লন্ডন : বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য শুক্রবার সারাটা দিন কয়লা ব্যবহার করা হল না। শিল্পবিপ্লবের পর এই প্রথম একটা পুরো দিন ব্রিটেনে কয়লা ব্যবহার বন্ধ থাকল। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে বিগত এক শতকেরও বেশি সময়ে শুক্রবারই ছিল প্রথম কয়লাবিহীন কর্মদিবস, জানাল ব্রিটেনের ন্যাশনাল গ্রিড। সংস্থাটির কন্ট্রোলরুমের তরফ থেকে শনিবার টুইট করে বলা হয়েছে, এই দিনটি ইতিহাসে একটি মাইলফলক। শুক্রবারে টানা ২৪ ঘণ্টা কয়লামুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হল। জানানো হয়েছে, ‘ওয়েস্ট বুর্টন ওয়ান পাওয়ার স্টেশন’ এটি হল এক মাত্র কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি বৃহস্পতিবার বন্ধ ছিল। এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে বায়ু ও সৌরশক্তিকে মিলিত ভাবে। এর আগে ১৯ ঘণ্টার এমন দিন পালিত হয়েছে। কিন্তু এ বারটাই সবচেয়ে বেশি সময়ের জন্য কয়লাবিহীনভাবে কাটল।
ন্যাশনাল গ্রিডের মুখপাত্র বলেন, লক্ষণীয় ভাবে কয়লার ব্যবহার কমছে। ২০১৬ সালে মাত্র ৯% বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদিত হয়েছে। তার আগে ২৩% বিদ্যুৎ উৎপাদিত হত। কয়লা থেকে শক্তি উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো হয় বন্ধ হয়ে গেছে, না হয় অন্য জৈবশক্তি উৎপাদনকারী সংস্থা, যেমন কাঠ থেকে শক্তি তৈরির সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সমস্ত কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের নিরিখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
National Grid can confirm that for the past 24 hours, it has supplied GB’s electricity demand without the need for #coal generation. pic.twitter.com/vgyWEUYqZ4
— NG Control Room (@NGControlRoom) April 21, 2017
ব্রিটেনের গ্রিনপিস শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান হান্না মার্টিন বলেন, শিল্পবিপ্লব শুরু হওয়ার পর এটাই প্রথম কয়লাবিহীন দিন বলা যায়। দশ বছর আগেও এমন দিনের কথা ভাবাই যেত না। কয়লা ছাড়া শক্তি উৎপাদন ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে নতুন করে পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। শক্তি উৎপাদনের জন্য মৌলিক উপায় আবিষ্কার হয়েছে। বর্তমানে গোটা বিশ্ব এমন একটি অর্থনীতির দিকে এগিয়ে চলেছে, যেখানে কয়লা-নির্ভর অর্থনীতির গুরুত্ব কমছে। সরকারের উচিত দূষণবিহীন, সবুজ প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
গ্রিথ রেডমন্ড-কিং হলেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ)-এর জলবায়ু ও শক্তির প্রধান। তিনি জানান, কয়লামুক্ত পথ চলার এই চেষ্টা সবুজ অর্থনীতির বিপ্লবে একটা মাইলফলক। শক্তি উৎস হিসেবে কয়লাকে বাদ দিতে পারাটা বেশ উত্তেজনাঘন ব্যাপার। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে জলবায়ু পরিবর্তন আটকাতে এটুকুই যথেষ্ট নয়। এখনও তেমন কোনো নির্মাণ শিল্প বা পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। পরবর্তী নির্বাচনের পর নতুন সরকারের প্রথম লক্ষ্য হবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রকে কয়লামুক্ত করা।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনই বিশ্বের প্রথম দেশ যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার ব্যবহার প্রথম করা হয়েছিল। লন্ডনে তখন হলবন ভায়াডাকট বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলেন থমাস এডিসন। সময়টা ১৮৮২ সাল। সেই সময় ৫০টি বাড়ি এক ঘণ্টার জন্য আলোকিত করতে প্রচুর পরিমাণ কয়লা ব্যবহার করা হত। তা দিয়ে ১৫০টি মোমবাতির আলোর সমান আলো হত এক একটি বাড়িতে।