স্মিতা দাস, কলকাতা : দেশে প্রতি বছর ই-ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য তৈরি হয় ১৭ লক্ষ টন। এই হিসেবটা গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রে প্রতি বছর ২ থেকে ৫ কোটি মেট্রিক টন। অঙ্কটা বিশাল, আর তার সমস্যা আরও বড়ো।
ই-ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য জিনিসটা আসলে কী?
ই-বর্জ্য হল ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট। অর্থাৎ বিদ্যুৎ চালিত জিনিসের বর্জ্য। এর মধ্যে যেমন রয়েছে আমাদের অব্যবহার্য বা ফেলে দেওয়া মোবাইল ফোন বা তার ব্যাটারি, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, গিজার, কম্পিউটার, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে এই জাতীয় বাকি সব কিছুই। এই প্রতিদিনের ব্যবহারের জিনিসগুলোই যখন বাতিল করে দেওয়া হয় তখনই তা হয়ে যায় ই-বর্জ্য।
ক্রমশ বাড়তে থাকা ই-বর্জ্য পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। কারণ, এই ই-বর্জ্য কোনো ভাবেই পরিবেশে মিশে যায় না। আর পুড়িয়েও এর পরিমাণে কমানো যায় না। ফলে এগুলি রেখতেও যথেষ্ট জায়গা লাগে। স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয় জায়গার ঘাটতি। তার থেকেও বড়ো কথা হল ভুল ভাবে বৈদ্যুতিক বর্জ্যপদার্থগুলো ‘রিসাইক্লিং’ করলে তা আরও বেশি সাংঘাতিক হয়ে ওঠে। ক্ষতি করে মানুষের শরীরের। কারণ, এগুলোর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত পদার্থ। পারদ, লেদ, ক্যাডমিয়াম, পলিব্রোমিনিয়াম, ব্যারিয়াম এবং লিথিয়াম – এই পদার্থগুলো জল, মাটি, বায়ুতে মিশে গিয়ে শরীরে ঢুকে পড়ে। এর থেকে তৈরি মিথেন গ্যাস গ্রিনহাউস সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রতি বছর দেশে এই ই-বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে চলেছে ৫% হারে।
এই ই-বর্জ্য সব থেকে বেশি তৈরি হচ্ছে উন্নয়ণশীল দেশগুলিতে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে চিন তেমন রয়েছে আফ্রিকা, ভারতও। এর থেকে বাঁচতে বিশ্ব জুরে তৈরি হচ্ছে সচেতনতা ও ব্যবস্থাপনার উপায়। পিছিয়ে নেই আমাদের দেশও। দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে এই বিষয়ে মাথা ঘামানো।
এই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতেই কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক, প্রোগ্রেস হারমোনি ডেভলপমেন্ট চেম্বার আর বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যৌথ উদ্যোগে কলকাতায় আয়োজন করা হয়েছিল একটি বিশেষ সচেতনতা অনুষ্ঠানের। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারম্যান ডঃ কল্যাণ রুদ্র। তিনি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দক্ষতা গড়ে তোলার জন্য শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত জরুরি। ই-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বেশ কিছু নির্দেশিকাগুলি জারি করেছে। তা মেনে চলতে হবে এই কাজের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক বিভাগের কর্মীদের। তবেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের হুগলি আর দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তবে আরও এমন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য।
বেঙ্গল চেম্বারের সভাপতি সুতানু ঘোষ বলেন, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধি (ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস) ২০১৬, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা বিধি (ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও হ্যান্ডলিং রুলস) ২০১১ ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা কাজে করতে আগ্রহীদের নানা রকম সুযোগ সুবিধে দিয়েছে। এই বিধি অনুযায়ী এই কাজে জড়িত শ্রমিকদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং কর্মদক্ষতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য রাজ্য সরকারও বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছে।