জাতীয় পুরস্কারের ঘোষণার পরই জয়ার সঙ্গে দেখা। অভিনেত্রী জয়া আহসান। স্নিগ্ধ ভরাট মুখ। খুশিতে ঝলমল করছে। বিসর্জন ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে, তার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব শুরু হল রাকা রায়ের সঙ্গে।
প্র: বিসর্জন জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে, কী অনুভূতি?
উ: খুব খুশি হয়েছি। এটা ভারতের সব থেকে প্রেস্টিজিয়াস অ্যাওয়ার্ড। ছবিটা যখন তৈরি হয়, তখন এতো কিছু ভাবা হয়নি। সবার ভালোবাসা পাবে ছবিটি এটাই আশা করেছিলাম। আর কৌশিকদা তো প্রায় সব ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। ছবিটি মুক্তি পাবে পয়লা বৈশাখ, তার আগে এই পুরস্কার অবশ্যই দশর্কদের একটু উৎসাহ দেবে ছবিটা দেখার জন্য।
প্র: আবীরের সঙ্গে এই নিয়ে তৃতীয় ছবি, যদিও রাজকাহিনীতে তোমাদের একসঙ্গে পর্দায় দেখা যায়নি। কেমন অভিজ্ঞতা?
উ: দেখো অবশ্যই কমফোর্ট জোন তো তৈরি হয়ই। আবীর এমনিতে খুবই প্রফেশনাল, তবে ওকে দেখে বোঝা যায় না ও খুব মজাও করে তাই কাজ খুব মজাতেই হয়। আশা করি ভালো লাগবে আমাদের পর্দার কেমিস্ট্রি।
প্র: ছবিতে তোমার করা চরিত্রটা নিয়ে কী বলবে?
উ: আসলে গল্পটা হলো মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। পদ্মা নাম আমার, একজন বাংলাদেশি হিন্দু বিধবার চরিত্র, তার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে ভারতের এক মুসলমান ছেলের। এই নিয়েই গল্প।
আরও পড়ুন: ‘সতী’ ছবিতে ৪১ দিন ডেট নিয়ে ৫ হাজার দেবে বলেছিল, করিনি: চিরঞ্জিত
প্র: একজন হিন্দু বিধবার চরিত্র, কৌশিকদা কতটা সাহায্য করেছে চরিত্রটা করতে?
উ: পরিচালক তো অবশ্যই সাহায্য করেছে, কী ভাবে ধূপধুনা দেয়, আরতি করে, সেটা বলেছেন। আসলে ধর্মীয় আচার-আচরণ আমাদের শরীরীভাষার সঙ্গে মিশে থাকে। তাই কৌশিকদার সাহায্য পেয়েছি। তবে সব দেশেই বিধবা মেয়ের অবস্থান একই রকম। তাই সেটা অভিনয় করতে অসুবিধা হয়নি। তাছাড়া আগে আমি হিন্দুর রমণীর চরিত্র করেছি।
প্র: শুটিং-এর সময় আপনি নাকি নামাজ পড়া শিখিয়ে ছিলেন আবীরকে?
উ: হ্যাঁ, অল্প সময়ে যতটুকু শেখানো যায় আরকি। যেন একদম সত্যি মনে হয়। আবীরও খুব মন দিয়ে শুনেছে।
প্র: বিসর্জন করতে রাজি হলেন কেন?
উ: এই গল্প মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের কথা বলে।দুই দেশের মানুষ হলেও তাদের ভালোবাসা কখনোই কোন দেশ ভাগের বাধা মানে না। তাই এই গল্পটায় কাজ করতে রাজি হই। অবশ্যই কৌশিকদা তো একটা বিষয়। আর এই সিনেমার প্রযোজকের কথা বলতেই হয়। কারণ এই সিনেমাই তাঁর প্রথম ছবি। তবুও এই অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে হিন্দু-মুসলিম প্রেমকাহিনি নিয়ে ছবি করতে গিয়ে অন্য কিছু ভাবেননি। শুধু সিনেমাটা বানাতে চেয়েছেন। সেটা খুবই ভালো লেগেছে।
প্র: আপনি এতো ভালো কাজ করেও খুব বেশি বাংলা ছবিতে দর্শক আপনাকে পায়না কেন?
উ: আমি অনেক কাজই করেছি। আসলে আমি কোয়ালিটি কাজে বিশ্বাসী, কোয়ান্টিটিতে নয়। খুব ভালো চরিত্র বা চ্যালেঞ্জিং চরিত্র না হলে কাজ করতে ভালোবাসি না।
প্র: আপনার কি বোল্ড চরিত্রে অভিনয় করতে আপত্তি আছে? রাজকাহিনীর সময় কিছু সমস্যা হয়েছিল?
উ: হ্যাঁ, তা হয়েছিল। তবে সেটা সাময়িক। সামলে নিয়েছিলাম। আপনার প্রথম প্রশ্নের কথা বলি, হ্যাঁ আমি এমন দৃশ্য করব না, যেটা দেখতে দর্শকদের ডিজকমফোর্ট হবে বা এমন শাড়ি পরবো না, যে আমার পরিধান দেখে দর্শকদের অস্বস্তি হয় (হাসি)।
প্র: বাংলাদেশে ও কলকাতায় কাজের মধ্যে কী মিল বা অমিল পেয়েছেন?
উ: ভাষা এক, ভাবনাও এক, মিল প্রচুর আছে। শুধু বলতে পারি কলকাতায় টেকনোলজি অনেক এগিয়ে গেছে। টেকনিক্যালি খুব সাউন্ড, এখানে সব কিছু অনেক প্রফেশনাল। তবে বাংলাদেশে আবেগ বেশি। মানুষ আবেগ দিয়ে কাজটা করতে ভালোবাসে।
প্র: বাংলাদেশে নতুন কী প্রোজেক্ট আসছে?
উ: দেশভাগ নিয়ে একটি ছবি করছি ‘খাঁচা’ নামে। ‘পুত্র’ নামে একটি ছবি আসছে, পেয়ারার সুবাস, লাল মোরোগের ঝুঁটি— অনেক ছবি আসছে।
প্র: আপনি তো ছবি প্রযোজনায় এসেছেন?
উ: হ্যাঁ, আমি এই প্রযোজনার কাজে হাত দিলাম। ছবির নাম ‘দেবী’। পরিচালক অনম বিশ্বাস। আমি আশা করব দর্শকদের ভালো লাগবে।
প্র: বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার তো সব আপনার বাড়িতেই?
উ: না, তেমন ঠিক নয়। তবে আমি দর্শকদের খুশির খবর জানাতে চাই, আমি বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার এই নিয়ে তিনবার পেলাম।
প্র: বাঃ! আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা। এবারের জাতীয় পুরস্কার কোন ছবির জন্য?
উ: ‘জিরো ডিগ্রি’ নামে একটি ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার। আমি চাই দর্শক এইভাবেই আমাকে স্নেহ দিক।
আরও পড়ুন: এখন যাঁরা অভিনয় করেন তাঁরা নাকি দারুণ অভিনয় করেন: চিরঞ্জিত
প্র: শেষ প্রশ্ন, এতো ব্যস্ত নায়িকা জয়ার অবসর সময় কাটে কী ভাবে?
উ: আমি গান শুনতে ভালোবাসি। আমাদের বিসর্জনের গান তো শুনেছেন। মাটির গন্ধ আছে গানগুলোতে। কালিকাদা আমাদের বাংলাদেশেও জনপ্রিয়। উনি আপনাদের যতোখানি ছিলেন তার চেয়ে বেশি ছিলেন আমাদের। আমরা ওঁকে হারিয়ে স্বজন বিয়োগের শোক পেয়েছি।
আর গান ছাড়া আমার পোষ্যকে খুব ভালোবাসি। ওর নাম ক্লিওপেট্রা। সকালে ওকে তৈরি করে বাড়ি থেকে বেরোই আবার বাড়ি ফিরে ওকে না দেখলে চলে না, আনকন্ডিশনাল লাভ। তাই কলকাতায় চলে এলে ওর জন্য মন খারাপ হয়। যদিও ও এখন মায়ের জিম্মায় আছে।
প্র: নববর্ষে কলকাতায় থাকছেন?
উ: থাকতেই হবে বিসর্জনের জন্য। তবে আমার মন পড়ে থাকবে দেশে, ওখানে নববর্ষ দারুণ করে উদযাপন হয়। তবে দর্শকদের বলব এই নববর্ষে বাংলা ছবি দেখুন, বিসর্জন দেখুন, ভালো লাগবে। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।