প্রিয় খাবারের তালিকা থেকে পোস্ত এবার বাঙালির মননেও। সিনেমার পর্দা জুড়ে যেমন রমরমিয়ে চলছে পোস্ত, তেমনই বাঙালির মন জুড়ে এখন বাস করছে যিশু সেনগুপ্ত। ব্যস্ততার ফাঁকেই কিছুটা সময় বের করলেন যিশু। রাকা রায়ের সঙ্গে কথা হল তাঁর ফিল্মি কেরিয়ার নিয়ে।
প্র: পোস্ত দেখে বাঙালি কিন্তু যিশুতে মুগ্ধ। কীভাবে দেখছেন?
উ: আমি আমার কাজটা মন দিয়ে করেছি। শিবু, নন্দিতাদি যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে করার চেষ্টা করেছি, ভালো খারাপ তো দর্শক বলবে। তাঁদের যদি আমার কাজ ভালো লেগে থাকে, ধন্যবাদ।
প্র: তোমার ফিল্মি কেরিয়ারে প্রচুর চড়াই উতরাই, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কোনটাকে বলবে?
উ: ঋতুদার সঙ্গে কাজ করা, তারপরেই বলব সৃজিতের সঙ্গে জাতিস্মরের কথা। দুটোই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
প্র: যিশু সেনগুপ্ত যে সব দৃশ্যে থাকেন, তখন পর্দা জুড়ে যেন শুধুই তিনি। তা সে আরশিনগর হোক, কিংবা জুলফিকর। ছবির চরিত্রের জন্য কী ভাবে তৈরি করেন নিজেকে?
উ: আমি রিহার্সালে বিশ্বাস করি না। যে কোনো চরিত্রের ব্যাপারে ছবির পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে নিই। একটা বেসিক গ্রাফ থাকে। সেই মতো সেটে বা ফ্লোরে গিয়ে কাজটা করি। আলাদা করে কোনো প্রস্তুতি নিই না।
প্র: অনেক এক্সপেরিমেন্টাল চরিত্রে দর্শক আপনাকে দেখেছে, আপনার নিজের কোনো স্বপ্নের চরিত্র আছে?
উ: এভাবে বলা খুব মুশকিল, সব কিছুই গল্পের ওপর, ভালো স্ক্রিপ্টের ওপর। আমার চরিত্রটা দারুণ অথচ ছবিটা ভালো না, এমন হলে দর্শক ছবিটা দেখবে না। সে ক্ষেত্রে আমার চরিত্র ভালো হয়েও লাভ নেই। এই যেমন পোস্ত-তে লোকের আমার চরিত্রকে ভালো বলেছে, কারণ লোকে হলে গিয়ে ছবিটা দেখছে। ছবিটা না দেখলে তো আমার চরিত্রটা সম্পর্কে জানতেই পারত না।
প্র: আজ যিশু সেনগুপ্ত সফল। কিন্তু এমন একটা সময় ছিল, যখন ঋতুপর্ণ ঘোষ ছাড়া অন্য কোনো পরিচালক আপনাকে নিতেই চাইত না। সেই সময়কার কোন কোন ভুলগুলো আজ শুধরে নিতে চান?
উ: আমার মনে হয় না আমি কোনো ভুল করেছি। যখন বি গ্রেড, সি গ্রেড ছবিতে কাজ করেছি, নিজের ইচ্ছেতেই করেছি। কেউ কখনও গান পয়েন্টে রেখে আমায় দিয়ে কাজ করায়নি। টাকা রোজগারের জন্য নানা ধরনের কাজ করেছি আমি। এটা বুঝতে শিখেছি, ভালো কাজ করার জন্য আগে নিজের জায়গাটা করতে হয়। তাই নিজের জায়গাটা তৈরি করার জন্য আমায় সে সব কাজ করতে হয়েছে। আমাদের প্রফেশনটা আসলে অন্যান্য পেশার থেকে অনেকটাই ইনসিকিওরড।
প্র: মুম্বই না কলকাতা? কোথায় বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে চান?
উ: আমি মন দিয়ে ভালো কাজ করতে চাই।
প্র: বাংলা ইন্ডাস্ট্রি যিশু সেনগুপ্তকে কতোটা ব্যবহার করতে পেরেছে?
উ: সেটা তো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিই ভালো বলতে পারবে(হেসে), আমি কী করে বলব?
প্র: ব্যোমকেশ হিসেবে দর্শক আপনাকে পছন্দ করছে, আর কোন গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করতে চান?
উ: এই মুহূর্তে অন্য কোনো গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয়ের কথা ভাবছি না। ব্যোমকেশ আমায় অনেক কিছু দিয়েছে। চরিত্রটার জন্য অঞ্জন দত্ত আর কৌস্তুভ রায়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
প্র: অভিনয়, প্রোডাকশন হাউস, বড় পর্দা, ছোটো পর্দা এত কিছু সামলান কী করে?
উ: প্রোডাকশন হাউসের সবটাই সামলায় আমার স্ত্রী নীলাঞ্জনা। অফিস আর প্রোডাকশন হাউস দুটোই ও সামলায়। আমি শুধু পাশে থাকি।
প্র: ব্যোমকেশের শুটিং শুরু হয়েছে, দর্শক সে ব্যাপারে বেশি কিছু জানে না, এবার ব্যোমকেশের কাছ থেকে দর্শক নতুন কী পাবে? কতোটা একাত্ম হতে পেরেছেন ব্যোমকেশের সঙ্গে?
উ: এই মুহূর্তে এটুকুই বলতে পারি, এই ব্যোমকেশ আগের ব্যোমকেশ থেকে অনেকটাই আলাদা। বাকিটুকু জানতে হলে দর্শককে অপেক্ষা করতে হবে পুজো পর্যন্ত।
প্র: এবার শেষ প্রশ্ন, কী মনে হয়, সাফল্য পাওয়া বেশি কঠিন, নাকি সাফল্য ধরে রাখা?
উ: (একটু চুপ করে) দেখুন, সাফল্য পাওয়ার জন্য আমি কাজ করিনি কখনও। কাজ করেছি ভালো লাগার জন্য, তাই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটাই আমার পক্ষে কঠিন।