Home বিনোদন প্রয়াত হিন্দি চলচ্চিত্রের অগ্রদূত অভিনেত্রী কামিনী কৌশল : এক সংগ্রামী জীবনের গল্প

প্রয়াত হিন্দি চলচ্চিত্রের অগ্রদূত অভিনেত্রী কামিনী কৌশল : এক সংগ্রামী জীবনের গল্প

প্রবীণ বলিউড অভিনেত্রী কমিনি কৌশল প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। হিন্দি সিনেমার অন্যতম সম্মানিত ও জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অনন্য যুগের অবসান ঘটাল। প্রতিভা, সৌন্দর্য ও সাবলীল অভিনয়ের জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে দর্শকদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছিলেন।

পত্রিকার সাংবাদিক ভিকি লালওয়ানি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে এই দুঃসংবাদটি নিশ্চিত করেছেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, “কমিনি কৌশলের পরিবার অত্যন্ত লো-প্রোফাইল। তাঁরা বর্তমানে গোপনীয়তা কামনা করছেন।”

ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে কামিনী কৌশল এমন এক নাম, যিনি অভিনয়, শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত আদর্শের অনন্য সমন্বয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। রেডিও শিল্পী হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হলেও, পরে তিনি চলচ্চিত্রে হয়ে ওঠেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

শৈশব ও প্রাথমিক জীবন

কামিনী কৌশল জন্মগ্রহণ করেন এক জ্ঞানমুখী পরিবারে। তাঁর বাবা এস. আর. কাশ্যপ লাহোরের গভর্নমেন্ট কলেজের অধ্যাপক এবং সায়েন্স কংগ্রেস-এর সভাপতি ছিলেন। উদ্ভিদবিদ্যায় তিনি প্রায় ৫০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই পরিবারে জ্ঞানচর্চার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হলেও, সন্তানদের ইতিবাচক কাজে উৎসাহ দেওয়াই ছিল তাঁদের মূল নীতি।

শৈশবে কামিনী “উমা” নামে লাহোর রেডিওতে শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করেন (১৯৩৭–১৯৪০)। এরপর কলেজজীবনে (১৯৪২–১৯৪৫) দিল্লিতে শুরু হয় তাঁর মঞ্চনাটকের যাত্রা।

কলেজ জীবন ও অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক

যদিও চলচ্চিত্রে আসার স্বপ্ন তাঁর ছিল না, তবে তিনি অভিনেতা অশোক কুমারের বড় ভক্ত ছিলেন। কলেজে যুদ্ধ তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে একবার অশোক কুমার ও লীলা চিটনিস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি মজা করে অশোক কুমারের চুল টেনে ধরেছিলেন—সেই স্মৃতি তিনি পরে এক সাক্ষাৎকারে আনন্দের সঙ্গে মনে করেছিলেন।

চলচ্চিত্রে প্রবেশ : ‘নীচা নগর’

চেতন আনন্দ তাঁকে নায়িকা হিসেবে নির্বাচন করেন তাঁর চলচ্চিত্র ‘নীচা নগর’–এ, যা ১৯৪৬ সালে মুক্তি পায়। এটাই ছিল তাঁর প্রথম ছবি এবং মুক্তির পর এই ছবি মন্ট্রিল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কারও জিতে নেয়। এই চলচ্চিত্রে পরিচালক চেতন আনন্দ তাঁর নাম ‘উমা’ থেকে পরিবর্তন করে ‘কামিনী’ রাখেন, কারণ সেই ছবিতে চেতন আনন্দের স্ত্রী, উমা আনন্দও অভিনয় করেছিলেন। কামিনীর কথায়, চলচ্চিত্রে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে জোহরা সেহগল, উমা আনন্দ এবং সেতারবাদক রবিশঙ্করেরও বড় ভূমিকা ছিল।

বিবাহ, পরিবার ও কর্মজীবন

‘নীচা নগর’-এর পর তিনি লাহোরে ফিরে গেলেও নিয়মিত কাজের প্রস্তাব পেতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে আকস্মিক বিয়ের পর তিনি মুম্বাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। চলচ্চিত্রে বিবাহিত নারীকে নায়িকা হিসেবে গ্রহণ করার প্রচলন তখনও তৈরি হয়নি। তবুও সাহসের সঙ্গে তিনি সেই প্রথা ভেঙে দেন এবং বিবাহ-পরবর্তী সময়েও প্রধান নায়িকা হিসেবে কাজ করেন—যা ছিল ভারতীয় সিনেমায় প্রথম।

শিক্ষা ও নৃত্যচর্চা

উচ্চশিক্ষিত অভিনেত্রী হিসেবে তিনি অনন্য—ইংরেজিতে স্নাতক (বি.এ.) ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। মুম্বাইয়ের শ্রী রাজরাজেশ্বরী ভারত নট্য কলা মন্দিরে তিনি ভারতনাট্যম শিখেছিলেন গুরু টি. কে. মহালিঙ্গম পিল্লাইয়ের কাছে।

চলচ্চিত্র জগতে সাফল্য

১৯৪৮ সাল থেকে তিনি অভিনয় করেছেন সেই সময়ের প্রায় সব শীর্ষ নায়কের সঙ্গে—অশোক কুমার, রাজকাপুর, দেব আনন্দ, রাজকুমার ও দিলীপ কুমারসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁর স্বাভাবিক অভিনয়শৈলী, শিক্ষাগত পটভূমি ও দৃঢ় ব্যক্তিত্ব তাঁকে বাংলা ও হিন্দি উভয় ভাষার দর্শকের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয় করে তোলে। তাঁর শেষ ছবি আমির খান অভিনীত ‘লাল সিংহ চড্ডা’। তার আগে ২০১৩ সালে শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ এবং ২০১৯-এ ‘কবীর সিংহ’ ছবিতে শাহরুখ খানের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version