদ্যোগে ‘সহজিয়া’র সহায়তায় শ্রীখোলবাদন শিক্ষাকেন্দ্র বর্ধমানে তিলক মহারাজের আশ্রমে
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল: বিপুল ভোটে জয়ী দ্রৌপদী মুর্মু
ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু