ওয়েবডেস্ক: পুরাণকল্প এই পরিচালককে আকর্ষণ করে প্রতিনিয়ত। ধর্মীয় গোঁড়ামিকে সযত্নে কোণঠাসা করে অমর্ত্য ভট্টাচার্যের ছবিতে তাই বার বার ফিরে আসে পৌরাণিক চরিত্র এবং তার নেপথ্য দর্শন। যার ছায়া রুপোলি পর্দায় এর আগে পড়েছে স্বল্পদৈর্ঘের ছবি ‘শিউলি’-তে। আপাতত, ‘সর্বভূতেষু’ নামে যে ছবি নিয়ে কাজ করছেন পরিচালক, সেখানেও ‘শিউলি’-র মতো ফিরে এসেছেন দুর্গা! জাতীয় পুরস্কার পাওয়া তাঁর ছবি ‘বেনারস’-এও রয়েছে সেই পুরাণকল্পেরই দ্যোতনা!
আরও পড়ুন: নেতাজি ইন্ডোর অভিযান, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধনে থাকছেন ওয়াহিদা-সৌমিত্র
কিন্তু ‘রুণানুবন্ধ’ সেই তালিকায় বেশ অন্য রকম! পূর্ণ দৈর্ঘের ছবি বলে নয়! এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এক গভীরতর আধ্যাত্মিক ধারাবাহিকতা; বিজ্ঞানও! সে কথায় আসার আগে জানিয়ে না রাখলেই নয়- অমর্ত্যর এই ছবিটি এ বছরের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যে তিনটি ভারতীয় ছবি লড়বে, তার মধ্যে দখল করে রেখেছে গর্বের স্থান! এটাই যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত দ্বিতীয় বাংলা ছবিও!

“রুণানুবন্ধ আসলে শরীরের স্মৃতি। খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের শরীর কিন্তু পূর্বপুরুষের স্মৃতি ধরে রাখে। কারও হয় তো নাকটা তার ঠাকুর্দার মতো- এ রকম আর কী! কিন্তু এ ছাড়াও আমাদের শরীর অন্য শরীরেরও স্মৃতি ধরে রাখে। কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হলে চোখ বুজে সেই স্মৃতি থেকে বলে দেওয়া যায়- সেই মানুষটিকেই অনুভব করছি কি না”, কথা প্রসঙ্গে ছবির নামের খেই ধরিয়ে দিলেন অমর্ত্য!

পাশাপাশি বলতে ভুললেন না, আমাদের শ্রাদ্ধবিধির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে শব্দটা! “শ্রাদ্ধ আসলে বাবা বা মায়ের যে শারীরিক স্মৃতি থেকে যায় অনুবন্ধ হয়ে, তাই ছিন্ন করা! মরাঠি, কন্নড়, তামিল সংস্কৃতিতে এখনও এই শব্দটা বেশ প্রচলিত। আমি মৎস্য পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মার নিজের কন্যা সরস্বতীর প্রতি যৌন কামনার যে আখ্যান রয়েছে, সেটাকেই নতুন ভাবে ধরেছি ছবিতে”, বিশদ ব্যাখ্যা পরিচালকের।

পরিচালক জানাচ্ছেন, ছবির গল্পে দেখা যাবে শহর কলকাতায় আসা এক মেয়েকে। সে তার ছেড়ে যাওয়া বাবাকে খুঁজতে এসেছে শহরে। ঘটনাক্রমে তার সঙ্গে আলাপ হচ্ছে এক চলচ্চিত্র পরিচালকের, যার কণ্ঠস্বর তার বাবার মতো! সেখান থেকেই আকর্ষণ এবং এক টানাপোড়েনের গল্প বুনেছে ‘রুণানুবন্ধ’!

পরিচালক স্বাভাবিক ভাবেই ছবিটির কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে স্ক্রিনিং নিয়ে বেশ উৎসাহী। “আমি এর আগে কখনও কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাইনি! ঠিক করেছিলাম, যে দিন আমার ছবি থাকবে, তখন যাব!” সেই সময় এ বার এসে গিয়েছে, লেখাই বাহুল্য!

‘রুণানুবন্ধ’ এর আগে দেখানো হয়েছে অন্য কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানে বিপুল সমাদরের পর এ বার তার নিজের ভাষার মানুষের কাছে ফেরা। সমস্যা এই- চলচ্চিত্র উৎসবের বিদেশি ছবির ভিড়ে দর্শকরা পরিচালকের ঋণ চোখে নিতে চাইবেন তো?

“দেখুন, অন্য ছবি পরে প্রেক্ষাগৃহে দেখার একটা জায়গা থাকে। কিন্তু এর ক্ষেত্রে সেটা খুব সম্ভবত হবে না! তাই আশা করছি, দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন না”, বলছেন অমর্ত্য! তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই প্রহর গুনছে শহরও- প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার আগে তাই একবার ছবির ট্রেলারে চোখ রাখলে হয় না?
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।